বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Pallabi Ghosh | ০৬ মে ২০২৪ ১৮ : ১৬Pallabi Ghosh
পল্লবী ঘোষ, বোলপুর: বীরভূমের রাজপাট ছেড়ে তিহাড় জেলে বন্দি অনুব্রত মণ্ডল। দেড় বছর অনুপস্থিতির পরেও জেলা সভাপতির ছবিতেই ভরা বোলপুরের দলীয় কার্যালয়। এককালে যেখানে বসে শুধু চোখের ইশারায় কাজ করতেন, সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে তাঁর চেয়ার। ওই ঘরেই তাঁর বিরাট ছবির উপরে বড় বড় করে লেখা, "আছো তুমি হৃদয় জুড়ে...."। দাপুটে নেতা কারাবন্দি হওয়ার পর তাঁকে কতটা মনে রেখেছেন বোলপুরের তৃণমূল কর্মীরা?
১৩ মে বীরভূম জেলার দুটো লোকসভা কেন্দ্রে ভোট। কাজের চাপে যেখানে নাওয়া খাওয়া ভুলে থাকার কথা, সেখানে অনুব্রতর "টনিক" ছাড়া কর্মীদের মধ্যে গা ছাড়া ভাব স্পষ্ট। বোলপুরে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের অন্দরে এক স্থানীয় নেতার কথায়, "কেষ্টদা থাকলে ভোটের আগে ভোট হয়ে যেত। নির্বাচনের আগে দিনরাত ব্লকে ব্লকে ঘুরে সংখ্যালঘু, শ্রমিক, মহিলাদের সঙ্গে মিটিং করতেন। তাঁর মতো পরিশ্রমী নেতা সচরাচর দেখা যায় না। অনুব্রতদা না থাকায় এবার লড়াইয়ে এনার্জির অভাব রয়েছে। তাঁর দেখানো পথই অনুসরণ করে ভোট করাতে হবে এবার।"
অনুব্রত যে একাই একাশো ছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণেও বারবার তা উঠে আসছে। তাঁর মতো সংগঠন কেউ সামলাতে পারেন না, বলেছেন দলনেত্রী। বীরভূম, বোলপুরে ভোটের প্রচারে এসে মমতা ব্যানার্জি বুঝিয়ে দিচ্ছেন, অনুব্রতকে ছাড়া লড়াইটা কঠিন। এক সভায় "মাটির ছেলে" বলে সম্বোধন করে বলেছেন, ভোট মিটলেই ছাড়া পাবে কেষ্ট।
অনুব্রতহীন বীরভূমে তৃণমূলের দাপট জারি রাখতে প্রথমে পাঁচজনের কোর কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটিতে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা, লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিনহা, রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস ব্যানার্জি, বীরভূম জেলা সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত ঘোষ, সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায় চৌধুরী। দিন কয়েক আগে বোলপুরে এসে সেই কমিটিতে জেলা সভাধিপতি কাজল শেখকে যুক্ত করেন মমতা।
কেষ্টকে ছাড়া ভোটের লড়াই কঠিন বলে মনে হচ্ছে কোর কমিটির? রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার বক্তব্য, "অনুব্রতর মতো নেতা না থাকায়, সাময়িকভাবে নিশ্চয়ই অসুবিধা হওয়ার কথা। তবে যেভাবে পঞ্চায়েত ভোট করেছি, সেভাবেই লোকসভা নির্বাচনের জন্য লড়ছি আমরা। অনুব্রত না থেকেও, আছেন। কর্মীদের উন্মাদনায় কোনও ভাঁটা পড়েনি। তাই লড়াইটা কঠিন বলে মনে হচ্ছে না।"
একসময় অনুব্রতর সঙ্গে কাজল শেখের দ্বন্দ্ব ছিল সর্বজনবিদিত। দুই গোষ্ঠীর বিবাদ ঘিরে একাধিকবার ফায়দা তুলতেও চেয়েছে বিজেপি। সেই কাজল শেখ এবার কোর কমিটির অন্যতম সদস্য। কেষ্টর অবর্তমানে পুরনো দ্বন্দ্ব ভুলে এবার উল্টো সুর শোনা গেল জেলা সভাধিপতি কাজলের কণ্ঠে। তাঁর কথায়, "অনুব্রত মণ্ডল যাওয়ার পর থেকে জেলার ভোটের দায়িত্বে আছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। সকলে যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়ছেন, তার প্রমাণ পঞ্চায়েতেই সকলে টের পেয়েছেন। কেষ্টদাকে অবশ্যই মিস করছি। তিনি অভিভাবক ছিলেন, জেলার সভাপতি পদে এখনও আছেন। কিন্তু ভোটটা মানুষ মমতা ব্যানার্জি আর অভিষেক ব্যানার্জিকে দেখে দেন। তাই অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতি ভোট ব্যাঙ্কে প্রভাব ফেলবে না।"
সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায় চৌধুরীর মতে, "অনুব্রত মণ্ডল যেভাবে সংগঠন সাজিয়ে গিয়েছিলেন, সেই সিস্টেমেই ভোটের লড়াই চলছে। তবে পরিস্থিতি বদলেছে। বিরোধীদের এবার এটাকে ইস্যু করে কথা বলার সুযোগ রয়েছে। বলছেও। মানুষ বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। মমতা ব্যানার্জির উন্নয়নের উপর জনতার আস্থা আছে। তবে কেষ্ট না থাকায়, চ্যালেঞ্জটা বড়।"
দলের এক শীর্ষ নেতা বললেন, নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য আগেও ছিল, এখনও আছে। আগে কেষ্ট একাই বৈঠক ডেকে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতেন। বর্তমান কমিটির অনেকেই সেই বৈঠকে থাকতেন না। ব্যক্তিগত স্বার্থে এড়িয়ে চলতেন। কিন্তু তৃণমূল সুপ্রিমো দায়িত্ব নেওয়ার পর সকলে মিলে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন। কাউকে অপছন্দ হলেও কিছু করার নেই। ভোটের লড়াইয়ে দলের স্বার্থে বাধ্য হয়ে দ্বন্দ্ব ভুলে থাকতেই হয়।
কী ভাবছেন বীরভূম এবং বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের দুই প্রার্থী শতাব্দী রায় এবং অসিত মাল? শতাব্দীর কথায়, অনুব্রত না থাকায়, ছোটবড় সব অভিযোগ শুনে পরিস্থিতি সামলাতে হচ্ছে তাঁকে। ফলে কাজের চাপ বেড়েছে। অন্যদিকে অসিত মাল বললেন, অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তাও জেলবন্দি অনুব্রত। তাই এবার তাঁকে ছাড়াই আরও বেশি ভোটে জেতার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন সকলে।
বোলপুর থেকে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে থাকা অনুব্রতর কাছে নির্বাচনের উত্তাপ পৌঁছনোর কথা নয়। তিনি টেরও পেলেন না, তাঁর না-থাকাটাই দলের অন্দরের পুরনো দ্বন্দ্ব একপাশে সরিয়ে নেতাদের একত্রিত করেছে। সাবালক করেছে বহু কর্মীকে। বোলপুরে তৃণমূল প্রার্থীর প্রচারে দেওয়াল লিখনে, হোর্ডিংয়ে, ব্যানারে কোথাও নেই কেষ্ট। কিন্তু তাঁকে "হৃদয়ে রেখে", পুরনো কৌশল অবলম্বন করে গড় বাঁচানোর লড়াইয়ে সামিল তৃণমূল।