Reporter: শ্যামশ্রী সাহা | লেখক: উপালি মুখোপাধ্যায় | Editor: শ্যামশ্রী সাহা ২১ এপ্রিল ২০২৪ ২০ : ১১

সময়টা বাংলা ছবির স্বর্ণযুগ। উত্তমকুমার মধ্যগগনে। তাঁকে ঘিরে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর রায়, বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অনিল চট্টোপাধ্যায়, সন্তু মুখোপাধ্যায় এবং আরও অনেকে। সেই সময় বসুশ্রী সিনেমাহলে পয়লা বৈশাখ উদযাপন হত। ধুতি-পাঞ্জাবিতে মহানায়ক মধ্যমণি। তাঁর পা ছুঁয়ে বছর শুরু করতেন ছোটরা। তিনি পা ছুঁতেন বড়দের। পুরোটা এই ঢঙে না হলেও তার কিছুটা ছায়া গায়ে মেখে কলকাতার পাঁচতারা হোটেল নক্ষত্রখচিত। উপস্থিত একালের তাবড় তারকা। মধ্যমণি সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ঠিক একই ভাবে ধুতি-পাঞ্জাবিতে শোভিত। কপালের উপরে একগোছা অবিন্যস্ত চুল। সে সব সামলে হাসিমুখে সবাইকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন। এভাবেই মহানায়কীয় ঢঙে বাংলা বর্ষবরণের পাশাপাশি ‘অতি উত্তম’-এর সাফল্য উদযাপন করলেন জাতীয় পুরস্কারজয়ী পরিচালক। এবারেও তাঁকে এগিয়ে দিলেন প্রযোজক নীলরতন দত্ত এবং তাঁর ক্যামেলিয়া প্রযোজনা সংস্থা।



এটা উদযাপনের পয়লা ধাপ। একে একে ছবির অভিনেতা গৌরব চট্টোপাধ্যায়, অনিন্দ্য সেনগুপ্ত, রোশনি ভট্টাচার্য এবং টলিউডের প্রায় সবাই উপস্থিত। ব্যাঙ্কোয়েট যখন ভরাট তখনই সবাইকে সাজানো মঞ্চে ডেকে নিলেন। জানালেন, বাঙালির আবেগ ছবিকে মাত্র ২৪ দিনে কোটির ক্লাবে পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু সাফল্য তাঁর একার নয়। উপস্থিত কলাকুশলী, অভিনেতা, প্রযোজক হয়ে পোস্টার বয়... সবার। ততক্ষণে সন্ধে গাঢ় হয়ে রাত ছুঁয়েছে। সৃজিত টেবিলে সাজানো ‘অতি উত্তম’ লেখা কেকের বুকে ছুরি চালাতে চালাতে স্মৃতিমেদুর, ‘‘আমার মনে হয় গুরুও এভাবেই নিজের ছবির সাফল্য উদযাপন করতেন। কেক কেটে।’’ উদযাপন ততক্ষণে পার্টির রূপ ধরেছে। ‘লোলা লুলু কেন তোমার বয়স হয় না ষোলো আমার নাইনটিন’... গেয়ে উঠেছেন কিশোরকণ্ঠী অর্ণব চক্রবর্তী। বেয়ারা জিন, শেরি, রামের ফোয়ারা ছোটাননি। কিন্তু টেবিলে ইয়া বড় শ্যাম্পেনের বোতল। তাকে খোলার দায়িত্বে মহানায়কের নাতি গৌরব। লাজুক হেসে সামনে রাখা একাধিক পানপাত্রে ঢেলেছেন সুরা। প্রত্যেকে এক চুমুক দিয়ে বলেছেন, ‘উল্লাস’! 



এরই ফাঁকে আমন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়া। আজকাল ডট ইনকে সৃজিত বলেছেন, ‘‘ছ’বছরের স্বপ্ন সফল হলে কী যে আনন্দ বলে বোঝানোর নয়। মহানায়ককে মনে করেই এদিন এভাবে সাজলাম। বড় পাওনা, হটস্টার থেকে বিশেষ অফার পেয়েছি। এখন ছবি থেকে কেবলই লাভ।’’ কথাপ্রসঙ্গে আজকাল ডট ইন তাঁকে বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ছবি দেখার ইচ্ছাপ্রকাশের কথা জানালে তিনি পাল্টা জানান, একা বিশ্বজিৎ নন তনুজা সমর্থের জন্য তিনি মু্ম্বইয়ে ২৭ এপ্রিল জুহুতে একটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করছেন। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ছবি দেখে মুগ্ধ। তাঁর উচ্ছ্বাস, যে ভাবেই হোক, তবু তো কেউ বড়পর্দায় মহানায়ককে ফেরালো! তিনি যদি উত্তমকুমারকে পরিচালনা করতে পারতেন তা হলে কোন কোন ছবিতে নিতেন? পরিচালকের দাবি, তিনি প্রবীণ উত্তমকুমারকে সিনেমাওয়ালায় পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরিত্রটি দিতেন। কমবয়সী মহানায়কের জন্য তুলে রাখতেন জ্যেষ্ঠপুত্র ছবিতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অভিনীত চরিত্রটি।



আপ্লুত গৌরব, রোশনি, অনিন্দ্যও। যদিও দাদুর নাতি এদিন ধুতি-পাঞ্জাবিতে সুসজ্জিত নন। তবে কথাপ্রসঙ্গে জানিয়েছেন, এভাবেও দাদুর সঙ্গে কাজ করে উঠবেন, ভাবতে পারেননি। প্ল্যানচেটে সত্যি মহানায়ক উপস্থিত হলে? গৌরবের দাবি, তিনি বিস্ময়ে বাক্যহারা হয়ে যেতেন!  

ছবি: মধুলীমা বিশ্বাস