নিজস্ব সংবাদদাতা | | Editor: শ্যামশ্রী সাহা ২৫ জুন ২০২৪ ১৮ : ১৭[DELETED]Rahul Majumder

নিজস্ব সংবাদদাতা: নিন্দুকরা বলে, সাধারণ মানুষ থেকে তারকার শ্রেণীতে উন্নীত হওয়ার পর নাকি অধিকাংশই নিজেদের শিকড়টা ভুলে যান। ভুলে যান, তাঁরাও একদিন অতি-সাধারণ ছিলেন বাসে-ট্রেনে বাদুড়ঝোলা হয়ে চড়ে যাওয়া আর পাঁচজন আম আদমির মতো। আর ভুলে যান বলেই হয়তো তথাকথিত তারকাদের নিরাপত্তারক্ষীরা নির্দ্বিধায় ধাক্কা মেরে হঠিয়ে সরিয়ে দেন তাঁদের মনিবের 'সাধারণ' ভক্তদের, যাঁদের পরিচয় অকিঞ্চিৎকর- আম আদমি। হয়তো সেই নিরাপত্তারক্ষী কিংবা তাঁদের তারকা-অভিনেতা মনিবদের এই আশঙ্কা থাকে সাধারণ মানুষের বেশি কাছাকাছি গেলে যদি তাঁদের 'ম্যাজিক'টা হারিয়ে যায়, হয়তো ভয় হয় যদি সাধারণ মানুষের 'নিজের লোক' হয়ে যান। অথচ এই সাধারণ মানুষের দৌলতেই যে তাঁরা আজ 'তারকা' সেই বোধটাই তাঁদের লোপ পেয়ে যায়। 

তবে দেব যে এই তারকা শ্রেণীতে পড়েন না তার হাতেকলমে প্রমাণ আগেও মানুষ দেখেছেন। কিছু ক্ষেত্রে শুনেছেন। এবার ফের একবার 'তারকা' দেবের অজানা মানবিক দিকের কথা এল সামনে। বললেন, 'ষড়রিপু' ছবির পরিচালক অয়ন চক্রবর্তী।

সমাজমাধ্যমে অভিনেতা-রাজনীতিবিদ দেব সম্পর্কিত দুটি ঘটনার কথা জানিয়েছেন এই বাঙালি পরিচালক। জোরের সঙ্গে দাবি করেছেন প্রতিটি ঘটনাই সত্যি। তাই এগুলোকে 'গল্প' বলতে নারাজ তিনি। আরও জানান, যাঁদের সঙ্গে এই ঘটনাগুলি ঘটেছে তাঁদের মুখ থেকেই এই 'দেব-কথা' শুনেছেন তিনি।
পরিচালক লিখেছেন, একবার একটি ছবির শুটিংয়ের প্রতিটি দিন সামান্য কাজের গাফিলতি হলেই সহকারী পরিচালককে নিদারুণ বাক্যবাণে ভর্ৎসনা করতেন প্রধান পরিচালক। ভাষার সবটুকু অবশ্য ভদ্রতায় মোড়া থাকত না। সেটের মাঝখানে মাথা নীচু করে রোজ সেসব কথা হজম করতেন ওই জুনিয়র পরিচালক। নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হল ছবির শুটিং। আয়োজন করা হল পার্টির। অনুষ্ঠানে এক কোণায় চুপচাপ গিয়ে বসল ওই ছেলেটি। সবার থেকে একরকম নিজেকে লুকিয়ে রাখল সে। এই সময় তাঁর পাশে এসে বসলেন দেব। সস্নেহে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন ওই সেই ছেলেটি কি না যে রোজ অশ্রাব্য ভাষায় বকাঝকা শুনত? ছেলেটি আরও লজ্জায় কুঁকড়ে গেল এই ভয়ে যে ফের হয়তো অপমানিত হতে হবে তাঁকে।‌আর এবার একেবারে 'তারকাখচিত' অপমান! কিন্তু সেসব হল না কিছুই। দেব জানালেন, ইন্ডাস্ট্রিতে এসে প্রথম প্রথম তিনিও এরকম কথা শুনেছেন, চূড়ান্ত অপমানিত হয়েছেন। শুরু হল গল্প। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই দেখলেন আর কারও সঙ্গে নয়, শুধুমাত্র রোজ অপমানিত হওয়া ওই সহকারী পরিচালকের পাশে বসে তাঁর সঙ্গে নাগাড়ে হাসি গল্পে মেতে উঠেছেন দেব! 

এরপর দ্বিতীয় ঘটনা। সেকথা বলতে গিয়ে এই বাঙালি পরিচালক লেখেন, এক সহকারী পরিচালকের কথা যাঁর কাজ ছিল শুটিং চলাকালীন প্রতিটি দৃশ্যে অভিনেতা- অভিনেত্রীদের পোশাক আগের দৃশ্যে যেমন ছিল ঠিক তেমনটাই রয়েছে কি না, সেই বিষয়ে খেয়াল রাখা। দেব অভিনীত ছবিতেও কাজ করেছেন তিনি। জানা গিয়েছে, প্রায় বছর চোদ্দ আগেই টলিপাড়াকে বিদায় জানিয়েছিলেন ওই মহিলা। দেব তখন তাঁকে বলেছিলেন, 'যদি কখনও আবার এই ইন্ডাস্ট্রিতে ফের এই পেশায় ফিরতে চাও তাহলে জানিও আমাকে'। এর পর কেটে গিয়েছে প্রায় দেড় দশক। সংসার গুছিয়ে টলিপাড়ায় পুরনো পেশায় ফেরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ওই মহিলা। এমন সময়ে মনে পড়ল বহু বছর আগে তাঁকে বলা দেবের ওই ক'টা কথা। প্রথমে ইতস্তত করলেও দেবের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন তিনি। ভেবেছিলেন এত দীর্ঘ সময়ের পর তাঁকে হয়তো আর মনে নেই এই তারকা-অভিনেতার। তার উপর এখন আবার তিনি সাংসদ! ব্যস্ততা বেড়ে গিয়েছে কয়েক গুণ। তবে একেবারেই কিন্তু ওই মহিলাকে চিনতে পারলেন ঘাটালের সাংসদ। জানিয়েছেন, আর সপ্তাহ দুয়েক পরেই শুটিং শুরু হবে তাঁর নতুন ছবির। সেই ছবি থেকেই যেন কাজে লেগে পড়েন ওই মহিলা! শুধু তাই নয়, ছবির পরিচালককেও ওই মহিলার বিষয়ে জানানোর ভার নিজের কাঁধে তুলে নেন দেব। 

পরিচালক অয়ন চক্রবর্তীর এই পোস্ট ইতিমধ্যেই ভাইরাল সমাজমাধ্যমে। নেটনাগরিকের বড় একটি অংশ সাধুবাদ জানিয়েছেন দেবকে। অনেকে আবার লিখেছেন, "দেব এরকমই। তারকা হওয়ার পরেও ওঁর পক্ষেই এমন ব্যবহার করা সম্ভব। তাই ভাল লাগালেও এতটুকু বিস্ময় জাগায় না এই ঘটনা"। টলিপাড়ার একাধিক শিল্পী বার্তা বাক্সে দেবের এরকম একাধিক অজানা মানবিক ঘটনার কথা জানিয়ে লিখেছেন,"এরকম স্টারের আগেই সুপার শব্দটি মানায়!" যদিও গোটা ঘটনায় এখনও মুখ খোলেননি দেব।সমাজমাধ্যমে দেননি এই বিষয়ে কোনও বিবৃতি।