মিল্টন সেন, হুগলি: বর্ষা এলেই যেন ছন্দপতন ঘটে হুগলির শিক্ষা পরিবেশে। টানা বৃষ্টিতে ফের ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হল ব্যান্ডেল বিদ্যামন্দির স্কুল কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই অব্যাহত ভারী বৃষ্টিতে জলে ডুবে গিয়েছে স্কুলের চত্বর এবং আশেপাশের রাস্তাঘাট। ফলত, উচ্চমাধ্যমিক বিভাগে ক্লাস নেওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। স্কুল কর্তৃপক্ষ সোমবার পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। রেল এলাকার মধ্যে অবস্থিত ব্যান্ডেল বিদ্যামন্দির স্কুলের নিকাশি ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল। স্থানীয়দের অভিযোগ, রেল কর্তৃপক্ষ নিকাশি সংস্কারের ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন। বর্ষাকালে রাস্তায় হাঁটু জল জমে থাকায় ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের পক্ষে স্কুলে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।

স্কুলের শিক্ষক জ্যোতির্ময় বালা বলেন, “বৃষ্টির জল ক্লাসরুম পর্যন্ত ঢুকে পড়ছে। পোকা-মাকড়ের উপদ্রবও ভয়াবহ। এই অবস্থায় ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে আসার কথা ভাবাই যায় না।” প্রাথমিক বিভাগ খোলা থাকলেও, পিচ রাস্তা ডুবে থাকায় শিশুদের যাতায়াত বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। এক অভিভাবক ক্ষোভ উগরে দেন, “প্রতি বছর এই সমস্যার মুখে পড়ছি। অথচ প্রশাসন বা রেল কেউই স্থায়ী কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না।” আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী কয়েকদিন আরও বৃষ্টি হতে পারে। ফলে সোমবারের পরেও স্কুল খোলা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবক মহলের একটাই দাবি—দ্রুত নিকাশির সংস্কার না হলে শিক্ষার পরিবেশ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়বে এই অঞ্চলে।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই ঝাড়খণ্ডেও একই ঘটনা ঘটে। টানা বৃষ্টিপাতের জেরে ভেঙে পড়ল সরকারি স্কুলের ছাদের একাংশ। ঘটনাটি ঘটেছে ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে। শুক্রবার সকাল ৭টা ৩০ মিনিট নাগাদ পিস্কা মোড় এলাকার টাংরা টোলিতে একটি প্রাথমিক স্কুলের ছাদের একটি অংশ হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে। ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন আরও তিনজন। খবর নিশ্চিত করেছে সুকদেব নগর থানার পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ব্যক্তি সুরজ বৈঠা (৬৫), রাটু এলাকার বাসিন্দা এবং উক্ত স্কুলের পরিচারক হিসেবে কাজ করতেন। দুর্ঘটনার সময় তিনি স্কুলের বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন। তখনই ছাদের অংশবিশেষ ভেঙে পড়ে তাঁর উপর, এবং ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

ঘটনার সময় স্কুলটি বন্ধ ছিল, কারণ প্রাথমিক স্কুলটি দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রছাত্রী না আসার কারণে চালু ছিল না বলে জানিয়েছেন পুলিশ আধিকারিক মনোজ কুমার। ধ্বংসাবশেষের নিচে আটকে পড়েন আরও তিনজন— মানিশ তিরকে, প্রীতম তিরকে ও মোটু ওরাঁও (সকলের বয়স ১৮-১৯)। তাঁদের উদ্ধার করে আশপাশের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, একজন ব্যক্তি ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়েছেন। পরে পুলিশ জানায়, মোট তিনজন আহত হয়েছেন এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা পুতুল তিরকে জানান, “স্কুলটি অনেকদিন ধরে কার্যত বন্ধ ছিল। আজ সকাল ৭.৩০ টায় হঠাৎই দুর্ঘটনা ঘটে। বৃষ্টি পড়ছিল। এরপরই ছাদ ধসে পড়ে সুরজ বৈঠার মৃত্যু হয়। বাকি তিনজনকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়।”
ভারী বর্ষণের জেরে পুরো ঝাড়খণ্ড রাজ্য বিপর্যস্ত। আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ১ জুন থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত রাজ্যে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের (৩৪৮.৯ মিমি) তুলনায় ৭১ শতাংশ বেশি অর্থাৎ ৫৯৫.৮ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার তদন্ত চলছে এবং পুরো ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শীঘ্রই জানানো হবে। এই ঘটনা ফের একবার স্পষ্ট করে দিল, কীভাবে পরিত্যক্ত বা অচল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অরক্ষিত থেকে যাচ্ছে এবং কীভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে তা প্রাণহানির কারণ হয়ে উঠছে।
