সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Kaushik Roy | ১৩ মে ২০২৪ ১৮ : ৪৭Kaushik Roy
কৌশিক রায়, ঘাটাল:
প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই তাঁকে ঘিরে বিতর্ক। রাজনীতিকের আবার সৌজন্য কী? দলের মধ্যেই উঠেছে প্রশ্ন। ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দীপক অধিকারী অর্থাৎ তারকা দেব। নির্বাচনী প্রচার, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান, দলের মধ্যে বিতর্ক, দুর্নীতি সব বিষয়ে খোলাখুলি আড্ডায় দেব।
* এই নতুন লুকটা কি ভোট স্পেশাল?
দেব: (হেসে) বলতে পারেন। এতটাই ব্যস্ত, চুল, দাড়ি কাটার সময় পাচ্ছি না। চুলটা যে সেট করব সেটারও সময় নেই। সকাল থেকে প্রচার, দুপুরে খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার প্রচার। মানুষ দাঁড়িয়ে থাকেন রাস্তায় ছোঁয়ার জন্য। আর্শীবাদ করছেন মাথায় হাত দিয়ে। আমার কাছে ওটাই সব। আমি পরোয়াই করি না কেমন লাগছে দেখতে। আয়নাতেও দেখি না।
* ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানকে ইউএসপি করেই কি প্রচার চলছে?
দেব: এবারে অনুমোদন পেয়েই তো প্রচার শুরু করেছি। টিকিট পাওয়ার পর তো আমি প্রচারে নামার আগেই দিদি ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। আমি এবার প্রচারে বেরিয়ে একটা কথাই বলছি যে সবাই মিলে যাতে একসঙ্গে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। হিন্দু, মুসলমান বিভাজন যেন না হয়।
* ভোটের আগে নির্বাচনী ভাষণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত আক্রমণ শোনা যায় এখন। রাজনীতির ময়দানে সৌজন্য দেখানোর জন্য তোমাকে উল্টে বিতর্কের মুখে পড়তে হয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী এবং ‘গদ্দার’ মন্তব্য নিয়েই তো বিতর্কের ঝড় উঠেছিল।
দেব: আমার সেরকম মনে হয় না। আমার যেটা ভাল লাগে সেটা আমি বলি। যে ভাল কাজ করবে তাকে মানুষ ভালবাসবে। দল বা বিরোধী দল কী বলছে, কী বলছে না সেটা আমার দেখার দরকার নেই। আমার কথা বলাতে, আমার বক্তৃতায় আমার দলের ভোট কাটছে কিনা সেটা আমার দেখার দরকার। কাউকে ছোট না করে, কাউকে অপমান না করে, কাউকে কুকথা না বলে যদি জেতা যায় তাহলে সমস্যা কোথায়।
* এখন তো রাজনৈতিক দলগুলিতে রাজনীতিবিদের থেকে তারকা প্রার্থী বেশি দেখা যায়। আপনি নিজেও সেলিব্রিটি। আপনার কি মনে হয় তারকা প্রার্থী দাঁড় করালে সেটা প্রভাব ফেলে?
দেব: আমি কিন্তু এই বিষয়টাকে সমর্থন করি। রাজনীতিতে যদি নতুন মুখ না আসে তাহলে তো একই রকম ভাবে চলবে। নতুন কেউ এলে নতুন স্ট্র্যাটেজি আসবে, দেশ এগোবে। আমার মনে হয় যুব সম্প্রদায়ের এগিয়ে আসা উচিত সবার আগে।
* কিন্তু সেক্ষেত্রে কি রাজনৈতিক পটভূমি থাকা জরুরি নয়?
দেব: না না, আমার মনে হয় না। রাজনীতি তো আর ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারের মত কোনও পেশা নয়। একটা ভাল সৎ মানুষের দরকার। যে মানুষকে ভাল রাখবে। নিজের কথা না ভেবে, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সের কথা না ভেবে যাতে মানুষের কথা ভাবে। শিক্ষিত হবে, মানুষকে ভালবাসা দেবে এমন মানুষের দরকার।
* আপনার প্রতিপক্ষের কথায় আসি। ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায় যে ভাষায় আপনাকে চ্যালেঞ্জ করেন, ইচ্ছে হয় না উত্তর দিতে?
দেব: (হেসে)ওর মনে হয় ঘুম আসে না আমাকে এভাবে না বললে। তবে হ্যাঁ দেখুন, এটা মানুষের ওপর নির্ভর করে। আমি জানি না ও কী ভাবছে। হিরণ তো নিজেও জিততে চায়। যে পদ্ধতিতে ও কাজ করছে, ভাবছে হয়তো এভাবে জেতা যায়। আমি যেভাবে কাজ করছি, যে আচরণ করছি, যে শব্দগুলো ব্যবহার করছি, আমার মনে হয় এভাবেও জেতা যায়। আসলে কীভাবে জেতা যায় সেটা তো সময় বলে দেবে।
* রাজনীতির বাইরে আপনাদের সম্পর্ক কী রকম?
দেব: এর মধ্যে ওর সঙ্গে দেখা হয়নি আমার। নির্বাচনের মাঝে একবারই আমার ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। আমি ওকে বলেছিলাম, ‘শরীরের দিকে লক্ষ্য রাখ’। অবশ্যই ও আমার বন্ধু, আমার সহকর্মী। ভোট মিটে গেলেও ও আমার বন্ধুই থাকবে।
* লোকসভা নির্বাচনের সূচি প্রকাশের আগে বলেছিলেন আর সাংসদ পদে দাঁড়াবেন না। শুধুই কি ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য ফেরা?
দেব: দেখুন আমি কোনও বিতর্কের মধ্যে থাকতে চাইনি। নির্বাচনের আগে দল ছাড়লে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে পারে। আমি চাইনি আমার জন্য দলের ক্ষতি হোক। আমি বলেছিলাম আমার কোনও পোস্ট চাইনা, আমি প্রচার করে দেব। কিন্তু দিদি চাননি আমি শুধু কাজ করি। দিদি বলেছিলেন, ‘তোমাকে দাঁড়াতে হবে। যে কোনও সিট থেকে তুমি দাঁড়াতে পারো, সেটা তোমার ইচ্ছা’। আমি বলেছিলাম, দাঁড়াতে হলে আমি ঘাটাল থেকেই দাঁড়াব, অন্য কোথাও থেকে দাঁড়াব না। তারপর ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কথাও উঠেছে। আমি তো পদ পাওয়ার জন্য কোনওদিন দল করিনি। এই দল থেকে অন্য দলেও যাইনি। আমার কাছে রাজনীতি হল মানুষকে ভাল রাখার জন্য। যারা এখন বিরোধী তারা তো অনেকে পাল্টি খেয়েছে। অনেককে তৃণমূলের অফিসে দেখা গিয়েছে। দিদি এবং ঘাটালের মানুষ জানেন যে দল যদি একেবারে দুর্বলও হয়ে যায়, দেব তৃণমূল ছেড়ে অন্য কোনও দলে যাবে না।
* আপনি যে দলের প্রার্থী সেই দলের বিরুদ্ধে তো ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠে এসেছে গত কয়েক বছরে। সেগুলো ভোটের প্রচারে প্রভাব ফেলছে না?
দেব: না, প্রভাব ফেলছে না। তার কারণ দলের মধ্যে যেটা ঘটছে সেটা তো আমি করিনি। আমার জন্য যদি দলের নাম খারাপ হত সেটা আমার দায়িত্ব ছিল। কিন্তু এটা সত্যি যে এবার সৎ মানুষের আসা দরকার রাজনীতিতে। দুর্নীতি তো শুধু তৃণমূল কংগ্রেসে নয়, বিজেপিতেও আছে। কয়েকদিন আগে শিবসেনাতেও দুর্নীতি ধরা পড়েছে। অজিত পাওয়ারের ওপর ৭০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। তিনি এখন মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সারদা মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন। তিনি একটা দলে যোগ দিলেন, সব মামলা উঠে গিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গেলেন। দুর্নীতি কম বেশি সব দলেই আছে।
* মিঠুন চক্রবর্তী সম্পর্কে আপনার বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। বিরোধী পক্ষের কারোর প্রশংসা করলেই আপনার দিকে আঙুল উঠছে।
দেব: কে কী বলল আমার দেখার দরকার নেই। দল যদি আমাকে বলে তখন ভেবে দেখব। দল তো আমাকে কিছু বলেনি। দুটো মানুষের সম্পর্ক কি ভাল হতে পারেনা? আপনি আজকালে আছেন অন্য কোনো সংস্থার লেখা পড়ে ভাল লাগতেই পারে। তখন তো আপনি তাঁকে নিশ্চয়ই বলবেন, ‘লেখাটা ফাটাফাটি হয়েছে’। অন্য কোনও সাংবাদিকেরও তো আপনার লেখা পড়ে ভাল লাগবে। তাঁরাও নিশ্চয়ই আপনাকে একই কথা বলবেন। এটাই তো নিয়ম। এটাই তো খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব। আমি তো কোনও অন্যায় করছি না।
* চাকরিতে দুর্নীতি নিয়ে "প্রধান" সিনেমার একটা ক্লিপ খুব ভাইরাল হয়। এতটা মিল আসল রায়ের সঙ্গে?
দেব: না না, অত ভেবে স্ক্রিপ্ট লিখিনি। এভাবে মিলে যাবে বুঝতেও পারিনি।
* শুটিংয়ে ফেরা কবে?
দেব: পুজোয় "টেক্কা" আসবে। ওটার এখনও কিছু শুটিং বাকি। ২৫ তারিখ নির্বাচনের পর একদিন বিশ্রাম নিয়ে ২৭ তারিখে "টেক্কা"র শুট রয়েছে। "খাদান"-এরও এখনও শুটিং বাকি আছে। দেখা যাক, ওটা বেশ বড় মাপের ছবি। আমাকে আবার আসানসোল যেতে হবে। তারপর মুক্তির বিষয়ে ভাবব।