শুক্রবার ১৫ নভেম্বর ২০২৪
সম্পূর্ণ খবর
Riya Patra | ২৫ মার্চ ২০২৪ ১২ : ১০Riya Patra
রিয়া পাত্র
পৌষ সংক্রান্তি, বিশ্বকর্মা পুজো এসব সময়ে আকাশ একটু বেশি রঙিন থাকে। মেঘ, পাখি এদের মাঝেই নিজেদের রাস্তা তৈরি করে পতপত করে উড়তে থেকে পেটকাটি, চাঁদিয়াল, বগ্গারা। তবে শুধু ওই সময়গুলোতেই নয়, একটু পিছনের দিকে তাকালে দেখা যাবে, আর একটা বিশেষ সময়ে ঘুড়ির চল ছিল ভালোই। নির্বাচনী প্রচার পর্বে। ভোটমুখী দেশের নানা জায়গায় একটা সময়ে প্রচারের অংশ হিসেবে ঘুড়ির ব্যবহার ছিল ব্যাপক হারে। সাইকেলের সামনে বাঁধা দলের প্রতীকের ঘুড়ি, ব়্যালি চলছে কিম্বা কোনও বিশেষ দলের প্রতীক আঁকা ঘুড়ি নিয়ে শেষ বিকেলে দৌড়ে যাচ্ছে আদুড় গায়ের বালক। এসব ছবি একটা সময় চেনা ছিল। ভোট প্রচারে গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, রাজস্থানের বহু জায়গায় ঘুড়ি ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়। একটা সময় এরাজ্যে ভোটের আগে নির্বাচন কমিশন নাগরিকদের কাছে ভোটের বার্তা দিতে ব্যবহার করেছিল ঘুড়ির। ভোটের আগে ভোটার তালিকায় সংশোধনের কাজের জন্য, নাম নথিভুক্তির বার্তা দিতে ঘুড়িকে ব্যাবহার করা হয়েছিল। তাতে স্লোগান লেখা ছিল, "চলো নাম তুলি, দেশ গড়ি"। ঘুড়ির গায়ে ছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশনের লোগো।
আসলে এরাজ্যে খুব বেশি না হলেও, রাজনীতিতে, ভোটের ময়দানে ঘুড়ির ব্যবহার ছিল। তবে দিনে দিনে সেই ব্যবহার কমে আসছে। তেমনটাই মনে করছেন ইন্ডিয়ান কাইট-এর অজিত দত্ত। ১৭ বছর বয়স থেকে তিনি ঘুড়ি বানাচ্ছেন নিজের শখে। ছেলেকেও হাতে ধরে শিখিয়েছেন ঘুড়ি তৈরি। ভোটমুখী বাংলায় তাঁর দোকানের সামনে প্রস্তুত "ভোটের ঘুড়ি"। বিজেপি, তৃণমূল, সিপিএম -এর প্রতীক দিয়ে ঘুড়ি তৈরি করছেন তিনি। অনেকেই সেসব দেখতে আসছেন। ছবি তুলছেন। কিন্তু প্রশ্ন থাকছে, এই সময়ে ভোট প্রচারে ঘুড়ির ব্যবহার কতটা করছে রাজনৈতিক দলগুলি? ২০২১এর ভোটের আগেও বিক্ষিপ্ত ভাবে নানা জায়গায় ঘুড়ি উড়িয়ে প্রচার দেখা গিয়েছিল। অজিত দত্ত বলছেন, এখন তিনি "ভোটের ঘুড়ি" তৈরি করলেও, প্রচারে ঘুড়ির ভূমিকা তেমন নেই। আগে নেতারা অর্ডার দিয়ে যেতেন পাইকারি দরে। প্রচারের আগে দলের কর্মীরা এসে প্রচুর ঘুড়ি নিয়ে যেতেন। এখন আর তেমনটা নেই। তিনি বললেন, "আমি শুধু বানাই আমার শখে, এখন আর কেউ আসে না বললেই চলে। নেতারাও খোঁজ করেন না আর।"
কিন্তু কেন ঘুড়ি আজ ব্রাত্য? বিজেপি নেতা সজল ঘোষ বলছেন, "প্রচারে নতুনত্বটাই সবথেকে বড় কথা। ঘুড়ি কখনোই দেওয়াল লিখনের মতো প্রচারে প্রাধান্য পায়নি। ঘুড়ি উড়িয়ে প্রচারের সময় আর নেই, বদলে ঘুড়ি হাতে নিয়ে সেলফি তুললে প্রচার বেশি হয়। তাছাড়া ঘুড়ি থেকে আউটপুট বেশি নেই। " তাঁর মতে, বিশ্বকর্মা পুজো বা ১৫ ই আগস্টের সময় ভোট হলে বরং প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ঘুড়ি ব্যবহার তাও বাড়তে পারে। দেওয়াল লিখন, ফেস্টুন পেরিয়ে সমাজ মাধ্যমের দেওয়ালে প্রচারের যুগে ঘুড়িকে ফিরিয়ে আমার চেষ্টা হলেও ফল পাওয়া যাবে না বলেই মত তাঁর।
অন্যদিকে তৃণমূলে ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য এই প্রজন্মের নেতা। তাঁর মতে, " সবসময় প্রাধান্য পায় অভিনবত্ব। ডিজিটাল মাধ্যম এই সময়ে প্রচারের বড় মাধ্যম। আমরা ছোটবেলায় যতটা মাঠমুখো ছিলাম, ঘুড়ির দিকে যতটা নজর দিতাম, এখন কি আর তাই হয়? তবে পুরনো রেওয়াজ ফিরিয়ে আনলে কিন্তু মন্দ হয়না।" ব্যারাকপুর লোকসভায় প্রচারে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী পার্থ ভৌমিক প্রচারে ঘুড়ি ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছেন বলেও জানান তিনি।
ভোটপ্রচারে ঘুড়িরা কী করবে আর? দীর্ঘদিন ধরে ঘুড়ি নিয়ে কাজ করছেন রথীন পাল। তিনি মনে করছেন, তাদের ফিরিয়ে আনা উচিত। তাঁর কথায়, মূল বিষয় বার্তা পৌঁছনো। ঘুড়ি তো দিব্যি ওপর তলার ফ্ল্যাটের সামনেও বার্তা দিয়ে আসতে পারবে। ঘুড়ির মাধ্যমে প্রচার হলে, একটা বন্ধুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়া যাবে। বিষয়টা দৃষ্টিনন্দনও হবে।
ছবি-অভিজিৎ মণ্ডল।