বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পূর্ণ খবর

লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ | EXCLUSIVE: বিদ্যুতের কীর্তিতে নীরব কেন্দ্র, বোলপুরে মাশুল গুনবে বিজেপি

Pallabi Ghosh | ১১ মে ২০২৪ ১৩ : ৪৪Pallabi Ghosh


পল্লবী ঘোষ, বোলপুর: ২০১৮ সাল। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিযুক্ত হয়েই রবীন্দ্রনাথের ঐতিহ্য বদলাতে চেয়েছিলেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। মুছে দিতে চেয়েছিলেন সব পুরনো প্রথা। তিনিই ছিলেন বিশ্বভারতীর হর্তা-কর্তা-বিধাতা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ মুহুর্মুহু বিক্ষোভে উত্তপ্ত হয়েছে তাঁর সময়কালে। বিদ্যুৎ অবসর নিলেও, অতীতের সেই স্মৃতি এখনও ফিকে হয়নি। লোকসভা নির্বাচনের আবহে তার প্রভাব স্পষ্ট।
গোটা বোলপুর জুড়ে বিজেপি প্রার্থীর সমর্থনে খান কয়েক দেওয়াল লিখন, আর ব্যানার টাঙানো। বিজেপির কে লড়ছেন, তাও অনেকে না দেখে বলতে পারবেন না। টোটো চালক থেকে চায়ের দোকানের মালিক, অনেকেরই মতে, বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্যের কারণেই বোলপুরে বিজেপির এই দশা।
প্রচারের ফাঁকে রতনপল্লির তৃণমূল কাউন্সিলর চন্দন মণ্ডলের কথায়, "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং অমর্ত্য সেন, দুজনকে ঘিরে আপামর বাঙালির কত আবেগ জড়িয়ে। বিদ্যুৎ চক্রবর্তী দুজনকেই দিনের পর দিন অপমান করেছেন। বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্র সংস্কৃতিই মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন। তার প্রমাণ পুরনো নেমপ্লেট। যেখানে প্রধানমন্ত্রী, উপাচার্যের নাম থাকলেও রবি ঠাকুরের নাম ছিল না। দীর্ঘ আন্দোলনের পর তা সরানো হয়েছে। অন্যদিকে অমর্ত্য সেনের জমি সংক্রান্ত ব্যাপারে নোবেলজয়ীকে "চোর" পর্যন্ত বলেছিলেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তাঁর এমন মন্তব্যের পরেও বিশ্বভারতীর আচার্য প্রধানমন্ত্রী লাগাম টানার চেষ্টা করেননি। কোনও কিছুই বোলপুরের মানুষ ভোলেননি। নির্বাচনের প্রচারে গিয়েও দেখছি, বিজেপির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ সেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। অবশ্যই এর ফল ভুগবে বিজেপি।"
বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগের অধ্যাপক অতনু শাসমলের কথায়, "রবীন্দ্রনাথকে অবজ্ঞা করা থেকে শুরু করে অমর্ত্য সেনের জমির ইস্যুতে বোলপুরের মানুষের মনে বড় ক্ষত সৃষ্টি করেছেন প্রাক্তন উপাচার্য। বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে সংযত করা যাদের দায়িত্ব ছিল, তারা কিছুই করেনি। বোলপুরে বিজেপির ভরাডুবির অন্যতম কারণ হবেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।"
প্রাক্তন উপাচার্য তাঁর মেয়াদকালে বোলপুরে বন্ধ করেছিলেন পৌষমেলা, বসন্তোৎসব। ভুক্তভোগী ছিলেন ছোট ব্যবসায়ীরা। সারাবছর এই মেলার জন্য মুখিয়ে থাকতেন তাঁরা। বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর উদ্যোগে মেলা বন্ধের কারণে আর্থিক সঙ্কটে ধুঁকতে থাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বহু ছোট ছোট দোকানের মালিকদের অভিযোগ, "প্রাক্তন উপাচার্য এই দোকানপাট তুলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। করোনার সময় রোজগার প্রায় ছিল না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরেও আমাদের রোজগারের পথ বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। পরে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে মেলা শুরু হয়। আমরা কেউ কিছু ভুলিনি। ভোটটা এবার ভেবেচিন্তেই দেব।"
রাঙা মাটির দেশে ভোটের প্রচারে এলেও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে ছিল না বিশ্বভারতী প্রসঙ্গ। আশ্রমিক মণীষা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, "বাঙালির আবেগে আঘাত করে, যে নেতিবাচক ঘটনা দিনের পর দিন ঘটেছে, ভোটে তার প্রভাব শুধুমাত্র বোলপুরে নয়, গোটা বীরভূমেই পড়বে। এবারের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যোগী আদিত্যনাথ সকলেই বীরভূমে প্রচার করছেন। কিন্তূ বোলপুরে আসছেন না। গত কয়েক বছরে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী যা ঘটিয়েছেন, তা ঘিরে মুখে কুলুপ এঁটেছেন কেন্দ্রের বড় বড় নেতা, মন্ত্রীরা। শান্তিনিকেতনের মানুষরা তিতি বিরক্ত। আমার ধারণা, বীরভূমের দুটো লোকসভা কেন্দ্রেই বিজেপির থেকে মুখ ফেরাবেন সাধারণ মানুষ।"
ঠাকুর বাড়ির সদস্য সুদৃপ্ত ঠাকুরের মতে, "শান্তিনিকেতনে এখনও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ আছেন। সকলেই দেখেছেন, শান্তিনিকেতনের, বিশ্বভারতীর সংস্কৃতি কীভাবে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন প্রাক্তন উপাচার্য। তার প্রতিফলন হবেই এবারের নির্বাচনে।"
বিদ্যুৎ-বিহীন শান্তিনিকেতনে আন্দোলন থিতু হয়েছে। তবে ক্ষোভ মেটেনি কারও। রাজ্যের বিরোধী দল, কেন্দ্রের সরকার, কেউই এই ক্ষোভের আগুন নেভাতে উদ্যোগ নেয়নি। তাই এবারে বীরভূমে ক্ষমতা দখলের লড়াইটা বড্ড কঠিন বিজেপির কাছে।




বিশেষ খবর

নানান খবর

শীঘ্রই আসছে...

নানান খবর



সোশ্যাল মিডিয়া



05 24