সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Riya Patra | ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৯ : ৩৫Riya Patra
রিয়া পাত্র
বয়স ২৮। বলছেন, এই লড়াই জিতলে দেশের কনিষ্ঠতম সাংসদ হবেন। বিপক্ষে লড়াই করছেন আইনজীবী, প্রাক্তন বিচারপতি। তমলুকের মাটিতে দিনরাত প্রচার চালাচ্ছেন, বোঝাচ্ছেন মানুষের পাশে থাকবেন। তার ফাঁকেই কথা দেবাংশু ভট্টাচার্যের সঙ্গে।
প্রথমবার ভোট লড়া, চেনা গন্ডির বাইরে, কীভাবে চলছে প্রচার?
দেবাংশু: জায়গা খুব একটা অচেনা নয়। এতদিন নানা জায়গায় অন্যের জন্য প্রচার করেছি, এবার প্রচার নিজের জন্য। এবার দেওয়ালে আমার নাম। আর সেই কারণেই দায়িত্ব অনেক বেশি।
তমলুকে কি দেবাংশু ‘বহিরাগত’?
দেবাংশু: এখানকার সব প্রার্থীই তাহলে বহিরাগত। এখানকার মানুষতো এখনও ভোট বয়কট করেননি। অর্থাৎ তাঁদের এই তিনজনের মধ্যেই কাউকে সমর্থন করতে হবে।এখানে ‘বহিরাগত’ অভিযোগটা থাকছে না আর।
আপনার মনে হয় না, নির্বাচনে প্রার্থী এলাকার হওয়া প্রয়োজন?
দেবাংশু: তাতে প্রার্থীরও সুবিধা হয়। কিন্তু আমি হাওড়ার চেয়ে মেদিনীপুর বেশি চিনি। তাই আমার অসুবিধে হচ্ছে না।
নিজের হয়ে প্রচার, দেওয়ালে নিজের নাম। এই কম বয়সে অনুভূতি কেমন?
দেবাংশু: খুব ভাল লাগছে, তবে তার থেকে বড় কথা, এটা আমার দলেই সম্ভব। মমতা ব্যানার্জি ২৯ বছর বয়সে প্রার্থী হয়েছিলেন। আমার পরিবারের কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। আমাকে রাজনীতিতে জায়গা দেওয়া এবং লোকসভার মতো বড় পরিসরে ভোট লড়তে দেওয়া এই দলেই সম্ভব।
অর্থাৎ দেবাংশুর জার্নি এখন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সংসদের দিকে। এত অল্প বয়সে এই ভরসার জায়গা কীভাবে তৈরি করলেন?
দেবাংশু: আমি কখনও ভাবিনি, দল এত বড় জায়গা দেবে। দলের পাশে দাঁড়ানো যায় কীভাবে, কীভাবে নতুন উপায়ে প্রচার করা যায় এসব ভাবতাম। একই সঙ্গে আমি এই বয়সেই সাধারণ মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। প্রার্থী হওয়ার পর নিজের পরিচয় দিতে হচ্ছে না আলাদা করে। দল মনে করেছে এই আসন সম্ভব দেবাংশুকে দিয়েই।
এই আসন তৃণমূলের ছিল, কিন্তু বিদায়ী সাংসদ আর তৃণমূলে নেই। এই এলাকাও অধিকারী গড় বলে পরিচিত। তৃণমূলের প্রার্থী দেবাংশু এলাকায় প্রচারে কী দেখছেন…
দেবাংশু: শুভেন্দু অধিকারীর ব্যক্তিগত কিছু সংগঠন থাকতে পারে। কিন্তু উনি আসলে যত জনের পাশে দাঁড়িয়েছেন সবটাই তৃণমূলে থেকেই। তাছাড়া আর কিছু নেই। দিব্যেন্দু অধিকারীর পরিচয় শুভেন্দু অধিকারীর ভাই। সেখানে দেবাংশুর পরিচয় সে নিজেই। কারও ভাই-দাদা নই। তাই মানুষ আমাক আমার মতো দেখছেন।
কিন্তু তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে, আপনাকে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করতে হচ্ছে সাধারণের কাছে?
দেবাংশু: মানুষের কাছে শুনতে হচ্ছে, এরপর দেখা পাবো তো? এর কারণ তো অধিকারীরাই। সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করুন, তাঁরা কেউ কেউ বলবেন দিব্যেন্দু অধিকারীকে শেষ ভোটের সময় দেখেছেন। এটাই তাঁদের অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই প্রশ্ন করেছেন।কিন্তু মানুষ বুঝতেও পারছেন দিব্যেন্দু অধিকারীর বিজেপি প্রীতির কথা। তাঁর দেহ তৃণমূলে থাকলেও মন ছিল বিজেপিতে।
দেবাংশু বলতেই মনে আসে স্লোগান। এই নির্বাচনে নতুন কোনও গান-স্লোগান লিখলেন না?
দেবাংশু: না। নতুন কিছু লিখিনি। নতুন কিছু বিধানসভার জন্য তোলা আছে।
এই ভোট কী দোষ করল?
দেবাংশু: বিধানসভার লড়াই ঘর বাঁচানোর লড়াই। আবেগ অন্যরকম থাকে। এটা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করার লড়াই। এই ভোট বিজেপি সরকার গড়বে কিনা তার ভোট। ২৬-এর লড়াইয়ে শাসক দল আমরা, আমাদের ঘর বাঁচানোর লড়াই। মমতা ব্যানার্জিকে মুখ্যমন্ত্রী করার আবেগ থেকে যে লিরিক্স বেরিয়ে আসে সেটা অন্য সময় হবে না। আর খেলা হবে এই ভোটেও প্রাসঙ্গিক।
স্লোগান না হয় তোলা রইল, প্রার্থী দেবাংশু সাধারণ মানুষকে প্রচারে কী বার্তা দিচ্ছেন?
দেবাংশু: আমি মানুষকে বলছি, আমি দিব্যেন্দু অধিকারী নই। আমাকে ভোটের আগে যতবার দেখছেন, পরে তার থেকেও বেশি দেখতে পাবেন। সঙ্গেই বলছি, এই ভোট আমি ভিক্ষা চাইতে নয়, ঋণ চাইতে এসেছি।ভিক্ষার ফেরত হয় না। ধার হিসেবে দিলে সুদ সমেত ফেরতের আশা থাকে। আমাকে ভোট ধার দিলে, আগামী ৫ বছরে কাজের মাধ্যমে সুদে আসলে ফেরত দেব।
মানুষকে বোঝাতে পারছেন এই কথাটা?
দেবাংশু: আমার রাজনীতির কেরিয়ার সবে শুরু। আমার কথা রাখার দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। আমি মানুষকে বোঝাচ্ছি, পাশে আছি। দল আছে।
কিন্তু আপনি যে দলের প্রতীকে লড়ছেন, গত কয়েকমাসে দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত সেই দল। তৃণমূলের প্রার্থী দেবাংশু যুব সমাজকে কী বার্তা দিচ্ছেন প্রচারে?
দেবাংশু: তাঁদের বেকারত্বের মূল কারণ একজন বছরে ২কোটি চাকরি দেবে বলেছিলেন, ক্ষমতায় এসে আর দেননি।শিক্ষক নিয়োগের যে অভিযোগ উঠেছে, টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়া, তারও একটা বিরাট বড় ক্ষেত্র পূর্ব মেদিনীপুর। যার মাথায় ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এই জেলায় গোটা স্ক্যাম তাঁর হাত দিয়েই হয়েছে। দল ক্ষমতায় থাকলে ভাল মানুষের পাশাপাশি খারাপ মানুষও আসে। আমার দলেও সেটা হয়েছে। আমরা কিন্তু ঘটনা সংশোধন করেছি। পার্থ চ্যাটার্জি, কুন্তল-শান্তনু বহিষ্কৃত। বিজেপির সঙ্গে এটাই পার্থক্য আমাদের। পূর্ব মেদিনীপুরে বিধানসভা ধরে কাজের সুযোগ বাড়ানোর জায়গা রয়েছে। ময়নার ক্ষেত্রে ফিসারিজ একটা বড় ব্যবসা, হলদিয়ার ক্ষেত্রে শিল্পায়নের আরও বড় পরিসরে কাজের সুযোগ রয়েছে। আমার দায়িত্ব থাকবে আরও কীভাবে এখানে শিল্প আনা যায়, যুবকদের কাজের ব্যবস্থা করা যায়। তার জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে, রাজ্য সরকারের সাহায্য নিতে হবে, তার একটা সাধারণ কৌশল তৈরি করা রয়েছে।
আপনার দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, তার মাঝেই চাকরি গেল প্রায় ২৬ হাজারের। আপনার বিপক্ষ প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ততেই সিলমোহর পড়ল তাতে কোথাও গিয়ে…
দেবাংশু: দেখুন আমি বৃত্তটা একটু উল্টোভাবে দেখাচ্ছি। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রাজনীতিতে আসা। তার পরে অন্য একজনের একই রকম রায় দেওয়া,অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নৈতিক জয়... আমার কাছে বিষয়টা এরকম নয়। প্রাক্তন বিচারপতির সময়ের আগে অবসর, রাজনৈতিক দলের টিকিট পাওয়া, ভোটে লড়া, সেই দৃশ্য দেখল বাকিরা। তাঁরই পথে হাঁটতে চাইলেন অনেকে। তিনি অনেককে অনুপ্রাণিত করেছেন।
যেমন?
দেবাংশু: সবাই ভাবছেন একটা টিকিটের চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। ২ বছর পর বিধানসভার ভোট। মন্ত্রী করার টোপ আছে।
এই লড়াই আপনি জিতলে, তমলুকের মানুষের জন্য কী করার পরিকল্পনা?
দেবাংশু: প্রথম লক্ষ্য শিল্প আনা।দ্বিতীয়ত এখানকার পান এবং মাছের ব্যবসাকে আরও বৃহত্তর জায়গায় নিয়ে যাওয়া। গোটা তমলুকের সংস্কৃতির দিকে নজর দিতে চাই। বয়স্কদের জন্য বিশেষ কিছু কাজের ইচ্ছে রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে ইচ্ছে রয়েছে এলাকাজুড়ে কিছু অবৈতনিক কোচিং সেন্টার শুরু করার। সেখানে ছেলে মেয়েরা মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক-চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবে। আমি বলতে চাই, বিজেপির ডবল ইঞ্জিনের চেয়ে, তৃণমূলের ট্রিপল ইঞ্জিনে ভরসা রাখতে।
তৃণমূলের ৪২ আসনে এবার বড় অংশ নতুন মুখ…
দেবাংশু: দেখুন নতুন দরকার সব জায়গায়। তাছাড়া বেশ কিছু জায়গায় পরিস্থিতির কারণে পুরনো প্রার্থী আবার দেওয়া সম্ভব ছিল না। প্রার্থী পরিবর্তনের কারণ অনেক্ষেত্রে অসুস্থতা, বয়স।
রাজনীতিতে বয়স ফ্যাক্টর?
দেবাংশু: বয়স অবশ্যই একটা ফ্যাক্টর। আমার বয়সের একজন এই গরমে যতটা প্রচার করতে পারবেন, একজন বর্ষীয়ান নেতা তা পারবেন। কিছু ব্যাতিক্রম বাদ দিলে, অবশ্যই এই বয়সের মান নির্ধারণ প্রয়োজন।অন্তত ইলেক্টোরাল পলিটিক্সে। কারণ প্রচার প্রয়োজন ব্যাপক হারে.৫ বছর মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। তাঁরা একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর অভিজ্ঞতা নবীনদের যদি দিতে থাকেন, তাহলে নবীনরাও শিখতে পারবে। ইলেক্টোরাল পলিটিক্সের ক্ষেত্রে এই বিষয়ে যেটা অভিষেক ব্যানার্জি বলেছেন আমার মনে হয় সেটাই বেটার।
প্রতিপক্ষদের নিয়ে কী বলবেন?
দেবাংশু: সকলকেই অভিনন্দন, শুভেচ্ছা। সায়নকে বলতে চাই, সায়ন যেন সিপিএম-এর ভোট তার বাক্সেই নিয়ে যেতে পারে, তাঁর উপস্থিতিতে ভোট যেন বিজেপিতে না যায়। এটুকুই।