শুক্রবার ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Sumit | ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৮ : ৫৪Sumit Chakraborty
বিভাস ভট্টাচার্য: গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে যুব বনাম মূল দলের ঠান্ডা লড়াই। যার ফলে এবছর কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী প্রসূন ব্যানার্জি। গঙ্গাপারের এই লোকসভা কেন্দ্রে গত তিনটি নির্বাচনে অর্জুন ফুটবলার প্রসূন যেভাবে ভোটের ময়দানে ড্রিবল করে বিপক্ষের জালে বল জড়িয়েছেন, এবার সেই প্রয়াস ধাক্কা খেতে পারে অনেকটাই। যদিও ভোটের এখনও দেরি আছে, কিন্তু এইমুহূর্তে হাওড়ায় অবস্থা এই কথাই বলছে। দলের একটি বড় অংশের মতে, জিতলেও প্রসূনকে এবার শক্ত লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে।
একসময়ে সিপিএমের জোরালো ঘাঁটি বলে পরিচিত হাওড়ায় প্রসূন পরপর তিনবারের সাংসদ। গত লোকসভা নির্বাচনে তিনি হাওড়া থেকে জিতেছিলেন ১ লক্ষেরও বেশি ভোটে। কিন্তু ২০১৯ থেকে ২০২৪, এই পাঁচ বছরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। হাওড়া ময়দান থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মেট্রো রেল চালু হয়েছে। তেমনি তৈরি হয়েছে একাধিক উঁচু বাড়ি। ভালো-খারাপ, দু"দিকেই পরিবর্তন হয়েছে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার। তৈরি হয়েছে এই লোকসভা কেন্দ্রে একাধিক সমস্যা।
হাওড়া তৃণমূলের কয়েকটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, প্রার্থী হিসেবে প্রসূনকে নিয়ে আপত্তি ছিল জেলায় দলের একটি অংশের। শেষপর্যন্ত প্রসূনকে প্রার্থী করা হলেও এই অংশটি সেটা কতটা মন থেকে মেনে নিয়েছে সেটা কিন্তু ভাববার বিষয়। দ্বিতীয়ত, প্রসূনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে, ভোটে জেতার পর তাঁকে খুব একটা এলাকায় পাওয়াও যায়নি। যার জন্য কিছু বিধায়ক এবং দলের নেতৃস্থানীয় কয়েকজন এই নিয়ে দলের অন্দরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তৃতীয় এবং বড় আরেকটি যে বিষয় উঠে এসেছে সেটা হল জেলায় মূল বনাম যুব সংগঠনের ঠান্ডা লড়াই। অভিযোগ, যুবদের একটি অংশ কারণে অকারণে এমন কিছু বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে ফেলছে যেটা মেনে নিতে কিছুটা অসুবিধাই হচ্ছে প্রবীণ নেতাদের।
এর আগে বালিতে একটি অনুষ্ঠানে হাওড়ায় (সদর) দলের সভাপতি কল্যাণ ঘোষ বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে এই নিয়ে প্রকাশ্যেই সরব হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়েও পরিস্থিতির খুব একটা বদল হয়নি বলেই জানিয়েছেন জেলার এক বর্ষীয়ান নেতা। যুব বনাম মূলের এই দ্বন্দ্ব নিয়ে কিছুটা অসহায় কন্ঠেই তিনি বলেন, "বিষয়টা যেন অনেকটা হম কিসিসে কম নেহি"র মতো হয়ে গিয়েছে। যার ফলে দলের পুরনো কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হলেও কিছু করার নেই। কে শুনবে?" তাঁর কথায়, সম্প্রতি বালিতে একটি অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যেই দলের বিধায়কের বিরুদ্ধে দলেরই কিছু লোককে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। সামাজিক মাধ্যমে এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। যার ফলে যেটা ছিল চাপা, সেটাই প্রকাশ্যে উঠে এল।
বিধানসভা অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, বালি, উত্তর হাওড়া, শিবপুর ও দক্ষিণ হাওড়া, এই জায়গায় শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারেন প্রসূন। বিশেষ করে বালি ও উত্তর হাওড়ায় চ্যালেঞ্জটা অন্য জায়গার থেকে একটু বেশি কঠিনই হতে পারে বলে জানিয়েছে দলের কয়েকটি সূত্র।
এই প্রসঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রী এবং হাওড়ার নেতা অরূপ রায় বলেন, "সমস্যা সব নির্বাচনেই থাকে। কর্মীরা কিন্তু এককাট্টা হয়েই লড়াই করেন। এবারেও সেটাই হবে এবং সমস্ত সমস্যা জয় করেই আমরা জিতব।"
বিজেপি কি এর ফলে কিছুটা এগিয়ে আছে? বিজেপির রাজ্য সম্পাদক ও হাওড়ায় বিজেপির নেতা উমেশ রাই বলেন, "আমাদের প্রার্থী রথীন চক্রবর্তী হাওড়ায় অত্যন্ত পরিচিত মুখ। প্রসূন ব্যানার্জি তিনবারের সাংসদ হয়েও কি বলার মতো কোনও কাজ করেছেন? লিখে রাখুন শুধু বালি ও উত্তর হাওড়াই নয়, আমরা এবার "লিড" পাবো অধিকাংশ বিধানসভা থেকেই। বিজেপির প্রার্থীই দিল্লি যাবেন।
গোটা বিষয়টি নিয়ে আজকাল ডট ইন-এর তরফে প্রসূন ব্যানার্জির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজ করা হলেও উত্তর দেননি।