AD | ২৫ জুন ২০২৫ ০৮ : ৪৮Abhijit Das

আজকাল ওয়েবডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ ইরান এবং ইজরায়েলের মধ্যে সংঘাতের ফলে একটি আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল যে বিশ্বের তেল সরবরাহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে ইরান। সপ্তাহান্তে ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে মার্কিন সামরিক বাহিনীর হামলার পর আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেইয়ের সামরিক বাহিনী কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

হরমুজ প্রণালী ওমান এবং ইরানের মধ্যে অবস্থিত। সেখানে দ্রুত আক্রমণকারী নৌকা, হাজার হাজার নৌ-মাইন এবং ক্ষেপণাস্ত্রের একটি বহর রয়েছে যা ব্যবহার করে অন্তত কিছু সময়ের জন্য এই প্রণালীটিকে চলাচলের অযোগ্য করে তোলা যেতে পারে। ইরানের প্রধান নৌঘাঁটি বন্দর আব্বাস হরমুজের উত্তর উপকূলে অবস্থিত। এটি পারস্য উপসাগরের দীর্ঘ উপকূল থেকেও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে, যেমনটি মিত্র দেশ ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে করেছে।

২০২৪ সালে প্রতিদিন প্রায় ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল (যা বিশ্বের তেল ব্যবহারের প্রায় ২০%) এই প্রণালী দিয়ে যাতায়াত করেছে। এই তেলের বেশিরভাগই গিয়েছে এশিয়ায়। হরমুজ পারস্য উপসাগরকে ওমান উপসাগর এবং আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত করে। সংকীর্ণতম স্থানে এটি মাত্র ৩৩ কিলোমিটার (২১ মাইল) প্রশস্ত। তবে, বিশ্বের বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল ট্যাঙ্কারগুলি পরিচালনা করার জন্য যথেষ্ট। এই প্রণালী দিয়ে যে তেল যায় তা আসে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইরাক, ইরান, কুয়েত এবং বাহরাইন থেকে। অন্যদিকে, তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান সরবরাহ আসে কাতার থেকে। 

এর সবচেয়ে সংকীর্ণ স্থানে ট্যাঙ্কারগুলি ওমানের জলসীমায় থাকে এবং এর আগে এবং পরে ইরানের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। যদিও অন্যান্য আন্তর্জাতিক রুট ব্যবহার করে তেল সরবরাহ করাও যায়, তবে তা খরচসাপেক্ষ। হরমুজ দিয়ে চলাচলকারী বেশিরভাগ তেলের জন্য তা কোনও বিকল্প নয়। কারণ সৌদি আরবের পূর্ব-পশ্চিম পাইপলাইনের মতো স্থলপথে তেল পরিবহনের জন্য যে পাইপলাইনগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে সেগুলির ধারণক্ষমতা পর্যাপ্ত নয়। আমেরিকার এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এর মতে, "প্রণালী দিয়ে পরিবহনকারী বেশিরভাগ তেলের এই অঞ্চল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোনও বিকল্প উপায় নেই।"

অপরিশোধিত তেল বিশ্লেষক হোমায়ুন ফালাকশাহি জানিয়েছেন, ইরান যদি প্রণালীটি বন্ধ করে দেয়, তাহলে তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১২০-১৩০ ডলারে পৌঁছতে পারে, অন্তত সাময়িকভাবে। যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য এক বিরাট ধাক্কা। যদিও তাঁর ধারণা এই পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হবে না। পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে, এশিয়া সরাসরি প্রভাবিত হবে। কারণ, এই প্রণালী দিয়ে ৮৪% তেল এশিয়াতেই যায়। প্রধান গন্তব্যস্থল চীন, ভারত, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া। চীনের সমুদ্রবাহিত তেলের ৪৭% উপসাগর থেকে আসে। তবে, চীনের তেলের মজুদ ১.১ বিলিয়ন ব্যারেল। যা আড়াই মাসের সরবরাহের সমান। মার্কিন তেল গ্রাহকদের উপর উচ্চমূল্যের প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি। তবে, সরবরাহ খুব কমবে না। আমেরিকার এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে আমেরিকা পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলি থেকে প্রণালী দিয়ে মাত্র ৭% তেল আমদানি করেছিল। যা গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

হরমুজ বন্ধ করে দিলে ইরানের নিজস্ব তেল রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও প্রণালীর ঠিক বাইরে জাস্কে ইরানের একটি নতুন টার্মিনাল নির্মীয়মান। বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন সুবিধাটি কেবল একবার তেল লোড করেছে এবং হরমুজকে প্রতিস্থাপন করার মতো অবস্থায় নেই। হরমুজ বন্ধ করলে ইরানের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং একমাত্র অবশিষ্ট তেলের গ্রাহক চীন ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এর তেল রপ্তানিকারক আরব প্রতিবেশীদের ক্ষতি হবে। যারা অন্তত আনুষ্ঠানিকভাবে ইজরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে ইরানকে সমর্থন করেছে। আর এর অর্থ হবে ওমানের আঞ্চলিক জলসীমা অবরুদ্ধ করা। যা একটি দেশের জন্য আপত্তিকর যারা আমেরিকা এবং ইরানের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে।

যেকোনো মূল্যবৃদ্ধি সম্ভবত স্থায়ী হবে না। একটি বড় কারণ: বিশ্লেষকরা আশা করছেন যে মার্কিন নৌবাহিনী প্রণালীটি উন্মুক্ত রাখতে হস্তক্ষেপ করবে। ১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় ইরানি আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলি প্রণালী দিয়ে কুয়েতি তেল ট্যাঙ্কারগুলিকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যেত। প্রণালী পুনরায় খোলার জন্য মার্কিন শক্তি প্রয়োগ সম্ভবত ইউরোপ এবং এমনকি সম্ভবত চীনও সমর্থন করবে।