সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Kaushik Roy | ০২ এপ্রিল ২০২৪ ১৮ : ২৫Kaushik Roy
বিভাস ভট্টাচার্য: ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বসিরহাটের সাংসদ ছিলেন। ২০১৬ থেকে হাড়োয়ার বিধায়ক। এবছর ফের বসিরহাট থেকেই লোকসভা ভোটে তৃণমূলের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হাজি শেখ নুরুল ইসলাম।
* তখন যে বসিরহাট ছিল এখনও কি সেই বসিরহাটই আছে না পাল্টেছে?
নুরুল: দেখুন সেদিন ছিল নবাগত তৃণমূল কংগ্রেস। গোটা রাজ্যেই বামফ্রন্ট সরকার। আমরা বিরোধী দলে। ভোটারদের কাছে গেছিলাম এবং তাঁরা আমাকে বিশ্বাস করে ভোট দিয়েছিলেন। নির্বাচনের পর আয়লা হয়। গোটা এলাকায় চড়কি পাক ঘুরে মানুষের আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করেছি। কাজ করলেই মানুষ মনে রাখে। যখন যে ডেকেছে, তখন সে পেয়েছে আমাকে। উন্নয়নের কাজ অনেক করেছি। সকলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলেছি। সেজন্যই আমার নাম ঘোষণা হওয়ার পর মানুষের মধ্যে এত উচ্ছ্বাস।
* তখন নতুন দল হিসেবে আপনারা লড়াই করছেন। সেই লড়াইয়ের সঙ্গে আজকের লড়াইয়ে তফাৎ কী?
নুরুল: সেদিনের লড়াইটা কিন্তু অনেক কঠিন ছিল। তখন তো সব জায়গায় সংগঠনই ছিল না। এখন তো সংগঠন তৈরি হয়ে গেছে। বর্তমানে বসিরহাটে আমাদের সংগঠন খুব শক্তিশালী। একফোঁটা রক্ত না ঝরিয়ে, একটা পটকা না ফাটিয়েও গত পঞ্চায়েত ভোটে গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে জেলা পরিষদ আমরা এতগুলো আসন পেয়েছি। সংগঠন শক্তিশালী না হলে এটা হতো?
* ২০১৪ সালের পর আপনাকে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। শোনা যায় আপনার জেলার নেতা এবং রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে আপনার একটা ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়েছিল। যার জন্যই আপনাকে বসিরহাটে আর টিকিট দেওয়া হয়নি। পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল জঙ্গিপুরে। এটা কি ঠিক?
নুরুল: দেখুন, আমি লড়াই, ঝগড়ায় যাই না। ভুল হলে ভুল স্বীকার করতে রাজি আছি। দল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং আমি সেই সিদ্ধান্ত মেনে জঙ্গিপুর গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে কারোর মতানৈক্য নেই।
* সেসময় কিন্তু আপনার সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয়র লড়াইটা একটা চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছিল। যতটুকু মনে পড়ছে সেইসময় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কিন্তু খুব একটা আপনার পক্ষে ছিলেন না।
নুরুল: দেখুন একটা কথা বলি।দলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। সেনাপতি অভিষেক ব্যানার্জি।
* অভিষেক ব্যানার্জি নাহয় এখন সেনাপতি। আমি তো সেই সময়ের কথা বলছি।
নুরুল: দাঁড়ান, দাঁড়ান। এটা তো মানবেন আমি সবসময় বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে এসেছি। কংগ্রেস করেছি ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। যখন আমার মাথা ফাটে সিপিএমের হাতে, তখন কংগ্রেস আমায় কোনও প্রোটেকশন দেয়নি। তারপর থেকেই দিদির সঙ্গে। ১৯৯৭তে দিদির কাছে গিয়ে বলেছি নতুন দল গড়ুন। ৯৮ সালে পঞ্চায়েত সদস্য, ২০০৩-এ পঞ্চায়েত সমিতির। ২০০৮-এ জেলা পরিষদ এবং ২০০৯ সালে সাংসদ হয়েছি। ২০১৬তে বিধায়ক এবং ২০২১য়ে আবার বিধায়ক হয়েছি। দলের কাছে আমার আর কী চাওয়া বা পাওয়ার আছে? নেত্রী মমতা ব্যানার্জির যে আশীর্বাদ আছে, সেই আশীর্বাদটা থাকলেই যথেষ্ট।
* কিন্তু এটা তো মানবেন জ্যোতিপ্রিয়র সঙ্গে আপনার একটা ঠান্ডা লড়াই ছিল?
নুরুল: না, না, না। আমি কিছু বলব না বা কাউকে ছোটও করব না। আমার দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০২৪য়ে আমাকে লোকসভার প্রার্থী করবে, তাই করে দিয়েছে।
* সন্দেশখালির প্রসঙ্গে আসা যাক। আপনার লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে সন্দেশখালি। যেখানে শেখ শাহজাহানকে নিয়ে নানা অভিযোগ এবং শেষপর্যন্ত তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করল। এটা কি মানবেন গোটা ঘটনার জন্য কিছুটা হলেও দলের ক্ষতি হল?
নুরুল: এটার সিদ্ধান্ত জনগণ নেবেন। যদি কেউ অন্যায় করে থাকে এবং সেটা প্রমাণ হয়, তবে শাস্তি পাবে। আমি কারোর পক্ষে বা বিপক্ষে কিছুই বলব না।
* এটা অবশ্যই আপনার একটা ভালো গুণ। কিন্তু শাহজাহান, উত্তম সরদার, শিবু হাজরার নাম তো উঠে এসেছে। আপনি নিজেও জানেন,আপনার বিরুদ্ধে যিনি বিজেপির প্রার্থী তিনি সন্দেশখালির এক নির্যাতিতা। প্রধানমন্ত্রী নিজে তাঁকে ফোন করে "শক্তিস্বরূপা" বলে উল্লেখ করেছেন। ফলে কোথাও কি গোটা ঘটনায় তৃণমূলের একটুও ড্যামেজ হয়নি? হ্যাঁ বা না, এককথায় বলুন।
নুরুল: শুনুন শুনুন। শিবু, উত্তমরা যদি অন্যায় করে থাকে তবে তারা আইন অনুযায়ী শাস্তি পাবে।
* আপনি কি মনে করেন ওঁরা অন্যায় করেছেন?
নুরুল: আমি শুনেছি কিছু জমি জায়গা নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। লোকের জমি ফেরতও দেওয়া হয়েছে।
* তার মানে জমিটা নেওয়া হয়েছিল বলেই ফেরত দেওয়া হয়েছে। এটা অন্তত মানবেন তো?
নুরুল: এত প্রশ্ন করবেন না। ছেড়ে দিন। এত প্রশ্ন করলে আমি জবাব দিতে পারব না।
* ঠিক আছে, আপনি বলুন।
নুরুল: আপনারা কী ভাবছেন? সন্দেশখালি ড্যামেজ? শুনুন, এটা আপনাদেরই পরিকল্পিত ব্যাপার। সাংবাদিকরা এটাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করে দেখিয়েছেন। দেখে আসুন ওখানে দেওয়াল লেখা হচ্ছে। মানুষ আনন্দে আছে।
* তার মানে আপনি বলেছেন সন্দেশখালি অতীত?
নুরুল: লিখে রাখুন ৫ হাজার মার্জিন হলেও আমরা সন্দেশখালি থেকে জিতব।
* এতটা আত্মবিশ্বাসী কীভাবে হচ্ছেন?
নুরুল: আরে আমাদের সংগঠন আছে। আমার বাড়িতে সন্দেশখালি থেকে লোক আসছেন। মহিলারাও আসছেন। আমি আলাদা আলাদা করে জিজ্ঞেস করেছি এবং তাঁরা বলছেন মিথ্যা রটনা। আদৌ মহিলারা নির্যাতিত হননি। এটা সুপরিকল্পিতভাবে ছড়ানো হয়েছে।
* প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র সম্পর্কে কিছু বলবেন?
নুরুল: না, আমি কিছু বলব না। তিনি একজন গৃহবধূ। গণতন্ত্রে যে কেউই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ময়দানে দেখা হবে এবং রাজনৈতিক লড়াই হবে।