রবিবার ১৭ নভেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Riya Patra | ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ১০ : ৩৬Riya Patra
রিয়া পাত্র
প্রাক্তন এসএফআই রাজ্য সম্পাদক, ইতিমধ্যে সিঙ্গুর থেকে বিধানসভা নির্বাচন লড়েছেন এবং হেরেওছেন। তারপরেও যাদবপুরের মতো কেন্দ্র থেকে সিপিআইএম প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়েছে তাঁকেই। প্রচারের ফাঁকে যাদবপুরের সিপিআইএম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য।
* যাদবপুর এবং বাম বলতে মানুষ জানেন সুজন চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সুজন চক্রবর্তী এবারেও ভোটে লড়ছেন। তাহলে আপনাকে কেন যাদবপুরে? কোথাও কি প্রবীণের বদলে নবীনকে দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট?
সৃজন: সিপিআইএম নেতৃত্ব দিতে পারবে এই উত্তর। তবে আমি এটুকু বলতে পারি, আমাদের দলে প্রার্থী হওয়ার জন্য বাড়তি কিছু লাগে না। তাই আমাদের দলে অর্জুন সিং -এর সংখ্যা কম। যে যা দায়িত্ব পায় কাজ করে। সিপিআইএম আমাকে প্রার্থী করবে বলে মনে করেছে।
* যাদবপুর আপনার কাছে হাতের তালুর মতো...
সৃজন: হ্যাঁ, আমি এখানেরই। যাদবপুর আমার সব জানে।
* তবুও ভোটের ময়দান আলাদা। সুজন চক্রবর্তীর থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন যাদবপুর নিয়ে?
সৃজন: বিকাশ ভট্টাচার্য, সুজন চক্রবর্তী, শমীক লাহিড়ি যাঁরা এই চত্বর জানেন, তাঁরা প্রত্যেকেই বলেছেন বেশি করে সাধারণ, দরিদ্র, মধ্যবিত্ত মানুষের সঙ্গে তুমি কথা বলবে। কারণ মানুষ রুজি রুটির সমস্যায় রয়েছেন। সেটা তুলে ধরাই কাজ কমিউনিস্ট পার্টির। প্রার্থী হিসেবে তাঁদের অভিজ্ঞতা শোনাই তোমার কাজ। তাতে আগামী দিনে সাংসদ হলে মানুষের জন্য ঠিক কী করবে, সেটা অনেকটা পরিষ্কার হবে। আমি সেটাই মেনে চলার চেষ্টা করছি।
* কেমন সাড়া পাচ্ছেন প্রচারে?
সৃজন: ব্যাপক। যাদবপুরের মানুষ তৃণমূল বিজেপি নিয়ে বিরক্ত।
* আপনারা বলেন সেকথা। কিন্তু এক দশকের বেশি সময় ধরে আপনারা বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলায়, সুর যতটা চড়ানোর, ততটা কি হল?
সৃজন: এটা আমি মেনে নেব। বিরোধিতায় আরও একটু সক্রিয় উপাদান থাকত যদি... ভেবে দেখা উচিত। তবুও দুটো কথা-
৩৪ বছরের সরকারের রেশ থাকতে বাধ্য। সেই রেশ নিয়ে বিরোধিতায় অসুবিধে হয়েছে। সেটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া, ২০০৭-২০১৭/১৮ বাংলার সিপিএমকে আর্থিক সহ সব ধরনের আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে। এই আক্রমণ সামলে বামফ্রন্ট বিরোধিতা করতে পারল না বললে, সবটা ঠিক বলা হবে না।
* বিধানসভা ভোট থেকেই লক্ষ্যণীয়, সিপিআইএম তরুণ তুর্কি সামনে আনতে চাইছে, আনছেও। তাতে কি লাভ হল বিশেষ?
সৃজন: সমাজের বেশিরভাগ অংশ তরুণ প্রজন্মের। তাঁদের ভাষা, ভঙ্গিমা বোঝার জন্য সিপিআইএম-দের কমিউনিকেটরদের মধ্যে তরুণ প্রজন্ম থাকলে বাড়তি সুবিধা তো হয়ই। রাজনীতির কথা পৌঁছতেও সুবিধা, মানুষের ভাবনা বুঝতেও সুবিধা।
* বয়স ফ্যাক্টর?
সৃজন: আমাদের দলে নবীন প্রবীণ মিশেল আছে। বিমান বসুর যেটা কাজ, প্রতীকুর রহমানের সেটা নয়। প্রবীণদের ফেলে দেওয়াও নয়, আবার তারুণ্যের জন্য ভোট বেশি পাবে সেটাও সবসময় ঠিক নয়।
* জিতলে কত মার্জিন প্রত্যাশা করেন?
সৃজন: যাদবপুরের লাল রঙ এবার আরও লাল হবে। এখানের সাংসদের থেকে যে পরিষেবা পাওয়ার কথা, মানুষ তা পায়নি। আমরা এটা দিতে বদ্ধ পরিকর।
* প্রার্থী সৃজন ৭ বিধানসভায় প্রচারে তাহলে কী বার্তা দিচ্ছেন?
সৃজন: একটাই কথা, রোটি- কাপড়া-মকান।
* কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন আছে, এই যে অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের দাবিতে জোর দিচ্ছেন আপনি। সেটা দিয়েই কি বাম জামানায় ইংরেজি তুলে দেওয়া এবং কম্পিউটার নিয়ে বিরোধ ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা? যাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন সেসময়, তাঁরা এখন আপনারই ভোটার....
সৃজন: এগুলো নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে। তবে স্বাধীনতা পরবর্তী এডুকেশন কমিটি, তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করতে হবে। জ্যোতি বসুর সময়ের সিদ্ধান্ত, দেশের আরও অনেক রাজ্যেই এই সিদ্ধান্ত বলবৎ ছিল। মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা মূল লক্ষ্য ছিল। কম্পিউটার প্রসঙ্গে বলব, সিপিআইএম একজন এআই সঞ্চালিকাকে নিয়ে এসেছে। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে আমাদের বিরোধ নেই। সেই সময়ে বলা হয়েছিল, এভাবে কম্পিউটার এলে কিছু মানুষ কর্মচ্যুত হবেন, তাঁদের কাজের পুনর্বাসন নিয়ে সোচ্চার ছিল দল। এই সব বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে আমি রাজি। কিন্তু দেশের একগুচ্ছ সমস্যার মাঝে ১৯৮০ সালের সিদ্ধান্তে ফিরে যাওয়া আসলে এই সময়ের সমস্যা থেকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়া।
* যাদবপুরের মানে আপনার ভোটার যাঁরা, ভাঙড়, বারুইপুরের একটা বড় সংখ্যার ভোটার সংখ্যালঘু। এর জন্য সিপিআইএম প্রার্থী কতটা আইএসএফ নির্ভর?
সৃজন: আইএসএফ সংখ্যালঘুদের দল নয় ফর্মালি। তবে ওদের বেস যেখানে, সেখানে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ভাল। আমরা আইএসএফ বা কংগ্রেসের সঙ্গে এই কারণে যাচ্ছি না যে আমাদের সংখ্যালঘু ভোট দরকার। আমি সব ধর্মের মানুষের কাছে আবেদন করব, তৃণমূল-বিজেপির বাইনারির বাইরে তৈরি হওয়া তৃতীয় পরিসরকে সমর্থন করুন। আমি প্রথম দিন থেকে বলছি, আইএসএফ রক্ত ঝরিয়ে কাজ করেছে। আমাদের দলের কথাবার্তা চলছে আইএসএফ- এর সঙ্গে। আমি সকলের কাছে আগেও আবেদন করেছি, এই ইন্টারভিউর মাধ্যমেও বলতে চাই, তৃণমূল, বিজেপির সুবিধা হয়ে যায় এমন কিছু যাতে না করি, সেটা দেখতে হবে। আমি মনে করি গোটা যাদবপুর জুড়ে তৃতীয় পরিসর তৈরিতে তাদের সাহায্য পাব এবং সেটা ধর্মের ভিত্তিতে নয়।
* এই যে আইএসএফ-বাম- কংগ্রেস আসন সমঝোতা নিয়ে দীর্ঘ জল্পনা, সৃজন ভট্টাচার্য কি তাদের জোটের প্রার্থী, নাকি সিপিআইএম-এর প্রার্থী?
সৃজন: আমরা আসন সমঝোতার চেষ্টা করেছি। একুশের ভোটে আমরা জোট করেছিলাম। এবার সেটা হয়নি। তবে যেটা হচ্ছে সমস্ত দল ফর্মাল কমন প্ল্যাটফর্ম না বানিয়ে একটা আসন সমঝোতার চেষ্টা করছে। যাতে কেউ কারও অসুবিধা না করে বিজেপি- তৃণমূল বিরোধী ভোট একসঙ্গে আনতে পারি। আমি বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিআইএম প্রার্থী। আমি বামফ্রন্টের ভেতরে সমস্ত বামপন্থী দল, বামফ্রন্টের বাইরে সমস্ত বামপন্থী দল, কংগ্রেস এবং আইএসএফ সবার সাহায্য চাইছি। আমি নিজেকে সবার প্রতিনিধি হিসেবে যাদবপুরের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে চাই।।
* তিন দলের আসন সমঝোতা থাকলে বিশেষ জোট নামে আপত্তি কী ছিল?
সৃজন: আগের বার বিতর্ক হয়েছে। বিভিন্ন দলে কিছু নিজস্ব নিয়ম নীতি থাকে।
* কিন্তু সমীকরণ তো একই রইল বাংলায়...
সৃজন: ঠিকই। অনেকটা একই রইল। কিন্তু লোকসভা ভোটে ইন্ডিয়া প্ল্যাটফর্ম হয়েছে। তৃণমূল গেল, বেরিয়ে গেল। আইএসএফ হতে চায়নি তার অংশ। তাহলে তাকে বাদ দিতে হয়। "ইন্ডিয়া"র দলগুলির সাহায্য চাইছি। তাই আলাদা করে কোনও নাম দিইনি। তবে আমরা একসঙ্গে লড়ছি। এক্ষেত্রে বামফ্রন্টের মধ্যে বোঝাপড়া প্রায় শেষ। কংগ্রেসের সঙ্গেও প্রায় শেষের মুখে। আইএসএফ-এর সঙ্গে যেটুকু বাকি আছে, শেষ হয়ে যাবে শ্রীঘ্রই।
* আইএসএফকে কি সিপিআইএম বাংলায় মার্ক্সবাদী মৌলানা ভাসানি বানাতে চেয়েছিল? চাইলেও কতটা ব্যর্থ?
সৃজন: এটা আইএসএফ- এর অটোনমিকে ছোট করা হবে যদি এভাবে বলি। আইএসএফ স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল। আমরা পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে জোট করিনি। আমরা তাঁদের ম্যানিফেস্টোর সঙ্গে অনেকটা একমত হয়েছিলাম। একসঙ্গে পথ হাঁটতে চেয়েছিলাম। আমরা আলাদা করে মার্ক্সবাদী মৌলানা ভাসানি তৈরি করতে চাইনি।
* এই যে সিপিআইএম তরুণ প্রজন্মের দিকে জোর দিচ্ছে, দেওয়াল লিখনকে ফেসবুকের দেওয়ালে নিয়ে এসেছে, গান তৈরি করছে। কোথাও গিয়ে কি তরুণ প্রজন্ম কাস্তে হাতুড়ি তারার সমান গিটারকে ভাবছে?
সৃজন: বিষয়টা আইদার-অর নয়। কমিউনিস্টদের সঙ্গে পৃথিবী জুড়ে সৃজনশীল মানুষ থেকেছেন সবসময়। এটাই দস্তুর।আমাদের ক্রিয়েটিভ ভলান্টিয়ারা করছেন কাজ। বাকিরা ভাড়া করে করছে।
* এই ভোটে সম বয়স্ক বন্ধুরাও লড়ছেন, কাদের দেখতে চান সংসদে?
সৃজন: ৪২ আসনে তৃণমূল আর বিজেপি ছাড়া বামপন্থী, আইএসএফ, কংগ্রেস সকলকে দেখতে চাই।