শুক্রবার ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Riya Patra | ০৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৭ : ১৮Riya Patra
রিয়া পাত্র, ভাঙড়
ঈদের কারণে এখনও ভোটের উত্তাপ সেভাবে ছড়ায়নি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ভাঙড়ে। তবে সমঝোতা, জোট ভেস্তে যাওয়ার পর সেখানকার ঘটকপুকুর, সোনপুর, কাঁঠালিয়া, কাশীপুর রোডের চায়ের দোকানগুলোতে মিনিট ৫-১০ বসলেই বুঝতে পারবেন ছবিটা। প্রশ্ন, ভোট কাকে দেব? কেন এই পরিস্থিতি আমাদের সামনে?
প্রায় ৬৯ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটের ভাঙড় ২১-এর বিধানসভায় শাসক দলকে সরিয়ে বেছে নিয়েছিল সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী নওসাদ সিদ্দিকিকে। সেই ভোটে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে লড়েছিল বাংলার রাজনীতিতে সদ্য আত্মপ্রকাশ করা আইএসএফ। ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট। তার আগে পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির বক্তব্যে অতিরিক্ত ঝাঁঝ থাকলেও কিছু মানুষ ভরসা পেলেন দুটি কারণে। এক, পীরজাদার দল বোঝাল, তারা শুধু সংখ্যালঘু, মুসলিমদের দল নয়। তারা কথা বলবে সব পিছিয়ে পড়া মানুষের হয়ে, কাজ করবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য। তাঁদের দলের নাম ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট। বাংলার হেরে যাওয়া বাম, অতীত সর্বস্ব কংগ্রেস আর শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের যুগেও মানুষ দেখলেন আলাদা একটা পতাকা, আইএসএফ। যদিও দ্বিতীয় বিষয়টাই এখানে মূল আলোচ্য। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, বামেরাই আদতে এগিয়ে দিল আইএসএফকে। কোথাও পিছন থেকে একটু ধাক্কা দিয়ে, কোথাও হাত ধরে পাশে দাঁড়িয়ে। বাম নেতারা বললেন ,আইএসএফ-এর ম্যানিফেস্টো তাঁদের সঙ্গে একশ শতাংশ মিলে না গেলেও, তাঁরা "এড়াতে পারছেন না" সিদ্দিকিদের দলকে। একুশের বামেদের ব্রিগেড মঞ্চে এলেন আব্বাস, একুশের সংযুক্ত মোর্চার "সবেধন নীলমণি" বিধায়ক হয়ে বিধানসভায় গেলেন নওসাদ।
বিধানসভা ভোট গেল, লোকসভা ভোটের ডাক দিয়ে। মাঝে গেল মারকাটারি পঞ্চায়েত ভোট পর্ব। নওসাদের ভাঙড় রক্তাক্ত হল। একুশ থেকে চব্বিশ, নওসাদ নিজেও কখনও রইলেন রাস্তায়, জেলে গেলেন কখনও, কখনও বা পুলিশ আটকাল। ভাঙড় বুঝল, লাল পতাকা আর সেকুলার ফ্রন্ট মিলে আছে তাদের সঙ্গে। কয়েকদিন আগেই যাদবপুরের বাম প্রার্থী সৃজনও বলছিলেন, তিনি আশা করেছিলেন এই লোকসভা ভোটে পাশে পাবেন আইএসএফকে। কিন্তু অতি সম্প্রতি এই ধারণা ভেঙে গিয়েছে। উল্টে আইএসএফ আলাদা প্রার্থী দিয়েছে। এতে দুই দলের বড় মাথারা যাই ভাল মন্দ বুঝুন না কেন, চায়ের দোকানে বসে জোট নিয়ে গর্ব করা সাধারণ ভোটারের যাবতীয় সমীকরণ গেল ঘেঁটে। দুই দলের একে অপরের দিকে দোষারোপের বহর দেখে অথৈ জলে পড়লেন তাঁরা। এখন ৬ জন একসঙ্গে রোজ কাঁঠালিয়ার চায়ের দোকানটায় বসেন ঠিকই, তবে নাজিমুল, সওকত আর আকিবুল একে অপরের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বেশিদূর কথা বলতে পারেন না। সওকত আর নাজিমুল বামপন্থায় বিশ্বাসী আজন্মকাল। দলের সিদ্ধান্ত দেখেই বিধানসভা ভোটের আগে থেকে আইএফএফ-কে সমর্থন করেছেন। কদিন আগে পর্যন্ত তাই হিসেব ছিল। এখন দেখছেন তাঁদের দলের প্রার্থীর প্রচারে যাচ্ছেন না আকিবুল। তাঁর দল আইএসএফ প্রার্থী দিয়েছে অন্য জনকে। পেশায় আইনজীবী নূর আলম খানের সমর্থনে ভোট তাঁর। একটু এগিয়ে পিছিয়ে যেদিকেই যান, এই দ্বিধাবিভক্ত ছবি স্পষ্ট। লাল পতাকার সমর্থকরা বলছেন, "আমরাই আনলাম আইএসএফ-কে, তারাই আমাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়ে দিল। এটা কোনও কথা?" আবার পাশে বসে ফোঁস করে উঠে বুড়ো চাচা বলছেন, "আইএসএফ আসার আগে ১০ বছরে কটা কথা বলেছে লালা পতাকার দল? সমঝোতা হয়নি, প্রার্থী দিয়েছি, এবার হোক ভোট।" প্রশ্ন উঠছে অবশ্যই, আইএসএফ ভাঙড়ে ভোট কেটে আদতে সাহায্য করবে কাকে? মাঝখান থেকে ঘটকপুকুর বাজারের আজান, হাসান, মইনুলরা হাসছেন মুচকি। তাঁদের আর কী! তাঁরা তো করেন তৃণমূল।