Riya Patra | ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫ : ৫০Riya Patra

কৌশিক রায়: ১৩৪, মুক্তারাম বাবু স্ট্রিট। উত্তর কলকাতার এই ঠিকানায় গেলে বর্তমানে চোখে পড়বে একটা ভাঙাচোরা বাড়ি, চারপাশ থেকে খসে পড়েছে পলেস্তারা। বাড়ির নাম ক্ষেত্র অ্যান্ড কোম্পানি, আরও সহজ করে ক্ষেত্র কুঠি মেসবাড়ি।এই মেসবাড়িরই দোতলায় মাঝের ঘরে জীবন কাটিয়েছেন শিবরাম চক্রবর্তী। তাঁরই ভাষায় বলতে গেলে, "মুক্তারামে থেকে তক্তারামে শুয়ে শুক্তারাম খেয়ে আমি শিব্রাম।" বুধবার ছিল তাঁর ১২০তম জন্মদিন। আর এই বিশেষ দিনেই জানা গেল,শিবরামের এই মেসবাড়ির এলাকার রাস্তার নাম হচ্ছে শিবরাম চক্রবর্তী স্ট্রিট। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু পুরসভার কাছে এই রাস্তার নাম বদলের প্রস্তাব দেন। শিক্ষামন্ত্রীর প্রস্তাবে উদ্যোগী হন খোদ কলকাতার মেয়র। তারপরেই সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়ে যায় এই প্রস্তাব। শিবরামের মেস থেকে বেরিয়ে কিছুটা এগোলেই চন্দ্রনাথ দত্তের মুদির দোকান। ছোট থেকে চন্দ্রনাথবাবু বড় হয়েছেন মুক্তারাম বাবু লেনেই। জানালেন, "ওর মত একজন সাহিত্যিকের নামে রাস্তার নাম হচ্ছে, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। আমি যখন ছোট ছিলাম দেখতাম দুপুরবেলা ধুতি আর ফতুয়া পরে বেরোতেন আহার সারতে। মিষ্টি খেতে খুব ভালোবাসতেন। সরস্বতী পুজোর চাঁদা চাইতে যেতাম ওর বাড়ি। বলতেন, "যা, পাঞ্জাবির পকেট থেকে দু" টাকা নিয়ে নে।" মজা করে সরস্বতী বানান জানতে চাইতেন। বাড়িটার তো এখন আর কিছু নেই। ওর নামে যদি রাস্তাটা হয় সেটাই অনেক।" শিবরাম অনুরাগীদের আশা, এবার হয়তো সংস্কার হবে।
শিবরামের মেস থেকে বেরিয়ে মোড়ের মাথাতেই মিষ্টির দোকান। শোনা যায়, প্রত্যেকদিন সেখানে রাবড়ি খেতেন লেখক। বর্তমানে দোকানের মালিক তরুণ ঘোষ। জানালেন, "আমি ওকে দেখিনি। তবে শুনেছি এখানে এসে মিষ্টি খেতেন। রাবড়ি, দই, রসগোল্লা, সন্দেশ- এই ছিল ওর রোজের আহার।" তবে বর্তমানে মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটের ওই এলাকায় প্রচুর অবাঙালি মানুষের বসবাস। তাঁদের বাড়ির পাশেই যে এত বড় একজন সাহিত্যিক থাকতেন সেটাও জানেন না অনেকেই। গুটিকয়েক যে কজন বাঙালি চোখে পড়ল তাঁদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই রয়েছেন যাঁরা বলতে পারলেন শিবরামের মেসের সম্পর্কে। ক্ষেত্রকুঠিকে বিপজ্জনক বাড়ি হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুরসভা। তবে সূত্রের খবর, শিবরামের মেস বাড়িটিকে সংগ্রহশালা বানানোর প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে কলকাতা পুরসভার কাছে।