বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Pallabi Ghosh | ০৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৮ : ৪৬Pallabi Ghosh
বিভাস ভট্টাচার্য: ২০০৯ থেকে ২০১৯, তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে টানা তিনবার শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী। একদিকে রাজনীতিবিদ, অন্যদিকে সফল আইনজীবী। এবারেও শ্রীরামপুর থেকেই ঘাসফুলের টিকিটে লড়ছেন কল্যাণ ব্যানার্জি।
* আপনার স্বভাব সোজাসাপ্টা কথা, সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলা। যাকে বলা হয় "ঠোঁটকাটা"। এই অভ্যাস কি ছোটবেলা থেকেই ছিল না রাজনীতি করতে এসে আয়ত্ব করেছেন?
কল্যাণ: এটা আমার চরিত্র। তাতে কেউ ভাল বলে, আবার কেউ খারাপ বলে। কিন্তু আমার কিছু করার নেই। আমি তো আমার চরিত্র পাল্টাতে পারব না। চিরকাল লড়াই করেই এসেছি। দেশে যখন জরুরি অবস্থা ছিল, তখন আমি সরাসরি রাজনীতি না করলেও নির্বাচন কিন্তু করিয়েছি। প্রতিবাদটা শুরু করেছিলাম তখন থেকেই। সেইসময় আমার বয়স ছিল ১৮ বছর। যার যেটা ভাল সেটা আমি সঙ্গে সঙ্গেই বলি। মনে রাখতে হবে আমরা কিন্তু মানুষকে পরিষেবা দিতে এসেছি। সেখানে যেন এতটুকুও ফাঁক না থাকে। সরকার দিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা ব্যানার্জি দিচ্ছেন। আমাদের কাজটা হল সেটাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সেখানে কোনও ফাঁকি চলবে না।
* এই রাখঢাক না করে কথা বলার জন্য তো কখনও কখনও বিতর্কও হয়। সেটা কি "এনজয়" করেন না মনে হয় এটা না বললেও পারতাম?
কল্যাণ: এনজয়ের ব্যাপার নয়। বিতর্ক হয়, হয়। আর না বললেও পারতাম বিষয়টা মোটেও ভাবি না। যতটুকু বলি নিজস্ব বিবেক, নিজস্ব চিন্তাভাবনা থেকে বলি। আমি মেকি মানুষ নই। খেয়াল রাখতে হবে যে যত কাজ করবে, তার তত বিতর্ক হবে। যে কাজ করে না, তার কিন্তু বিতর্কও হয় না।
* দলের সঙ্গে প্রথম থেকেই আছেন। সেদিনের সেই মানুষ এবং আবেগের ব্যাপারটা কি আজও একই আছে না পরিবর্তন হয়েছে?
কল্যাণ: পরিবর্তন তো একটা হয়েছেই। তখন বিরোধী রাজনীতি করতাম। তখনকার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির আবেগটা অন্যরকম ছিল। আজকের আবেগটা অন্য। তখন ছিল সিপিএমকে হঠানোর জন্য। এখনকার বিষয়টা হল আমরা রাজ্যে আছি, কেন্দ্রে নেই। নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে লড়াই করার আবেগ তো রয়েছেই এবং সেটা বেড়েওছে। আবার রাজ্যে মমতা ব্যানার্জি যে উন্নয়ন করেছেন, সেটা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। একটা উদাহরণ দিচ্ছি, যে অঞ্চল দিয়ে আমরা ভোটের প্রচারে ঘুরলাম, সেই কানাইপুর অঞ্চলে ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় এসে আমি দেখেছিলাম সব রাস্তা কাঁচা ছিল। আজ কোনও কাঁচা রাস্তা নেই। আবার কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের সকলের যে আবেগ রয়েছে বা মোদিকে হঠানোর জন্য যে আবেগ আছে, সেই আবেগ তো একটা অন্য জায়গা তৈরি করে।
* শামলা গায়ে আদালতের ভেতরে দলের হয়ে মামলার মোড় ঘোরানো, লোকসভার ভেতর বিভিন্ন ইস্যুতে ঝোড়ো বক্তৃতা, ভোটের প্রচারে নিজের কেন্দ্র ছাড়াও হুগলির অন্যান্য জায়গা এবং বাঁকুড়ায় গিয়ে প্রচার। কখনও কি মনে হয়, দল বেশি দায়িত্ব কাঁধে চাপিয়ে দিচ্ছে?
কল্যাণ: দল যতটুকু দায়িত্ব দেওয়া দরকার মনে করবে ততটুকু দেবে। আমি তো তার জন্য ভাগ্যকে ধন্যবাদ দেব। দল বা দিদি যদি কোথাও ভরসা রাখেন যে আমাকে দিয়ে এই অতিরিক্ত কাজগুলো করানো যাবে বা মানুষের কাছে পৌঁছনো যাবে কারণ এই লোকটার গ্রহণযোগ্যতা আছে, তখন তো নিজেকে আমি ভাগ্যবান বলে মনে করি।
* তার মানে আপনি এটা উপভোগ করেন?
কল্যাণ: উপভোগের বিষয় নয়। আমাকে যে দায়িত্বটা দিচ্ছে সেটা আমাকে করতে হবে। এর ফলে আমি নিজে আরও বেশি "ফোকাসড" হই।
* দলের মধ্যে ঝামেলা মেটাতে কোনটা আপনার বেশি পছন্দ, পিঠে হাত বুলিয়ে কথা না কড়া ধমক?
কল্যাণ: যেখানে গাফিলতি আছে, সেখানে বলতেই হবে। আবার আমি সকলকে ভালওবাসি। যে জায়গায় বসে আমরা কথা বলছি, সেখানে এত লোক আছেন। এঁদের আমার প্রতি ভালবাসার সঙ্গে ভয়ও আছে। খুব সহজভাবে বলতে গেলে আজ আমি কিন্তু শুধু একজন কর্মী বা নেতা নই। কর্মীদের কাছে আমার গ্রহণযোগ্যতা একজন অভিভাবক হিসেবে। সবাই আমাকে বলে "আপনি আমাদের গার্জিয়ান"। মানুষের ভরসাটা আমার ওপর তৈরি হয়ে গেছে। এমনকী বিপক্ষ রাজনীতি করা অনেক লোকও কিন্তু আমায় বলেন যে রাজনৈতিক মতবাদ আলাদা হলেও আমি তাঁদের গার্জিয়ান।
* মাঝে কিছুটা সময় আপনার সঙ্গে অভিষেক ব্যানার্জির সম্পর্ক নিয়ে একটা জোর চর্চা শুরু হয়েছিল। সেটা কি অতীত?
কল্যাণ: ওই সমস্ত আপনাদের তৈরি করা ইস্যু। শুনে রাখুন, অভিষেক অনেক দূর যাবেন। রাজ্য তো বটেই যেভাবে এগোচ্ছেন, তাতে আগামীদিনে অভিষেক সর্বভারতীয় রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছেন। অভিষেক যেমন দলের নেতা, তেমনি এখন জনগণেরও নেতা হয়ে উঠেছেন। দলের নেতা হওয়ার থেকে জনগণের নেতা হয়ে ওঠাটা কিন্তু অনেক বড় ব্যাপার।
* এখন একটা দলবদলের ঝোঁক তৈরি হয়েছে। আজ একটা লোক এই দলে, আবার আগামীকাল সেই লোকটাকে দেখা যাচ্ছে অন্য দলের হয়ে গলা ফাটাচ্ছে। এটা কীভাবে দেখেন?
কল্যাণ: আমি এটাকে একেবারেই নিতে পারি না। আমার মনে হয়, যাঁরা এটা করেন, তাঁরা সুবিধাবাদী রাজনীতি করেন। কিছু পাওয়ার জন্য করেন। আমার বিশ্বাস, রাজনীতিতে হারজিত থাকেই। এগনো, পিছনোও থাকে। দল কি সবসময় ভাল ফল করবে না সবসময় খারাপ ফল করবে? দলের প্রতি আনুগত্যটাই কিন্তু বড় ব্যাপার। দল কিন্তু এটা খেয়াল করে এবং যার আনুগত্য যত বেশি দল কিন্তু তাকেই ভরসা করে। যারা এভাবে দলবদল করে তাদের তো মানুষের কাছেই গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। অন্তত পশ্চিমবঙ্গে থাকে না। কারণ, এই রাজ্য রাজনৈতিকভাবে অনেক বেশি সংবেদনশীল।
* কিন্তু এটাও তো দেখা যায়, যে লোকটা দলবদল করছে, তৃণমূল থেকে বিজেপি বা বিজেপি থেকে তৃণমূলে যাচ্ছে সে অন্য দলে গিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ পদও লাভ করছে।
কল্যাণ: সেটা আলাদা কথা। কিন্তু তৃণমূল থেকে যারা বিজেপিতে যাচ্ছে তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ কিন্তু সফল হতে পারেনি। একটা বা দুটো লোক হয়তো সফল হয়েছে। আবার দেখবেন এই সফল লোকগুলোর ২০২৪ সালের পর কিন্তু মানুষের কাছে আর জায়গা থাকবে না।
* পরপর তিনবার সাংসদ। আপনি বলছেন এবার বাউন্ডারি মারবেন। এতটা আত্মবিশ্বাসী কীভাবে হচ্ছেন?
কল্যাণ: সাংসদ ছাড়াও আমি কিন্তু একবার বিধায়কও হয়েছিলাম। ফলে সংসদীয় রাজনীতিতে আমার ২০ বছর হয়ে গেছে। মূল কারণটাই হচ্ছে সারাবছর কাজ। সেইসঙ্গে মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ। পঞ্চায়েত বা পুরসভা, কোথায় কী সমস্যা সেটা এলাকায় ঘুরে খোঁজ খবর নিয়ে সেগুলো সমাধান। পঞ্চায়েত প্রধান থেকে পুরসভার চেয়ারম্যান এবং সেইসঙ্গে দলের প্রতিটি কর্মীর সঙ্গে আমার নিবিড় যোগাযোগ। মনে রাখবেন আমি কিন্তু ফাইনাল পরীক্ষার আগে টেস্ট পেপার কিনে পড়তে বসি না। সারাবছরই পড়াশোনা করি। যারা ভাল ছেলে, লেখাপড়ায় মন আছে, তাদের কিন্তু আত্মবিশ্বাস সবসময়ই থাকে।
* এই লোকসভা কেন্দ্রে আপনার যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বী, সিপিএম, বিজেপি বা আইএসএফ প্রার্থীদের নিয়ে কিছু বলবেন?
কল্যাণ: কোনও কিছুই বলার নেই। যে যাঁর নিজের মতো কাজ করবেন।