আজকাল ওয়েবডেস্ক: ওভাল না ওয়াংখেড়ে? প্রশ্ন করলে অনেকেই ঘাবড়ে যাবেন, ইংল্যান্ড সিরিজের চতুর্থ টেস্টে ভারত পিছিয়ে পড়েও যেভাবে লড়ে গেল তা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য, তার সঙ্গে টানা সঙ্গ দিয়ে গেলেন দর্শকরা। রুট আউট হওয়ার আগে সিরাজ টানা ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছিলেন দর্শকদের, যে আরও জোর চাই, ঠিক যেমনটা কোহলি করতেন। জো রুট ক্যাচ দিয়ে ফিরতেই সিরাজ হাতজোড় করে ধন্যবাদ জানালেন দর্শকদের, বুঝিয়ে দিলেন আমরা একা নই, তোমরাও আমাদের সঙ্গেই। ওভাল টেস্টের ঘটনাবহুল চতুর্থ দিনে অনেক কিছুর মধ্যে এটাও একটা। খেলায় তো চোখ সকলেই রেখেছেন, উল্লেখযোগ্য বিষয়, ইংল্যান্ড সিরিজের পাঁচটা টেস্ট, পাঁচটাই গড়াতে চলেছে পঞ্চম দিনে। এদিন অবশ্য খারাপ আলোর কারণে খেলা বন্ধ না হলে কী হত সেটা বলা মুশকিল।

কারণ সেই সময় ইংল্যান্ডের ওপর পুরো চেপে বসেছিলেন ভারতীয় বোলাররা। জেমি স্মিথ এবং ওভারটনের একটা বলও মিডল হচ্ছিল না। সোমবার যা হওয়ার প্রথম সেশনেই হবে, সেটা একপ্রকার নিশ্চিত। তবে বর্তমানে ম্যাচের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের যা অবস্থা তার পুরোপুরি কৃতিত্ব দেওয়া যায় জো রুট এবং হ্যারি ব্রুককে। যখন আক্রমণের দরকার তখন আক্রমণ, আবার কখনও ডিফেন্স করে ক্লান্ত করে দিলেন ভারতীয় পেস ব্যাটারিকে। চতুর্থ পেসারের অভাবে খানিকটা বোঝা গেলেও ‘ওয়ার্কলোড’ শব্দটায় যে সিরাজ কোনওভাবেই বিশ্বাস করেন না তা আরও একবার সাফ হয়ে গেল। ‘ওয়ার্কলোড’ আবার কী? দেশের প্রতিনিধিত্ব করছো, যতক্ষণ দম আছে, সেবা করে যাও, সেই মন্ত্রেই চলেন মিঁয়াভাই। একটানা নিজের ১০০% দিয়ে বল করে গেলেন। ফলও মিলল হাতেনাতে।
আরও পড়ুন: পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙতে পারল না ইস্টবেঙ্গল, অসহায় আত্মসমর্পণ লাল-হলুদের, মরশুমে দ্বিতীয় হার
তবে ১০৬ রানে তিন উইকেট পড়ার পর মনে হয়েছিল, আর কতক্ষণ? ওকস নেই, ইংল্যান্ড লাইন আপকে গুঁড়িয়ে দেবেন সিরাজরা। তাতে জল ঢেলে দিলেন ব্রুক(১১১) এবং রুট(১০৫)। অনবদ্য শতরান দুই ইংরেজ ব্যাটারের। প্রথম ২০টা বল ব্রুক নিজের মতো দেখে নিলেন। তারপর যে রূপ ধরলেন, থামলেন একেবারে আউট হওয়ার সময়। অন্যদিকে, জো রুট ধরে ধরে নিজের কাজটা করে গেলেন। ভাল বলে ডিফেন্স, মারার বলে দেখার মতো শট মেরে শতরান পূর্ণ করলেন নিজের। তবে আসল নাটক শুরু হল প্রসিদ্ধের বলে ব্রুক আউট হওয়ার পর। ছ’নম্বরে নামা জেকব বেথেলকে পাঁচ ওভার টানা দাঁড় করিয়ে স্টাম্প ছিটকে দিলেন কৃষ্ণ।
সেই সময় পরিসংখ্যান বলছে, বাজবল খেলা ইংল্যান্ডের শেষ পাঁচ ওভারে রান ৮, তাও আবার দুটি উইকেট হারিয়ে। তারই ফল হিসেবে ফের কিপার জুরেলের হাতে দিয়ে ফিরলেন রুটও। স্ক্রিনে দেখা গেল ক্রিস ওকস প্যাড আপ করে তৈরি। যদি দলের প্রয়োজন হয় তাহলে নামতে দেখা যাবে হয়তো তাঁকেও। আসল নাটক অপেক্ষা করে আছে সোমবার শেষ দিনের খেলায়। উল্লেখ্য, এদিন চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনে দুই ইংরেজ ব্যাটার অলি পোপ এবং বেন ডাকেটকে সাজঘরে ফেরায় ভারত। দিনের প্রথম সেশনে অনবদ্য প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা এবং সিরাজ। আকাশদীপ উইকেট না পেলেও চাপে রেখে গিয়েছেন ব্যাটারদের। এদিন দিনের শুরুতেই ওভারকাস্ট কন্ডিশন থাকায় সিরাজের একের পর এক বলে বারবার পরাস্ত হচ্ছিলেন ডাকেট। কোনওরকমে অর্ধশতরান করলেও তারপরেই তিনি শিকার হন প্রসিদ্ধর।
পরপর কয়েকটা শর্ট অফ লেংথ বলের পর একটা ড্রাইভ করার বল করেন। তাতেই ফাঁসেন ডাকেট। সোজা দ্বিতীয় স্লিপে রাহুলের হাতে ক্যাচ দেন। এরপর পোপও বেশিক্ষণ টেকেননি। সিরাজের বিষাক্ত নিপ ব্যাকার সোজা তাঁর প্যাডে লাগে। দোনোমনো করেও শেষ মুহূর্তে রিভিউ নিলেও তা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেই যায়। তবে ভারতীয় বোলারদের ওপর চাপ দিতে কিছুক্ষণ পর থেকেই পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন ব্রুক। আকাশদীপ এবং প্রসিদ্ধের পরপর দুটো ওভারে ২৭ তোলে ইংল্যান্ড। কৃষ্ণার বলে বাউন্ডারি লাইনে সিরাজ হ্যারি ব্রুকের ক্যাচ ধরলেও পা বাইরে চলে যাওয়ায় বেঁচে যান ইংরেজ ব্যাটার। লাঞ্চে ইংল্যান্ডের রান তিন উইকেট হারিয়ে ১৬৪। তৃতীয় দিনের শেষে ১৩.৫ ওভারে সিরাজ-ম্যাজিক দেখেছিল ওভাল। হায়দরাবাদি তারকা ইয়র্কার দেন ক্রলিকে। আগে খেলে ফেলেন ইংল্যান্ডের ওপেনার। ব্যাট-বলে হল না।
সিরাজের ইয়র্কার ছিটকে দেয় বেল। তার পরই রোনাল্ডোর মতো সিরাজের সেলিব্রেশন। শেষ বেলায় উইকেট নিয়ে সিরাজ কিন্তু ইংল্যান্ডের সাজঘরে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছিলেন। অনভিজ্ঞতায় মোড়া এই বোলিং শক্তির নেতা একজনই। তিনি মহম্মদ সিরাজ। ১৬.২ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৮৬ রানের বিনিময়ে চার-চারটি উইকেট নেন প্রথম ইনিংসে। অন্যদিকে, ইংল্যান্ডের মাটিতে যশস্বীর যশোলাভও হয়েই চলেছে। ১২৭ বলে শতরান করেন তিনি। টেস্টে ষষ্ঠ শতরান। চলতি সিরিজে দ্বিতীয়। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চতুর্থ। লাঞ্চের পরপরই মাইলস্টোন ছুঁয়ে ফেলেন। তাঁর ব্যাটে ভর করে ওভালে দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়াল ভারত। যশস্বী খেললেন ১১৮ রানের ইনিংস। আকাশদীপকে দ্বিতীয় দিনে নৈশপ্রহরী হিসেবে পাঠিয়েছিল ভারত। তৃতীয় দিনের ওভাল দেখল আকাশদীপ সত্যিকারের ব্যাটসম্যান। পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যানের মতো তিনি ইংল্যান্ড বোলারদের বিষ শুষে নিলেন। ৬৬ রানে ফিরে গেলেন। এটাই তাঁর টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান।
