শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

সম্পূর্ণ খবর

খেলা | Sunil Chhetri: ১০০ গোলের আক্ষেপ নেই, ভবিষ্যতে কোচিংয়ে আসতে চান না সুনীল

Sampurna Chakraborty | ১৭ মে ২০২৪ ১৬ : ৫৪Sampurna Chakraborty


সম্পূর্ণা চক্রবর্তী: গত দেড় দিনে ভারতীয় ক্রীড়াজগতে সবচেয়ে চর্চিত ঘটনা সুনীল ছেত্রীর অবসর। বৃহস্পতিবার সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর অবসরের আবেগঘন ভিডিও পোস্টের পর থেকেই সতীর্থ, কোচ, ফ্যান, সাংবাদিকদের ভালবাসার অত্যাচারে প্রাণ ওষ্ঠাগত সুনীলের। দেড় দিনে মোবাইলে ৬৮৮টি মিসড কল। তাই একপ্রকার এত মাতামাতি বন্ধ করার জন্যই শুক্রবার দুপুরে ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেন ভারত অধিনায়ক। ১৯ বছরের আন্তর্জাতিক ফুটবলজীবনে এর আগে একটানা ১৯ মিনিট একক সাংবাদিক সম্মেলন করার ঘটনা ঘটেছে কিনা জানা নেই। কিন্তু এদিন প্রায় ১ ঘণ্টা ৮ মিনিট হাসিমুখে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিলেন সুনীল। ম্যারাথন সাংবাদিক সম্মেলন। জুম মিটে নিজেকে সম্পূর্ণ খুলে দেন ভারতীয় ফুটবলার সুপারস্টার। ১০০ গোল না হওয়ার আক্ষেপ থেকে শুরু করে দেশের জার্সিতে সবচেয়ে হতাশ মুহূর্ত, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, সবকিছু নিয়েই অকপট সুনীল। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ৬ জুনের পর কয়েকদিন সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিতে চান। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাবেন। তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ভাববেন। দেশের জার্সিতে ১৫০ ম্যাচে ৭৪ গোল। ১০০ গোলের মাইলস্টোনের আগেই কেন অবসরের সিদ্ধান্ত? ম্যাচ প্রতি সুনীলের গোলের গড় বলছে, আর মাত্র কয়েকটা ম্যাচ অপেক্ষা করলেই হয়তো গোলের সেঞ্চুরি হয়ে যেত। কিন্তু ভারত অধিনায়ক জানালেন, কোনও ব্যক্তিগত টার্গেট সেট করে এগোন না তিনি। তাই ১০০ গোল না হওয়ার আক্ষেপও নেই। সুনীল বলেন, '১০০ গোল না পাওয়ার কোনও আক্ষেপ নেই। কেরিযার শুরুর সময় কোনওদিন এতগুলো গোল করব ভাবিনি। কোনও এজেন্ডা বা স্বপ্ন সেট করে কোনওদিন খেলিনি। দেশের জার্সিতে ১৫০ ম্যাচ খেলতে পেরে আমি গর্বিত। তারওপর সকলের এত ভালবাসা প্রাপ্তি। তাতেই আমি খুশি। আমি জীবনে যা চেয়েছি, তার থেকে অনেক বেশি পেয়েছি। তাই একশো গোল না করার কোনও আক্ষেপ নেই।' আগের দিন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ভিডিওয় অনেক বেশি আবেগপ্রবণ ছিলেন। তার ২৪ ঘণ্টার একটু বেশি সময় পর নিজেকে অনেকটাই গুছিয়ে নিয়েছেন। বরাবরই ভাল কথা বলেন। এদিন যেন সেই মাত্রা আরও খানিকটা বেড়ে গিয়েছিল। প্রত্যেক প্রশ্নের নিখুঁত উত্তর। 

১৯ বছরের বর্ণময় ফুটবলজীবনে অনেক চড়াই-উতরাই গিয়েছে। তারমধ্যে বেশিরভাগই সুখের স্মৃতি। দেশের জার্সিতে প্রথম ম্যাচ, তিনবার এশিয়া কাপের যোগ্যতাঅর্জন করা তারমধ্যে অন্যতম। এবার ৬ জুনের দিকে তাকিয়ে। বিশ্বকাপের যোগ্যতাঅর্জন পর্বের তৃতীয় রাউন্ডে ওঠার মুহূর্তও তালিকায় সামিল করার অপেক্ষায় সুনীল। বেঙ্গালুরুতে কিরগিজস্তানের বিরুদ্ধে জেজের পাস থেকে করা গোলকেই সেরা বাছলেন। আর সবচেয়ে দুঃখের মুহূর্ত? বিশেষ ভাবতে হল না সুনীলকে। যেন চোখের সামনে ভেসে উঠল ২০১৫ এশিয়া কাপের যোগ্যতাঅর্জন করতে না পারার সেই স্মৃতি। সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ১-৪ গোলে হার। এতগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও, ভারত অধিনায়কের সুরে সেই আক্ষেপ ধরা দিল। সুনীল বলেন, 'এশিয়া কাপে কোয়ালিফাই না করতে পারা দেশের জার্সিতে সবচেয়ে দুঃখের মুহূর্ত। আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। এখনও সেটা ভাবলে নিজের এবং দলের বাকি প্লেয়ারদের ওপর রাগ হয়।' দীর্ঘ ১৯ বছর ভারতীয় ড্রেসিংরুমে কাটিয়েছেন। তারমধ্যে বহু প্লেয়ার, কোচ এসেছেন, গিয়েছেন। ৬ জুনের পর সবচেয়ে বেশি কী মিস করবেন? সুনীল বলেন, 'আমি জাতীয় দলের সবকিছু মিস করব। তখন যখন বাইচুং, রেনেডির সঙ্গে ড্রেসিংরুমে বসে কথা বলতাম। আর এখন যখন চাংতে, গোগোইদের সঙ্গে কথা বলি। ম্যাচের দিনগুলো। জাতীয় সঙ্গীত। দেশের হয়ে ১৫০ টা ম্যাচ খেলেছি আমি। একটা সময় এটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। মনে হয় হয়তো এগুলো কোনওদিনই শেষ হবে না। কিন্তু একদিন থামতেই হয়।' 

তাঁর অবর্তমানে ভারতীয় দলে গোল কে করবে? এককথায়, সুনীলের উত্তরসূরি কে? বারবারই এই প্রশ্ন উঠে আসে। নির্দিষ্ট একজনের নাম না করলেও কয়েকজনকে নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী বিদায়ী অধিনায়ক। তিনি মনে করেন, সঠিক দিশাতেই এগোচ্ছে ভারতীয় ফুটবল। সুনীল বলেন, 'ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। এক একটা পজিশনে বিকল্প রয়েছে। ৯ নম্বর পজিশনে অনেকেই ভাল করছে। তবে আইএসএলে খুবই বেশি এই পজিশনে খেলার সুযোগ পায় না ভারতীয় স্ট্রাইকাররা। তাসত্ত্বেও লিস্টন, মনবীর, বিপিন, চাংতে, বিক্রম, সাহালরা ভাল খেলছে। আইএসএলের সেরা দুই দলের অ্যাটাকিং প্লেয়াররা নজর কেড়েছে। তারমধ্যে চারজন উইঙ্গার। আশা করছি আমরা শীঘ্রই কাউকে পেয়ে যাব।' পর্তুগালের ক্লাবে খেলার সুযোগ পেয়েও ফিরে এসেছেন ভারতে। সেই নিয়েও কোনও আক্ষেপ নেই। জানান, তিনি ২৪-২৫ বছর বয়সে গিয়েছিলেন ইউরোপে। চার বছরের চুক্তি ছিল। কিন্তু নিয়মিত সুযোগ পাচ্ছিলেন না। মাত্র ১০-১৫ মিনিট করে খেলার সুযোগ পেতেন। তাই ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর বয়স তখন ১৭-১৮ হলে হয়তো থেকে যেতেন। আরও এক বছর বেঙ্গালুরুর সঙ্গে চুক্তি আছে। তারপর হয়তো বুট জোড়া পুরোপুরি তুলে রাখতে হবে। ভবিষ্যতে কি কোচিংয়ে আসার ইচ্ছা রয়েছে? আপাতত সেই দরজা নিজেই বন্ধ করে দেন সুনীল। তবে জানান, নিজেকে আরও উন্নত করার জন্য কোচিং লাইসেন্স করে রাখতে চান। সুনীল বলেন, 'আপাতত কোচিংয়ে আসার কোনও ইচ্ছে নেই। যদিও ৪০ বছর বয়সে এসে আমি শিখেছি, কোনও কিছুতেই না বলতে নেই। তবে নিজের শিক্ষার জন্য আমি কোচিং লাইসেন্স করে রাখতে চাই। সেটা কোনও দলকে কোচিং করানোর উদ্দেশ্য নিয়ে নয়। আমি শিখতে চাই। ম্যানেজমেন্ট কোর্সও করেছি। আমি সকাল ছ'টায় উঠি, রাত দশটায় ঘুমোই। এত বছর ধরে টানা এইভাবে চালিয়েছি। আমি আর চাপ নিতে চাই না। আমি অনেক হ্যান্ডসাম কোচকে দেখেছি এক বছরের কোচিংয়ে কীভাবে তাঁদের চুল পড়ে যায়। আমি নিজের চুল এবং ঘুম নষ্ট করতে চাই না। সবচেয়ে সুদর্শন ফুটবলার হিসেবে মানুষের মনে থেকে যেতে চাই। কোচিং মোটেই সহজ নয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দলের কোচদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব বেড়েছে। তাঁদের আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। জানি ৩০ জন প্লেয়ার সামলানো কতটা চাপ।' 

কোচ হওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও ভবিষ্যতে ফুটবল প্রশাসনে আসার ইচ্ছা রয়েছে সুনীলের। তবে কোনও তাড়াহুড়ো করতে চান না। কোনও দায়িত্ব নেওয়ার আগে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে তৈরি করেই আসতে চান। এই প্রসঙ্গে সুনীল বলেন, 'এই মুহূর্তে আমি কিছু নিয়েই ভাবতে চাই না। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চাই। তবে ভবিষ্যতে প্রশাসনে আসতেই পারি। ফুটবল আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে, সেটা ফিরিয়ে দেওয়া আমার কর্তব্য। তবে যাই করি না কেন, সেই বিষয়ে আগে নিজেকে শিক্ষিত করতে চাই। কিছু না জেনে, বুঝে দায়িত্ব নিতে চাই না। ভাল ফুটবল খেলি মানেই এই নয় যে বাকি জিনিসেও আমি ভাল। তাই সময় নিয়ে ভাবতে চাই।' গতকাল অবসর ঘোষণা করলেও, তার একমাস আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। তাই অবসরের আগের রাতটা কঠিন ছিল না। তবে সেই কঠিনতম সিদ্ধান্ত নিতে তাঁকে সাহায্য করেন বিরাট কোহলি। সুনীল জানান, মনস্থির করার পর বিরাটকে নিজের সিদ্ধান্ত জানান। কারণ তিনি জানতেন, কোহলিই তাঁর মানসিক অবস্থা বুঝবে। কিন্তু মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়ায় অপেক্ষা করতে হয়। সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার পরই নিজের সিদ্ধান্ত জানান। তবে সুনীলের দাবি, অবসরের সঙ্গে কলকাতায় শেষ ম্যাচ খেলার কোনও সম্পর্ক নেই। সম্পূর্ণটাই কাকতালীয়। তবে কলকাতার ফুটবলপ্রেমীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। ক্লাব জীবন থেকে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদও জানান। সুনীল বলেন, 'আরও একবার মাঠে এসে আমাদের সমর্থন করুন। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলে থাকাকালীন প্রচুর ভালবাসা পেয়েছি। এছাড়াও জাতীয় দলের প্রত্যেক ম্যাচে স্টেডিয়াম ভরে যায়। অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সময় আমি ভেন্যু নিয়ে ভাবিনি। তবে কলকাতায় দেশের জার্সিতে শেষ ম্যাচ খেলতে পারায় খুশি।' ৬ জুন দলকে বিশ্বকাপের যোগ্যতাঅর্জন পর্বের তৃতীয় রাউন্ডে তোলাই সুনীলের একমাত্র লক্ষ্য। দেশের জার্সিতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিনের অপেক্ষায় ভারত অধিনায়ক। ৭ জুনের সকালটা নিয়ে এখনই ভাবতে চান না। তবে জানিয়ে দিলেন, দিনের অধিকাংশ সময় হয়তো কান্নাকাটিতেই কেটে যাবে। তারপর পরিবারের সঙ্গে কিছুদিনের বিরতি। ফের আবার মাঠে। ১ জুলাই থেকে শুরু বেঙ্গালুরু এফসির প্রাক মরশুম প্রস্তুতি। আবার নতুন লক্ষ্য নিয়ে নেমে পড়বেন সুনীল ছেত্রী। তারকাদের যে শেষ নেই!




বিশেষ খবর

নানান খবর

নানান খবর

সীমান্তে স্টেডিয়াম বানানোর অদ্ভুত প্রস্তাব পাক তারকার, তার পরেই ভারত সরকারকে তীব্র কটাক্ষ ...

হেলায় দিল্লি করিল জয়, অভিষেকের ঝোড়ো ১৭০, বিজয় হাজারেতে জিতল বাংলা ...

শচীনের রেকর্ড ভাঙার হাতছানি কোহলির সামনে, পারবেন এমসিজির রাজা হতে? ...

গভীর রাতের এক ফোন কলেই সব বাতিল, বাবার ইচ্ছাও মুহূর্তে শেষ, অশ্বিন বিদায়ের পরে প্রকাশ্যে এল এই কাহিনি ...

কোহলি, স্মিথ কবে অবসর নেবেন? জানিয়ে দিলেন প্রাক্তন ভারতীয় কোচ...

'সবকিছু না জেনে, মন্তব্য করবেন না', সমালোচকদের পাল্টা জবাব পৃথ্বীর...

ভাগ্য বদলাতে ভোল বদলালেন, বক্সিং ডে টেস্টের আগে নতুন লুকে কোহলি ...

ম্যাচটা অন্তত ড্র হওয়া উচিত ছিল, গোয়ার কাছে হেরে ভাগ্যকে দুষলেন মোলিনা...

মাণ্ডবীতে নৌকাডুবি! থামল বিজয়রথ, আইএসএলে দ্বিতীয় হার মোহনবাগানের ...

গোয়ায় থামল বিজয়রথ, আইএসএলে দ্বিতীয় হার মোহনবাগানের ...

চলতি বছর বিসিসিআইয়ের লাভ হয়েছে ৪২০০ কোটি টাকা, বোর্ডের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স কত জানেন?...

বিজয় হাজারের প্রথম ম্যাচে বিশ্রামে সামি, আন্তর্জাতিক প্রত্যাবর্তনের কথা ভেবে আগাম সতর্কতা...

টি-২০ ক্রিকেটে দ্রুততম অর্ধশতরানের রেকর্ড ছুঁলেন বাংলার রিচা...

‘বাবাকে ছেড়ে দিন’, অবসর বিতর্কে বাবার মন্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন অশ্বিন, সোশ্যাল মিডিয়ায় দিলেন স্পষ্ট বার্তা...

লিগ শিল্ডের ভাবনা দূরে সরিয়ে গোয়া ম্যাচে ফোকাস মোলিনার...





রবিবার অনলাইন

সোশ্যাল মিডিয়া



05 24