বুধবার ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Sumit | ১২ মে ২০২৪ ১৬ : ১২Sumit Chakraborty
বীরেন ভট্টাচার্য, লখনউ: রামরাজ্য শব্দের অর্থ কী? সুশাসন, স্বাচ্ছন্দ্য। আর আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের এটুকুই চাহিদা। রায় গুণাকর ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল লেখার সময় থেকে সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা আজও এটুকুই। যদিও দুধ–ভাত তো দূর অস্ত! দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন সংস্থান করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে মোদি–যোগীর রাম রাজত্বে। অযোধ্যায় রাম মন্দিরে রামলালা প্রতিষ্ঠা হলেও উত্তরপ্রদেশের গরিব, কৃষক, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের রোজনামচার পরিবর্তন হয়নি। বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির সাঁড়াশি চাপে নাভিশ্বাস অবস্থা রাজ্যবাসীর। জয় শ্রী রাম স্লোগান দিয়ে ধর্মের টনিক গেলানোর চেষ্টা করলেও, উত্তরপ্রদেশবাসীর বক্তব্য, খালি পেটে ধর্ম হয় না, আগে পেট তারপর ধর্ম।
রাজধানী শহর লখনউ, কনৌজ, উন্নাও, সর্বত্র ছবিটা একই। বিজেপির তৈরি করা রাম মন্দির, অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মতো হিন্দুত্ববাদী বিষয়গুলি নয়, লোকসভা নির্বাচনে বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে বেকারত্ব। রাম মন্দিরের প্রসঙ্গ বা ইস্যু হিসেবে তুলে ধরার প্রশ্নে উত্তরপ্রদেশবাসীর বক্তব্য, রাম মন্দির তো বিজেপির তৈরি করে দেওয়া ইস্যু। লখনউয়ের সমাজবাদী পার্টির কার্যালয়ে দলীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকের ফাঁকে পাওয়া গেল প্রাক্তন বিধায়ক পরমেশ্বর দয়ালকে। ধরে ধরে বিজেপির তোলা প্রতিটি ইস্যুর সমালোচনা করলেন তিনি। পরমেশ্বর দয়াল বললেন, ‘রাম মন্দির এখানে কোনও ইস্যু নয়। এখানে সবচেয়ে বড় ইস্যু মূল্যবৃদ্ধি এবং বেকারত্ব। উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাস হয়তো কেন্দ্রীয় সরকার দিচ্ছে। তবে সেটি ভরার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন, তা নেই সাধারণ মানুষের পকেটে। তাহলে সেই প্রকল্পে কী লাভ বলুন?’ তাঁর কথায়, ‘সরকারি চাকরির তো কোনও প্রশ্নই নেই। বিনিয়োগ না থাকায় বেসরকরি চাকরির রাস্তাও বন্ধ। তাহলে শিক্ষিত যুবকরা কোথায় যাবেন? সেসব দিক থেকে নজর ঘোরাতে বিজেপি শুধু রামনাম করে যাচ্ছে।’ দলের আরেক নেতা মধুকর ত্রিবেদী জানালেন, ‘জিএসটি চালু করার পর অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ক্ষতি হয়েছে, কিসানের আয় দ্বিগুণ হওয়া তো দূর অস্ত, বরং চাষের খরচ বেড়েছে। ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিটি কৃষক পরিবার।’ সপা–র প্রধান মুখপাত্র এবং উত্তরাখণ্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত অশীতিপর নেতা রাজেন্দ্র চৌধুরি জানালেন, বিজেপির ওপর ক্ষুব্ধ সমগ্র উত্তরপ্রদেশের মানুষ।
তবে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার নয়, যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারেরও সমালোচনা করেছেন তিনি। রাজেন্দ্র চৌধুরি বলেন, ‘বিজেপি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে কোনও লাভ হবে না। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। রাম রাজ্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কুর্সিতে বসা মুখ্যমন্ত্রীর জমানায় ধর্ষণ, গুন্ডাগিরি বেড়েছে। এই রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বলে কিছু আছে কি?’ লখনউ রাজনাথ সিংয়ের এলাকা হলেও, এবার এই এলাকায় সমাজবাদী পার্টি সমানে সমানে টক্কর দেবে বলে দাবি সপা নেতৃত্বের।
কনৌজের বাসিন্দা তরুণী করিশ্মা যাদব জানান, কোনও কর্মসংস্থান নেই রাজ্যে। তাঁর কথায়, ‘শুধু রাম নাম করলে তো আর পেট ভরবে না। প্রয়োজন চাকরি। সরকারি বা বেসরকারি কোনও দিক থেকেই কোনও কর্মসংস্থান নেই এখানে। ছোটখাট ব্যবসা অথবা তার মাধ্যমে যে কাজ পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলিই ভরসা।’ করিশ্মা আরও বললেন, ‘সেভাবে দেখতে গেলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ছোটখাট যেটুকু হোক, কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। বড় লগ্নি না থাকায়, সেভাবে বড় কোনও শিল্প নেই রাজ্যে। সরকারি চাকরি তো নেই–ই।’
রাজ্য সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারত থেকে হস্তশিল্প রপ্তানির ১৬.৫৬ শতাংশ উত্তরপ্রদেশের। এছাড়া ৩৯.৫২ শতাংশ কার্পেট, ২৫.৫ শতাংশ চামড়ার সামগ্রী রপ্তানি হয়। রাজ্যে উৎপাদন বা এই ধরনের কোনও বড় মাপের বিনিয়োগ না থাকায় হস্তশিল্পের ওপরেই ভরসা করতে হচ্ছে শিক্ষিত যুবক, যুবতীদের। তাঁদের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশকে রামরাজ্য বলে যে তুলে ধরা হচ্ছে, সেটা বিজেপির তৈরি করা মিথ ছাড়া কিছুই নয়। বাস্তবের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।