সোমবার ১৭ মার্চ ২০২৫

সম্পূর্ণ খবর

Wife Shurovi Monem recollects legendary footballer from Bangladesh Monem Munna spt

খেলা | ১২-র গেরোয় থমকে গেল ভালবাসা, ওপার-এপার কাঁপানো ফুটবলার মুন্নার স্মৃতি আগলে স্ত্রী সুরভী

KM | ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১১ : ৩৬Krishanu Mazumder


কৃশানু মজুমদার: রোদন ভরা এ বসন্ত। এরকমই এক বসন্তে ঝরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ ফুটবলের সেরা 'পোস্টার বয়' মোনেম মুন্না। 

ওপার কাঁপিয়ে এপারেরও মন জিতে নিয়েছিলেন তিনি। ইস্টবেঙ্গলের জার্সিতে রূপকথা লিখে গিয়েছিলেন। সবুজ গালচেতে যিনি কখনওই হারতে চাইতেন না। সেই তাঁকেই হার মানতে হল। 

এ তো পৃথিবীরই নিয়ম। মধু কবিও তো লিখে গিয়েছেন, ''জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে।''  কিন্তু তাই বলে মাত্র ৩৮-এই জীবনের পাঠ চুকিয়ে চলে যেতে হবে অনন্তের পথে!  

২০০৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মোনেম মুন্না হেরে গেলেন। কিডনির অসুখ অকালে থামিয়ে দিল এক মহাজীবনকে। হাপুস নয়নে সেদিন কেঁদেছিল বাংলাদেশ। কলকাতাও কি কাঁদেনি? 

কুড়ি বছর হয়ে গিয়েছে মুন্না চলে গিয়েছেন। কেমন আছেন তাঁর স্ত্রী সুরভী? কেমন আছে মুন্নার পরিবার? জানতে ওপার বাংলায় খোঁজ নিয়েছিল আজকাল ডট ইন। 

 

স্ত্রী সুরভী প্রাক্তন তারকার স্মৃতি দিয়ে যেন নকশি কাঁথা বুনে চলেছেন। স্মৃতিচারণ করে সুরভী বলেন, ''অকালেই তো চলে গেল সে। আমাদের বারো বছরের সংসার। এখন খুব কষ্ট হয়। আমিই এখন ছেলেমেয়েদের বাবা, আবার আমিই ওদের মা। দুটো ভূমিকাতেই অবতীর্ণ হতে হচ্ছে আমাকে।'' 

১২ সংখ্যার সঙ্গে মোনেম মুন্নার সুখ-দুঃখ জড়িয়ে। শুধু কি মুন্না! সুরভীর জীবনের সঙ্গেও তো বারোর যোগ আর বিয়োগের খেলা!

১৯৯৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বিয়ে হয়েছিল মুন্না-সুরভীর। ২০০৫-এর ১২ ফেব্রুয়ারি পার্থিব এ জগতের মায়া কাটিয়ে চলে গিয়েছিলেন সবার ভালবাসার মোনেম মুন্না। তার দু'দিন পরই যে ভালবাসার দিন। ১৪ ফেব্রুয়ারি। ভ্যালেন্টাইন্স ডে।  

১২ বছরের দাম্পত্য জীবন এক নিমেষেই শেষ। ১২-র গেরোয় থমকে গেল দুটি প্রাণের ভালবাসা।  শুরু আর শেষ এসে মিশে গেল একই বিন্দুতে। 

সুরভী বলে চলেন, ''আমাদের সময়ে তো ভ্যালেন্টাইন্স ডে ছিল না। ফাল্গুনে হলুদ শাড়ি পরে কলেজে যেতাম। এক পারিবারিক অনুষ্ঠানেই প্রথম মুন্নার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ফোন নম্বর দেওয়া-নেওয়া, তার পরে ফোনে কথাবার্তা হত অল্প স্বল্প। বিয়ের প্রস্তাব মুন্নাই দিয়েছিল। প্রথমটায় আমার বাবার আপত্তি ছিল। আমার মামাই বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাবাকে রাজি করান।'' 

এ সব গল্প শুনতে শুনতে মনে হয়, কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই তুমি! মুন্না তো আছেন। আমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। 
 
কত স্মৃতি তাঁকে নিয়ে, কত গল্প ছড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশ-কলকাতার ধুলোমাখা মাঠে, তার ইয়ত্তা নেই। 

কৃষ্ণেন্দু রায়ের মতো প্রাক্তন ফুটবলার বলছেন, ''সময়ের থেকে অনেক এগিয়েছিল মুন্না।'' কথিত রয়েছে, সৈয়দ নইমউদ্দিন একবার এক ম্যাচের আগে মুন্নাকে প্রথম একাদশ তৈরি করতে দিয়েছিলেন।
 
সুরভী স্মৃতিচারণ করে বলছিলেন, ''বিয়ের পরে কলকাতায় গিয়ে দেখেছি মুন্নাকে কী অসম্ভব ভালবাসে সেখানকার মানুষ।'' 

ইস্টবেঙ্গলের শঙ্কর মালি বাংলাদেশের তারকা ফুটবলার সম্পর্কে বলতেন, ''মানুষের বেশে স্বয়ং ঈশ্বর নেমে এসেছেন ধরিত্রীতে।''

শোনা যায়, এই বঙ্গের এক দোকানি তাঁর আরাধ্য দেবতার পাশে রাখা মুন্নার ছবিতে ধুপধুনো দিয়ে পুজো করতেন। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তাঁবুতে রয়েছে মোনেম মুন্নার ছবি। 

Former India stars remember Munna and Rumi legacy

একজন ফুটবলার এতটাই ছাপ ফেলেছিলেন যে সাফ গেমসের আগে বহুল প্রচারিত এক বাংলা সংবাদপত্রে  শিরোনাম হয়েছিল, ''শাহবাজ, ঊষা ও মুন্নার গেমস আজ শুরু।''  
 
টুকরো টুকরো এই ছবিগুলো দিয়েই মালা গাঁথা যায়। যে মালার নাম মোনেম মুন্না। সুরভী বলে চলেন, ''বাড়িতে খুব বেশি কথা বলত না। একটা প্রশ্ন একাধিকবার করলে তবে উত্তর পাওয়া যেত। ওর জীবন জুড়ে ছিল খেলা। কীভাবে খেলবে, কীভাবে খেলার আরও উন্নতি করা দরকার, এই চলত ওর হৃদয় জুড়ে। আমিও কোনওদিন ওর খেলায় বাধা দিইনি। বাইরে ওর সঙ্গে গিয়ে বুঝেছি কী ভীষণ জনপ্রিয়তা মুন্নার।'' 

দু'দফায় ইস্টবেঙ্গলে খেলেছেন মুন্না।  ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ ইস্টবেঙ্গলে খেলেছেন। পরে আবার ১৯৯৫ সালে এসেছিলেন লাল-হলুদে। খেলার সময়ে তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশ ছঁয়েছিল। জনশ্রুতি বলে, সেই সময়ে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সের অবিসংবাদী নায়ক ছিলেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিন। ইস্টবেঙ্গলে আসার পরে মুন্নার জনপ্রিয়তাও আকাশ ছুঁয়েছিল। সেই সময়ে সংবাদমাধ্যমে খবর হয়েছিল, আজহার ও মুন্নার সমান সংখ্যক পোস্টার বিক্রি হয়েছিল কলকাতায়।  

যিনি ছিলেন একসময়ের সেরা ক্রাউডপুলার, তাঁর খেলা মাঠে বসে মাত্র একবারই দেখেছেন স্ত্রী সুরভী। স্মৃতির পাতা উলটে তিনি বলছিলেন, ''মাত্র একটা ম্যাচ আমি মাঠে বসে দেখেছি মুন্নার। জাতীয় দলের একটা ম্যাচ ছিল। সম্ভবত মালয়েশিয়ার সঙ্গে। অনেক দিন আগের কথা। সব আর মনে করতে পারি না।'' 

আবাহনী অন্ত প্রাণ ছিলেন মুন্না। আবাহনীই তাঁর যৌবনের তপোবন, বার্ধক্যের বারাণসী। সেই আবাহনী আর তাঁর ভালবাসা প্রসঙ্গে প্রচলিত মিথ, মুন্নার রক্তের গ্রুপ হয়তো এ। এ ফর আবাহনী। 

দীর্ঘ কুড়ি বছরে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে গঙ্গা-পদ্মা দিয়ে। মুন্না কি আগের মতোই প্রাসঙ্গিক? সুরভী বলছেন, ''এখনকার প্রজন্ম তো ওর কথা জানেই না। বছর দুয়েক আগে এক গ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানকার অল্পবয়সীরা বলছিল মুন্নার নাম ওরা শোনেনি। একেই তো ভুলে যাওয়া বলে।'' 

মুন্নাকে জীবন্ত করে রাখার কি কোনও চেষ্টা করেছে বাংলাদেশের ফুটবল জগৎ? ধানমুন্ডির আট নম্বর রোডের ব্রিজে একটি নামফলক থাকলেও সেটা পোস্টারের আড়ালেই ঢাকা থাকে বলে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে খবর।  সুরভী বলছিলেন, ''প্রতিবছর ১২ তারিখ আসে সাংবাদিকরা মুন্নার কথা জিজ্ঞাসা করেন। ১২ তারিখ চলে গেলে আবার সব ধামাচাপা পড়ে যায়। সাংবাদিকরা ছাড়া মুন্নাকে নিয়ে কারও কোনও উৎসাহ আছে বলে তো মনে হয় না।'' 

অভিমানে ধরে আসে সুরভীর গলা। উল বোনার মতো গল্পের পর গল্প জুড়ে চলেছেন মুন্নার স্ত্রী। ভিন দেশের অপরিচিত এক প্রতিবেদকের কাছে বলছিলেন, ''গোটা পরিবারের চাপ কাঁধে নিতে হয়েছিল মুন্নাকে। ভাইকে দাঁড় করানো, বোনের বিয়ে দেওয়া সবই নিজের হাতে করেছে মুন্না।'' 

এসব শুনতে শুনতে মনে হয় এ তো আর পাঁচটা গৃহস্থ বাড়ির কথাই শুনছি। কোনও ভিনেদশি দেশনায়ক বা তারকা ফুটবলারের জীবন বৃত্তান্ত নয়।

সুরভী এক নিঃশ্বাসে বলে চলেন, ''বিয়ের পরে বেশিরভাগ সময়ই আমি শ্বশুরবাড়ি নারায়ণগঞ্জে ছিলাম।  খেলার জন্য মুন্না থাকত ঢাকায়। যেদিন খেলা থাকত তার আগেরদিন ও ক্লাবে থাকত। খেলা হয়ে গেলে বাড়ি ফিরে আসত।''  

খেলার কথা নিয়ে বাড়িতে বেশি আলোচনা করতেন না। বিভিন্ন ধরনের গান শুনতে ভালবাসতেন মুন্না। যেদিন ভাল খেলতেন মন ভাল থাকত, ভাল খেলতে না পারলে নিজেকে গুটিয়ে রাখতেন নিজের মধ্যেই। 

এবারের ১২ ফেব্রুয়ারি কী করলেন সুরভী? সারাটা দিন কি মুন্নাকে নিয়েই ভেবে গেলেন? 

মুন্নার স্ত্রী বলছেন, ''শুধু কি একটা দিন? ওর কথা তো সবসময়েই মনে হয়। ৯ তারিখ ছেলের বিয়ের রিসেপশন ছিল। খুব ব্যস্ততার মধ্যে কেটেছে। মুন্না যেখানে সমাহিত, সেখানে এবার আর যাওয়া হয়নি। জানেন এখন মনে হয়, বড্ড তাড়াতাড়ি চলে গেল ও। ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানটা আমায় একাই করতে হয়েছে। আজ যদি মুন্না থাকত, তাহলে আমার উপরে এই কাজের চাপটা তো কমে যেত। বড্ড কষ্ট হয়।'' 

শুঁটকি মাছ দিয়ে ভাত-ডাল মেখে খেতে ভালবাসতেন মুন্না। বিভিন্ন ধরনের ছোট মাছ ছিল পছন্দ। পছন্দের তালিকায় ছিল বিরিয়ানিও। সুরভী নস্ট্যালজিক।

কিন্তু এই সময় যে বড় কঠিন। সাংসারিক সমস্ত দায়দায়িত্ব সুরভীর উপরে। তিনি বলছিলেন, ''সকাল থেকে সন্ধ্যা কীভাবে যে কেটে যায়, বুঝতেই পারি না। এত কাজ আমার। সন্ধ্যার দিকে একটু ফুরসত পাই।'' 

সব শুনে জনপ্রিয় গানের সেই লাইনগুলোই যেন মনে গুনগুনিয়ে ওঠে, মনে পড়লেও আজকে তোমায় মনে করা বারণ!

মুন্নার বুট জোড়া মিউজিয়ামে দিয়ে দিয়েছেন সুরভী, বাড়িতে রয়ে গিয়েছে কিংবদন্তির কয়েকটা জার্সি। মানুষটাই চলে গিয়েছেন। স্মৃতিরা ঘুরে বেড়ায়, কড়া নেড়ে যায় মনের দরজায়। অস্ফুটে সুরভী যেন বলে চলেন, ''বইছে বাতাস, যাবে আর কতদূরে! তোমার অভাবে এ হৃদয় উপবাসে, গন্ধে দ্বিগুণ তোমাকেই ভালবাসে।''
 

 


ShuroviMonemMonemMunnaValentinesDay2025

নানান খবর

নানান খবর

রোহিত শর্মার সঙ্গে ওপেন করতে নামবেন কে? আইপিএলের আগে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হাঁড়ির খবর ফাঁস

হোলি খেলা অপরাধ! মহম্মদ সামির মেয়েকে আক্রমণ রিজভীর

ছয় ছক্কা মেরে নতুন রেকর্ড থিসারার, রইল দ্বীপরাষ্ট্রের তারকার ব্যাটিং তাণ্ডব

গম্ভীর না থেকেও রয়েছেন নাইটদের সাজঘরে, প্রাক্তন নাইট মেন্টরের থেকে পারমর্শ চাইলেন নব্য মেন্টর ব্রাভো

মরিয়া চেষ্টা করেও পারেননি দিল্লিকে জেতাতে, হার সহ্য করতে না পেরে তারকা অলরাউন্ডার ভেঙে পড়লেন কান্নায়

পারল না সৌরভের দিল্লি, মহিলাদের আইপিএল জিতে নজির গড়ল হরমনপ্রীতের মুম্বই

ইডেনে প্র্যাকটিস ম্যাচে ঝড় তুললেন অবাছাই ক্রিকেটার, রান পেলেন কুইন্টন-রিঙ্কুও

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রোহিতের তুরুপের তাস তিনি, টেস্ট কি খেলবেন? বরুণ যা বললেন...

'আরও একটা অস্ট্রেলিয়া সফর...', টেস্ট অবসর নিয়ে জল্পনা বাড়িয়ে দিলেন কোহলি স্বয়ং

'তু হ্যায় তো ...',চতুর্থ বিবাহ বার্ষিকীতে আবেগঘন পোস্ট সঞ্জনা-বুমরার, সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইকের ঝড়

সপরিবারে ছুটি কাটাতে মালদ্বীপে রোহিত, ছবিতে ভরিয়ে দিলেন সোশ্যাল মিডিয়া

অল ইংল্যান্ড ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে বিদায় লক্ষ্যের

শচীনের থেকে হোলি সারপ্রাইজ পেলেন যুবি, কী হল তারপর?

রোহিত বা বিরাট নয়, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের জন্য কাকে কৃতিত্ব দিলেন পন্টিং?

রোহিত বা বিরাট নয়, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের জন্য কাকে কৃতিত্ব দিলেন পন্টিং?


রবিবার অনলাইন

সোশ্যাল মিডিয়া