শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Riya Patra | ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ : ৫৭Riya Patra
রিয়া পাত্র
এই ভোটে রাজ্যে রাজ্যে জোট নিয়ে এক একরকম নীতি নিয়েছে বামেরা। একদিকে কেরলে যখন লড়ছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে, অন্যদিকে বাংলায় বাম কংগ্রেস জোট লড়ছে ২৪-এর লোকসভা ভোট। এসবের মাঝেই বাংলায় তিন প্রার্থীর হয়ে প্রচার করে গেলেন সিপিএম-এর পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাট। বললেন, "হাম ঝুঁকতে নেহি, বিকতে নেহি..."।
* এই ভোটে বাংলা এবং তার বাইরে বামেদের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কী মনে হয় আপনার?
বৃন্দা: বাংলার বাইরে তো এটা পরিস্কার, দু"দফা যে নির্বাচন হয়েছে তাতে বিজেপি এবং তাদের জোট সঙ্গীরা কিন্তু পিছিয়ে গিয়েছে অনেকটা। তাদের আশানুরূপ ভোট হয়নি বলেই খোদ প্রধানমন্ত্রী এখন মোদির গ্যারান্টির কথা ছেড়ে অন্য ভাষা ব্যবহার করছেন। যে ভাষা বিজেপি আরএসএস এর ভাষা আসলে। সেই ভাষা সাম্প্রদায়িক, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে। বিষয়টা পরিষ্কার, মোদির নিজের গ্যারান্টির ওপর আর ভরসা নেই। আমি দেখেছি বাংলার বাইরে বিজেপির অবস্থা কাহিল একেবারে। বাংলায় এখন বিজেপি-তৃণমূল একটা ভুল ন্যারেশন দিচ্ছে। দেশের অন্য জায়গায় লড়াই বিজেপির বিরুদ্ধে, সংবিধানের ওপর তাদের হামলার বিরুদ্ধে। বাংলায় কিন্তু বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই দিতে পারে বাম এবং কংগ্রেসের জোট। তৃণমূলের বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে, সন্দেশখালির মতো ঘটনার বিরুদ্ধে, তাদের সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ কিন্তু ক্ষোভে ফুঁসছে। মানুষের তৃণমূলের ওপর যে রাগ, সেটা বিজেপি নিজের জন্য ভালোভাবে এই ভোটে ব্যবহার করতে চাইছে। বাংলার মানুষের জন্য এটা ফ্রম দ্য ফ্রাইং প্যান, ইন টু দ্য ফায়ার, এটা পরিষ্কার। আমি দেখছি এই পরিস্থিতিতে মানুষ আবার লালকে খুঁজছে।
* অর্থাৎ বামেরা বাংলায় ধীরে ধীরে তাদের পুরনো জমি ফিরে পাচ্ছে? প্রচারে এসে কী বুঝলেন?
বৃন্দা : তিন দিনে, রোড শোতে সব তো বোঝা যায় না। তবে আগের নির্বাচনের সঙ্গে এবারের প্রচার, একটা তফাৎ আমি দেখেছি। একটা সদর্থক ভাবনা আমাদের নেতাদের প্রতি রয়েছে মানুষের। এই তিনজনের প্রচারে আমি বুঝেছি, মানুষের আমাদের থেকে একটা আশাও রয়েছে, দুটোই কাজ করছে মানুষের মনে। অর্থাৎ মানুষ আশা করছে আমরা এগোব, আর বার্তা দিচ্ছে তোমরা এগোও, আমরা সাথে আছি। এই সম্পর্ক আমি পরিষ্কার দেখেছি।
* এই ভোটে জোটের একটা বড় ভূমিকা, একদিকে ইন্ডিয়া জোট, আবার রাজ্যে রাজ্যে বামেদের আলাদা জোট নীতি। ভোট বাক্সে কতটা প্রভাব ফেলবে জোট-জটিলতা?
বৃন্দা: ভোটে প্রভাব তো পড়বেই। মমতা ব্যানার্জিকে ইন্ডিয়া জোটের কথা তো বলতেই হবে। বাধ্য। বাংলার বাইরে তো কোনও উপস্থিতি নেই। কিন্তু আমরা যখন জোটে নীতি, বিচারের কথা বলছি তখন বাংলায় ওঁর সরকার উল্টোটা করছে। ইন্ডিয়া জোটের ধারণা, বক্তব্য, সিদ্ধান্তের থেকে অনেক দূরে চলে গেছেন মমতা। আমরা ইন্ডিয়াতে মেয়েদের সুরক্ষার কথা বলছি, তখন সামনে আসছে সন্দেশখালির ঘটনা। বাংলায় বাম, কংগ্রেস আসলে ইন্ডিয়া জোটকে রিপ্রেজেন্ট করছে। সঙ্গে রয়েছে একাধিক সিভিল সোসাইটি, অনেক মানুষ আমাদের সিদ্ধান্তগুলোর সঙ্গে রয়েছেন।
* তাহলে এই নির্বাচনে বামেদের প্রধান প্রতিপক্ষ কে? তৃণমূল নাকি বিজেপি?
বৃন্দা: এভাবে দেখা যাবে না। লোকসভা নির্বাচনে আমাদের স্লোগান বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও। এই লড়াই সংবিধান বাঁচানোর লড়াই। বাংলায় মানুষ মানতে পারছে না তৃণমূলকে। এই সরকার বাংলায় বিজেপির বিরুদ্ধাচারণ না করে সেই নীতিই নিয়ে এসেছে। দুর্নীতি, অত্যাচার চলছে।
* সবকিছু মিলিয়ে কি এবার বলা যায়, বামেরা যে মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল, সেই ফাঁকা জায়গা পূরণ হচ্ছে?
বৃন্দা: ২০১১ থেকে ২৪। বামেদের, সিপিএম -এর ওপর তৃণমূল অত্যাচার করেছে লাগাতার। মানুষ আমাদের সঙ্গে না থাকলে আমরা দাঁড়াতে পারতাম না। সন্দেশখালিতে আমি শুনেছি, মেয়েরা বলছে বাম সমর্থক বলেই অত্যাচার হয়েছে তাদের ওপর। আমরা মানুষের সঙ্গে থেকেছি, করোনা কালে রেড ভলান্টিয়ার, শ্রমজীবী ক্যান্টিন করেছি। আমরা সব সময় যুব সমাজের সঙ্গে থেকেছি। মানুষের সঙ্গে ছিলাম। সেই কারণে এবার মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। এখন এই মানুষের সমর্থনকে ভোটে পরিবর্তন করাটাই আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
* বাংলার কথা ধরলে গত এক দশকের বেশি সময়ে বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে বামেরা কি যতটা প্রয়োজন ততটা সুর চড়াতে পারল?
বৃন্দা: আমরা নিশ্চয়ই পেরেছি। আরও করতে হবে, আরও তীব্র হবে আন্দোলন। এমনিতেও আমরা কমিউনিস্টরা আমাদের কাজে কখনও তুষ্ট হতে পারি না। যদি বল আরও তীব্র আন্দোলন দরকার ছিল, আমি বলতে পারি, যেদিন বুঝে যাব আমরা আমাদের কাজে খুশি, যথেষ্ট কাজ করে ফেলেছি, সেদিন সেটাই হবে আমাদের দুর্বলতা।
* বাংলায় বা বাইরে বামেদের লড়াইয়ের মুখ হিসেবে হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া সেভাবে মহিলা মুখ উঠে আসেনি...
বৃন্দা: এটা একটা ভুল কথা। বাংলায় যে পরিমাণ মহিলারা তৃণমূলের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, সংবাদ মাধ্যম তাদের মুখ হিসেবে না বুঝলে আমাদের কিছু করার নেই। বাংলায় পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে নানা জায়গায় ২০১১-র পর থেকে মহিলারা সন্ত্রাস, অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে লড়েছে সামনে থেকে। লাগাতার লড়াইয়ে গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি, দলের মহিলা নেত্রীরা বিরাট লড়াই করেছেন। আরও একটা কথা, মানুষই আসলে লিডার ঠিক করে। বৃন্দা কারাট আর এই সময়ের দীপ্সিতা, ঐশীর মাঝে কোনও মহিলা মুখ ছিল না এটা ভুল।
* কিন্তু বিষয় যখন নির্বাচন, বাংলার কথাই ধরুন, ভোটের প্রার্থী হিসেবে কি সেভাবে মহিলা মুখ উঠে এল?
বৃন্দা: মহিলারা উঠে এসেছেন বহু কঠিন পরিস্থিতিতে। আমাদের মেয়েরা লড়ছে। এবার সায়রা, দীপ্সিতা লড়ছে। তার আগেও বিধায়ক, মন্ত্রী ছিল। রেখা গোস্বামী, ছায়া বলের মতো নেত্রী, মন্ত্রীরা ছিলেন। আমরা অত্যাচারের মাঝে দাঁড়িয়েও লড়াই জারি রেখেছি।