উপালি মুখোপাধ্যায় | ২৬ মার্চ ২০২৪ ২৩ : ৫৩

বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: ‘আমি দেখা দেব। কিন্তু শর্ত আছে। এক পোশাকে এবং একই ভাবে নয়। বিভিন্ন পোশাকে, বিভিন্ন ভাবে দেখা দেব’… এই সতর্কবাণী স্বয়ং উত্তমকুমার চট্টোপাধ্যায়ের।




সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়েছেন উত্তমকুমার চট্টোপাধ্যায়। ৪৪ বছর টালিগঞ্জ থেকে দূরে থাকার পর আবারও স্বস্থানে, স্বমহিমায়। এখবর ছড়ানোর পর থেকেই বাঙালির গলায় কাঁটা বেঁধার দশা! দর্শকদের চূড়ান্ত কৌতূহল, সত্যিই মহানায়ককে ফেরাচ্ছেন সৃজিত? কীভাবে? সমালোচকদের অস্বস্তি, ঠিকঠাক ফেরাতে পারবেন তো? শেষপর্যন্ত শেষরক্ষা হলে হয়। এই অস্বস্তি এবং কৌতূহল নিয়ে ছবিমুক্তির সন্ধেয় প্রেক্ষাগৃহে। নাম দেখানোর আগে থেকে চমক! শুরুরও শুরু থেকে জাতীয় পুরস্কারজয়ী পরিচালক তাঁর তূণের ব্রহ্মাস্ত্র একটু একটু করে ছড়িয়ে দিতে শুরু করেছেন। মাদক দ্রব্য সম্বন্ধে বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ থেকে। সেখানেও ‘গুরু’র গলা! এই প্রজন্ম ভ্যাবাচ্যাকা। আগের প্রজন্ম স্তব্ধ। 

প্রেক্ষাগৃহে পিনপতন নিস্তব্ধতা। কয়েকটি দৃশ্যের পর তাঁর আগমন। দর্শক হাসবেন না কাঁদবেন— ভাবতে ভাবতেই ভাললাগার শিরশিরানি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। উত্তমকুমার ভূত! তিনি প্ল্যানচেটে ফিরছেন... এগুলো মানিয়ে নিতে পারলে বাকিটা বেশ। বিষ্ণুর দশাবতার আর মহানায়কের ৫৪টি! কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবেন? এবং তাঁকে দেখতে দেখতে একটা সময়ের পর উত্তমপ্রেমীদের (প্রশ্ন, কে নয়!) এমন দশা যে বাকি অভিনেতারা এবারেও তাঁর ক্যারিশ্মার কাছে এলেবেলে। এই প্রজন্ম ছবি দেখছে একজন কিংবদন্তি শিল্পীকে জানার তাগিদে। আগের প্রজন্ম হলমুখী স্রেফ তাঁদের সোনালি অতীত ফিরে পাওয়ার আশায়। ভাবা যায়?




ছবিতে উত্তমকুমার ছাড়াও আরও অভিনেতা রয়েছেন। গৌরব চট্টোপাধ্যায়, অনিন্দ্য সেনগুপ্ত, রোশনি ভট্টাচার্য, লাবণি সরকার, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। তাঁরা কীভাবে রয়েছেন? অনিন্দ্য উত্তম গবেষক। সেই সূত্রে সখ্য মহানায়কের নাতি গৌরবের সঙ্গে। অনিন্দ্যর মা-বাবা লাবণি-শুভাশিস। প্রেমিকা রোশনি। যাঁকে মহানায়ক, ম্যাডাম সম্বোধন করে সর্ব অঙ্গের কুশল জেনেছেন! পর্দায় রোশনির মুখটা তখন দেখার মতো। নায়িকা কোন ছাড়, উত্তমকুমারের ওমন ‘মদনদেব’ উপস্থিতিতে বাঙালির বুক ফের মুচড়ে উঠেছে। ফলে, মহানায়কের জৌলুসের ছটায় আরও একবার পুড়তে পুড়তে প্রত্যেকে নিজেদের উপস্থিতি প্রমাণের চেষ্টা করে গিয়েছেন। দাদুর নাতি গৌরব এই ছবিতে যেন আরও একটু বেশিই ভাল। যা দেখে দর্শকের আফসোস, ইসস! সত্যিই যদি মহানায়ক থাকতেন তা হলে পর্দায় যুগলবন্দি দেখা যেত। শুধু রোশনি কেন! উত্তমকুমারের ছায়া শরীর দেখে প্রথম মূর্ছা তারপর আহ্লাদে আটখানা লাবণিও। প্রিয় নায়কের জন্য তাঁর সে কী পরিপাটি সাজ।

এবার প্রশ্ন, ছবির কি মাইনাস পয়েন্ট কিচ্ছু নেই? আছে। এক, দ্বিতীয়ার্ধ একটু একঘেয়ে। প্রথমার্ধের মতো টানটান নয়। দুই, নানা রূপে দর্শন দিতে গিয়ে উত্তমকুমার কন্টিনিউটি হারিয়ে ফেলেছেন। যতই ছবির প্রথমে সতর্কবাণী দিন। তিন, উত্তম-সুপ্রিয়ার প্রেমের দৃশ্য থাক। কিন্তু রোশনির মুখে ‘তোমাদের তো শুনেছি ঠিকমতো বিয়েও হয়নি’ সংলাপ না থাকলে কি খুব ক্ষতি হত? কোথাও কি পক্ষান্তরে নায়কের জীবন-নায়িকা অপমানিত হলেন না! খুঁটিয়ে দেখলে আরও অনেক কিছু ধরা দেবে। কিন্তু ওই যে একজন, আগেও এখনও... এসেই পর্দাজুড়ে মোহিনীমায়া ছড়িয়ে দেন। তিনি টালিগঞ্জে নিজের মূর্তি দেখে নিজেই চিনতে না পারলে বাঙালি সমব্যথী হয়। দেওয়ালে সাঁটা ছবির পোস্টারে বিশু (বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়)-এর ছেলে বু্ম্বাকে (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) চিনতে পেরে খুশি হলে দর্শকও হেসে ফেলে!



কিছুদিন আগেই এক মহিলা সাহিত্যিক সামাজিক পাতায় উচিত কথা লিখেছিলেন। তাঁর বক্তব্য, সবাই ভাল অভিনেতা হলে নায়ক হবেন কে? যাঁকে দেখে ‘ফ্যান্টাসিতে ফ্যান’ হবেন সবাই। সাধে ‘গুরু’ বলেছেন, ‘‘আমি তো আছি। ইজন’ট দ্যাট এনাফ?’’