মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পূর্ণ খবর

লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ | Exclusive: ধর্মীয় তাস খেলে মানুষকে ভুল বুঝিয়েছেন মোদি-মমতা: মিলটন

Kaushik Roy | ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৫ : ২৩Kaushik Roy


বিভাস ভট্টাচার্য 

বীরভূমের ভূমিপুত্র। ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসেছেন কংগ্রেস নেতা মিলটন রশিদ। বিনয়ী ব্যবহারের জন্য প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। ২০১৬ সালে হাঁসন কেন্দ্রে দীর্ঘদিনের তৃণমূল বিধায়ক অসিত মালকে হারিয়ে বিধায়ক হন। এবারের লোকসভা নির্বাচনে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মিলটন। 

*একদিকে তিনবারের জেতা সাংসদ শতাব্দী রায় অন্যদিকে প্রাক্তন পুলিশকর্তা দেবাশিস ধর, দুই হাই প্রোফাইলের মাঝে কি কোনও চাপ অনুভব করছেন? 

মিলটন: এটা দেশসেবা বা সমাজ সেবা। মানুষের জন্য কাজ করা। এখানে সেই হাই প্রোফাইল যে মানুষের দরবারে সবসময় থাকে এবং আপদে-বিপদে সবসময় পাশে দাঁড়ায়। মানুষকে নিজের মতো করে আপন করে নিতে পারে। ফলে আপনারা যেটাকে হাই প্রোফাইল বলে ভাবেন সেটা মানুষের কাছে কিন্তু হাই প্রোফাইল নয়। 

*২০১৪তে তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএমের ভোটের তফাৎ ছিল ১ লক্ষ। ২০১৯-এ সেই তফাৎটা বেড়ে হল প্রায় ৫ লক্ষ। এবারে বাম-কংগ্রেস জোটের হয়ে আপনি লড়বেন। এই যে একটা বিরাট সংখ্যক ভোটের পার্থক্য, সেটাকে সামাল দেবেন কীভাবে? 

মিলটন: নরেন্দ্র মোদি এবং মমতা ব্যানার্জি দু"জনেই এর আগে ধর্মীয় তাস খেলে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ভোট করিয়েছিলেন। বামেদের সঙ্গে আমাদের জোট হয়েছে। ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমরা আমাদের যে নিজস্ব ভোট সেটা কিন্তু ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছি। আগে আমাদের এজেন্ট অত্যাচারের ভয়ে থাকত না। কিন্তু ২০২৩-এ আমরা বুঝিয়ে দিয়েছি আমাদের "সব" আছে। আমাদের ওপর ভরসা না থাকার জন্য বামেদের ভোট তৃণমূলে গেছে বা কংগ্রেসের ভোট তৃণমূল এবং বিজেপিতে গেছে। এই ভরসা না থাকার পেছনে ছিল এনআরসি ইস্যু। কিন্তু এখন মানুষ বুঝতে পেরেছেন এনআরসি হল ভোট রাজনীতির একটা ইস্যু। ফলে ধর্মীয় কারণে এখন কিন্তু আর ভোট হবে না। ভোট হবে মানুষের খিদে নিয়ে, তাঁর রুটি রুজির প্রশ্নে। ফলে ধর্মকে হাতিয়ার করে ভোট দেওয়াটা যে ক্ষতি সেটা মানুষ বুঝে ফেলেছেন। এটা কিন্তু শুধু বীরভূমবাসী নয়, গোটা দেশই বলছে। ধর্ম তো থাকবেই। আমরা সবাই সেটা পালন করব। তাই আমাদের ভোট আমরা ফিরে পাব।

*এই বীরভূম লোকসভার যে সাতটি বিধানসভা আছে সেখানে বাম বা কংগ্রেস গত ২০২১ সালে একটি আসনেও জেতেনি। ফলটাকে কীভাবে নিজেদের দিকে ঘোরাবেন? দল এটা নিয়ে কী ভাবছে ? 

মিলটন: এটা আমরা ঘোরাতে পারব না। এটা কোনও রাজনৈতিক দল ঘোরাতে পারবে না। মানুষ দুটো দলকেই বুঝে নিয়েছেন। একটা সময় সাধারণ মানুষই আমাদের জিরো করেছেন আবার ওদের হিরো করেছেন। ফলে সাধারণ মানুষ মনে করলেই আবার ওদেরকে জিরো বানিয়ে দিতে পারেন। 

*বিজেপি, তৃণমূল এবং জোট প্রার্থীর মধ্যে একমাত্র জোট প্রার্থী বা আপনিই ভূমিপুত্র। এটা কি একটা সুবিধা বা যদি সুবিধা হয় তবে কীভাবে এটাকে আপনি কাজে লাগাবেন? 

মিলটন: এটা আমাকে বেশি ব্যবহার করতে হবে না। তার কারণ, এলাকার মানুষ চেয়েছিলেন বলেই দল আমাকে প্রার্থী করেছে এবং জনতা চেয়েছিলেন বলেই বামেদের সঙ্গে আমাদের জোট হয়েছে। এলাকার মানুষই চাইছেন তাঁদের বাড়ির লোককে। এবার আসি ব্যবহারের কথায়। আমি ভূমিপুত্র বললেই আমি ভোট পাব ব্যাপারটা ঠিক তাই নয়। যখন বিধায়ক ছিলাম তখন মানুষ দেখেছেন আমাকে। যেটা বলতে পারেন একটা পরীক্ষা ছিল। সেটা দেখে নিশ্চয় তাঁরা আমার কথা ভাববেন।

*এখানে একটা প্রশ্ন। আপনি ভূমিপুত্র এটা যেমন ঠিক আবার যিনি জিতে আসছেন তিনি ভূমিপুত্র নয় সেটাও ঠিক। ফলে ভূমিপুত্র বিষয়টি কি খুব গুরুত্বপূর্ণ? 

মিলটন: দেখুন এই বিচারের ভারটা সম্পূর্ণ মানুষের। এটা তাঁদের বিবেকের বিষয়। আপনার পাশের বাড়ির লোক ভোটে দাঁড়িয়েছেন আর আরেকজন কেউ বাইরে থেকে এসেছেন। আপনার বাড়িতে কোনও বিপদ হলে পাশের বাড়ির লোকটা কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ছুটে আসবেন। অন্যদিকে যে লোকটা বাইরে থাকে তার আসতে কিন্তু সময় লাগবে। একটা কথা আমরা সবসময় বলি বাইরের ভালো বন্ধুর থেকে বাড়ির পাশের শত্রু ভালো। এককথায় বলতে চাইছি, বিপদের সময় কাছে দাঁড়ান কিন্তু পাশের বাড়ির লোকই। 

*আপনি নিজে কি সেই পাশের বাড়ির লোক? কারণ অতীতের নির্বাচনী ফলাফল বলছে স্থানীয় বিষয়টি খুব একটা বড় হয়ে কিন্তু প্রতিফলিত হয়নি। 

মিলটন: শুধু স্থানীয় লোক হলেই কিন্তু হবে না।‌ মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার লোক হতে হবে। আমার আচার আচরণ কিন্তু দেখেছেন মানুষ। ১৯৮৯ থেকে রাজনীতি করছি। এতবড় জায়গায় আমাকে সবাই চেনেন এবং জানেন। আমি সকলকে অনুরোধ করব আপনারা দেখেশুনে এবং বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন। 

*ভোট মানেই একটা বড় খরচের ধাক্কা। ম্যানেজ করতে পারছেন? 

মিলটন: না, ম্যানেজ করতে পারছি না। কিন্তু এটাও বলছি টাকাতে কিন্তু ভোট হয় না। কারণ, আমাদের কংগ্রেস এবং বাম কর্মীরা যেভাবে সজাগ হয়েছেন সেটা কিন্তু শুধু টাকার জোর থাকলেই সম্ভব হত না। আমায় কোনও চাপই নিতে হচ্ছে না। 

*আপনার জেলাকে বলা হত অনুব্রত মণ্ডলের দুর্গ। এইমুহূর্তে তিনি জেলায় নেই। বিরোধী প্রার্থী হিসেবে এটা কি আপনার কাছে একটা সুবিধা? 

মিলটন: বীরভূম জেলা আমার বা কারুর কিন্তু পৈতৃক সম্পত্তি নয়। কাল যদি কংগ্রেস দিল্লিতে ক্ষমতায় আসে নিশ্চয় এই জায়গাটা আমার পৈতৃক সম্পত্তি হয়ে যাবে না। অনুব্রত মণ্ডল যখন ছিলেন তখনও তো আমি বিধায়ক হয়েছিলাম। 

*হ্যাঁ, কিন্তু আপনি যে সময়ের কথা বলছেন সেটা ২০১৬ সাল। শুনেছি আপনার সঙ্গে তখন নাকি ভালো সম্পর্ক ছিল।  

মিলটন: আমার তো এখন তৃণমূল বা বিজেপির সঙ্গে আরও ভালো সম্পর্ক। অবশ্যই সেটা ব্যক্তিগত সম্পর্ক। আজ যারা জেলায় তৃণমূল বা বিজেপি করছেন তাঁদের সবার সঙ্গে একটা সময় আমি কাজ করেছি। এমনও হয়েছে আমি যখন তাঁদের এলাকায় ভোট করতে যাচ্ছি তাঁদের মধ্যে কেউ এগিয়ে এসে জল খাইয়েছেন বা মালা দিয়ে গেছেন। দেখা যাবে এই মালা দিতে দিতেই তাঁরা আমাকে ভোট দিয়ে দিয়েছেন। ফলে অনুব্রত মণ্ডল থাকল কী থাকল না সেটা কোনও বড় বিষয় নয়।




বিশেষ খবর

নানান খবর

শীঘ্রই আসছে...

নানান খবর



সোশ্যাল মিডিয়া



04 24