শুক্রবার ৩১ জানুয়ারী ২০২৫
সম্পূর্ণ খবর
Riya Patra | ৩০ জানুয়ারী ২০২৫ ১৯ : ২২Riya Patra
অভি চক্রবর্তী
হ্যাঁ আজ রোহিত ভেমুলার জন্মদিন। কে রোহিত ভেমুলা? তা আমরা প্রায় সকলেই জানি, জানি তাঁর দলিত জন্মের বা অর্ধ দলিত বেঁচে থাকার আজন্ম গ্লানি এবং শেষপর্যন্ত আত্মহত্যার মতো আপাত ভীতু কিন্তু বিপ্রতীপে এক মহাশক্তিশালী পথ বেছে নেবার কথা। হঠাৎ তাঁর কথা আজ মনে করব কেন? শুধুই জন্মদিন বলে এই উদযাপনের তাণ্ডব করে তাঁকে ফিরিয়ে এনে মেকি চোখের জল ফেলবার জন্য? না। তা নয়।
আসলে রোহিত ভেমুলার প্রতিবাদ তাঁর শেষ চিঠি। সেই সুইসাইড নোট যখন প্রথম পড়ি, চমকে উঠেছিলাম। একটা মানুষ, কতটা জীবনীশক্তি তাঁর কলমে সঞ্চিত করে রাখছে আসন্ন স্বেচ্ছামৃত্যুর খানিক আগে বা বলা ভাল এই গণতান্ত্রিক, এই তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দেশে কাটানো তাঁর শেষ রাত্তিরে। হয়ত তখন বাইরে চাঁদের আলো, হোস্টেলের ঘরের অল্প আলোয় মিলেমিশে তিনি এক মহানক্ষত্রদের দেশের দিকে চলে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। যেমন করে ভেমুলারা পায়।
অংশুমান কর, আমার সিনিয়ার কবি, ঔপিন্যাসিক সংগীতার (চক্রবর্তী) গান্ধারী দেখে আমাকে এই দুরূহ প্রস্তাবটি দেন। ভেমুলার সুইসাইড নোটের মতো এক মহাকাব্যের চিরকুটকে নাট্যরূপ দিতে চান তিনি, সঙ্গে থাকবে রামায়ণের অনালোচিত শূদ্র চরিত্র শম্বুকের সংযোগ বা প্যারা টেক্সট। আমি রাজি হই। অনেকের অনেকরকম বারণ সত্তেও রাজি হই। আমাদের থিয়েটারে সময়ের কথা বলা বরাবরই প্রাথমিক দায় বলে আমার মনে হয়। বার চারেকের খসড়া আদানপ্রদানের পর ফাইনাল হয় স্ক্রিপ্ট। সিনিয়ারদের মধ্যে জুটে যায় সংগীতা চক্রবর্তী, অরূপ গোস্বামী এবং সুকান্ত পাল। গানে নাট্যমুখের এক ও অদ্বিতীয় শ্রেয়া সরকার। কিন্তু বাইরের রাজ্যে কয়েকটি অভিনয়ের পরই বুঝতে পারি বদলাতে হবে টিম। বদলাইও। গুলশানারা আমার বহু পুরনো বন্ধু প্রিয় এবং দক্ষ অভিনেত্রী, যে আমাদের সঙ্গে সময়যান করেছে তাকে বলতেই সাংবাদিক চরিত্রে রাজি হয়ে যায়। আমাকে জানায়, 'এটা তার দায়।' রাজি হয় কাল্পিকের দেবব্রত ব্যানার্জি, বালার্কর পুজা কুন্ডু, যে আমার পরিচিত দীর্ঘদিনের এবং প্রিয় অভিনেত্রীও বটে সে রাজি হয় মিত্রা চরিত্রে। শুরু হয় ভেমুলার নতুন করে পথ চলা। সুকান্ত পাল করছিল শম্বুক অর্থাৎ রাম যাকে তপস্যা করবার কারণে মেরে ফেলেছিল। পুজার বিপক্ষে যত্ন করে নিজেকে পুননির্মাণ করেছেন সুকান্ত। আলোয়, মঞ্চে, পোশাকে এবং আবহে সেই প্রাচীন সময়ের প্রতিধ্বনিই রেখেছি আমি। আজকের সময়ের চিহ্ন হিসেবে শুধু দুটো চেয়ার এসে বসেছে প্রাচীনের মাঝে। এইভাবেই দুই সময়কে মিলিয়েছি আমি। নির্দেশনার ক্ষেত্রে এ আমার প্রিয়তম ঝোঁক।
সঙ্গে পেয়েছিলাম, রোহিত ভেমুলার এই কাব্যসমৃদ্ধ সুইসাইড নোট। তা অনবদ্য দক্ষতায় পাঠ করেছিলেন অর্ক দেব। আমরা ব্যবহার করেছিলাম রূপমের ভেমুলার চিঠি গানটি।
সমস্ত শিল্পমাধ্যমের সংযোগ ও সংশ্লেষে এই থিয়েটার মূলত এই অসহিষ্ণু সময়ের বিলক্ষে কথা বলে, হয়তো এইসব কথা আমাদের আরও বৃহত্তর গণ-আত্মহত্যার দিকে নিয়ে যাবে। আমাদের থিয়েটার করার যাবতীয় ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, বন্ধ হয়ে যাবে বা গেছে সাংস্কৃতিক অনুদান, পুরস্কারের তালিকায় এ নাটক আসবে না কোনওদিনই তবুও আমাদের কথা বলতে হবে, মঞ্চে সার সার ঝোলানো দড়ির মধ্যে দিয়ে রোহিত ভেমুলাকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে হবে। হবেই।