বুধবার ১৫ জানুয়ারী ২০২৫
সম্পূর্ণ খবর
Pallabi Ghosh | ১৪ জানুয়ারী ২০২৫ ১৯ : ০৬Pallabi Ghosh
মিল্টন সেন, হুগলি: আজও পৌষ সংক্রান্তি এলেই প্রত্যন্ত গ্রাম মনে করিয়ে দেয় সেই প্রাচীন ঐতিহ্যের কথা। বর্তমানে চাল, ডাল, গম থেকে শুরু করে সবরকমের মশলা, সবই গুঁড়ো অবস্থায় বাজারে সহজলভ্য। শহরাঞ্চলে আজও পৌষপার্বণে পিঠে বানানোর চল এখনও সম্পূর্ণ উঠে যায়নি। অধিকাংশ বাড়িতেই পিঠে তৈরির চল রয়েছে। তবে পিঠে বানানোর যাবতীয় সামগ্রী পাওয়া যায় গুঁড়ো করা প্যাকেটবন্দি অবস্থায়। অর্থাৎ গুঁড়ো করার ঝামেলা নেই বললেই চলে। তবে আজও শহর সংলগ্ন একাধিক গ্রামে পৌষ পার্বণে পিঠে তৈরির ক্ষেত্রে ঢেঁকি ব্যবহার করে চাল গুঁড়ো করার সেই প্রাচীন চল অব্যাহত রয়েছে।
এই সময় বলাগড়ের একাধিক গ্রামে কান পাতলে শোনা যায় ঢেঁকির 'ধুপধাপ' শব্দ। আগে শুধু পৌষ পার্বণ বলে নয়, মাঝে মাঝেই গ্রামগঞ্জের একাধিক বাড়ি থেকে ভেসে আসতো 'ধূপধাপ' ঢেঁকির শব্দ। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চলত ঢেঁকি। তবে শীত পড়লে সেই শব্দ বেড়ে যেত। সারাদিন ধরে ঢেঁকিতে চাল গুঁড়ো করার কাজ চলত। আর সেই চালের গুঁড়ো দিয়ে পৌষ মাসের সংক্রান্তিতে তৈরি হতো নানা রকমের পিঠে। তবে এখন সেসব একেবারেই নেই। ঢেঁকির জায়গা দখল করেছে বাজারে সহজলভ্য গুঁড়ো সামগ্রী আর আধুনিক যন্ত্রপাতি। তবে কমবেশি ঢেঁকির দেখা মেলে গ্রামবাংলায়। তেমনই হুগলির বলাগড়ের রুকেশপুর গ্রামে আজও শোনা যায় ঢেঁকির আওয়াজ।
সারা বছর ঢেঁকি তোলা থাকে। তবে পৌষ মাসের সংক্রান্তির দশ পনেরো দিন আগে ঢেঁকি পুনরায় পাতা হয়। দলবেঁধে গ্রামের মহিলারা চাল গুঁড়ো করার কাজে লেগে পরেন। গোটা গ্রাম উৎসব মুখর হয়ে ওঠে। রুকেশপুর গ্রামের বাসিন্দা আঙুর সাঁতরার বাড়িতে আজও ঢেঁকির প্রচলন রয়েছে। মকর সংক্রান্তি আসছে শুনলেই শুরু হয়ে যায় ঢেঁকিতে চাল কোটার কাজ। একটা সময় ছিল যখন গ্রামের মহিলারা রাত জেগে চাল গুঁড়ো করতেন। সময় লাগত। সঙ্গে প্রয়োজন হতো শারীরিক ক্ষমতার। দু'কেজি চাল গুঁড়ো করতে যেখানে সময় লেগে যেত আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। সেখানে অনেকেই বর্তমানে বাড়িতে মিক্সচার গ্রাইন্ডারে চাল গুঁড়ো করেন। কেউ আবার বাজার থেকে চালের গুঁড়ো কিনে, কাজ সেরে ফেলেন।
ঢেঁকি পাতাটাও একটা বড় হ্যাপা। স্থানীয় আঙুর সাঁতরা জানিয়েছেন, সংক্রান্তির দিন দশেক আগে সেই ঢেঁকি তাঁদের বাড়িতে পুনরায় পাতার কাজ শুরু হয়। প্রথমে ঢেঁকিকে পরিষ্কার করে নেওয়া হয়। তারপর ছোট ছোট "পুয়া" অর্থাৎ কাঠের টুকরো ঢেঁকির নিচে পুঁতে দেওয়া হয়। এরপর ঢেঁকির সামনের অংশে যেখানে চাল দেওয়া হয়, সেখানে বসানো থাকে একটি লোহার গোলাকৃতি "গড়"। তার নিচে বসানো থাকে একটি পাথর। গড়ের চারপাশ মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়। ঢেঁকির মুখের অংশ সোজা গিয়ে পড়ে ওই গড়ে। সহজেই চাল গুঁড়ো হয়ে যায়। ঢেঁকির ওজন যত বেশি হয়, ততই তাড়াতাড়ি চাল গুঁড়ো হয়ে যায়। প্রথমে চাল ভিজিয়ে নেওয়া হয়। কিছুটা নরম হয়ে যাওয়ার পর তারপর গড়ে দেওয়া হয়। ঢেকির অপরপ্রান্তে পা দিয়ে চাপ দিলেই সামনের অংশ গড়ে গিয়ে পড়ে। এভাবেই চাল গুঁড়ো করা হয়। এরপর সেখান থেকে গুঁড়ো চাল তুলে চালুনিতে চেলে নিলেই হল।
এখনও গ্রামের বহু মানুষ ঢেঁকি পছন্দ করেন। আঙুর সাঁতরা বলেন, সারা বছর ঢেঁকি তোলা থাকে আর পৌষ সংক্রান্তি এলেই পাতা হয়। অনেক পুরনো এই ঢেঁকি। শাশুড়ির কাছে তিনি শুনেছেন তাঁদের বাড়িতে প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ বছরের পুরোনো ঢেঁকি। পৌষ সংক্রান্তি এলেই বাড়িতে গ্রামের অনেক মহিলা ঢেঁকিতে চাল ভাঙতে আসেন। সবাই একসঙ্গে চাল ভাঙা হয়। হাসি আর গল্প করতে করতে চাল ভাঙার কাজ চালানো হয়। আজও আঙুর সাঁতরার মতো অনেকেই মনে করেন সেই চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি সরা পিঠে, পুলি পিঠে, ভাজা পিঠের স্বাদই হয় আলাদা। মেশিনে ভাঙা চালের গুঁড়োর ব্যবহার করলে সেই স্বাদ পাওয়া যায় না। ঢেঁকির চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি পিঠের স্বাদও আলাদা হয়।
একই কথা বলেছেন ওই গ্রামের পূর্ণিমা প্রামানিক। তিনি বলেছেন, ছোট বেলায় তিনি দেখেছেন সারা রাত ধরে চাল কোটা হত। গ্রামের বিভিন্ন পাড়া থেকে মানুষ এসে ঢেঁকিতে চাল কুটতো। ঢেঁকি বন্ধ হত না, সবসময় চলত। এতটাই ভিড় হত, যে চাল কোটার লাইন পড়ে যেত। তবে আগের থেকে এখন অনেক কমে গেছে। অনেকেরই শরীরে সমস্যা রয়েছে, তাই অনেকেই মেশিনে চাল ভাঙিয়ে নিয়ে আসেন। তিনি মনে করেন, পরবর্তী সময়ে নতুন প্রজন্ম হয়তো ঢেঁকি কী জিনিস তা জানতে পারবে না। বর্তমানে গ্রামে শুধুমাত্র সাঁতরা বাড়ি ছাড়া আর কোনও বাড়িতে ঢেঁকি দেখা যায় না। দেখা যায়। এটাই ওই গ্রামের ঐতিহ্য।
ছবি: পার্থ রাহা
#hooghly#makarsankranti
বিশেষ খবর
নানান খবর
নানান খবর
আবারও লাইনচ্যুত মালগাড়ি, কয়েক ঘণ্টা বন্ধ ট্রেন চলাচল, চরম ভোগান্তি যাত্রীদের ...
আলুরদমের মেলা সঙ্গে কাঁকড়া, এই স্বাদের ভাগ হবে না...
কোথায় ঠান্ডা! মাঘেও নেই কনকনে শীতের আমেজ, পারদ পতন কবে থেকে? ...
বজবজ পুরসভার রজতজয়ন্তী বর্ষে জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুষ্প প্রদর্শনীতে উপচে পড়া ভিড় ...
ভর সন্ধ্যায় পেটে ছুরি মেরে যুবক খুন, চাঞ্চল্য রিষড়ায়!...
জলপাইগুড়িতে ধর্ষণে অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার গ্রেপ্তার...
পূণ্যার্থীদের ফেলা বর্জ্য পদার্থ দিয়ে গঙ্গাসাগরে তৈরি হবে নতুন রাস্তা...
'মাই এফআইআর পোর্টাল', কাজে স্বচ্ছতা আনতে বনগাঁ পুলিশের উদ্যোগ...
চন্দননগর কমিশনারেটের ধাঁচে হুগলি গ্রামীণ পুলিশেও চালু হল ডিজিটাল মালখানা ...
শেষ যাত্রা নাকি উৎসব! বাজনা বাজিয়ে দাদুর মরদেহ শ্মশানে নিয়ে গেলেন নাতিরা, কেন?...
চারদিন বালি সেতুতে চলবে না ট্রেন, চরম ভোগান্তির আশঙ্কা যাত্রীদের...
অনুব্রত মণ্ডলের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন কাজল শেখ! কীসের ইঙ্গিত? ...
রবিতেই ভরসা মুখ্যমন্ত্রীর, ৩৬তম রাজ্য ভাওয়াইয়া সঙ্গীত কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হলেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ...
পরপর পাঁচটি সিলিন্ডার বিস্ফোরণ! সিকিমে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড বহুতলে, কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি ...
পুকুর পাড়ে গুগলি ধোয়া নিয়ে বচসা, চুঁচুড়ায় চলল গুলি, আহত মা ও ছেলে...
কচুবেড়িয়ায় পুলিশ ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুন! আতঙ্ক ছড়াল গঙ্গাসাগরে, দমকলের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে...
গত বছরের চেয়ে বেশি জনসমাগম গঙ্গাসাগরে, পুণ্যার্থীদের জন্য কী কী সুবিধা থাকছে সেখানে, জানালেন মন্ত্রী অরূপ...
স্বামী ছিলেন গরিবের চিকিৎসক, তাঁর স্মৃতিতে বসতবাড়ি সাধারণ মানুষের জন্য দান করলেন স্ত্রী...
চন্দননগরে তাক লাগানো উদ্যোগ, গাছ নিজেই দেবে তার পরিচয়! কিউআর কোড স্ক্যান করলেই মিলবে যাবতীয় তথ্য...