বিলম্বিতে সম

-তুই, তুই কি পাগল? জন হপকিন্সের অফার কেউ ফিরিয়ে দেয়? আমি কি কোনওদিন তোকে বোঝাতে পারব হিরণ?” হাতের তালুতে ব্যর্থ ঘুষি মারে রথীন। হিরণ্ময় ওরফে হিরণ শান্ত দৃষ্টিতে তাকায়।

-আমার কাছে রাজনীতির বিষয়টা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ রথীন। আমার আদর্শটাও। হ্যাঁ, হপকিন্সের এই কোর্সটা করে আসতে পারলে নিঃসন্দেহে আমার বায়োডেটা বাড়ত অনেকটাই। কিন্তু রেগানের আমেরিকায় আমি বকলমে ইউএস এইডের স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যেতে পারব না কোনও ভাবেই। রথীন, আমার একটা নিজস্ব নীতিবোধ রয়েছে। আমি এজন্যই প্রফেসর মিত্রকে বারবার করে বারণ করেছিলাম আমার নামটা রেকমেণ্ড না করতে। কিন্তু উনি শুনলেন না।

 

 

 

-আমি কিন্তু আমেরিকা যাচ্ছি হিরণ। ইলিনয়ে আমার এ্যাসিস্ট্যান্টশিপ ওরা কনফার্ম করেছে। এই সেপ্টেম্বরেই হয়তো উড়ে যেতে হবে আমায়।

-আমি কি তোকে যেতে বারণ করেছি কোনওদিন?” হিরণ চওড়া হেসে তাকায়, “পারলে ফিরে আসিস। বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে আমার ছুঁৎমার্গ যত না, কেবল কেউ যদি তারপরেও আর কোনওভাবেই দেশে ফিরে আসতে না চায় একমাত্র তখনই তার প্রতি আমার কিঞ্চিৎ বিদ্বেষভাব জন্মায়। এইটুকুই। তবে আমি জানি তুই ফিরবি,” হিরণ সোজাসুজি এবারে রথীনের চোখের দিকে তাকায়।

-ইউ আর স্টিল নট এ ক্যাপিটালিস্ট রথীন, এ্যাট লিস্ট নট টু দ্য বোনস।

রথীনও হেসে ফেলে এবার। কফি হাউজে গিয়ে বসব চল। মিলোজের ক্যাপটিভ মাইণ্ড বইটা দাশগুপ্ততে আনতে দিয়েছি। এসে গেছে শুনেছিলাম। ওটাও নিতে হবে। চল।

-আমি কিন্তু ঠিক পাঁচটায় বেরিয়ে যাব। মেডিকেলে একটা জিবি মিটিং রয়েছে।

-আরে চল চল, আমি কি তোকে আটকেছি কোনওদিন?”

 

 

বাইরে শেষ দুপুর। আশির দশকের কলেজ স্ট্রিট চত্বর। দুই বন্ধুতে রাস্তা পেরিয়ে যায়।

স্বর্ণেন্দুর পরিবারের বিষয়ে এতকিছুও লাবণ্য জানত না। জানার কথাও নয়।

 

-ইউ নো? হিজ ফাদার টার্নড ডাউন এ জন হপকিন্স অফার?” চোখ বড় বড় করে স্যমন্তক তার অবিশ্বাস বোঝাতে চায়, “এ্যাণ্ড হোয়াট ক্যান আই টেল! মাই ফাদার ওয়াজ নো লেস, হাওয়েভার! পিএইচডির পর বাবা দেশে ফিরে এল হঠাৎ। সংসার, চাকরি সব এই দেশেই। থ্যাঙ্ক গড আমি অন্তত আবার বাইরে চলে আসতে পেরেছি। এখন ইফ ইউ ওয়ান্ট টু শাইন লাবণ্য, তোমাকে বাইরে আসতেই হবে। ইট হ্যাজ বিকাম দ্য রুল মাই ডিয়র!স্যমন্তককে যেন হালকা উত্তেজিত মনে হয়। লাবণ্য চুপ করে থাকে।

 

-আমি তো এতকিছু জানি না দাদার বিষয়ে। জাস্ট দুএকদিনের মাত্র পরিচয়। হ্যাঁ, খুব হেলপফুল। কলেজের সবাইকে খুব সাহায্য করে। স্ট্রেট ফরওয়ার্ড। কিন্তু, এভাবে তো ওর বিষয়ে এত কিছু, আজ আমাকে বলতে গেলে কেন হঠাৎ?” লাবণ্য নিজে থেকেই যেন চুপ করে যায়। ওদিকে ওপাশে স্যমন্তকও নীরব।

 

-এনিওয়ে, লেটস ড্রপ দিস,” সে তাড়াতাড়ি ব্যাপারটা সামলাতে চায়, “লাবণ্য, আমি আসছি। ইন টু মান্থস। কলকাতায়,”

-তাই?” লাবণ্য উচ্ছাস প্রকাশ করতে গিয়েও যেন পারে না। তার ক্লান্তি বোধ হয়।

-হ্যাঁ, ফর থ্রি হোল উইকস। লেটস মিট আপ সুন লাবণ্য। অনেক কথা বলার আছে আমার!শেষ কথাটা বলতে গিয়ে স্যমন্তকের মুখটা যেন আগের মতোই এক পলকে ঝলমল করে ওঠে হঠাৎ! নাকি সেটা লাবণ্যেরই দেখার ভুল? সে বুঝে উঠতে পারে না। তবু সেই ঝলমলে ব্যাপারটা তার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়।

 

 

 

সূচ ঠিক জায়গাতে বিঁধেছে? লাবণ্য এখনও নিশ্চিত নয়।

গত দেড় সপ্তাহে তিনবার তার সঙ্গে স্যমন্তকের দেখা হয়েছে। তিনবারই সে উপলব্ধি করেছে এই মানুষটাকে সে যেন আর আগের মতো এতটুকুও চিনতে পারছে না। মানুষটার মধ্যে এক আমূল পরিবর্তন। স্পটলাইটের আলোর চেয়েও স্যমন্তক যেন এখন আরও বেশি কিছুই অধিকার করতে চায়। সে তার ক্ষমতার স্বীকৃতি চায়। চায় নিঃশর্ত আনুগত্য-ভাব। ভালোবাসার ক্ষেত্রে করুণার বিষয়টাও যেন অনেক চেষ্টাতেও আর নিজের ভিতরে লুকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। সেখানেও যেন মস্ত এক জন্মান্তর ঘটে গিয়েছে। সময় কি এভাবেই সবকিছুকে আমূল বদলিয়ে দেয়? লাবণ্যের বড় হতাশ বোধ হয়। আজ কি হবে সে জানে না।

 

নিডলটা আরও একটু পুশ করতে হবে বোধহয়,” পাশ থেকে স্বর্ণেন্দু বোসের কণ্ঠস্বর, “মনে আছে তো? প্রথমে স্কিন, তারপর সাবকিউটেনাস ফ্যাট, পস্টিরিয়র স্পাইনাস লিগামেন্ট, ইন্টারস্পাইনাস,” লাবণ্য ঘাড় ঘুরিয়ে না তাকিয়ে পারে না।

-মনে আছে স্যর আমার।

 

স্বর্ণেন্দু মৃদু হাসে। তাহলে পুশ করছ না কেন, ফ্লুইড কই?” লাবণ্যের চোখ জ্বালা করে ওঠে হঠাৎ। সে পারবে। আজ আরও একটা দরজা খুলবে ঠিক।

বিকেল গড়িয়ে যায়। অপেক্ষা করতে করতে কিঞ্চিৎ অধৈর্য বোধ করে স্যমন্তক। নিজের স্মার্টওয়াচটার দিকে তাকায়। তারপর সামনের দিকে। নাঃ, অবশেষে সে এসেছে। সে লাবণ্যকে দেখতে পায়। হাসিমুখ। দুজনেরই ভালো লাগছে। নাকি দুজনের ভালো লাগার কারণ অন্য? স্যমন্তক বেশ সেজেগুজে এসেছে আজ।

 

 

 

তার পরনে থ্রি-পিস ফর্ম্যাল। কামানো গাল। চোখে চশমা। উগ্র আভিজাত্যটাকে বাইরে থেকেও অনুভব করা চলে। লাবণ্যের পরনে সাধারণ পোশাক। আরেকটু সেজে আসতে পারতাম,” খানিক অপ্রস্তুত হয়েই সে বলে ফেলে, “কিন্তু এত দেরীতে ওটি শেষ হল আমার।” “উঁহুঃ, তারপরেও তো আইসক্রিম খাওয়া হয়েছে দেখছি,” স্বাভাবিক গলায় জবাব দেয় স্যমন্তক। তুমি, তুমি কি করে জানলে?” প্রশ্ন করেই বুঝতে পারে লাবণ্য, “ওহ, ঠিকই তো,” কুর্তির উপরটায় একফোঁটা আইসক্রিমের দাগ। সে লজ্জিত হাসে। আজ প্রথম স্পাইনাল দিলাম জানো তো? তাই একটু,” স্যমন্তকের কোনও প্রতিক্রিয়া না দেখে সে মৃদুস্বরে বাকি কথাটুকু উচ্চারণ করে, “সেলিব্রেশন।

 

আহ,” আরও স্বাভাবিক হতে চায় স্যমন্তক। দ্যাটস লাইফ। চলো এবার। আর দেরী করব না,” গাড়ির দরজা খুলে লাবণ্যকে সে উঠে বসার জায়গা করে দেয়। সেই চেনা দাপট। পরিচিত অহংকার। লাবণ্য এ জিনিস বহুকাল ধরে দেখেছে। তার গা-সওয়া হয়ে গিয়েছিল এসব। মনে মনে অতীত ক্রিয়াপদের ব্যবহারে লাবণ্য নিজেই চমকিত হয়। মানবতার উপাখ্যানে মনের জন্মান্তর কি কেবল একজনেরই হয়? নাকি তেমন কোনও বিধিনিষেধ সন্তর্পণে নিবন্ধিত আছে কোথাও? গাড়ির দরজা বন্ধ হয়। গাড়ি চলতে শুরু করে।

 

 

 

উড়ালপুল। আধুনিক কলকাতা শহর। আলোকোজ্জ্বল স্কাইলাইন। আজ রবিবার। তাই উড়ালপুলে ট্রাফিক নেই তেমন। তাদের গাড়ির চারপাশে কেবল অকারণে কতগুলি প্রজাপতি উড়ে বেড়ায়। নাকি লাবণ্যের চোখের ভুল? ব্রেক কষে হঠাৎই গাড়িটাকে দাঁড় করায় স্যমন্তক।

 

এই কবিতাটা জানো তো? হাতের উপরে হাত রাখা খুব সহজ নয়,” লাবণ্য আবৃত্তি করে হঠাৎ, “সারা জীবন বইতে পারা সহজ নয়।তাদের গাড়ির চারপাশে তখনও প্রজাপতিগুলো উড়ে বেড়ায়। লাবণ্যের হাতের উপরে স্যমন্তকের হাত। লাবণ্য সে হাত সরিয়ে নেয় না। সে আবৃত্তি করে কেবল। এ সব কথা সহজ খুব, কে না জানে? স্যমন্তক আসলে এমন সহজ কথাও বোধহয় ততটা সহজ নয়,” লাবণ্য স্বীকার করে নেয়, “শব্দগুলো একটু এদিক-ওদিক হয়ে পড়ল বোধহয়।এইবারে হাত সরানোর সময় হয়েছে।

 

সে হাত সরিয়ে নেয়। ড্যাশবোর্ডের উপর স্যমন্তকের যত্ন করে নিয়ে আসা হীরের আংটির বাক্সটা একলাটি পড়ে থাকে অবহেলায়। গাড়ি চলতে শুরু করেছে।

 

-“এতদিন অপেক্ষা না করলেও পারতে বোধহয়?” লাবণ্য আলগোছে একবার জিজ্ঞেস করে, “তাহলে হয়তো আরেকটু পুরনো স্যমন্তককে ফিরে পেতাম। কে বলতে পারে, ভুল করে হয়তো প্রস্তাব স্বীকারও করে নিতাম।স্যমন্তক এরপরেও তার দিকে হেসে তাকায়।

 

-“তোমার মাথা খাচ্ছে ওই স্বর্ণেন্দু বোস,” সে দাঁতে দাঁত চেপে উচ্চারণ করে, “আমি কি কিছু বুঝিনা ভেবেছ? শালা আদর্শবান!গাড়ির গতি বাড়ছে।

-“আস্তে চালাও স্যমন্তক,” লাবণ্যের গলায় জোর বাড়ে, “আর কোনও সিনিয়রকে নিয়ে আমার সম্পর্কে যদি আর একটিও খারাপ কথা বলার চেষ্টা করেছ, জানবে আমিও কিন্তু ছেড়ে কথা বলব না তোমায়।বলেই লাবণ্য আবারও নিজেকে গুটিয়ে নেয়, “আসলে আমরা প্রত্যেকে আমাদেরই মতো কেবল। ভুলে ভুলে একে-অপরকে অন্ধ-অনুকরণের চেষ্টা করে চলি। সংঘাত বাঁধে সেই থেকেই।

 

-“স্টপ! স্টপ প্রিচিং আই সে!প্রায় চিৎকার করে ওঠে স্যমন্তক। গাড়ি উড়ালপুল থেকে নেমে এসেছে। প্রচণ্ড শব্দ করে ব্রেক কষে সে গাড়িটাকে দাঁড় করায়। পিজি হাসপাতাল। নাও গেট আউট অব দ্য কার আই সে! গেট আউট! নাও!

 

 

 

একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়। স্যমন্তকের দেশে ফেরা হয় না আর।

 

লাবণ্যের মাথার উপরে তখনও প্রজাপতিগুলো উড়ে বেড়ায়। তার সূচ ঠিক জায়গাতে বিঁধেছে। লিগামেন্টাম ফ্ল্যাভাম আর ডুরার অন্তিম সীমান্ত অঞ্চল পেরিয়ে সুষুম্নারস ও সুষুম্নাকাণ্ডের অন্তিম ফ্রন্টিয়ার। টানো,” পাশ থেকে যেন মুখ ফসকে বলে দিতে গিয়েও স্বর্ণেন্দু বলে না আর। লাবণ্যের হাত আর এতটুকুও কাঁপছে না। সিরিঞ্জের অভ্যন্তরে সাদা জলীয় পদার্থটাকে সে চোখে দেখতে পায়। এক ফোঁটা সেই দুর্লভ তরল। টুপ। ব্রেভো! ইউ ক্যান পুশ দ্য ড্রাগ নাও,” একটা শ্বাস পড়ে লাবণ্যের। দরজা খুলে গিয়েছে। স্যমন্তক জাদুঘরের সামনেটায় এসে দাঁড়ায়। লাবণ্যের চোখ ভিজে গিয়েছে।

 

বাড়ি ফিরছে স্বর্ণেন্দু বোস। ঘর অন্ধকার। আলো জ্বালিয়ে টেবিলের উপর বাবার হাতে লেখা চিঠিটাকে সে দেখতে পায়। যত নাটকবাজি কেবল,” সে অস্ফূটে উচ্চারণ করে, “অতিরিক্ত অঞ্জন দত্ত দেখার ফল!সে মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে বাবার নম্বরে ফোন ঘোরায়। এবারে কোন দিকে?” কোনও ভূমিকা ছাড়াই সে জিজ্ঞেস করে। কোনও ভাবান্তর হয় না তার।

 

-“হ্যাঁ হ্যাঁ, চিঠি তো পেয়েছি। তা এই নাটকবাজির অভ্যাসটা কবে বন্ধ হবে তোমার?” রাগত গলায় স্বর্ণেন্দু বাবাকে শাসন করতে থাকে, “আচ্ছা, তিনদিনে ফিরবে সে নাহয় বুঝলাম। কিন্তু পুরুলিয়াতে তো এই সময় ঠাণ্ডা হতে পারে বোধহয়। বন্ধুর নাইট স্কুলে মিডনাইট অবধি পড়াতে গিয়ে গলায় একটা গরম চাদর দিতে অন্তত ভুলে যেও না প্লিজ!সে ফোন কেটে দেয়। কাঁধের ব্যাগ নামিয়ে চেয়ারে এসে বসে। খ্যাপামিতেই তার গোটা জীবন। সে একবার দেওয়ালে টাঙানো মায়ের ছবিটার দিকে তাকায়। ঝোলানো মালাটা শুকিয়ে এসেছে। পালটাতে হবে এ বার।

 

 

 

জাদুঘরের সামনেটায় একলাটি দাঁড়িয়ে থাকে স্যমন্তক। ফুটপাথের দোকানগুলোও বেশিরভাগই বন্ধ। সে কোথাও থেকে জোগাড় করে এক ভাঁড় চা হাতে নেয়। তারপর উপরে আকাশের দিকে তাকায়। বোধহয় তার হারানো স্পটলাইটটাকেই সে ফিরে পেতে, খুঁজে দেখতে চেষ্টা করে একটিবার। তার মাথার উপরে দুশো বছরের অতীত ইতিহাস। ফটফটে সাদা পাথরের মতো নিস্তব্ধতা। তার অনুচ্চারিত প্রশ্নের কোনও জবাব আসে না। সমাজের বুকে এমন প্রডিজিদের কোনও জন্ম নেই। এমন প্রডিজিদের কোনও মৃত্যু হয় না। কেবল বহুসংখ্যাতে শুভানুধ্যায়ী, শ্রদ্ধাশীলেদের ভালোবাসার ত্রিশূল-বিদ্ধ অবস্থায় শূন্যমার্গে স্পটলাইট সেজে তারা ঝুলতে থাকে। অথবা সেই স্পটলাইটের আড়ালে মিলিয়ে যায়।

 

 

 

লাবণ্য বাড়ি ফিরছে। প্রতিদিনের মতো কমপ্লেক্সের গেট পেরতে না পেরতেই হইহই করে ছুটে আসে ছ-সাতজন। সারাদিনের খাটুনির পর এই কচিকাঁচাগুলোকেই তার সবচেয়ে কাছের বলে মনে হয়। নতুন এই কমপ্লেক্সে উঠে আসার পর, গত কয়েক বছরে পুজোর সময় এদেরকেই শিখিয়ে পড়িয়ে নিয়ে লাবণ্যেরা কয়েকজন মিলে নামিয়েছে ভীম-বধ অথবা লক্ষণের শক্তিশেল থেকে কেটেকুটে নেওয়া ছোট ছোট নাট্যাংশের একেকটি অনুষ্ঠান। বয়স অনুযায়ী এই কুচোগুলোকে নিয়েই যতটুকু পারা যায় আর কি। অবশ্য বড়রাও ছিলেন কয়েকজন। কিন্তু বিশেষ করে লাবণ্য দিদিকে দেখতে পেলেই একছুট্টে তার কাছে চলে আসতে কুচোদের কারোর দেরী হয় না। তারপরেই তার হাত ধরে টানাটানি, মারামারি ইত্যাদি শুরু হয়ে যায়। কে আগে দিদিকে খেলতে নিয়ে যাবে, আর কেই বা দিদিকে সবচেয়ে আগে, সবচেয়ে কাছ থেকে জড়িয়ে ধরবে সেই নিয়ে কম্পিটিশন। লাবণ্যের দেরী হয়ে যায় রোজ।

 

কাল হাসপাতাল নেই। তাই ধীরেসুস্থে স্নান সেরে নরম শাড়ি পরে ঘরে আসে লাবণ্য। মা ধূপ জ্বালিয়ে দিয়ে যান। আজ গান করবি তুই?” তিনি মেয়ের পোশাক দেখে একবার জিজ্ঞেস করেন। লাবণ্য ঘরের দরজা ভেজিয়ে দেয়। রবিঠাকুরের ছবিতে আজ একরাশ টগরের ফুল। সে তার দেবতার মুখোমুখি বসে। গান শুরু হয়।

 

এই যাতায়াতে কোনও দরজা থাকে না। এই গানের সুর অনেকদূর ভেসে যেতে থাকে অবলীলায়। 

 

(সমাপ্ত)

  • অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়
  • দ্বিতীয়