শনিবার ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

সম্পূর্ণ খবর

লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ | Election: কেন কেটে গেল ভোট-মোহ? জানালেন চার বিশিষ্টজন

Riya Patra | ২৭ মে ২০২৪ ১৪ : ০২Riya Patra


রিয়া পাত্র 

তাঁরা প্রত্যেকেই পরিচিত নাম। তাঁদের জগৎ ছিল আলাদা, পরিচিতি ছিল আলাদা। সেই আলাদা পরিচয় নিয়েই একসময় ঢুকে পড়েছিলেন রাজনীতিতে। ভোটও লড়েছেন। কিন্তু 'রাজনীতি আদতে মোহ, যা কাটানো যায় না সহজে' জাতীয় আপ্তবাক্য এক ঝটকায় মিথ্যে প্রমাণিত করে সংসদীয় রাজনীতির ঘেরাটোপ থেকে নিজেদের ছাড়িয়ে এনেছেন। দীর্ঘ নির্বাচনী প্রচার, উত্তপ্ত নির্বাচনকালের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সেরকমই চারজনের সঙ্গে কথা বলা গেল। কেউ কেউ এখনও মনের ভেতর লালন করেন রাজনৈতিক সত্ত্বাকে, কেউ কেউ আবার রাজনীতির আঙিনা থেকে বেরোবার সময়েই ছুঁড়ে ফেলে এসেছেন তা। কেন ভোটের লড়াইয়ে আসা, কীভাবেই বা চক্রব্যূহ ভেঙে বেরিয়ে এলেন? জবাব দিলেন একসময়ের বাংলা কাঁপানো নকশাল নেতা অসীম চ্যাটার্জি, সাংবাদিক রন্তিদেব সেনগুপ্ত, অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়, এবং সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমন।
উত্তাল ছাত্র আন্দোলনই পথ ছিল অসীম চ্যাটার্জির। সেখান থেকেই পরিচিত 'কাকা' নামে। কাকা একদিন ঢুকে পড়লেন সংসদীয় রাজনীতিতে। কেন? সল্টলেকের বাড়িতে বসে এখনও মনের মধ্যে তিনি লালন করেন আদর্শকে। বললেন, একটা সময়ে মনে করতেন, সংসদীয় রাজনীতি কখনোই মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে, শিশুর মুখের হাসিকে, মধ্যবিত্তের আকাঙ্ক্ষাকে সুনিশ্চিত করতে পারে না। কিন্তু সেই ধারণা ধাক্কা খেল ৭৭-এ। জরুরি অবস্থার পরিস্থিতিতে মানুষকে হাতে-হাত মিলিয়ে লড়ে যাওয়ার যে ডাক তাঁরা দিয়েছিলেন, সেই ডাক প্রকারান্তরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন মানুষ। কাকা বুঝেছিলেন, মানুষ নির্বাচনকেই বেছে নিয়েছে প্রতিবাদের মঞ্চ হিসেবে। এই মঞ্চই বদলাতে পারে শাসককে। তাঁর মতে, 'এটা একটা ঐতিহাসিক শিক্ষা'। বুঝলেন মানুষকে সমষ্টিগত করতে গেলে ঢুকতে হবে নির্বাচনের মধ্যে। পরবর্তীকালে তিনি দু' বার ভোট লড়লেন। দু'বারের মাঝেও রইল বিস্তর সময়ের ফারাক, রইল ভাবনাগত পার্থক্য। প্রথমবার ভোট লড়লেন বামফ্রন্টের সমর্থনে। সেবার লক্ষ্য নির্বাচনে জেতা ছিল না। লক্ষ্য ছিল 'কাকা'র গা থেকে 'নকশাল নেতা'-র ট্যাগ সরানো। বদলে বাম গণতান্ত্রিক প্রার্থী হিসেবে পরিচিতি পেতে চেয়েছিলেন। হলও তাই। পরে ২০০৬ সালে তিনি চাইছিলেন, ক্ষমতা থেকে বামপন্থীদের সরাতে। 'বুঝেছিলাম, যা চাইছি,এরা তা পারবে না। সুভাষ চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনার পর যোগাযোগ করলাম মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে।' বললেন অসীম। নিজের বামপন্থী ভাবমূর্তির কথা না ভেবে মমতার কথায় বেলেঘাটা থেকে ভোট লড়েন অসীম চ্যাটার্জি। হারলেন। কিন্তু তাতে কি সফল হলেন লক্ষ্যে? হলেন না। পরে আবার যোগাযোগ করেন বামফ্রন্টের সঙ্গে। তারপরে বদল এসেছে ভাবনার, বদল এসেছে কাজে। ফ্রন্ট থেকেও বেরিয়ে এসেছেন। অন্য লক্ষ্য নিয়ে পৃথক গোষ্ঠী তৈরি করে নিজের ভাবনা বিস্তার করতে চেয়েছেন। আগের মতো সক্রিয় না হলেও, এখনও রাজনীতির মধ্যেই রয়েছেন। সিআরএলআই-এর অবস্থান অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থী না দিলেও বিজেপি ও তৃণমূল বিরোধী যে কোনও শক্তিকে সমর্থন জানানো। তবে, দীর্ঘ সময়ে বুঝেছেন, মতাদর্শের মিল না হলে, আর যাই হোক, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে থাকতে পারবেন না তিনি।
রন্তিদেব সেনগুপ্ত। সাংবাদিকতা করেছেন দীর্ঘকাল। ভোট লড়েছেন। কিন্তু তারপর সরে এসেছেন দ্রুততার সঙ্গে। কথোপকথনে জানালেন, তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা সবই রাজনৈতিক পরিবারে। রন্তিদেব কর্মজীবনেও সেই রাজনীতির খবর লিখলেন দীর্ঘকাল ধরে। খুব কাছ থেকে দীর্ঘকাল রাজনীতির আঁটঘাট দেখেছেন, বুঝেছেন। মমতা ব্যানার্জির উত্থানের সঙ্গীও ছিলেন। ২০১১ সালে মমতা ব্যানার্জি ক্ষমতায় আসার কিছুকাল পরেই বুঝতে পারলেন, যে 'অন্যরকম প্রশাসন'-এর আশা তাঁরা করেছিলেন, ভুল হয়েছে সেখানেই। তৃণমূল সরকারের একগুচ্ছ ভাল কাজের মাঝেই তাঁর মনে হল, মমতা ব্যানার্জির জমানায় নিচু স্তরে উঠে এসেছে 'খারাপ লিডারশিপ'। দলনেত্রী 'কন্ট্রোল' করতে পারলেন না সেটা। সেখান থেকেই প্রতিবাদের ভাবনা এবং ভাবনা থেকেই গেরুয়া শিবিরকে বিকল্প হিসেবে ভাবতে শুরু করা। ২০১৯-এ লোকসভা নির্বাচনে লড়লেন বিজেপি প্রার্থী হিসেবে। ২০২১-এ ব্যক্তিগত ইচ্ছা না থাকলেও, ভোট লড়লেন বিধানসভাতেও। গেরুয়া শিবিরের রণকৌশল, সাম্প্রদায়িক বিভেদের রাজনীতি, হিন্দুত্ববাদের কথা শুনে শুনে ততদিনে তিনি বীতশ্রদ্ধ হতে শুরু করেছেন। ধর্মের নামের রাজনীতি দেখে বুঝলেন, তৃণমূলের বিকল্প নয় বিজেপি। সেখান থেকেই এক ঝটকায় বেরিয়ে এলেন তিনি। সংসদীয় রাজনীতি থেকেই বেরিয়ে গেলেন। তবে রাজনীতি থেকে কি সরে গেলেন? না। 'দেশ বাঁচাও গণমঞ্চ'-র হয়ে এখন নিজের রাজনৈতিক ভাবনার কথা তুলে ধরেন। ঘৃণা ভাষণ, হিন্দুত্ববাদের রাজনীতি নিয়ে মানুষকে লেখালিখির মাধ্যমে সচেতন করার চেষ্টা করছেন। বলছেন, ২০২৪-এর নির্বাচনকে একেবারেই গুলিয়ে ফেলা যাবে না অন্য নির্বাচনের সঙ্গে। এই নির্বাচন দেশের সংবিধান রক্ষার, ফ্যাসিস্ট শক্তির আগ্রাসন রুখে দেওয়ার নির্বাচন। এই ভোট ঠিক করে দেবে, কোন পথে যাবে দেশ। 
২০২৪-এর লোকসভা ভোটে বিজেপিকে উৎখাতের ডাক দিয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমন। একসময় তৃণমূলের টিকিটে ভোট লড়েছেন তিনি। সেই দলের সঙ্গে এখন দূরত্ব কয়েক যোজনের। দলের কাজে প্রশংসা বা সমালোচনা করলেও নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন সংসদীয় রাজনীতি থেকে। ভোট আবহে তার কারণ জানতে যোগাযোগ করা হলে বললেন, বয়স হচ্ছে। এখন আর রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছে করে না। বরং গান নিয়েই ভালো আছেন। 
২০০১ সালে যাদবপুর থেকেই বিধানসভা ভোটে লড়াই করেছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়। তারপর বহুবছর হল, রাজনীতির ময়দানে তাঁকে আর দেখা যায় না। কেন? ২০২৪- এ দাঁড়িয়ে আর ২০০১ সালের কথা আর মনেই করত চান না তিনি। বললেন, সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথা ফেলতে পারেননি বলেই সেবার ভোট লড়া। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্রায় ৩০ হাজার ভোটে হেরেছিলেন। বর্তমানে একাধিক প্রার্থী এই প্রশ্ন উসকে দেন, হেরে গেলেই কি সরে যেতে হয় রাজনীতি থেকে? সত্যজিতের চারুলতা বলছেন, 'এই বয়সে রাজনীতির আলোচনা আর করতে চাই না। ইচ্ছে ছিল না বলেই সরে এসেছি।'




বিশেষ খবর

নানান খবর

নানান খবর





রবিবার অনলাইন

সোশ্যাল মিডিয়া



05 24