প্রজাপতি

সমরেশদা -এই যে আমি -সমরেশদা আমি এদিকে -আরে এই হাঁদা কোনদিকে তাকাচ্ছিস রে - তোর মতো আমার মাথায়ও ছাতা! দেখতে পাচ্ছিস না!  ও রাখুদা! হেব্বি শেয়াল তো তুমি! দেখছ, পিছলে যাচ্ছি! তবু হাসছো! ইচ্ছে করে অন্যমনস্ক থাকা তোমার বার করছি ! সমরেশদাকে দাঁড় করাও বলছি! পাস করে যায় যদি সমরেশদা ...রাখুদা ছাড়ব না তোমায়...

 

 

 

--জলভরা রাস্তায় নাগাড়ে কথা বলে রাখু মুদিকে অস্থির করে তুলল ঈশানী৷ রাখু হাসছিল৷ ঈশানীটা পাগলা আছে৷ আর খুব ডেসপ্যারেট৷ সবাই দেখছে৷ ছেলেটা  পাত্তা দিচ্ছে না৷  তাও চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে মদ্দ ডাকছে পাগলি!  বিপদ বুঝে রাখু নয় বাই আটফুটের দোকানে  সমরেশকে আটকাল৷ হাতে চাও ধরিয়ে দিল৷ পাঁচ টাকার কাগজের কাপ চোখে দেখা যায় না৷ সমরেশের মাথার মতোই সেটা যখন তখন এদিক সেদিক লুকিয়ে পড়ে৷ বিরক্ত মুখে চা গলায় দিল সমরেশ৷ দুটো ছোট ঢোকে ফুটটুস চা শেষ৷

 

  

 

হাঁটু অব্দি প্যান্ট গুটিয়ে দোকানের কাছে চলে এসেছে ঈশানী৷ চামড়ার ব্যাগটা দড়াম করে বেঞ্চে নামিয়ে কলতলায় পা ধুতে গেল৷ একটু আগেই কানু সেখানে ঘুঘনির প্লেট ধুতে গেছে৷ এই রে! আজ আবার ঈশানীর সঙ্গে ঝগড়া বাঁধবে কানুর৷ রোজ টিউশনি থেকে ফেরার পথে একবার করে রাখুর দোকানে ঢুঁ মারে ঈশানী৷ এসেই মুখ হাত ধুতে কলতলায় ছুটবে৷ আর কানু খেপবে৷ কানুর কাজ খুব গোছানো৷ একটা একটা করে প্লেট আগে জলে  ধোবে৷ তারপর আবার সেগুলোকে একটা একটা করে সাবান দিয়ে ধোবে৷ ঠিক এইসময় ঈশানী গিয়ে বাসন বালতি এদিক ওদিক সরিয়ে পা মুখ ধুতে লাগে৷ গরম হলে রুমাল ভিজিয়ে কানের দুপাশে বুলোবে৷ আর কানু চেঁচাবে! আজও চেঁচাল কানু -

 

 

 

রাখুদা আজ কাজ ছাড়ব৷ এসে দেখো ঈশানীর কাণ্ড৷ নোংরা জল মাড়িয়ে এসে সেই পা দিয়ে বাসন সরালো৷ আবার জল মাড়িয়ে বাড়ি ফিরবে৷ তাও বাসন মাজার কলতলায় গু মাখা  পা নাচাচ্ছে! সর ...সর বলছি! বালতি দিয়ে মাথা গুঁড়ো করব তোর! কানুর মুখে জল ছিটিয়ে দিল ঈশানী৷ দু-মুঠো জল নিয়ে এবার ছুটে আসছে সমরেশের দিকে৷ খদ্দেররা হাসছে৷ রাখুর দোকানের খদ্দের সব এলাকার মানুষ৷ ধীরেন ল্যাম্পপোস্টের চারপাশের বাড়িতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সংসার করে৷ আর রোজ ঈশানীর কাণ্ড দেখে মজা মারে৷ সন্ধের এই সময় রাখুর দোকান জমিয়ে রাখে ঈশানী কানু৷ 

 

 

 

 

আজ কিন্তু লাস্ট রাখুদা ..ওকে সাবধান করে দিও৷ শয়তান মেয়ে একটা... বলতে বলতে বাসন মাজায় ফিরল কানু৷ রাখু এক প্লেট ঘুঘনি আর দুটো টোস্ট দিল ঈশানীকে -আগে খা৷ তারপর সমরেশের সঙ্গে কথা বলবি৷ ঘুঘনিতে আজ কিমা পড়েছে৷ মুরগির অবশ্য৷ তবে  গন্ধ লাগবে না৷ বেশি করে  গরম মশলা দিয়েছি৷ আর একটা প্লেট দে রাখুদা -আমি খাব না রে৷ বৌদি আজ চাউমিন করবে৷ না খেলে রেগে লাল৷ তোর কথা মানে তো জেরক্সের দোকান৷ কদ্দুর এগোল -তাড়াতাড়ি বল৷ 

 

 

 

-- বলতে বলতে প্যাকেট থেকে ক্লাসিক  ঠোঁটে নিল সমরেশ৷ ঈশানী ধীরে সুস্থে ঘুঘনিতে পাউরুটি ডোবালো৷ সে জানে সমরেশের এই নির্লিপ্তি বানানো৷ হাজার প্লেট চাউমিন পড়ে থাকলেও দোকানের কথা না শুনে সমরেশ যাবে না৷ দোকানে পঞ্চাশ শতাংশ ভাগ রাখুদার৷ সমরেশ আর ঈশানীর পঁচিশ পঁচিশ৷ সমরেশ খানিকটা লোনের এপ্লাই করে দিয়েছে৷ বাদবাকি সব রাখুদার একাউন্ট থেকে৷ গতর ইশানীর৷ ব্রেইন পুরো সমরেশের৷

 

 

 

-আগে কথা শেষ কর ঈশানী৷ পুষ্প বাড়িওয়ালীর বোনের সঙ্গে কথা ফাইনাল করেছিসঘরটা দেবে কবে থেকে বল তো! -সমরেশ অধৈর্য হচ্ছিল৷ ঈশানীর খাওয়া শেষ৷ রাখুকে টাকা দিল৷ কাল আর আজের৷ রাখুদা তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করে বাড়ি আয়। সকাল থেকে বৃষ্টি৷ শালা কেউ বেরোবে না বাড়ি থেকে৷ পুষ্পর বোন ঘরের চাবি দিয়ে দেবে আজ। দেখে নিবি... রঙ করতে হবে কিনা ..! 

 

 

 

জলে নেমে ঈশানীকে টানল সমরেশ৷ দুজনের বাড়ি ধীরেনের ডান ও বাম কোণে৷ ঈশানীর হাতে জোর জোর চাপ পড়ছে৷ সমরেশের ঠোঁট নেমে এসেছে ঈশানীর কানের লতিতে -একটা কাচের ডিভিশন  করতে হবে ঈশানী৷ রাখুকে  বলবি৷ তুই বললে না করবে না! বিয়ের পর তোর টিউশন আমার জেরক্স... শোধ হয়ে যাবে...

 

 

 

 

মুখ নীচু করে হাঁটছে ঈশানী৷ কাল সকালে উঠেই পার্টি অফিসে গিয়ে মিস্ত্রীর কথা বলতে হবে৷ ধীরেন গোটা সন্ধে আঁধার হয়ে আছে৷ জলে সমরেশের ঝকঝকে হাসিটা দেখা যাচ্ছে না৷

  • ময়ূরী মিত্র
  • দ্বিতীয়