বিলম্বিতে সম  

[]

 

এক পাহাড় ভালোবাসা, আর স্যমন্তক লাবণ্য অস্ফূটে নামটা উচ্চারণ করে স্যমন্তক তাঁর শরীরে একটা শিহরণ খেলে যায় আর কিছু মনে হয় না তাঁর

 

 

সে মাথা নামায় স্পষ্ট চোখে দেখে রোগিণীর অনাবৃত পিঠ সে তখন মনে মনে কল্পনা করে নিতে চেষ্টা করে সমগ্র মেরুদণ্ডের হাড়গুলির চারটি নির্দিষ্ট ভাগ ৭টি সার্ভিকাল, ১২টি থোরাসিক, ৫টি লাম্বার ৫টি ফিউজড স্যাক্রাল ভার্টিব্রা এরই চারপাশে সাজানো চামড়া মাংসের বিভিন্ন স্তর এর ভিতরেই তাকে খুঁজে নিতে হবে লাম্বার লাম্বার -এর মধ্যবর্তী নির্দিষ্ট অঞ্চল ভুল হলে চলবে না

 

 

লাবণ্য হাতে সিরিঞ্জ তুলে নেয় তার হাত কাঁপছে? তার এতদিনকার অপেক্ষার ফল তবু আজকেই? লাবণ্য গুমরে ওঠা বাজে চিন্তাটাকে তাড়াতে চায় প্রথমদিন থেকেই সে সবটুকু ভালোবেসে ডাক্তারি পড়তে এসেছে এমনটা নয় উলটে ডাইসেকশনের প্রথমদিন, সে কথা বরং থাক লাবণ্য সোজা সামনের দিকে তাকায় পাশে পিজিটি ইন্টার্ন স্বর্ণেন্দু বোস চুপচাপ লাবণ্যকে লক্ষ্য করে চলে তাকেও এর আগে কোনওদিন, এমনই কোনও পিজিটি সিনিয়র, ঠিক এভাবেই কায়দা করে প্রথম নিজে হাতে রোগীকে স্পাইনাল দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল ডাঃ স্বর্ণেন্দু বোস সেই উত্তরাধিকার জারি রাখতে চায়

 

 

সূচ ঠিক জায়গাতে বিঁধেছে লাবণ্য এখনও নিশ্চিত নয় স্যমন্তক চারটের সময় আসবে বলেছে এখনও সময় বাকি আছে অনেক

 

 

 

অকৃত্রিম ভালোবাসা দুর্লভ বোধহয় তাকে দুর্বোধ্যও বলা চলে আদতে কখন, কোথায়, ভাবে সেই ভালোবাসার উৎপত্তি ঘটবে, তা কেউই বলতে পারে না আবার কখন তা ভাঙবে, সেও পূর্বাভাসের অতীত এর চেয়েও অনেক বেশি সংখ্যাতে বোধহয় পৃথিবীতে ঘটে যায় একতরফা, unrequited love যে ভালোবাসার বিপরীতে কোনও সদর্থক জবাব আসে না কেবল এক পাহাড়সম আবেগসর্বস্বতায় চাপা পড়ে থেকে যায় এক জীবন

 

 

লাবণ্যও স্যমন্তককে তেমনই প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছিল সেই ভালোবাসার পরতে পরতে সে সাজিয়ে তুলেছিল কাঁথাস্টিচের মোলায়েম শাড়ির মতো সুন্দর, অপাপবিদ্ধ, প্রাচীন, সরলতার সুখ তাই ডাইসেকশনের প্রথমদিন

 

-“আমি পারব না কিছুতেই পারব না,” কাঁদছিল লাবণ্য বিরক্ত হচ্ছিল স্যমন্তক

 

স্যমন্তক বিরক্ত হচ্ছিল, কারণ বিরক্ত হওয়াটাই তার পক্ষে স্বাভাবিক স্যমন্তকেরা আদতে সমাজের নীল-চক্ষু সন্তান, অথবা দ্য ব্লু-আইড প্রডিগ্যাল সনস, হু আর টু বি রেভারড এ্যাণ্ড রেসপেক্টেড অল দ্য টাইমস এর বিপরীতে অন্য কোনও প্রশ্ন অবান্তর সম্মান শ্রদ্ধার সঙ্গেই স্যমন্তকদের সম্ভাষণ করা উচিত তার পাশে কিনা লাবণ্য অথবা অন্য কেউ? নাহ, মেলানো যাচ্ছে না একেবারেই

 

 

 

সকালের মতো সুন্দর এক দিন লাবণ্য যে সত্যিই কোনওদিন ডাক্তারি পরীক্ষায় সুযোগ পেয়ে যাবে, সেটা সে নিজেও ভাবতে পারেনি বরং বছর তিনেক পিছিয়ে যাই তখন স্যমন্তকের জয়েন্ট-প্রাপ্তিই ছিল সকলের কাছে গতানুগতিক, সহজবোধ্য সংবাদ যদিও তাদের বয়সের ব্যবধান মাত্র এক বছর, তবুও পাড়াররত্নস্বরূপ স্যমন্তক জয়েন্ট দিয়ে যখন যাদবপুরে ভর্তি হতে গেল, তুলনায় অনেকটাইব্যাকবেঞ্চারলাবণ্যের সঙ্গে তাঁর আলাপ-ঘোরাফেরার বিষয়টা নিয়েও বিস্তর কানাঘুষো শোনা গিয়েছিল এরপর হায়ার সেকেণ্ডারি উতরোলেও লাবণ্যের কপালে শেষ অবধি প্রথম বছরে জয়েন্টের শিকে ছিঁড়ল না কাজেই নাম-কা-ওয়াস্তে অনার্স কোর্স, এবং তারপর আবারও চেষ্টা শুরু জয়েন্ট পরীক্ষার

 

 

 

তেমন এক সময়েও কীভাবে যে লাবণ্য স্যমন্তককে আদিঅকৃত্রিম ভঙ্গিমায় ভালোবেসে চলেছিল, এবং স্যমন্তকও যে ঠিক কোন অদ্ভুৎ, করুণার্দ্র, স্নেহসুন্দর মনোভাব থেকেই সেইঅবাক উপদ্রবকে প্রশ্রয় যুগিয়ে এসেছিল, লাবণ্য আজও সদুত্তর পায়নি তার কেবলঅবাক উপদ্রবশব্দটা স্যমন্তকই কোনওদিন বলেছিল বোধহয় সে বলেছিল, “ভালোবাসা আদতে এক অবাক উপদ্রব তার হাত থেকে রেহাই নেই কখনও রেহাই চাইতে নেই

 

কবি-সাহিত্যিক না হলেও ওয়ান-লাইনারে অন্তত পোক্ত ছিল স্যমন্তক শুধু জীবনকে সে দেখত একটা সিঁড়ি হিসেবে যা দিয়ে কেবলই উপরের দিকে উঠতে হয় কখনও নীচের দিকে তাকাতে নেই

 

তবু নীচে তাকাত স্যমন্তক ওই যে বলে এলাম, তার ভালোবাসায় লাবণ্যের প্রতি আকর্ষণ অথবা সমানুভূতির চেয়েও করুণার ভাবটাই ছিল বেশি তাই আশেপাশের মানুষেরা যাই বলুক না কেন লাবণ্যের প্রতি করুণায় তাঁর ঘাটতি ছিল না আশেপাশের মানুষ তাকে ভাবত ভালোবাসা লাবণ্যও ভাবত তাই কেরিয়ারের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে লাবণ্য যখন উপরের দিকে তাকাত, অনেক উঁচুতে আরও উপরে উঠতে থাকা স্যমন্তক-বিন্দুটাই তাকে তাগিদ যোগাত অনুপ্রেরণা নয় এভাবেই সূক্ষ মনস্তাত্ত্বিকতায় করুণা কখন অশোভন অধিকারবোধে পরিণত হয় তাগিদ পরিণত হয় প্রতিযোগিতায় কেবল সবসময় সেই উপলব্ধি প্রকাশ্যে আসে না বিপরীতে, অবচেতনে গড়ে ওঠাফিল গুডভালোবাসার অভিনয়টুকুকেই কেবল সে অল্পেতে অল্পেতে দুর্বল করে তোলে বর্ষায় পুরনো কাঠের ফেঁপে ওঠার মতো মচমচ শব্দ হয়

 

অথচ লাবণ্য ডাক্তারিতে ভর্তি হয়ে গেল স্যমন্তকও তেমন কিছু ভাবল না সেও খুশি হল বোধহয় একদিন তারা কফি খেতে গেল দুইজনে যাদবপুরে স্যমন্তকের তখন থার্ড ইয়ার পেরিয়েছে স্নাতকোত্তরের প্রস্তুতির জন্য প্রথম দফার গেট পরীক্ষাও সে দিয়ে ফেলেছে কিন্তু তখন সে বোধহয় স্নাতক-পরবর্তীতেই সরাসরি দেশের বাইরে কোথাও পড়তে যেতে চায় তাই রেকমেণ্ডেশন জোগাড়ের মরসুম কোথাও কি একটা দূরত্ব বাড়ছে? টের পায় না কেউ

 

দেহকে আমি মন্দির বলি না প্রাতিষ্ঠানিক কোনও ধর্মের প্রতি আমার আনুগত্য নেই আমার আনুগত্য একমাত্র আমার বিষয় বিজ্ঞানের প্রতি যদিও সেই আনুগত্যকে আমি তোমাদের উপর চাপাতে চাইব না কিন্তু তোমাদের সামনে যিনি শায়িত রয়েছেন আমি কেবল আশা করব তোমরা সেই শারীরিক অস্তিত্বটির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে শবদেহের প্রতি চিকিৎসক-সমাজের এই শ্রদ্ধার একান্ত প্রয়োজন আর সেই প্রয়োজন থেকেই তৈরি হয়েছিল ক্যাডাভেরিক শপথের ধারণা,” ডাঃ শামসুল আলম উচ্চারণ করেন

 

ওটি থেকে বেরিয়ে ফার্মেসির দিকে হাঁটতে হাঁটতে কথাগুলো লাবণ্যের মনে পড়ছিল ক্যাডাভেরিক ওথ সাধারণ মানুষ হয়তো হিপোক্র্যাটিক ওথের বিষয়টুকুই জানে কেবল সে নিজেও তাই জানত সেকারণেই ডাইসেকশনের প্রথম দিন, ক্যাডাভেরিক ওথের বিষয়টা তাকে অবাক করে দিয়েছিল প্রত্যেক শবদেহই প্রত্যেক হবু চিকিৎসকের কাছে প্রথম শিক্ষক-স্বরূপ সজীবতায় সেই শবদেহের অস্তিত্ববহনকারী মানুষটি একদিন জীবিত ছিলেন আরও পাঁচজন পরিচিতের কাছে তাঁর একটা গুরুত্ব ছিল নিজস্ব পেশা, পরিচিতি ছিল বন্ধন ছিল মৃত্যুর পরবর্তীতে মানবঅস্তিত্ববিহীন দেহমাত্রে পরিণত হলেও, আজ তিনি শিক্ষক তাঁর দেহের প্রতিটি প্রকোষ্ঠ, প্রতিটি অন্তর্বর্তী কুঠুরি, প্রতিটি ভাগ, বিন্যাস, অভ্যন্তরএকেকটি করে নতুন দরজা খুলে দেবে শিক্ষার্থীর কাছে ডাঃ আলম উচ্চারণ করেন, “নাও উই মে টাচ দ্য ক্যাডাভার প্রোসিড!” লাবণ্যের আর কিছু মনে পড়ে না কি ভাগ্যিস স্যমন্তকের সাথে সেদিনই তার দেখা করার কথা ছিল তার মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে সেই প্রথম প্রথমদিন, সত্যিই সে ক্যাডাভার ছুঁতে পেরেছিল কিনা, মনে পড়ে না তার

 

 

 

মৃতদেহই প্রথম শিক্ষক পরের দিকে এই বোধটুকু লাবণ্যকে অনেকবার ভাবিয়েছে স্যমন্তকেরপ্রেমটুকু টপকিয়ে অন্তঃসলিলা করুণার ভাবটুকুকে, কিছুটা তাচ্ছিল্যের ভাবটুকুকে প্রথম খুঁজে পাওয়া, সেও তো বোধকরি সেই ক্যাডাভার-ঘটিত দিনটাকে দিয়েই অস্বস্তিতে কাঁপতে কাঁপতে লাবণ্য যখন নিজেকে খানিক স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করছিল, বিরক্ত হচ্ছিল স্যমন্তক দুম করে বলে ফেলেছিল, “ইউ ইওরসেলফ হ্যাভ চোজেন দিস পাথ লাবণ্য, নাউ ইউ অনলি হ্যাভ টু কোপ উইথ ইট নয়তো অনার্সটাই তো কন্টিনিউ করতে পারতিস বেসরকারিতে মেডিকেল পার্স্যু করা মানে একটা বিরাট খরচেরও বিষয় রয়েছে এখন সেই পথে ছুটতে গেলে, ইউ হ্যাভ টু এ্যাকসেপ্ট দ্যাট, এ্যাণ্ড এ্যাকসেপ্ট এভরিথিং!” কথাগুলো লাবণ্য অনেক পরে বিশ্লেষণ করেছিল মানুষের অবচেতন বড় অন্ধকার, অচেনা জায়গা মানুষ নিজেই তার খবর রাখে না

 

 

 

কিন্তু আত্মপক্ষ সমর্থনের ক্ষেত্রে স্যমন্তকেরও কি কিছু বলার ছিল সেদিন? সমাজের চোখে কারাই বা এদের ব্লু-আইড বানিয়ে তোলে? এরা নিজেরাই? নাকি সমাজ? বারবার তিনবার, সেদিনই স্যমন্তকের আবেদন বাতিল হয়ে যাওয়ার চিঠি এসেছিল ইউরোপের কোনও এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তরেই সাগর পাড়ি দেওয়ার স্যমন্তকের যে প্রবল বাসনা, ক্রমশই তাতে বড় ফাটল ধরছিল তবুও স্যমন্তক বুক বেঁধে যুঝে যাচ্ছিল স্কুলজীবনের শুরুর দিনগুলো থেকেই তার মাথার উপরে জ্বলতে থাকা যে হাজার ওয়াটের অদৃশ্য স্পটলাইট এতদিন তাকে উদ্ভাসিত করে এসেছে, আজ কোনও ভাবেই তাকে হারিয়ে ফেলা চলে না স্পটলাইটের আড়ালেই যে বড্ড শীত কেবল স্যমন্তকেরাই সেই শীতের কামড়কে অনুভব করে আর পাঁচজনে তার খবর রাখে না জীবনের সমস্তপ্রাপ্তিকেই বোধহয় স্যমন্তকেরাসাফল্য -এর শ্রেণীতে দেখতে চায়

 

স্বর্ণেন্দু বোস পিজিটি সিনিয়র স্বর্ণেন্দুর সঙ্গে নিজের ইন্টার্নশিপের সময়েই লাবণ্যের প্রথম মুখোমুখি পরিচয় ততদিনে বেশ কিছু বছর পেরিয়েছে আইআইটি খড়গপুর থেকে স্নাতকোত্তরের পাঠ শেষ করে অবশেষে স্যমন্তক পাড়ি জমিয়েছে আমেরিকায় ঊষর আরিজোনা মরুভূমির কোথাও তার নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগের মাধ্যম বলতে ভিডিও-কল যোগাযোগের নির্দিষ্ট কোনও সময় নেই একেকদিনে মাঝরাত পেরিয়ে আরও অন্ধকার সেদিনই লাবণ্যের প্রথম হাতে চ্যানেল করার দিন

 

অবাক হয়ে স্যমন্তক বলেছিল, “ভারী অদ্ভুৎ কিন্তু তুই!”

-“কেন?” স্ক্রিনের কোণাকার, ছোট্ট চৌকোনা জায়গাটা থেকেই লাবণ্যের প্রশ্ন ভেসে আসে স্যমন্তক অল্প হেসে তাকায়

 

ডাক্তারি পড়ুয়ারা কিন্তু এর চেয়ে অনেক বেশি উৎসাহিত হয় অন্য অনেক সাধারণ এক্সপিরিয়েন্সকে নিয়েই এমন কিছু ঘটনা যেগুলো তারা রোজকার ডে-টু-ডে লাইফের ঘটনার সঙ্গে রিলেট করিয়ে দিতে পারে অথচ যেগুলো এতদিন তাদের কাছে অধরা-অচেনা ছিল নোন ফ্যাক্টস, ইয়েট সো আনচার্টেড যেমন ধরা যাক সি-সেকশন ডেলিভারি, এ্যাণ্ড দ্য ব্রিঙ্গিং অব নিউ লাইফ!” বোঝাতে চেষ্টা করে স্যমন্তক

 

লাবণ্য পালটা অবাক হয় কিন্তু পরক্ষণেই সে বুঝতে পারে স্যমন্তক ঠিক কোন বিষয়ে ইঙ্গিত করতে চায়

 

সে বলে, “আমি প্রথম যেদিন সি-সেকশনে এ্যাসিস্ট করেছিলাম, বা প্রথম দেখেছিলামসেদিনও তো আমার একইরকম আনন্দ হয়েছিল একইরকমে গভীর এক অনুভূতি হয়েছিল চোখে জলও এসেছিল সে কথাও তো বলেছিলাম

 

কিন্তু সেটা তো গতানুগতিক সকলের ভালো লাগা,” লাবণ্য একটু থামে বোধহয় তার কথাগুলোকে ভিতরে ভিতরে গুছিয়ে নিতে চায়, “এই যে একেকটা দিন আমার বিশেষ করে মনে থাকে, হয়তো সেই বিশেষ দিনগুলোতেই আমি আমার আমিত্বটাকে নতুন করে চিনতে পাই মানুষ নতুন কিছু শেখে যখন, তখন সে প্রতিদিন, প্রতিবার একেকটা করে নতুন দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে চায় আর সেই দরজাগুলো একেকটা করে খুলে যাওয়ার সময়েই তার সবচেয়ে বেশি আনন্দের উদ্ভাসলাবণ্যের মুখটা বোধহয় ঝলমল করে ওঠে কয়েক ইঞ্চির মোবাইলে, আরও ছোট্ট চৌখুপ্পির বন্ধনে সঠিক প্রকাশ বোঝা যায় না তার

 

স্যমন্তক মুখ ভ্যাটকায় নিজের মোবাইলে, স্যমন্তককে অনেকটা বড় করে রাখা পর্দাতে, তার মুখের সেই ভাব বুঝতে লাবণ্যের এতটুকুও অসুবিধে হয় নাআত্মকেন্দ্রিক’? লাবণ্য ঝট করে মনে আসা শব্দটাকে আমল দেয় না সে এখনও তাঁর কাঁথাস্টিচের ভালোবাসায় শান্তি খুঁজতে চায়

 

-“তা আজ কোন দরজা খুলল?” নেহাতই যেন দায়সারা গোছের প্রশ্ন

 

লাবণ্য তবুও হেসে তাকায়সংবহনতন্ত্র মানুষের দেহের যে ব্লাড সার্কুলেশন সিস্টেম স্যমন্তক, আজ প্রথম আমার হাতে-কলমে সেই রাজ্যে প্রবেশ ঘটল আমি যদি লিখতে পারতাম,” মনে মনেই তার যেন একটা শ্বাস পড়ে, “যদিও ডিপি হয়ে গিয়েছিল প্রথমটায়

 

-“ডিপি বলতে?” স্যমন্তক আবারও প্রশ্ন করে, “ডিপি তো ফেসবুকের হয় জানতাম, মানুষের সার্কুলেশন সিস্টেমেরও হয়?” এই স্যমন্তককে লাবণ্য চিনতে পারে না বড় ক্লান্ত বোধ হয়

 

ডিপি বলতে ডাবল পাংচার,” তবুও ডিপির বিষয়টা সহজ করে বোঝাতে গিয়ে লাবণ্যের চোখদুটো আবারও ঝলমল করে ওঠে, “ভেইনটাকে যখন খুঁজে পেলাম, একটা নির্দিষ্ট এ্যাঙ্গলে তো নিডলটাকে ঢোকাতে হয় ঠিক কিনা? নয়তো ভেইনের একদিক দিয়ে ঢুকে অন্যদিক দিয়ে সূচ ফুঁড়ে বেরিয়ে যাবে এই ব্যাপারটাকেই ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় ডিপি বা, ডাবল পাংচার,” স্যমন্তকের চোখদুটোতে কি এতটুকুও উৎসাহ কোথাও? লাবণ্য খুব করে খুঁজতে চেষ্টা করে খুঁজে পায় না

 

-“তা ডাবল পাংচার হল কেন? পট করে ফুটিয়েছিলি নিশ্চয়ই?” স্যমন্তক বরং হাসছে

-“সিভিয়রলি ডিহাইড্রেটেড পেশেন্ট ছিল,” ক্লান্ত গলায় এবারে বলে লাবণ্য, “ভেইন কুঁচকে একদম পাতলা হয়ে বসেছিল যাই হোক, স্বর্ণেন্দুদাই সামলে দিল তখন

-“স্বর্ণেন্দু বলতে?”

-“স্বর্ণেন্দুদা, ডাঃ স্বর্ণেন্দু বোস সিনিয়র আমাদের,” কিছু না ভেবেই লাবণ্য জবাব দেয়

 

স্যমন্তক একটু থেমে আবারও জিজ্ঞেস করে, “স্বর্ণেন্দু বোস, বাড়ি নাকতলায়?”

  • অমর্ত্য বন্দ্যোপাধ্যায়