মৃত্যু উপত্যকা কাশ্মীর, জঙ্গিদের ভূস্বর্গ! একনজরে ২০০০ সালের পর থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার সময়রেখা
অভিজিৎ দাস
বুধবার, 23 এপ্রিল 2025
1
15
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে এক সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই অন্যান্য রাজ্যের পর্যটক। ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার পর দেশের বেসামরিক নাগরিকদের উপর এটি সবচেয়ে মারাত্মক হামলা। যা জম্মু ও কাশ্মীরে সাধারণ নাগরিকদের উপর জঙ্গি হামলার তালিকাকে আরও দীর্ঘ করে তুলেছে।
2
15
২০০০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ভারত সফরের প্রাক্কালে, ২১শে মার্চ অনন্তনাগ জেলার চাট্টিসিংপোরা গ্রামে সংখ্যালঘু শিখ সম্প্রদায়ের উপর একদল জঙ্গি হামলা চালায়। এই হামলায় ৩৬ জন নাগরিক নিহত এবং বহু মানুষ আহতও হন।
3
15
ওই বছরই ২ আগস্ট নুনওয়ান বেস ক্যাম্পে আরও একটি হামলা হয় যেখানে একদল জঙ্গি পহেলগাঁওয়ে অমরনাথ তীর্থযাত্রীদের উপর হামলা চালায়। এই হামলায় মোট ৩২ জন নিহত হন। যার মধ্যে ২১ জন হিন্দু তীর্থযাত্রী, ৭ জন স্থানীয় মুসলিম দোকানদার এবং ৩ জন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ছিলেন।
4
15
২০০১ সালের জুলাই মাসে অমরনাথ তীর্থযাত্রা আবারও আক্রমণের শিকার হয়। জঙ্গিরা শেষনাগ হ্রদের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে অনুপ্রবেশ করে দু'টি ইম্প্রোভাইজড বিস্ফোরক ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণ ঘটায়। এই হামলায় ১৩ জন নিহত হন। যার মধ্যে ৮ জন হিন্দু তীর্থযাত্রী, ৩ জন মুসলিম এবং ২ জন নিরাপত্তা কর্মী ছিলেন।
5
15
ওই বছর শ্রীনগরের জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা কমপ্লেক্সে জঙ্গি হামলা চালানো হয়। একজন আত্মঘাতী বোমারু একটি গাড়িতে বিস্ফোরক রেখেছিল। এই হামলায় ৩৬ জন নিহত এবং এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিলেন। এই হামলার জন্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদকে দায়ী করা হয়েছিল।
6
15
২০০২ সালে, জম্মু ও কাশ্মীরে সাধারণ নাগরিক ও নিরাপত্তা কর্মীদের লক্ষ্য করে একাধিক হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল কালুচক গণহত্যা। জঙ্গিরা কালুচক এলাকায় একটি হালকা পাহারায় থাকা সেনা ক্যাম্পে প্রবেশ করে ৩৬ জনকে হত্যা করে, যাঁদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। পৃথক একটি হামলায় জঙ্গিরা অমরনাথ যাত্রাকে লক্ষ্য করে ১১ জন তীর্থযাত্রীকে হত্যা করে।
7
15
২০০২ সালের ২৩শে নভেম্বর, দক্ষিণ কাশ্মীরের লোয়ার মুন্ডায় একটি আইইডি বিস্ফোরণে উনিশ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে নিরাপত্তা কর্মী, মহিলা এবং শিশুরাও ছিলেন।
8
15
২০০৩ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলায় নদীমার্গ হত্যাকাণ্ড ঘটে। সেনার পোশাক পরিহিত সশস্ত্র জঙ্গিরা কাশ্মীরি পণ্ডিতদের একটি কলোনিতে প্রবেশ করে সাধারণ মানুষকে বাড়ি থেকে বার করে গুলি করে হত্যা করে। মোট ২৪ জন কাশ্মীরি পণ্ডিতকে হত্যা করা হয়, যার মধ্যে ১১ জন পুরুষ, ১১ জন মহিলা এবং দু'টি ছোট ছেলে ছিল।
9
15
২০০৫ সালে পুলওয়ামার একটি সরকারি স্কুলের সামনে একটি জনাকীর্ণ বাজারে বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি বিস্ফোরণে দুই স্কুলছাত্র সহ তেরো জন সাধারণ মানুষ এবং তিনজন সিআরপিএফ অফিসার নিহত হন। এই হামলায় ১০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হন।
10
15
২০০৬ সালে জম্মু ও কাশ্মীর জুড়ে একাধিক গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। যার মধ্যে প্রথমটি ছিল ১৪ এপ্রিল, যেখানে পাঁচজন নিহত এবং ৪৪ জন আহত হয়েছিলেন। ১১ জুলাই, শ্রীনগরে পাঁচটি গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল, যেখানে আটজন নিহত এবং ৪০ জনেরও বেশি আহত হয়েছিলেন।
11
15
১২ জুন, অনন্তনাগের কুলগাম এলাকার ইয়ারিপোরার কাছে জঙ্গিদের গুলিতে নয়জন নেপালি ও বিহারি শ্রমিক এবং একজন মুসলিম কাশ্মীরি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য নিহত হন। সাতজন বন্দুকধারী শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। দলটির মধ্যে কেবল একজন মুসলিম শ্রমিককে জীবিত রাখা হয়েছিল।
12
15
২০১৭ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় অমরনাথ হামলা। গুজরাট থেকে আসা হিন্দু তীর্থযাত্রীদের একটি বাস লস্কর-ই-তইবার জঙ্গিরা হামলা চালায়। জঙ্গিদের গুলিতে আটজন নিহত এবং ১৮ জন আহত হন। জঙ্গি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে গুলিযুদ্ধ শুরু হয়। অনেক আধাসামরিক কর্মী আহত হন।
13
15
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলা। জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়কে ভারতীয় সেনার কনভয় লক্ষ্য করে জঙ্গিরা হামলা চালায়। এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী ৩০০ কেজি বিস্ফোরক বোঝাই একটি মারুতি ইকো গাড়ি সিআরপিএফ সদস্যদের বহনকারী একটি বাসে গিয়ে ধাক্কা মারে। এই হামলায় ৪০ জন সেনা নিহত এবং ৩৫ জন আহত হয়। এর পরেই ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে আরও চিড় ধরে। ২৬শে ফেব্রুয়ারী ২০১৯-এ ভারতীয় বায়ুসেনা পাকিস্তানের বালাকোটে জইশ-এ-মহম্মদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে এয়ার স্ট্রাইক করে।
14
15
২০২২ সালে বিহারের তিনজন পরিযায়ী শ্রমিক জঙ্গিদের দ্বারা আক্রান্ত হন। যার মধ্যে দু'জন নিহত হন। এর ফলে কাশ্মীরে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দেয়। হাজার হাজার শ্রমিক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কাজ করতে অস্বীকার করে এবং বাড়ি ফিরে যান।
15
15
২০২৪ সালে শ্রীনগরে জঙ্গিরা পাঞ্জাবের একজন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করে। এই ঘটনার মাত্র কয়েক মাস পরে গান্দেরবাল জেলার গগনগিরে একটি নির্মাণস্থলে জঙ্গিরা গুলি চালালে ছয়জন অভিবাসী শ্রমিক এবং একজন ডাক্তার নিহত হন। ওই বছরই অনন্তনাগ জেলায় জঙ্গিরা বিহারের একজন অভিবাসী শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করে।