শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Pallabi Ghosh | ০৭ আগস্ট ২০২৪ ২৩ : ০৮Pallabi Ghosh
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইতিহাসের পাতায় তাঁর নাম বড় বড় করে খোদাই করা নেই কোথাও। তবে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেপথ্যে ছিল তাঁর বড় ভূমিকা। বিপদের মুহূর্তে বিপ্লবীদের বাঁচাতে ছদ্মবেশ ধারণ করেছেন বহুবার। কখনও 'গুপ্তচর', কখনও আবার কারও 'স্ত্রী' সেজে বিপ্লবে সামিল ছিলেন। তিনি লাহোরের দুর্গাবতী ভোরা বা দুর্গাবতী দেবী। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম সশস্ত্র বিপ্লবের মুখ।
মাত্র ১১ বছর বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। স্বামী ভগবতী চরণ ভোরার হাত ধরে পড়াশোনা এবং বিপ্লব দুইই করেছেন দুর্গাবতী। বিয়ের পর ম্যাট্রিক পাস করে স্থানীয় একটি স্কুলে শিক্ষিকতা শুরু করেন। অন্যদিকে তাঁর স্বামী ছিলেন সশস্ত্র বিপ্লবী দলের সদস্য। সেই দলের সদস্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ভগৎ সিং, সুখদেব, রাজগুরু, চন্দ্রশেখর আজাদ সহ প্রমূখ। তাঁদের সঙ্গে ধীরে ধীরে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে দুর্গাবতীর।
১৯২৮ সালে লালা লাজপত রায়ের মৃত্যুর প্রতিবাদে দুর্গাবতী দেবীর অধ্যক্ষতায় সশস্ত্র বিপ্লবীরা বদলা নিতে প্রস্তুত হন। বৈঠকে ঠিক হয় পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট জেমস এ. স্কটকে মারা হবে। চিনতে ভুল করায় ডিস্ট্রিক্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টার এর সামনে অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিনটেনডেন্ট জন পি. স্যান্ডার্সকে গুলি করা হয়। দেশে ছড়িয়ে যায় সেই খবর। রেডিওতে শুনে সবটা জানতে পারেন দুর্গাবতী। এর কিছুদিন পরে লাহোর থেকে শুকদেব, চন্দ্রশেখর আজাদ, ভগৎ সিংকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন তিনি। ভগৎ সিংয়ের 'স্ত্রী' সেজে লাহোর থেকে চলে এসেছিলেন কলকাতায়। ভগবতী চরণ হাওড়া স্টেশনে আগে থেকেই অপেক্ষা করেছিলেন। সকলকে নিয়ে কলকাতার এক বিখ্যাত ব্যবসায়ীর বাড়িতে আশ্রয় নেন তাঁরা।
কিছুদিন কলকাতায় থেকে ফের লাহোরে ফিরে যান দুর্গাবতী। অন্যদিকে সংসদ ভবনে হামলা চালানোয় ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত গ্রেপ্তার হন। ভগৎ সিংয়ের ট্রায়াল ও মুক্তির জন্য নিজের গয়না বেঁচে টাকা জোগাড় করেছিলেন তিনি। বাড়িতেও বোমা বানানো শুরু করেন স্বামী। গুপ্তচর হিসেবে সেই বোমা তৈরির সরঞ্জাম নিয়ে আসতেন দুর্গাবতী। সেই বোমা ফেটেই মৃত্যু হয় স্বামীর। তারপরেও লড়াই থামেনি দুর্গাবতীর।
১৯৩০ সালে ভগৎ সিং, শুকদেব ও রাজগুরুকে ফাঁসির সাজা শোনানোর প্রতিবাদে দক্ষিণ বোম্বের পুলিশ স্টেশনের পাশে ল্যামিংটন রোডের উপর দাঁড়িয়ে থাকা এক পুলিশ আধিকারিককে গুলি করে হত্যা করেন দুর্গাবতী। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। ১৯৩২ সালে আত্মসমর্পণ করেন দুর্গাবতী। তিন বছরের কারাদণ্ড হয় তাঁর। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর প্রথমে গাজিয়াবাদ, তারপর মাদ্রাজ, শেষে লখনউয়ে চলে যান। সেখানে গিয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। দেশের স্বাধীনতার পর দুঃস্থ, গরিব পড়ুয়াদের জন্য স্কুল তৈরি করেছিলেন। শেষজীবনে সেই স্কুলে শিক্ষকতা করেই কাটিয়েছেন দুর্গাবতী।