বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
KM | ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৮ : ৫৪Krishanu Mazumder
কৃশানু মজুমদার: শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন, 'মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে।' সেই জনপ্রিয় কবিতার লাইনের সাহায্য নিয়ে যদি লেখা যায়, 'মুখ ঢেকে যায় আফ্রিকান ফুটবলারে', তাহলেও বোধ করি অত্যুক্তি করা হবে না। ইদানীং কালে খেপের মাঠের ছবিটাই যে এরকম। এই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এমন ধরনের ফুটবল টুর্নামেন্ট হচ্ছে প্রচুর। সেই সব খেপের মাঠে আইন-নিময়কে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের শক্ত-পোক্ত চেহারার ফুটবলাররা চুটিয়ে খেলে বেড়াচ্ছে।
কেউ কেউ বলে থাকেন, নভেম্বর থেকে শুরু হয় খেপের মাঠের খেলা। প্রতি শনি-রবিবার কম করে আড়াই হাজার টুর্নামেন্ট হয় এই বঙ্গে। সেই সব টুর্নামেন্টে খেলতে দেখা যায় সেনেগাল-আইভরি কোস্ট-মালির ফুটবলারদের। এক টুকরো আফ্রিকা যেন নেমে আসে খেপের ময়দানে।
অতীতে কলকাতা লিগে বিদেশি ফুটবলার খেলানো যেত। কিন্তু এআইএফএফ-এর নতুন নিয়মে এখন আর কলকাতা লিগে বিদেশি ফুটবলার খেলতে পারেন না। আই লিগ ও আইএসএল-এই কেবল বিদেশি ফুটবলার খেলানোর নিয়ম রয়েছে। তাহলে এত আফ্রিকান ফুটবলার এদেশের খেপের মাঠের টানে নিজেদের মাতৃভূমি ছাড়ছে? খেপ খেলে টাকা রোজগারের জন্যই তারা চলে আসছে এই 'মহামানবের সাগরতীরে'?
কলকাতা ফুটবলের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, খেপের মাঠে টাকা উড়ছে। খেললেই মিলবে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। একটু নাম করে ফেললে তো কথাই নেই। তখন তো সংশ্লিষ্ট ফুটবলারের দর বৃদ্ধি পায় চড়চড় করে। ওয়ানডে টুর্নামেন্ট, তিন দিনের দিবারাত্রির ফুটবল প্রতিযোগিতায় এই আফ্রিকান ফুটবলারদেরই ছড়াছড়ি। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার মৌসুনি আইল্যান্ডে এমনই এক ফুটবল টুর্নামেন্টে আফ্রিকান ফুটবলারদের উপস্থিতি নজর কেড়েছে।
খেপের মাঠের উন্মত্ত দর্শক। উত্তেজিত ময়দান। সেখানেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আফ্রিকান ফুটবলাররা। গোল করলেই সাইডলাইনের ধারে এসে টাকা নিয়ে তা গুঁজে দিচ্ছে বুটের মধ্যে। এ দৃশ্য খেপের মাঠে খুবই পরিচিত। একেকটা ম্যাচ থেকেই প্রায় ৭-১০ হাজার টাকা রোজগার হয়। ম্যাচের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে অর্থের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে থাকে। শুধু আফ্রিকার ফুটবলার কেন, বাঙালি ফুটবলারও খেপের মাঠে ঝুঁকে। কলকাতা লিগ খেলে নাম করে ফেলা ফুটবলারের সেনসেক্স বাড়ে।
আর্কিটেকচারের ছাত্র চিমা ওকোরি এই দেশে পড়তে এসেছিলেন। তার পরের ঘটনা ইতিহাস। ইরানের ফুটবলার মজিদ বিশকর আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। সেই তিনিই কালক্রমে হয়ে উঠেছিলেন ময়দানের 'বাদশা'। একসময়ে স্টুডেন্ট ভিসায় এদেশে পড়াশোনা করতে এসে ফুটবলার বনে গিয়েছেন এমন নজির রয়েছে একাধিক। আবার খেপের মাঠ কাঁপানোর পরে সংশ্লিষ্ট ফুটবলার গোটা ভারত জিতে নিয়েছেন এমন উদাহরণও রয়েছে।
হাতের সামনেই রয়েছে ওডাফা ওকোলির দৃষ্টান্ত। এদেশের ফুটবলে 'কিং কোবরা' নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। সেই নাইজেরিয়ান গোলমেশিন একসময়ে খেপের মাঠে ঝড় তুলতেন। প্রাক্তন ফুটবলার মিহির বসুর হাতে পড়ে বদলে যান ওডাফা। আজকাল ডিজিটালকে মিহির বসু বলছিলেন, ''আমার কোচিংয়ে ওডাফা খেলেছিল পিয়ারলেসে। ওর মানসিকতাই ছিল অন্যরকম। খেলতে চাইত। গোড়ার দিকে ঠিকমতো খাবারও জুটত না। সেই সময়ে অনুশীলনের পরে ওডাফাকে আমি টিফিন খাওয়াতাম যত্ন করে। ম্যাচে ভাল খেললে করুণাময়ীর কাছে একটা মোমোর দোকানে নিয়ে গিয়ে মোমো খাওয়াতাম। পিয়ারলেসে আসার পরে ধীরে ধীরে ওর খেপ খেলা বন্ধ করে দিয়েছিলাম।'' সেই ওডাফা রেকর্ড অঙ্কের বিনিময়ে মোহনাবাগানে খেলে গিয়েছেন।
হাল আমলের ময়দান কাঁপানো লাইবেরিয়ার আনসুমানা ক্রোমা খেপের মাঠের 'রাজা' বলেই পরিচিত। দিনকয়েক আগে খেলতে খেলতেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, চার্চিল ব্রাদার্সের পাশাপাশি কলকাতার অন্যান্য ক্লাবেও খেলেছেন ক্রোমা। আইভরি কোস্ট থেকে এই বঙ্গে এসে একসময়ে চুটিয়ে খেপ খেলেছেন মোহনবাগান-আইজলের প্রাক্তন ফুটবলার কামো। কলকাতা লিগের ক্লাব জর্জ টেলিগ্রাফ থেকে চলে যান আইজলে। আইজল আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হলে কামোকে সই করায় মোহনবাগান। কামোর ভাই বাজোকেও খেপের মাঠ থেকে রেনবো ক্লাবে সই করানো হয়েছিল। সেখান থেকে তাঁর পিঠে ওঠে লাল-হলুদ জার্সি।
কলকাতা ময়দানের ঘাস হাতের তালুর মতো চেনা কয়েকজন বলে থাকেন, ''অপেক্ষাকৃত ছোট দলে খেললে টাকা কোথায়? জীবন ধারণের জন্য ছোট ক্লাবে খেলার পাশাপাশি খেপ খেলত আফ্রিকান ফুটবলাররা।'' কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। শুধু খেপের মাঠের টানেই আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া আফ্রিকার দেশ থেকে এই দেশে পাড়ি জমাচ্ছে সেনেগাল, লাইবেরিয়া, মালি, আইভরি কোস্টের ফুটবলাররা।
খেপ ফুটবলই টাকার খনি। ভারতীয় ফুটবলে এসে পড়েছে আইএসএল। বিশ্বের নামি-দামি তারকারা আলো ছড়াচ্ছেন। এই সময়েও গ্রামে-গঞ্জে, শহরের পাড়ায়-পাড়ায় খেপ ফুটবলের জনপ্রিয়তা এক বিন্দুও ম্লান হয়নি। কেউ বলছেন, টুরিস্ট ভিসায় আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে এই দেশে দলে দলে আসছে ফুটবলাররা। কেউ উঠছে বাঁশদ্রোণীতে, কেউবা আবার বাঘাযতীন, আবার কেউ রুবি এলাকায়। অল্প পয়সার ফ্ল্যাটের একটা ঘরে গাদাগাদি-ঠেসাঠেসি করে রয়েছে তিন বা চার জন আফ্রিকান। সাধারণ ট্রেন-বাসে চেপে তারা পৌঁছে যাচ্ছে দূরদূরান্তের খেপের মাঠে। সেখানে নেমে পড়ছে ফুটবল খেলতে। অর্থ রোজগার করছে তারা।
গুগল সার্চ ইঞ্জিন বলছে, ভারতীয় মুদ্রায় ১০ হাজার টাকা আইভরি কোস্টের স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৭৩,৮২৮ টাকার সমান, লাইবেরিয়ায় তা প্রায় ২১ হাজার ৩০৯ লাইবেরিয়ান ডলারের সমান। এই পরিমাণ অর্থের লোভ বিসর্জন দিয়ে কেউ কি দেশে ফিরে যাবেন? খেলতে খেলতে ওদের নাম ছড়িয়ে পড়ে। বাড়ে রেট। খেপ ফুটবলের সঙ্গে জড়িত নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক এজেন্ট বলছিলেন, "আগে রেট কম ছিল। এখন একটা ম্যাচের জন্যই প্রায় ৮-১০ হাজার টাকা নেয় ওরা। ওয়ানডে টুর্নামেন্টে তিন-চারটে ম্যাচ খেলতেই হয়। ভেবে দেখুন একদিনেই প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা রোজগার হয় এদের। এক দিনেই যদি এত টাকা কেউ রোজগার করে, তাহলে অনুমান করতেই পারেন কত লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করছে।'' জনশ্রুতি বলে আইভরি কোস্ট থেকে আসা কুলু নামের এক ফুটবলার নাকি এক দিনেই এক লক্ষ টাকা রোজগার করে।
খেপ সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি বাংলা তো বটেই ভিন রাজ্যের কেরল কিংবা পড়শি বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। কেরলে তিন মাস ধরে বেশ রমরমা ভাবে চলে খেপের মাঠের ফুটবল। সেখানেও আফ্রিকান ফুটবলারদের আধিক্য।
এই ধরনের টুর্নামেন্টে মাঠ মাতায় যারা, যাদের পায়ের কাজ দেখার জন্য ভিড় জমান দর্শকরা, তারা কি বড় মাঠে ভেল্কি দেখাতে পারে না? এশিয়ান অল স্টার-খ্যাত গোলকিপার অতনু ভট্টাচার্য বলছিলেন, ''খেপের মাঠে খেলা আর বড় মাঠে খেলা এক ব্যাপার নয়। খেপের মাঠে গোল করাটাই লক্ষ্য এবং মোক্ষ। কিন্তু ক্লাব পর্যায়ের খেলায় অনেক নিয়ম থাকে, কোচের নির্দিষ্ট কিছু স্ট্র্যাটেজি থাকে। সেগুলো মেনে চলতে হয়। তবে ব্যতিক্রম তো নিশ্চয় রয়েছে।'' আফ্রিকা থেকে এদেশে আসা ফুটবলারদের নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। কথিত আছে, টুরিস্ট ভিসায় সুদূর আফ্রিকা থেকে এদেশে এসে অনেকেই আর দেশে ফিরে যায়নি। এখানে খেপ খেলে অর্থ রোজগার করছে। অভিযোগের হাজারো তির তাদের দিকেই।
সমালোচকরা বলেন, বাংলার ফুটবল পিছনের দিকে হাঁটছে। এই অধোগতির জন্য অনেকে আবার খেপের মাঠের ফুটবলকে দায়ী করছেন। আফ্রিকান বিদেশিরা যেমন টাকা রোজগার করার জন্য ছুটে আসছেন। তেমনই বাঙালি ফুটবলাররাও নিজেদের মেলে দিচ্ছেন খেপের মাঠে। কেউ বলছেন, অভাব মেটানোর জন্য ফুটবলাররা একে স্বভাবে পরিণত করছেন। ইউনাইটেড স্পোর্টসের কর্তা নবাব ভট্টাচার্য বলছিলেন, ''খেপ খেলেই খিদে মিটে যাচ্ছে। তাহলে কেউ আর পরিশ্রম করবে কেন?'' এত নিন্দা-সমালোচনার মধ্যেও চলছে খেপ ফুটবলের সংস্কৃতি। চলছে আফ্রিকান ফুটবলারদের দৌরাত্ম্য।
#Khep# KhepFootball#AfricanFootballer
বিশেষ খবর
নানান খবর
নানান খবর
গতবার অবিক্রিত ছিলেন, এবার সাড়ে ১১ কোটিতে কোহলির সতীর্থ...
নিলামে টাকার ঝুলি নিয়ে তাঁর জন্য হাজির হতেন ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকরা, জেদ্দায় তিনিই ছিলেন না, কেন? ...
যশস্বীর ঝুলিতে টেস্টে ৪০ এর বেশি শতরান রয়েছে, দাবি অজি তারকার...
মাঠে সামি ফিরলেন মেজাজে, আর হাসিনের বেডরুম ভিডিও হল ভাইরাল, কী বলছে নেটজনতা ...
ফের অশান্ত পরিস্থিতি, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হোক অন্য দেশে, পিসিবিকে ইগো ঝেড়ে ফেলতে বললেন এই বিশ্বজয়ী ক্রিকেটার...
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জট কাটার আগেই পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সফরের মাঝপথেই দেশে ফিরছে শ্রীলঙ্কা...
'আরসিবি হৃদয়ের বড় অংশজুড়ে থাকবে', আবেগঘন পোস্টে বেঙ্গালুরুকে গুডবাই সিরাজের...
কাম্বলির দিকে এগোচ্ছেন পৃথ্বী শ? নিলামে প্রত্যাখ্যানের পর প্রতিভাবান ওপেনারকে নিয়ে চিন্তিত ক্রিকেটমহল...
কেকেআর নয়, শাহরুখের প্রথম পছন্দের দল ছিল অন্য, 'কিং খান'কে নিয়ে বড় দাবি ললিত মোদির ...
'তোমাকে খুশি করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি', পন্থের বিদায়বেলায় দিল্লি কর্তার পোস্ট ঘিরে ধোঁয়াশা...
নাইটদের নেতৃত্বের লড়াইয়ে তিনটে নাম, কেমন হল কেকেআরের দল?...
বাজবলের উঠতি তারকাকে বড় অঙ্কে কিনল বেঙ্গালুরু, কে এই জেকব বেথেল?...
বাজবলের উঠতি তারকাকে বড় অঙ্কে কিনল বেঙ্গালুরু, কে এই জেকব বেথেল?...
দিল্লি লিগের পর আইপিএলেও ছক্কা প্রিয়াংশের, কেন বড় অঙ্কে অনামী ওপেনারকে নিল পাঞ্জাব?...
আইপিএলের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার, মাত্র ১৩ বছরেই কোটিপতি, কে এই বৈভব সূর্যবংশী? ...