বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পূর্ণ খবর

কলকাতা | মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি টেকনোলজি নিয়ে পড়তে চান, কীভাবে?

Riya Patra | ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৯ : ৩৭Riya Patra


ড.‌ ভাস্কর চৌধুরী: স্বাস্থ্য পরিষেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন  ল্যাব টেকনিশিয়ানরা। কোন যোগ্যতায় কীভাবে আসা যায় এই পেশায়, তা নিয়েই বিশদে আলোচনা। মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি টেকনোলজি, যা ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি সায়েন্স নামেও পরিচিত, বিষয়টি সাধারণত ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ নির্ণয়–সহ চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত। মেডিক্যাল ল্যাব টেকনোলজির মতো সহযোগী স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের বিষয়টি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে কাজের সুযোগ করে দেয়। যদিও এই পেশা রোগীদের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করে না, তবে এই ক্ষেত্রের পেশাদারেরা মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব ফেলেন। মেডিক্যাল ল্যাব টেকনোলজির শিক্ষার্থীরা ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়ে চিকিৎসকদের সাহায্য করে। উপরন্তু, ছাত্রছাত্রীরা এই কোর্সটির মাধ্যমে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরির পরিচালনা এবং উন্নত পরিষেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে। এটি একটি প্রফেশনাল বা পেশাদারি কোর্স হওয়ায় দিন দিন এর চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে।
মেডিকাল ল্যাব টেকনোলজি (‌‌এমএলটি)‌‌ কোর্সটি বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ–সহ দেশের প্রায় সব রাজ্যে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানো হচ্ছে। কোনও শিক্ষার্থী এই কোর্সটি নিয়ে পড়তে চাইলে উচ্চমাধ্যমিকে সায়েন্স নিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারে। এই কোর্সের শিক্ষার্থীরা মেডিক্যাল ল্যাব টেকনোলজিতে বিএসসি ও এমএসসি ডিগ্রি কিংবা ডিপ্লোমা অর্জন করতে পারে। নতুন শিক্ষানীতি (‌‌জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০)‌‌ অনুযায়ী এই বিষয়ে গ্র‌্যাজুয়েশন ডিগ্রি সম্পূর্ণ করার সময়সীমা হল চার বছর। এটি একটি পেশাদারি কোর্স হওয়ায় ‌এর পাঠ্যক্রম অন্যান্য বিষয়ের পড়াশোনার ধরন থেকে অনেকটাই আলাদা। এই চার বছর সময়সীমার মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের মেডিক্যাল ল্যাব টেকনোলজি সম্পর্কিত বিষয়গুলির ওপর থিওরেটিক্যাল, প্র‌্যাকটিক্যাল এবং ল্যাবরেটরি ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয়। এই পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়, যেমন– ফিজিওলজি, অ্যানাটমি, বায়োকেমিস্ট্রি, হেমাটোলজি, ব্যাকটিরিওলজি, প্যাথলজি, ইমিউনোলজি এবং মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষা–সহ শারীরিক নমুনাগুলির (‌‌মল, মূত্র, রক্ত, থুতু প্রভৃতি)‌‌ ওপর বিভিন্ন বিশ্লেষণধর্মী পরীক্ষা চালানোর দক্ষতা অর্জন করে। ফলস্বরূপ এরা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি, ব্লাড ব্যাঙ্ক, হসপিটাল, নার্সিংহোম, গবেষণাকেন্দ্র, স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রভৃতি ক্ষেত্রে চাকরি পেয়ে থাকে।
মেডিক্যাল ল্যাব টেকনোলজিতে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি সম্পূর্ণ করার পর ছাত্রছাত্রীরা রোগীর নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে তাদের কেরিয়ার শুরু করতে পারে। একজন মেডিকাল ল্যাব টেকনোলজিস্ট-এর কাজ হল বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর নমুনার গুণগত মান নির্ণয় করা, পরীক্ষার বৈধতা যাচাই করা, ডেটা লগিং, লেবেলিং, ল্যাবের রক্ষণাবেক্ষণ এবং যন্ত্রের সমস্যা সমাধান নিশ্চিত করা।
স্নাতক ডিগ্রি লাভের পরেই এই কোর্সে উত্তীর্ণদের সামনে বহুবিধ চাকরির পথ খুলে যায়। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই নিয়মিত ক্যাম্পাসিংয়ের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করা হয়। বিভিন্ন হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক ল্যাব, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি প্রতিবছর এই ক্যাম্পাসিং প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে এবং সংস্থাগুলি তাদের প্রয়োজন অনুসারে ছাত্রছাত্রীদের বেছে নেয়। এছাড়াও এই পাঠ্যক্রম চলাকালীন অথবা পাঠ্যক্রমের শেষে ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক ল্যাব, রিসার্চ ইনস্টিটিউটে ইন্টার্নশিপের সুযোগ করে দেওয়া হয় যাতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি চাকরি পাওয়ার পথটাও প্রশস্ত করে রাখতে পারে। স্নাতক বা গ্র্যাজুয়েশন সম্পূর্ণ করার পর কিছু ছাত্রছাত্রী জীবিকা অর্জনের পথে এগিয়ে যায়, তেমনই আবার অনেকে উচ্চশিক্ষার পথ বেছে নেয়। এক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা স্নাতকোত্তর (‌‌এমএসসি)‌‌, স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা (‌‌পিজি ডিপ্লোমা)‌‌ এবং গবেষণা (‌‌পিএইচডি)‌‌-র পথ বেছে নিতে পারে। স্নাতকোত্তর স্তরে মেডিক্যাল ল্যাব টেকনোলজি সম্পর্কিত অত্যাধুনিক কিছু বিষয়, যেমন, ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্ট্রি, ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি, নিউক্লিয়ার মেডিসিন টেকনোলজি, ক্লিনিক্যাল রিসার্চ নিয়ে পড়ানো হয়। এর সঙ্গে নির্দিষ্ট কোনও বিষয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ অথবা ডেজারটেশন জমা করতে হয়।
মেডিক্যাল ল্যাব টেকনোলজি নিয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পূর্ণ করার পর ছাত্রছাত্রীরা নিজস্ব উদ্যোগে স্বল্প পরিসরে ব্যবসা শুরু করার কথাও ভাবতে পারে। অনেক ছাত্রছাত্রী সাম্প্রতিক অতীতে ছোটমাপের ব্যবসা শুরু করে এই ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ডায়াগনস্টিক ল্যাব তৈরি, ডায়াগনস্টিক কিট তৈরি প্রভৃতি ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় কেরিয়ার গড়ার সুযোগ থাকে।
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষের পরে সিএসআইআর–‌ইউজিসি পরিচালিত ‘‌নেট’‌ (‌‌ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট)‌‌ বা ‘‌সেট’‌ (‌‌স্টেট এলিজিবিলিটি টেস্ট)‌‌ প্রভৃতি পরীক্ষার মাধ্যমে গবেষণায় (‌‌পিএইচডি)‌‌ সুযোগ মিলতে পারে। নেট উত্তীর্ণ প্রার্থীরা গবেষণা করাকালীন ফেলোশিপ পায়। এছাড়াও নেট বা সেট উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদের জন্য আবেদন করতে পারে।
একজন প্রযুক্তিবিদ প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শেখার মাধ্যমে যেমন দক্ষতা অর্জন করেন, তেমনই মেডিক্যাল ল্যাব টেকনিশিয়ানরা ট্রেনিং-এর মাধ্যমে নিজেদের দক্ষ করে তোলেন। বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল ল্যাব, ব্লাড ব্যাঙ্ক, রিসার্চ ল্যাব, ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা, এনজিও এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল ল্যাব টেকনিশিয়ানদের প্রয়োজন। মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি টেকনোলজিতে গ্র‌্যাজুয়েশন বা পোস্ট গ্র‌্যাজুয়েশন করার পর ছাত্রছাত্রীরা যে সব পদে চাকরি পেতে পারে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান, ব্লাড ব্যাঙ্ক টেকনিশিয়ান, মেডিক্যাল রেকর্ড টেকনিশিয়ান, ল্যাবরেটরি ম্যানেজার ইত্যাদি।
আধুনিক যুগে সেখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে সম্পাদিত পরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভরশীল, সেখানে মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি পেশাদারদের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে এবং এঁরা স্বাস্থ্য পরিষেবা মূলক খাতে নিজেদের কেরিয়ার গড়ে তুলতে সক্ষম। এছাড়াও বিভিন্ন হাসপাতাল এবং ক্লিনিকের জন্য এমএলটি গ্র্যাজুয়েটরা রোগীদের সর্বোত্তম চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান, চিকিৎসকদের সঠিক রোগ নির্ণয় এবং সুচিকিৎসা সুনিশ্চিত করেন।
সাধারণ মানুষ এখন স্বাস্থ্য বিষয়ে অনেকটাই সচেতন। তাই সাধারণ হেল্‌থ চেক-আপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন জটিল রোগ নির্ণয়ে মানুষ অনেকাংশে ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরির ওপর নির্ভরশীল। তাছাড়া ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য প্রচুর দক্ষ এবং পেশাদার মেডিক্যাল ল্যাব টেকনিশিয়ান প্রয়োজন।
আগামী কয়েক বছরে এই পেশার পেশাদারদের চাহিদা আরও বাড়বে বই কমবে না।
তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, এরাজ্যে মেডিক্যাল ল্যাব টেকনোলজির আন্ডার গ্র‍্যাজুয়েট ডিগ্রি কোর্সে ভর্তির জন্য রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স এগজামিনেশনস বোর্ড আয়োজিত ‘‌জেনপাস’‌ পরীক্ষায় বসতে হয়। ১০+‌২ স্তরে বিজ্ঞান নিয়ে উত্তীর্ণ পড়ুয়ারা‌ এই পরীক্ষায় বসার জন্য আবেদন করতে পারে। ২০২৪–এর জেনপাস পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ৩০ জুন, রবিবার। ফেব্রুয়ারি–মার্চ মাসে এই পরীক্ষার ফর্ম পূরণ হবে। বিশদ তথ্যের ওয়েবসাইট:‌ www.wbjeeb.nic.in‌। এছাড়া মওলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি (‌মাকাউট)‌ পরিচালিত কমন এন্ট্রান্স টেস্ট দিয়ে বিএমএলটি কোর্সে ভর্তির সুযোগ পাওয়া যায়। ওয়েবসাইট:‌ https://makautwb.ac.in। অন্যদিকে, মেডিক্যাল ল্যাব টেকনোলজির ডিপ্লোমা কোর্সে (ডিএমএলটি) ভর্তির জন্য পরীক্ষা ও কাউন্সেলিং করিয়ে থাকে রাজ্যের স্টেট মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি। এই কোর্স সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাওয়া যাবে এখানে:‌ www.smfwb.in।‌‌‌‌‌




বিশেষ খবর

নানান খবর

শীঘ্রই আসছে...

নানান খবর

দায়িত্ব নিয়েই আরজি করে নতুন নগরপাল, বৈঠক করলেন অধ্যক্ষের ঘরে...

কথা বলে ‘ধোঁয়াশা’ কেটেছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ডেকরটার্স বিতর্ক নিয়ে জবাব চিকিৎসকদের...

আরজি কর কাণ্ডে ডাক সিবিআই-এর, ‘সবরকম সাহায্য’ করতে সিজিওতে মিনাক্ষী ...

স্বাস্থ্যসচিবের অপসারণের দাবি, ফের রাজ্যকে ই-মেল, জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি অব্যাহত ...

রাতের শহরে ফের আক্রান্ত ট্র্যাফিক সার্জেন্ট, চিকিৎসা করাতে নিজেই ছুটে গেলেন হাসপাতালে...

খাস কলকাতায় ফের প্রোমোটারের দাপাদাপি, আহত ১

'যদি কাগজে লেখ নাম', কর্তব্যরত নার্সকে প্রেমপত্র দিয়ে বিপাকে যুবক...

নেতাজি সুভাষ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে স্মার্ট ইন্ডিয়া হ্যাকাথন, অংশগ্রহণ করল ৯২টি দল...

সোম-রাতে বলেছিলেন মমতা, মঙ্গলে পুলিশের সঙ্গেই বড় বদল স্বাস্থ্যেও ...

কলকাতার নতুন পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা, বিনীত হলেন এডিজি এসটিএফ ...

পড়ুয়াদের দক্ষ ও শিল্পমুখী করে তোলার বিশেষ প্রচেষ্টা এসএনইউ’‌র ...

কালীঘাটে মমতার বাড়িতে জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে হল বৈঠক, মিলল সমাধান?‌ ...

প্লাবিত এলাকা নিয়ে চিন্তিত মমতা, দিলেন এই নির্দেশ ...

সরকার এবং ডাক্তারদের নিঃশর্ত আলোচনা জরুরি, নয়তো নৈরাজ্যের পথে চলে যাবে পশ্চিমবঙ্গ...

চিকিৎসকদের শর্ত মানল রাজ্য, কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে বৈঠকে যাচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা...



সোশ্যাল মিডিয়া



02 24