বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪

সম্পূর্ণ খবর

লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ | EXCLUSIVE: সন্দেশখালি নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির গোপন বোঝাপড়া আছে: নিরাপদ সরদার

Riya Patra | ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ : ০৯Riya Patra


 রিয়া পাত্র 

কেউ কেউ বলেছিলেন ভোটমুখী বাংলায় সন্দেশখালি হবে "সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম"। গত কয়েকমাসে এটুকু পরিষ্কার হয়েছে, কোনও বিরোধী রাজনৈতিক দলই এই ইস্যুকে হেলায় হারাতে নারাজ। বসিরহাটে হাজি নুরুল, রেখা পাত্রর বিপরীতে এবার বামেদের ট্রাম্প কার্ড নিরাপদ সরদার। 

* দীর্ঘদিনের লড়াকু নেতা, এক সময়ের বিধায়ক, সেখান থেকে সোজা লোকসভা ভোটের ময়দান। মাঝে গিয়েছে উত্তাল আন্দোলন পর্ব, কারাবাস...

নিরাপদ: আসলে সন্দেশখালির ঘটনা এখন প্রকাশ্যে এসেছে বলে মনে হচ্ছে হঠাৎ ঘটা। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখবেন সন্দেশখালিসহ গোটা বসিরহাট কিন্তু বাম মনোভাবাপন্ন। গোটা রাজ্যে বামপন্থার পরাজয়ের সময়ও এখানের তিন বিধানসভায় বামেরা জিতেছিল। এটাই তৃণমূলের বিড়ম্বনা। ২০১১ সালে সন্দেশখালি জেতার পরেও তাদের লক্ষ্য ছিল সন্দেশখালিসহ এই লোকসভা কেন্দ্রের বাম শক্তি দুর্বল করা। সেই কারণেই দিনে দিনে ঘনীভূত হয় আক্রমণ। সেখান থেকেই শুরু কোনও রাজনৈতিক দল ছাড়া ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলন। সেই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছিল নিরাপদ।

* কিন্তু আন্দোলন গণতান্ত্রিক রইল কি?

নিরাপদ: তৃণমূল দেখল আন্দোলন যদি গণতান্ত্রিক থাকে, তাহলে শক্তিশালী হবে লাল ঝান্ডা। তাকে ভাঙতে হবে। পরিকল্পিত ভাবে শুভেন্দু অধিকারীকে সন্দেশখালিতে ঢোকানোর পথ তৈরি করা হয়। তারপরেই ভেঙে যায় গণতান্ত্রিক আন্দোলন। 

* অর্থাৎ আপনি বলছেন শুভেন্দুর সন্দেশখালি ইস্যুতে ঢোকা, এই আন্দোলনে রাজনীতির রং লাগা, এটা পরোক্ষভাবে করল তৃণমূল?

নিরাপদ: একেবারে। দুজনে মিলে এই কাজ করেছে। এখানকার আন্দোলন তৃণমূল থামাতে পারবে না। তাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধেই আন্দোলন। সেই কারণেই তারা বিজেপিকে ঢোকার সুযোগ করে দিল। এখানে একটা বিষয় দেখুন, শুভেন্দু অধিকারীর তো ঢোকার কোনও কথা ছিল না। তখন ওরা পুলিশকে দিয়ে বিজেপির বিকাশ সিংকে গ্রেপ্তার করাল। কিন্তু ১১১ জনের মধ্যে তার নাম ছিল না। তাকে গ্রেপ্তার না করলে শুভেন্দু অধিকারী ঢুকতে পারছিলেন না। শুভেন্দু ঢুকে ভাঙলেন আন্দোলন। এটা সন্দেশখালির মানুষের বিরাট ক্ষতি। একটা অংশে মানুষ বুঝলেও সবাই বুঝল না। ওরা প্রার্থী হিসেবে বেছে নিল একজনকে। সন্দেশখালির আন্দোলনের প্রকৃত ক্ষতি করল বিজেপি। মনে হয় ওরা প্রার্থীকে জেতার জন্য দাঁড় করিয়েছে? সে কি জিততে পারবে? সে কি পঞ্চায়েতে কাজ করেছে? 

* প্রার্থী বাছাইয়ের তাহলে কী কারণ? অন্য কোনও হেভিওয়েট মুখের বদলে রেখা পাত্র কেন?
নিরাপদ: নিরাপদ সরদারের নাম ঘুরছে, সেখানে ভাল প্রার্থী দিতে পারত। এটা করল কারণ, বিজেপি ভালো করে জানে, তারা সন্দেশখালিতে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। ওই রেখা পাত্রকে দিয়ে অন্যান্য জায়গায় প্রচার শুরু করল, যাতে মানুষ বুঝতে পারে, সন্দেশখালির মুখকে, মায়েদের, পিছিয়ে পড়া মানুষকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিজেপি। নরেন্দ্র মোদি যাই বলুন না কেন, বিজেপি যে এ রাজ্যে দুর্বল হয়েছে সেটা বুঝতে পারছে, সেই কারণেই গোটা রাজ্যে ব্যবহার করতে চাইছে সন্দেশখালি ইস্যু। 

* আপনি বলছেন রেখা জিতবেন না, তাহলে বিজেপির এই প্রার্থী বাছাই কি ঘুরপথে সাহায্য করছে তৃণমূলকে?

নিরাপদ: এর আগের ভোটে তৃণমূলের কারো সাহায্য লাগেনি। কিন্তু এবার তৃণমূল একক শক্তিতে জিততে পারবে না। এবার পিছন থেকে বিজেপি সাহায্য না করলে বসিরহাট লোকসভা থেকে তৃণমূল জিততে পারবে না। এই বোঝাপড়া বাইরের সকলে যাতে বুঝতে না পারে, সেই কারণেই শুভেন্দুকে দিয়ে আগে থেকে তৈরি করছে মাঠ। তৃণমূলের প্রার্থী নিয়ে মানুষের ক্ষোভ আছে। 

* আপনাদের এই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাঝেই বলা হল, মুসলিমরা অত্যাচার করছে হিন্দু মহিলাদের ওপর। এই মন্তব্য আপনি সমর্থন করেন?

নিরাপদ: এটা তো তৈরি করা হল দিল্লি থেকে। এটা একটা বড় রাজনীতি। স্মৃতি ইরানিকে দিয়ে এটা বলানো হল। অন্য জায়গার মানুষ তো আর দেখছেন না কী হচ্ছে। ফলে এটাই প্রচার হল। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যে। অত্যাচার চলছিল তৃণমূলের কিছু লোকের দ্বারা। তাতে হিন্দু, মুসলিম সব আছে। উত্তম সরদার, শিবু হাজরা তো মুসলমান নয়। আমি আগেও এর প্রতিবাদ করেছি। 

* সন্দেশখালির আন্দোলন এখন কোন পর্যায়ে?

নিরাপদ: এখন তো আর আন্দোলন নেই, ভেঙে দেওয়া হল সেটা। দেখুন বসিরহাটের মানুষ কখনও বিভাজনের রাজনীতি চায় না। আজ যা পরিস্থিতি, ১০ দিন পর সেটা বদলে যাবে। অতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে রাজনৈতিক সমীকরণ। আমার বিশ্বাস তৃণমূল, বিজেপি এবার কোণঠাসা হবে।

* নিরাপদ সরদার কি সেই আন্দোলন আবার গড়ে তুলতে চাইছেন?

নিরাপদ: আমি তো সেটা আর পারব না। একটা অংশ বিজেপিতে গেছে। এখন বাকিদের বোঝাচ্ছি আন্দোলন ভেঙে কীভাবে একটা অংশ রাজনীতিতে গেল। আমি বিধানসভায় থাকার সময়েও অভিযোগ করেছিলাম একাধিক বিষয়ে। ঘটনা যে ঘটেছে, সেটা মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু মেনে নিলেন। ২০১১ এর পর মানুষ এই প্রথম আবার এই এলাকায় ভোট দিতে যাবেন। 

* সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের সঙ্গে সন্দেশখালির তুলনা প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন? 

নিরাপদ: না, একেবারেই মনে করি না। কোনও ঘটনার সঙ্গে এর তুলনা করতে চাই না। এখানে মানুষের জীবন যন্ত্রণার ওপর আঘাতের ঘটনা। বেঁচে থাকার এখানে কোনও বিকল্প পথ ছিল না লড়াই ছাড়া। যে যা পেরেছে তাই নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে। তুলনা করলে আমি বলব রাজনীতির জন্য করছে। সন্দেশখালির মাটি আলাদা, ভূগোল আলাদা, বেঁচে থাকা সব আলাদা।


* এই যে আন্দোলনের মাঝে আপনাকে গ্রেপ্তার করা হল, কী জানতে চাইল জিজ্ঞাসাবাদে?

নিরাপদ: কিছুই জিজ্ঞাসা করা হয়নি।এটা অপদস্থ করার জন্য। আমি সরকারের পুলিশ সহ অনেককে কাঠগড়ায় তুলতে পারতাম। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, আদিবাসীদের ওপর অহেতুক মানসিক অত্যাচার হলে মামলা করা যায়। তাছাড়া একাধিক জায়গা ছিল। আমাকে গ্রেপ্তার করা হল, মুখ বন্ধ করতে।

* কিন্তু আপনি মামলা করলেন না কেন?

নিরাপদ: না, আমার লক্ষ্য মামলা করে ফয়সালা নয়। আমি রাজনৈতিক কর্মী। সমাজ বদলানো আমার লক্ষ্য। এই ঘটনা মানুষের সামনে তুলে ধরা হবে সমাজ বদলের লড়াইয়ে। জেলে গিয়েও আমার নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে। বিরোধী কণ্ঠস্বরকে কীভাবে নষ্ট করছে, জেলে না গেলে বুঝতাম না। 


* তৃণমূল-বিজেপির বাইনারির অভিযোগ তোলেন আপনারা, সেটা হলে মানুষ বাম প্রার্থীদের ভোট কেন দেবেন?

নিরাপদ: প্রথমে আমরা মানুষকে ঠিক করে বোঝাতে না পারলেও বাইনারি মানুষ কিছুটা উপলব্ধি করছে। এবারের বিজেপি তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা দেখলেই বোঝা যাবে তফাৎ নেই বেশি। 


* বাম প্রার্থীরা লোকসভা ভোট জিতলেও, সরকারের সঙ্গে যাবে না। সেখানে গ্রহণযোগ্যতা কতটা?

নিরাপদ: দেশের রাজনীতিতে যে ইতিহাস এর পর তৈরি হবে, দেখবেন বামপন্থীদের নাম স্বর্ণাক্ষরে উঠে আসবে। সংবিধান থেকে সংসদ, একাধিক বিষয়ে বিজেপির সিদ্ধান্ত মানুষ দেখছে। সীতারাম ইয়েচুরি যে সময় দলকে দিয়েছেন, তার থেকে বেশি সময় দিয়েছেন বিজেপি বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করতে। এটাই নতুন ইতিহাস। বামপন্থীরা নিজেদের শক্তি বৃদ্ধির থেকে বেশি সময় দেশের স্বার্থে দিয়েছে। আমরা ১০০ দিনের কাজের আইন তৈরি করেছিলাম।

* এই ১০০ দিনের কাজ নিয়েই প্রশ্ন, আপনি তো ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের নেতা। রাজ্য সরকার ১০০ দিনের মজুরিতে বঞ্চনা নিয়ে বারবার সুর চড়াচ্ছে, আপনি কী বলছেন?


নিরাপদ : ১০০ দিনের কাজ গরীব মানুষের অধিকার। দুই সরকার মানুষের সঙ্গে নাটক করছে। দিল্লি এবং রাজ্য সরকার দুপক্ষই আইন লঙ্ঘন করেছে। দিল্লি চুরির কথা বলছে, এরা বলছে টাকা দিচ্ছে না। এখানে সময়সীমা আছে। দিল্লি টাকা না দেওয়ায় রাজ্য সরকার আদালতে যেতে পারত, গেল না। মাঝে কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত গরিব মানুষ। আমরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে সকলের কাছে সত্য তুলে ধরেছি।

* প্রচারে কী বার্তা, রোটি-কাপড়া-মকান?

নিরাপদ: ওটা আমাদের দলের লক্ষ্য। কিন্তু এটা তো প্রত্যন্ত, সুন্দরবন এলাকা। এখানে গুরুত্বপূর্ণ ১০০ দিনের কাজ। মানুষকে নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে চাই। এটাই সবথেকে বড় দায়িত্ব। গ্রাম বাংলায় স্কুল বন্ধ হতে দেব না, লড়াই চলবে মা-বোনদের অপুষ্টির বিরুদ্ধে। সুন্দরবনের নদী বাঁধে নজর থাকবে, নজর থাকবে নোনা মাটিতে ফসলের দিকে। পুনরুদ্ধার করতে চাই মাদ্রাসা।




বিশেষ খবর

নানান খবর

নানান খবর



সোশ্যাল মিডিয়া



04 24