উৎসের অভিমুখে স্মৃতিগভীর চলা, মাটির ঘ্রাণে গল্প বলা..
একটি জীবন মানেই তা ঘটনার ঘনঘটাময় একটি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস হওয়ার দাবিদার। যদিও সেইকাহিনীগুলি থেকে উপাদান সংগ্রহ করেভাষার অবয়বে গূঢ়ার্থপূর্ণ চিত্রকল্প নির্মাণ করা অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন কলমচির কাজ।তবে দীর্ঘ কিংবা স্বল্পায়ু, জীবনের পথ সকলেরই কম-বেশি বাঁকবহুল ও কন্টকময়। আমাদের দেশের কথা মাথায় রেখে বললে, ‘সোনার ঝিনুক মুখে নিয়ে’ ইহলোকের আলো দেখা ব্যাতিক্রমের মধ্যেই পড়ে। শৈশব থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে যৌবন এবং যৌবন থেকে মধ্যবয়স্কতার যাত্রাসম্ভাব্য সুদিনের আকাঙ্খাপূর্ণ হলেও বার্ধক্য একাকীত্ব ও স্তব্ধতার গ্রাস। অনতিদূরেই অবশ্যম্ভাবী মৃত্যু যেন ‘অমর কে কোথা কবে?’ উচ্চারণে কড়া নেড়ে যায় দরজায়। তখন জীবন কেবলই টুকরো কিছু ছবি,
অভিজ্ঞতার মহাফেজখানায় পরিণত হয়। ফেলে আসা সমস্ত চরিত্র, স্নেহ, বন্ধু-স্বজন, সিদ্ধান্ত, ওঠা-পড়া, আর্থ-সামাজিক ডামাডোল মনের কোণে ফিরে ফিরে আসে বারবার।সম্প্রতি হস্তগত হওয়া কাজী মহম্মদ সেলিম সাহেবের ‘স্মৃতি সত্তা ইতিহাস’ গ্রন্থটিও তেমনই তার শৈশব থেকে বার্ধক্যের বহু টুকরো স্মৃতি, দাগ রেখে যাওয়া অনুভূতি ও ঐতিহাসিক ব্যাখ্যার সমাহার। এই গ্রন্থটিই যে সেলিম সাহেব কর্তৃক প্রথম সাহিত্যিক প্রয়াস, এই তথ্য প্রকাশক মহাশয় না জানালে যেকোনও পাঠকের কাছেই একথা বিশ্বাস করা কঠিন হয়ে
দাঁড়াতো। তিনি তার রচনাপ্রচেষ্টার প্রেরণা, তার হাইস্কুলের স্বর্গত ‘মাষ্টারমশাই’ শ্রী ষষ্ঠীচরণ দাস মহাশয়কে বইটি শ্রদ্ধার্ঘ্য স্বরূপ উৎসর্গ করেছেন।
শিরোনামের তিনটি শব্দ ‘স্মৃতি’, ‘সত্তা’ ও ‘ইতিহাস’, যথাক্রমে এই তিনটি শব্দ দিয়েই লেখক তার এই গ্রন্থের ভিন্নস্বাদের তিনটি পর্ব বিভাগ করেছেন। গ্রন্থের এই গুণেই প্রথম দুটি পর্বে পাঠকমন কৈশোর-স্মৃতির মোড়কে গ্রামবাংলার প্রকৃতি-সমাজজীবনের আচ্ছন্নতার স্বাদ পেলেও শেষ পর্বে পাঠকমনকে যৌক্তিক ও ইতিহাসজিজ্ঞাসুহতেই হয়। এই তিনটি পর্বের ওপর চোখ রাখলেই বোঝা যাবে যে, এই গ্রন্থকে সাহিত্যের কোনও চর্চিত ঘরানায় ফেলে দেওয়া যথাযথ সুবিচার হবে না। কারণ, ‘স্মৃতি’ অংশে তিনি মূলত বীরভূমের ‘সেকেড্ডা’র সঙ্গে পাঠকদের ঐতিহাসিক পরিচয় করিয়ে দিয়ে, প্রাচীন জনপদ সেকেড্ডায় তার ছেলেবেলার গ্রামীণ জীবনযাত্রা থেকে ছাত্রজীবনের সমাপ্তি পর্যায় পর্যন্ত স্মৃতিনির্ভর আলোচনা করছেন। ‘সত্তা’ পর্বটি তিনি ঐতিহাসিক কচকচিবিহীন সাতটি সুখপাঠ্য স্মৃতিগদ্য দি
য়ে সাজিয়েছেন। যারশৈলী ও সাহিত্যিক বিচারের ভার পাঠকজনের প্রতিই বর্তায়। জীবনের প্রারম্ভে দেখা কিছু চরিত্রকে তিনি আঞ্চলিক বুলিতে সবিশেষ সারল্যের সঙ্গে চিত্রিত করতে পেরেছেন। সবশেষে ‘ইতিহাস’ পর্বটিতে দুই-বাংলার আবালবৃদ্ধবনিতার কাছে অমানিশাপ্রতিম
ও স্বাধীনতা প্রাপ্তির বিয়োগান্তক পরিণতি হিসে
বে ‘দেশভাগ’কে তার আলোচনার কেন্দ্রে স্থাপিত করেছেন। এই অংশটি মূলত তার ঐতিহাসিক ঘটনার তথ্যসূত্র সমন্বিত কিছু প্রবন্ধের সঙ্কলন। ফলত একথা স্বীকার করতেই হয় যে, গ্রন্থটির উপলক্ষে পৌঁছতে লেখক যে আলোচনা রেখেছেন তা সামগ্রিক ও সর্বাঙ্গসুন্দর হয়েছে।
জীবন-অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন মানুষের ভিত্তিপ্রস্তর আবশ্যিকভাবেই তার শৈশব-কৈশোরকাল। বর্তমান বয়সের বলিরেখার আড়ালেই একদিন ছিল স্মিতহাস্যের সরল শিশু-কিশোর মূর্তি।পূর্বেই বলেছি, আলোচ্য গ্রন্থের ‘স্মৃতি’ অংশেলেখক তার শৈশব থেকে যুবক বয়স পর্যন্ত তার স্মৃতির ভান্ডারটি উজাড় করে দিয়েছেন। ১৯৫৩ সালে বীরভূম জেলার মখদুমনগরের প্রাচীন জনপদ সেকেড্ডায় জন্মগ্রহণ করেন লেখক কাজী মহম্মদ সেলিম। বীরভূম অঞ্চলের প্রাচীনত্ব প্রশ্নাতীত। বীরভূম রত্নগর্ভাও। ইতিহাসের নানা পর্যায়ে নানা নামে ও ভৌগোলিক সীমারেখায় পরিচিত হয়েছে বীরভূম। বীরভূমেরভূমিজ সন্তান সেলিম সাহেব সর্বতভাবে তার গ্রাম, মহকুমা সর্বোপরি জেলা বীরভূমকে জলজ্যান্ত বৈশিষ্ট্যসহ পাঠকগণের সামনে রেখেছেন। গভীর অরণ্য, রক্তমাটির নিবিড় বাঁধন, দামাল দুরন্ত নদীস্রোত, অগণিত আউল-বাউল-পীর-ফকিরের মাজার,
পুণ্যাত্মা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ব্রহ্মচর্যাশ্রম’, এমনকি ইংরেজ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সাঁওতাল অভ্যুত্থানের ইতিহাস বুকে নিয়ে চলা ‘বীরভূমি’ বীরভূমের স্বাতন্ত্রের কথাকারোকে নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেওয়া নিষ্প্রয়োজন। তবে এই পর্বে বীরভূমের যে আঞ্চলিক যাপনচিত্র পাঠকমানসে ফুটে ওঠে, তা নিঃসন্দেহে একজন ভূমিজেরসর্বাঙ্গেমৌলিক অভিজ্ঞতা ও স্মৃতিপুষ্ট।একেবারে গোড়ার দিকে তার বক্তব্যে উঠে এসেছে ইসলাম ঘনবসতিঅঞ্চলমখদুমনগরের অন্তর্গত সেকেড্ডা জনপদটির উৎপত্তিকালিন ইতিহাসের কথা। পর্যায়ক্রমিক অপভ্রংশে তার জনপদের নামোৎপত্তির দিকেও ইঙ্গিত করেছেন লেখক। শৈশবেই কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন সেকেড্ডা গ্রামের ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু জমিদার বংশ, জমিদারি মহাল। বীরভূমে জমিদারি প্রথার ক্রমাবনতির প্রত্যক্ষদর্শী প্রজন্মের অন্যতম একজন সেলিম সাহেব স্বয়ং। ‘স্মৃতি’ পর্বের ‘জমিদার দর্পণ’ শীর্ষক দুটি গদ্যে বৃদ্ধজনের মৌখিক বয়ান ও নিজস্মৃতির ভিত্তিতে সেইসব গল্পই বলেছেন। জমিদারের দানশীল, প্রজাকল্যাণকর রূপ যেমন দেখেছেন স্বচক্ষে, তেমনই দেখেছেন সাধারণ অধিবাসীদের সীমাহীন আর্থিক দূরবস্থাও। মুসলিম ঘনবসতি জনপদেও দেখেছেন গ্রামীণ সরল-শান্তিপূর্ণসহাবস্থান। জমিদারি বীরভূমের সেই যুগে উঁকি দিতে পাঠককে অবশ্যই তার স্মৃতিপথের দিকে অগ্রসর হতে হবে। বলা বাহুল্য হবে যে, গত শতকের পঞ্চাশ-ষাট কিংবা তৎপরবর্তী কয়েক দশকে পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম বাংলায় বেড়ে ওঠা প্রজন্মের কাছে সেলিম সাহেবের এই রচনা তাদের ‘প্রথম সবকিছু’ কে পুনর্বার ছুঁয়ে দেখবার হাতছানি দিয়ে যায়। প্রথম পাউরুটি, টাউন দেখা, টেলিগ্রাফের তার। কাবলিওয়ালার সুদখোর হয়ে ওঠা, তাদের বিদায়ী উপহার। কখনও একেবারে ছাত্রাবস্তার কথা, মনে পড়ে যাওয়া ‘ইয়াসিন মাস্টার’, সিলেবাসের বাইরের বই পড়া, বই চিনিয়ে দেওয়ার মানুষগুলোকে নিয়ে এক প্রবহমান স্মৃতি রেখে গেছেন। আবার কখনও গ্রাম বাংলার মৌখিক জনশ্রুতি, লৌকিক-অলৌকিক বিশ্বাসকে স্মৃতিপট থেকে নিপাট সারল্যের সঙ্গে চিত্রিত করেছেন। এই লেখা যেন মাটির গন্ধে, ধ্বংসপ্রাপ্ত দালানবাড়ি-মসজিদের চাতালে, মাঠে প্রান্তরে, গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়ানো বৃদ্ধমনের আত্ম-আবিষ্কার। বৃদ্ধজনের কাছে গল্পের মতো শুনেছেন রবিঠাকুরের কথা, ছেলেবেলায় সামনে থেকে দেখেছেন ড. বিধান চন্দ্র রায়-কেও। ভূতত্ত্ববিদদের খনিজের খোঁজে বীরভূম আগমন দেখেছেন ও শুনেছেন বীরভূমের একদিন কলকারখানা-বহুতলসহ পিচরাস্তার নগর হয়ে ওঠার ভবিষ্যৎবাণী। সত্তরের দশকের প্রারম্ভে সেলিম সাহেব রামপুরহাটে, যুবক বয়সের কলেজপড়ুয়া। স্বাভাবিকভাবেই, নকশাল আন্দোলন থেকে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি তার ব্যাক্তিগত ব্যাখ্যায়, অভিজ্ঞতায়, উপলব্ধিতে গভীর ছায়া রেখে গেছে। এক বৃদ্ধের স্মৃতির দেশে বিচরণসততই আনন্দময়, শিশুর সারল্যে রচিত গল্পদাদুর আসরের মতোই। তাই গল্পের ছলেই, একই ঘটনাবলী বারংবার প্রসঙ্গে-প্রসঙ্গান্তরে ফিরে ফিরে এসেছে লেখকের বয়ানে।
বাংলা গদ্য-সাহিত্যপ্রেমী পাঠকগণের কাছে এই গ্রন্থেরদ্বিতীয় পর্বটি বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠতে পারে। ব্যাক্তিগত ধারণায় বলতে পারি, ‘সত্তা’ পর্বটির স্বল্প পরিসরে রচিত সেলিম সাহেবেরঅনুগল্পগুলির বিশেষত্ব এর স্মৃতিনির্ভরতায় এবং একেবারে আঞ্চলিক কিছু চরিত্রদের রক্ত-মাংসের অবয়বে উঠে আসায়। এই পর্বের ছ’টি মাত্র অনুগল্পের ভিতরে প্রবেশ ওব্যাখ্যার চেষ্টা নিরর্থক হবে। দু-বাংলার সাহিত্যপ্রেমী পাঠক নিশ্চয়ই তাতে স্ব স্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে অভিনবত্বের ছাপ পাবেন, এই আশা রাখা যায়। এটুকু হলপ করেই বলতে পারি, অভাবের দায়ে চোর ‘ইসরাইল’, বেতের বাঁটের ছাতা নিয়ে ‘চনুমামা’র শৌখিনতা, পু
ত্রের অবহেলায় জরাগ্রস্ত ‘মাজুবুড়ি’রা যেকোনও পাঠকের মনে দাগ রেখে যাবেন। প্রসঙ্গত বলে রাখি, এই পর্বের ‘স্বপ্নের গ্রামোফোন’ গদ্যটি ১৯৭৫ সালে ‘প্রাচীর’ পত্রিকায় এবং ‘ছাঁচ’ নামক রচনাটি ১৯৯৪ সালে মল্লিনাথ মুখার্জি সম্পাদিত ‘অনুভূমি’ পত্রিকায় পূর্ব প্রকাশিত। এছাড়াও, লেখক একদা নিজের সম্পাদনায় ‘অ-সুখ’ নামের একটি পত্রিকা প্রকাশ করতেন। ১৯৭৬ সাল নাগাদ তার ‘অসুখ’ গদ্যটিও প্রথমবারের জন্য উক্ত পত্রিকায় স্থান পায়।
অবিভক্ত বাংলার লোকমানসে ‘দেশভাগে’র দগদগে ঘা আজও শুকিয়ে এসেছে কিনা জানা নেই। দেশভাগ-দেশত্যাগ রাতারাতি বর্তে যাওয়া কোনও মামুলি ঘটনাও নয়। সুজলা-সুফলা বাংলা বহুকাঙ্খিত স্বাধীনতা লাভের আশা নিয়ে শ্বেতাঙ্গ মাউন্টব্যাটন সাহেবের কলমের দাগে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গিয়েছিল। এমত ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের বছর চারেক পরেই লেখকের জন্ম। তার গ্রন্থের ‘ইতিহাস’ অংশে তাই দেশভাগের ব্যাক্তিগত ব্যাখ্যাই দীর্ঘ পরিসরে আলোচিত হয়েছে। গান্ধীজীর ভারতে আগমন(১৯১২), নৌবিদ্রোহ, পাকিস্তান প্রস্তাব থেকে নেহেরু-জিন্নাহ বিতর্ক পর্যন্ত বিচার বিশ্লেষণে এগিয়েছেন লেখক। স্মৃতির পাতা থেকে স্বজন-পরিজনের ওপর দেশভাগের ঐতিহাসিক প্রভাবও যেমন আলোচনা করছেন, তেমনই তুলে এনেছেন আপমর নিরন্ন মানুষের আকস্মিক দুরবস্থার কথাও। তবে আবশ্যিকভাবেই সেলিম সাহেবের প্রত্যক্ষস্মৃতি বাংলাদেশ স্বাধীনতার যুদ্ধের কথা এই পর্বের আলোচনায় কমই এসেছে। এরপর ভারতভূখণ্ডে ইসলাম দর্শনের প্রচারক মহামানব ‘বিশ্বনবি হজরত মুহম্মদ’ ও তৎপরবর্তী সময়ের কথা ‘কারবালারইতিহাস’ অংশে ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে বর্ণনা করেছেন। ‘ইতিহাসে বিতর্কিত’শীর্ষক অংশে বিতর্কিত চরিত্র সম্রাট ঔরঙ্গজেবকে নিয়েও সংক্ষেপে আলোচনা করেছেন। আলোচনা করেছেন দু-বাংলার অভিন্ন সম্পদ অভিনেতা মহম্মদ জাকারিয়ার কথাও, যিনি সেলিম সাহেবের পারিবারিক সম্পর্কিতও একজন। এছাড়াও লেখক তার শৈশবের স্মৃতি থেকে নজরুল ইসলাম ও তার জন্মভূমি চুরুলিয়া গ্রামের কথা বলেছেন। প্রথম সেলুলয়েড সিনেমা ও বলিউডি নায়ক-নায়িকা দিলীপকুমার, রাজকাপুর কিংবা বৈজয়ন্তিমালাদের কথাও আলোচিত হয়েছে এই পর্বের ‘কোহিনুরের ছটা’ অংশে। বলেছেন, মুঘল-ই-আজম, গঙ্গা-যমুনা কিংবা দেবদাসের মতো ছায়াছবির কথা। একেবারে শেষলগ্নে সেলিম সাহেব ড. কুদরাত-ই-খুদা এবং অধ্যাপক রেজাউল করিমের কথা সংক্ষেপে আলোচনা করে ক্রমশ উপসংহারের দিকে অগ্রসর হয়েছেন।
এবার এই বইয়ের গঠনগত দিক নিয়ে দুয়েক কথা না বললেই নয়।বইয়ের অভ্যন্তরে লেখক প্রচ্ছদের জন্য নানা উপকরণ রেখে গেলেও, এই বইয়ের প্রচ্ছদ আমার নিতান্তই সাদামাটা লেগেছে। বইয়ের দু-মলাটে পাঠক এই বইয়ের শিরোনাম ও স্বল্পালোচিত লেখক পরিচিতি ছাড়া কোনও সূচনাই পাচ্ছেন না। এছাড়াও, লেখক পরিচিতি অংশে লেখকের জন্মতারিখ ২৩শে মার্চ, ১৯৫২ সাল বলা, অথচ মূল পাঠের অন্দরে লেখক নিজেই তার জন্মসাল হিসেবে ১৯৫৩ সালের কথাই বলছেন। এই বিষয়টি চোখে পড়লে পাঠকমাত্রেই সন্দেহ জাগতে বাধ্য।
সাধারণত আমরা নানাক্ষেত্রে চর্চিতজনের রক্ত-মাংসের সত্তার সঙ্গে পরিচিত হতেই তাঁদের আত্মজীবনী, জীবনবৃত্তান্ত কিংবা স্মৃতিকথার দিকে হাত বাড়াই। এই বইয়ের প্রতি তেমন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করলে তা পাঠকে সীমাবদ্ধই করবে। সমসাময়িকতার জ্যান্ত সাক্ষ্যও এই বইয়ে যেমন আছে, তেমনই স্মৃতি, অনুভূতির মৌলিক গভীরতাও পাঠককে ভাবাবে। আগেও বলেছি যে, গ্রাম বাংলায় শৈশবপ্রাপ্ত কিংবা বীরভূমের ভূমিজদের কাছে এই বই অমূল্য হয়ে উঠতে পারে। এমনকি ইচ্ছুক গবেষকদের জন্যও সেলিম সাহেবের এই বই ও বয়ান বীরভূমের আঞ্চলিক ইতিহাস বিষয়ে অন্যতম প্রাথমিক উৎস হয়ে থাকবে। ‘লেখকের কথা’য় সেলিমসাহেবের সরল স্বীকারোক্তি, “জানিনা এ লেখার সাহিত্য-মূল্য আমার সাদামাটা জীবন কাহিনী, মামুলি গল্পকথা পাঠকের মন ছুঁতে পারবে কিনা জানি না। আমার আনন্দ ‘আত্মপ্রকাশে’, ‘সৃষ্টি সুখে’র আহ্লাদে।”
বই- স্মৃতি সত্ত্বা ইতিহাস
লেখক- কাজী মহম্মদ সেলিম
প্রকাশক- অভিযান পাবলিশার্স
দাম- ৩০০ টাকা