উপালি মুখোপাধ্যায় | ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ১৮ : ১৭

প্রথম সিরিজ পরিচালনায় পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। নামভূমিকায় চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী। ‘পর্ণশবরীর শাপ’-এর ‘ভাদুড়িমশাই’-এর মতো তিনিও কি অলৌকিকতায় বিশ্বাসী? অভিনেতা অকপট উপালি মুখোপাধ্যায়ের কাছে

তিনি অনেকবার পুলিশ হয়েছেন। গোয়েন্দাও হয়েছেন একাধিকবার। কিন্তু একই অঙ্গে তান্ত্রিক এবং গোয়েন্দা? এমনটা হননি চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় সেই সুযোগ দিতেই লুফে নিয়েছেন বিধায়ক-অভিনেতা। শৌভিক চক্রবর্তীর জনপ্রিয় গল্প ‘পর্ণশবরীর শাপ’ নিয়ে প্রথম সিরিজ পরিচালনা করলেন পরমব্রত। ১০ নভেম্বর হইচই প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে সিরিজটি। সেখানেই চিরঞ্জিত কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘ভাদুড়িমশাই’। আজকাল ডট ইনকে অভিনেতা বলেছেন, ‘‘এই ধরনের চরিত্র এই প্রথম। পরম অনুরোধ করায় আর না বলতে পারিনি।’’



পরিচালকের কথা মেনে চিরঞ্জিত প্রথমে শৌভিকের উপন্যাসটি পড়েছেন। তাতেই আগ্রহে বেড়েছে। এরপর চিত্রনাট্য পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান। দুই মলাটের বর্ণনা অনুযায়ী, ভাদুড়িমশাই সংস্কৃতের অধ্যাপক। বয়স ষাটের কোঠায়। একই সঙ্গে তন্ত্রসাধক! গুরুর থেকে হটযোগ শিখেছেন। খুব প্রয়োজন না পড়লে তিনি অবশ্য এই বিদ্যার সহযোগিতা নেন না। অর্থাৎ, অলৌকিক শক্তির অধিকারী। কোনও ভাবে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের ‘তারানাথ তান্ত্রিক’ আর ভাদুড়িমশাই কি এক? চিরঞ্জিতের মতে, কোনও মিল নেই। তারানাথ তান্ত্রিক নিজের জীবনের গল্প বলেন। ভাদুড়িমশাই সমস্যার সমাধানে হটযোগের সাহায্য নেন মাত্র।
 
ভূতচতুর্দশী এলে আজও যেন গা ছমছমে ভাব বেড়ে যায়। এখনও বাঙালি ভূত তাড়াতে চোদ্দো শাক খায়। অভিনেতাও কি অলৌকিকতায় বিশ্বাসী? তাঁর জীবনে এমন কিছু ঘটেছে? 

জানতে চাইতেই একটু থেমে চিরঞ্জিত বললেন, ‘‘বিজ্ঞানের ছাত্র। এসবে তাই একটুও বিশ্বাস নেই। কিন্তু আমার জীবনে দুটো ঘটনা ঘটেছে। জানি না সেগুলো অলৌকিক কিনা।’’ তিনি জানালেন, বহুবার বহু জ্যোতিষীর মুখোমুখি হয়েছেন। তাঁরা অনেক কথা বলেছেন। তার কিছু মিলেছে। অনেকটাই মেলেনি। কিন্তু এক জায়গায় তিনি তাঁর হাতের ছাপ আর নামের আদ্যক্ষর পাঠিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাঁর জীবনের খুঁটিনাটি বর্ণনা একেবারে অভ্রান্ত জানানো হয়েছিল। দ্বিতীয় ঘটনা, অভিনেতা বড় হয়েছেন দক্ষিণ কলকাতায়। একাধিক বার বাড়ি বদল ঘটেছে। কিন্তু ঘুরেফিরে তিনি বাড়ি পেয়েছেন একই অঞ্চলে, লেকের কাছে! বরং, প্রতিবার তিনি আরও বেশি করে যেন জলের কাছে সরে গিয়েছেন। তৃতীয় ঘটনা, ছোট থেকেই দক্ষিণ কলকাতার ওই বিশেষ এলাকার দক্ষিণখোলা বাড়ির প্রতি তাঁর দারুণ লোভ। কারণ, দক্ষিণমুখী বারান্দা। চিরঞ্জিত যে জায়গায় দক্ষিণখোলা বাড়ি চেয়েছিলেন, সেখানেই দু’টি তল নিয়ে থাকেন! 



‘‘এভাবে স্বপ্নপূরণ অলৌকিকতা নয়?’’ জীবনকথা শুনিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তাঁর।

এই অনুভূতি মনের মধ্যে নিয়ে, চিত্রনাট্য মেনে নিজেকে ‘ভাদুড়িমশাই’য়ে রূপান্তরিত করেছেন বিধায়ক অভিনেতা। তাকদায় শুট করেছেন। কীভাবে নিজেকে তৈরি করেছেন? চিরঞ্জিতের কথায়, ‘‘তান্ত্রিকের ভূমিকায় অভিনয়ের সময় এক ব্যক্তির কিছু পরামর্শ নিয়েছি। হাতের কিছু মুদ্রা শিখতে হয়েছে। আর প্রচুর মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয়েছে। গোয়েন্দা-অধ্যাপককে নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছি।’’ সেই অনুযায়ী কখনও তিনি রক্তাম্বর পট্টবস্ত্রে। কাপালিকের বেশে। ধুনি জ্বেলে যজ্ঞ করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। বাকি সময় প্যান্ট-শার্ট, কোটে সাহেবসুবো।



চিরঞ্জিতের সঙ্গে সিরিজে দেখা যাবে গৌরব চক্রবর্তী, অনিন্দিতা বসু, সুরঙ্গনা বন্দোপাধ্যায়, অর্ণ মুখোপাধ্যায়-সহ আরও অনেককে। পরমব্রতর পরিচালনায় অভিনয় করে তৃপ্ত চিরঞ্জিত। প্রবীণ অভিনেতাও পরিচালক-অভিনেতা। দুই মাথা এক হওয়ায় কাজটা কি আরও ভাল হল? মৃদু হেসে জবাব চিরঞ্জিতের, ‘‘যদি দর্শক খুশি হয়, সিরিজের সিক্যুয়েল তৈরির অনুরোধ আসে তবেই বুঝব আমাদের পরিশ্রম সার্থক।’’