নিজস্ব সংবাদদাতা | | Editor: শ্যামশ্রী সাহা ০১ মার্চ ২০২৪ ২২ : ০৪

৪৪ বছর ধরে বাঙালির তাঁর জন্য হা-পিত্যেশ অপেক্ষা। তিনি আর ফিরবেন না জেনেও। অন্তত তাঁর ‘মতো’ও কেউ যদি...! ১৯৮০-র ২৪ জুলাই থেকে ২০২৪-এর ১ মার্চ— লম্বা ফাঁক বুজিয়ে টালিগঞ্জে ফিরলেন উত্তমকুমার। হ্যাঁ, তিনি রুপোলি পর্দাতেই ফিরলেন। সাদাকালো যুগের গন্ধ মেখে। পর্দাতেই তিনি দেখে নিলেন, তাঁর নামে নাম মহানায়ক উত্তমকুমার মেট্রো স্টেশন। টালিগঞ্জের মোড়ে দাঁড়ানো তাঁর মূর্তি। দেখেশুনে তিনি কতটা চমকালেন? জানার উপায় নেই। কারণ, তিনি সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের অনুরোধে কেবল তাঁর ক্যামেরার সামনেই দাঁড়াতে রাজি হয়েছেন। ক্যামেলিয়া প্রযোজনা সংস্থার আগামী ছবি ‘অতি উত্তম’-এ। তবে দর্শকেরা বড়পর্দায় তাঁর প্রত্যাবর্তন দেখে চমকে যাবেন— এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। 

শীত গুটি পায়ে ফিরছে। ফাগুন উতলা দখিনা বাতাসে। এমনই এক সন্ধেয় উত্তমকুমার ফিরলেন। তাঁর ছায়া শরীর নিয়ে। প্রথমেই গা ঘেঁষে দাঁড়ালেন নাতি গৌরব চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁর পিলে চমকে দিয়ে। অনিন্দ্য সেনগুপ্তর প্ল্যানচেটের সৌজন্যে। প্রথমে কারও বিশ্বাস হয় না। এদিকে, অনিন্দ্য মহানায়কের ‘জাবরা’ ফ্যান। তিনি শয়নে, স্বপনে, জাগরণে উত্তমময়! তাঁকে নিয়ে গবেষণা করছেন। আর এই নিয়েই বান্ধবী রোশনি ভট্টাচার্যের সঙ্গে যত আড়াআড়ি।। তিনি কিছুতেই রোশনিকে বোঝাতে পারেন না, মহানায়ক তাঁর সঙ্গী। একদিন বান্ধবীর জোরাজুরিতে তাঁকে হাজির হতে হয় তাঁর সামনে। রোশনি কি ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন? একেবারেই না। তিনি ঠাস করে প্রেমে পড়ে গেলেন! মহানায়ক অবশ্য তাঁকে পাত্তা দিতে নারাজ। কিন্তু রোশনির যে তাঁকে চাইই! এবার অনিন্দ্য কী করবেন?



এই প্রশ্ন জিইয়ে রেখে ট্রেলার শেষ। বাঙালির যে ক’টি অনুভূতি প্রবল তার মধ্যে এক এবং অদ্বিতীয়, উত্তমকুমার। ৪৪ বছর ধরে ২৪ জুলাই বাঙালির আরও একটি পার্বণ। বৈশাখ যদি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হয়, জুলাই তবে অলিখিত ভাবে মহানায়কের। তাঁর অভাবে বাঙালি কেঁদেছে। তাঁর বিহনে টালিগঞ্জে দারুণ খরা গিয়েছে। কোনও নায়ক সুন্দর হাসলে আজও সেই হাসিতে তাঁর হাসির ছায়া খোঁজার চেষ্টা। প্রেমিকা উত্তম-প্রেমিক, বোন উত্তম-দাদা, স্ত্রী উত্তম-স্বামী চেয়েছেন। কিন্তু প্ল্যানচেট? বাঙালি কবিগুরু থেকে আরও অনেক বিশিষ্টকে এই প্রক্রিয়ায় পার্থিব জগতে ফেরানোর চেষ্টা করলেও মহানায়ককে সযত্নে সরিয়ে রেখেছে। উত্তম যে তাঁদের শিবরাত্রির সলতে! ‘নস্টালজিক’ হওয়ার একমাত্র উপাদান। ছবির খাতিরে সৃজিত পর্দায় প্রথম সেই পথে হাঁটলেন। মহানায়কের একমুঠো নানা স্বাদের ছবির ততধিক স্বাদু চরিত্রকে ভিএফএক্সে হাজির করলেন। ক্যামেরার কারসাজিতে সেই চরিত্র নড়ল, চড়ল, কথা বলল। চিত্রনাট্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অভিনয় করার (পরিচালকের মতে) চেষ্টাও করল। ক্ষণিকের জন্যও একুশ শতক বা আগের প্রজন্ম সেই মায়ায় ভুলল কি?

রইল বাকি মহানায়কের সঙ্গে বাকিদের অভিনয়। উত্তমকুমারকে সহ-অভিনেতা পেয়ে কেমন লাগল বাকি অভিনেতাদের?



গত ২৪ জুলাই মহানায়কের ভবানীপুরের বাড়িতে প্রথম প্রকাশ্যে এসেছিল ট্রেলার। সেই সময় আজকাল ডট ইনকে গৌরব বলেছিলেন, ‘‘ট্রেলারের ওই যে দৃশ্যটা, দাদুকে দেখে চমকে উঠেছি, বাস্তবে ঘটলে ঠিক এমনটাই হত।’’ অনিন্দ্যর নিদারুণ আফসোস, সত্যিই যদি তিনি ফিরে আসতেন! বলেছেন, ‘‘ভিএফএক্সেই যা করলেন তাতেই আমাদের ঘাম ছুটেছে। সত্যি ক্যামেরা ভাগ করতে হলে দাঁড়াতে পারতাম না!’’ রোশনির কথায় মুগ্ধতার রেশ তখনও। সটান বলেছিলেন, ‘‘সাতের দশকের মহানায়ককে পেলে অবশ্যই প্রেমে পড়তাম। স্বামী, সংসার চুলোয় যেত। তাতেও আপত্তি নেই। ওঁর বয়স নিয়েও মাথা ঘামাতাম না। এই অনুভূতি ছবিতে অভিনয়ের সময়েই টের পেয়েছি। আজীবন ‘সপ্তপদী’র ‘কৃষ্ণেন্দু’র ‘রীণা ব্রাউন’ হতে চাই!’’ এই আবেশ নিয়েই গৌরব-রোশনি-অনিন্দ্য, লাবণী সরকার, শুভাশিস মুখোপাধ্যায় প্রত্যেকে নিজের মতো করে চেষ্টা করে গিয়েছেন। 

ছবির বাড়তি আকর্ষণ সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠ। না দেখলে ধরাই যাবে না, অভিনেতা বলছেন? নাকি সত্যি সত্যিই মহানায়ক?