বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Pallabi Ghosh | ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৮ : ০০Pallabi Ghosh
বিভাস ভট্টাচার্য: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ থেকে স্নাতক। ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে প্রবেশ। এসইউসিআই (কম্যুনিস্ট) দলের ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও"র সদস্য হিসেবে বহু আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে মেডিসিন নিয়ে এমআরসিপি করেছেন। ডা. বিপ্লব চন্দ্র এবছর উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের এসইউসিআই দলের প্রার্থী।
* এই লোকসভা কেন্দ্রে দু"জন সাংসদ আছেন। কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির তাপস রায় ছিলেন বিধায়ক। এককথায় যাকে বলে সকলেই হেভিওয়েট। ধারে বা ভারে এঁরা কি আপনার থেকে এগিয়ে আছেন?
বিপ্লব: ধার, ভার, ওয়েট বা হেভিওয়েট কথাগুলো কিসের নিরিখে হয় একটু বলতে পারেন? দেখা যাচ্ছে, আজকাল ভোটে দাঁড়ানোর পর তথাকথিত রাজনৈতিক নেতাদের প্রচুর ব্যাঙ্ক ব্যালান্স বা সম্পত্তি হয়। কখনও কখনও এই নেতারা ধরা পড়ে জেলে পর্যন্ত যান। কখনও তাঁরা নীতিহীনভাবে দল বদলও করেন। এই সমস্ত দেখিয়ে যদি কেউ দাবি করেন তিনি ধার ও ভার-এ এগিয়ে আছেন, তবে অবশ্যই আমরা পিছিয়ে আছি। কারণ আমার দল কখনই টাকার অঙ্কে বা পেশীশক্তিতে তাঁদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না আর দুর্নীতির প্রশ্ন তো আসেই না।
* আপনি একটি বামপন্থী দলের প্রতিনিধি। কংগ্রেস প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্য বামফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থী। এই এলাকায় যাঁরা বাম ভোটার, তাঁদের কাছে গিয়ে আপনি কী আবেদন করছেন?
বিপ্লব: এসইউসিআই দলের হয়ে আমি ভোটে লড়ছি। এলাকায় যাঁরা বামমনস্ক ভোটার আছেন, তাঁরা কি কংগ্রেসকে ভোট দেবেন? আমার মনে হয় এটা হতে পারে না। যাঁরা বামপন্থার প্রতি শ্রদ্ধা বা আবেগ রেখে রাজনীতি করছেন বা করেছেন, তাঁরা অন্তত কংগ্রেসকে দুর্নীতিমুক্ত বা অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে ভাবতে পারেন না। কারণ এই দুটি ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ভূমিকা খুব একটা ভাল নয়। যদি যথার্থ বামপন্থা বা সংগ্রামী বামপন্থার চর্চা করতে হয় এবং সেটা মানুষের সামনে তুলে ধরতে হয়, তবে যে কোনও বামপন্থী কর্মী এবং সাধারণ মানুষকে বলছি, আপনি এসইউসিআইকে ভোট দেবেন। আমাকে ভোট দেবেন। এই কংগ্রেসের হাতেই ১৯৭১ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত হাজারের ওপর বামপন্থী কর্মী খুন হয়েছেন। ফলে সেই কংগ্রেসকে একজন সৎ বামপন্থী মানুষ ভোট দেবেন সেটা অন্তত আমি আশা করতে পারি না।
* আদতে আপনি হুগলির বাসিন্দা। গুপ্তিপাড়ায় বাড়ি। উত্তর কলকাতা থেকে কেন ভোটে দাঁড়াতে গেলেন?
বিপ্লব: আমি আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র। এখন যে হাসপাতালে আমি কর্মরত, সেটাও এই লোকসভা কেন্দ্রের ভিতর। আমার দলীয় অফিস এই কেন্দ্রের মধ্যেই। এই কেন্দ্রে আমি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। সেই হিসেবেই দল আমাকে উত্তর কলকাতা কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে।
* জোর কীসের ওপর দিচ্ছেন? বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রচার না পথসভা?
বিপ্লব: আমাদের প্রচার তো বড় বড় মিডিয়া দেখায় না বা যেটুকু দেখায় সেটা খুবই সামান্য। আমরা জোর দিচ্ছি বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার, হ্যান্ডবিল বিলির ওপর। নির্বাচন নিয়ে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি কী হওয়া উচিত তার ওপর একটা বই লিখেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক, সেই বইটাও আমরা দিচ্ছি। সঙ্গে থাকছে পোস্টার, দেওয়াল লেখা, পথসভা।
* এলাকার দেওয়ালে আপনাকে সেরকম দেখা যাচ্ছে না কেন?
বিপ্লব: দেওয়াল আমরা অনেক জায়গাতেই লিখেছি। আবার এরকমও হয়েছে, আমাদের দেওয়াল তৃণমূল বা সিপিএমের থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে। সিপিএমকে যখন জিজ্ঞাসা করেছি তখন তাঁরা বলছেন, এখানে তো আমরাই লিখি। আর তৃণমূল বলছে, আপনারা তো আন্দোলন-টান্দোলন করেন। ভোটে দাঁড়াচ্ছেন! এটার কী দরকার?
* এই নির্বাচনে প্রখ্যাত শিল্পী গণেশ হালুই, মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা সুজাত ভদ্র-সহ একাধিক বিশিষ্টরা আপনাকে ভোট দিতে আবেদন জানিয়ে লিফলেট প্রকাশ করেছেন। প্রচারে কি এঁরা আপনার সঙ্গে থাকছেন?
বিপ্লব: তাঁরা আমার হয়ে আবেদন করেছেন ঠিকই। কিন্তু প্রচারে থাকছেন না। ব্যাপারটা এরকম নয় যে সমর্থন জানিয়েছেন মানে তাঁরা রাতারাতি এসইউসিআই দলে যোগদান করছেন।
* পেশায় চিকিৎসক। ভোটের জন্য কি রোগীদের কম সময় দিচ্ছেন?
বিপ্লব:না, একদম নয়। কিছুটা বোঝা বরং নিজের ওপর নিয়েছি। একদম সকালে হাসপাতালে চলে আসছি। আউটডোর, রাউন্ড সেরে বিকেলে আর সন্ধ্যাবেলায় প্রচার সেরে আবার হাসপাতালে চলে আসছি। কাজে ফাঁকি দেওয়ার কোনও সুযোগই নেই।
* জিতলে এলাকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে কী করবেন সেটা কিছু ভেবেছেন?
বিপ্লব: দেখুন স্বাস্থ্য আন্দোলনের সঙ্গে আমি দীর্ঘদিন ধরেই জড়িত। ট্রমা সেন্টার বানানোর অছিলায় রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথ্যালমোলজিকে তুলে দেওয়ার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আমরাই আটকে দিয়েছি। সরকারি হাসপাতালে আজ ওষুধের অভাব, চিকিৎসক, নার্স থেকে শুরু করে চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কর্মীর অভাব সর্বত্র। সেইসঙ্গে যোগ হয়েছে দুর্নীতি। সরকারি হাসপাতালের ওপর ভরসা করে থাকেন সাধারণ মানুষ। আবার মেডিক্যাল এডুকেশনকে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার পরিকল্পিতভাবে ধংস করার চেষ্টা করছে সরকারি কলেজে। যাতে ভবিষ্যতে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলির রমরমা বাড়ে। যদি উত্তর কলকাতার মানুষ আমাকে সংসদে পাঠান, এটা নিয়ে অবশ্যই একটা ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারব।
* ভোটের দিন সব বুথে এজেন্ট দিতে পারবেন?
বিপ্লব: সব বুথে যদি নাও পারি, অন্তত অধিকাংশ জায়গায় দিতে পারব এটা বলছি। কারণ, এটা তো মানবেন আমাদের দলে কেউ কিছু পাওয়ার আশায় আসেন না। ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে আসেন। ফলে এটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে একদিনে আমাদের দলে হাজার হাজার লোক চলে আসবেন। অন্য দলে যেমন বন্যার মতো লোক আসছেন বা বেরিয়ে যাচ্ছেন সেটা আমাদের দলে হয় না।