চলেছি লন্ডনের ইস্ট ক্রয়ডন থেকে পোর্টসমাউথ হারবার। আমাদের গন্তব্যস্থল আইল অফ উইট। প্রায় দু'ঘণ্টা পর স্পোর্টসমাউথ স্টেশন পৌঁছালাম। স্টেশন থেকে বাসে চড়ে পৌঁছে গেলাম হারবারে। আইল অফ উইট যেতে গেলে হয় ছোট জাহাজ অথবা হোভারক্রাফটের সাহায্য নিতে হয়। হোভারক্রাফটে চড়ার অভিজ্ঞতা আমার ছিল না, তাই বেছে নিলাম হোভারক্রাফট।
হোভারক্রাফট প্লাটফর্মে চলে এলাম। দূর থেকে দেখলাম সেই অদ্ভুত যান জল অতিক্রম করে সরাসরি ইংলিশ চ্যানেলের পারে এসে দাঁড়ালো আর বেলুনের মতো চুপসে গেল। সুন্দর মসৃণ সাগর বেলা। আমরা সিঁড়ি দিয়ে উঠে যে যার স্থান গ্রহণ করলাম। যানটি আবার ফুটবলের মত ফুলে গেল আর জল কাটিয়ে এগিয়ে চলল। ১৫ মিনিটে পৌছে গেলাম রাইড। এখান থেকে যেতে হবে স্যাঙ্কলিন। হোভারক্রাফট উঠে এলো সাগরপারে। আমরা সেখান থেকে চলে এলাম ট্রেনে করে স্যাঙ্কলিন। স্যাঙ্কলিন থেকে বাসে করে আমাদের হোটেল মার্লবারো।
পরদিন চলে গেলাম বাসে করে নিউ পোর্ট। বাস থেকেই দেখতে পেলাম আইল অফ উইটের ল্যান্ডমার্ক -নিডিল দর্শনের জন্য টিকিট সংগ্রহের বিশাল লাইন। নিডিল হল তিনটি মার্বেল স্তুপের সারি যা ইংলিশ চ্যানেলের থেকে প্রায় ৩০ মিটার ওপরে উঠে অ্যালামবে এবং ক্র্যাচেল্সবের কাছাকাছি অবস্থিত। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে ইতালীয় উদ্ভাবক মার্কনী বিশ্বের প্রথম রেডিও স্টেশন স্থাপন করেছিলেন আইল অফ উইট এর রয়্যাল নিডিল হোটেলে। ভিক্টোরিয়ান সময়ে আলফ্রেড লর্ড টেনিশন, চার্লস ডিকেন্স, চার্লস ডারউইন, উইনস্টন চার্চিল, কার্ল মার্কস এবং রানী ভিক্টোরিয়া সহ ইতিহাসের অনেক সুপরিচিত চরিত্র আইল অফ উইটে বসবাস করতেন। টিকিট সংগ্রহ করে আমরা এখন আলামবের ওপরের খাড়া বালু নির্মিত পাহাড় থেকে নিচে সাগরবেলায় নামব চেয়ার লিফ্টের মাধ্যমে। চেয়ার লিফ্টের জার্নিটাও অদ্ভুত রোমাঞ্চকর। নিচে অ্যালামবের অত্যাশ্চর্য ফিরোজা রঙের জল আর সামনে অদ্ভুত, অকল্পনীয়, অবর্ণনীয় সেই ছবির মত তিনটি সূচালো চুনা পাথরের স্তুপ যারা স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে পারছিলাম না সবুজ জল রাশি দেখব না ল্যান্ডমার্ক দেখব! নেমে এলাম সেই স্বর্গরাজ্যে আলামবের সাগর বেলায়। সামনে বিশাল জলরাশি পেছনে রংবেরঙের বালুকা নির্মিত পাহাড়। ২২ রকমের রং এতে মিশ্রিত আছে। সাগরবেলার জেটি থেকে একটি মাঝারি স্পিডবোটে করে চলে এলাম নিডিলকে সামনাসামনি দেখতে। আকাশ ছিল নীল, নীল জলরাশি তার ওপরে আমাদের কুড়ি ফুট দূরত্বে সেই আশ্চর্য স্তুপ। এখানে একটি ঊর্ধ্ব উন্মুক্ত ব্রিজার বাস আসা-যাওয়া করে প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর ইয়ার মাউথ থেকে অ্যালামবে পর্যন্ত। ফিরতি পথে আমরা চেয়ার লিফ্টে করে অ্যালাম বের বালুনির্মিত পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছালাম। ওপর থেকে নিচের দৃশ্য মনোমুগ্ধকর। নিচে গাঢ় নীল জলরাশি, ওপরে মখমলের মতো সবুজ ঘাসে ঢাকা পাহাড়ের চূড়ার ওপর তল আর নীল জলরাশির ওপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সাদা ধবধবে চুনাপাথরের নিডিল। এই অপূর্ব দৃশ্য মনের মণিকোঠায় বন্দী করে বাসে করে চলে এলাম ইয়ার মাউথ।
খেয়াল রাখতে হবে -
১. চেয়ার লিফ্টে অথবা ঊর্ধ্ব উন্মুক্ত ব্রিজার বাসে করে আলামবের সাগরপারে যাওয়া যাবে।
২. যাওয়ার পথে এক রাত স্যাঙ্কলিন এ থেকে সুন্দরী স্যাঙ্কলিনকে দেখে নেওয়া যায়।
৩. ভ্রমণ করার উপযুক্ত সময় জুন থেকে সেপ্টেম্বর।