'স্মৃতির শহরে' কালের কথক--

নিজের শহরকে ভালোবাসেন না, এমন মানুষ বোধহয় খুঁজে পাওয়া দায়। কিন্তু নিজের শহরের স্মৃতি সত্ত্বা ভবিষৎকে অন্তরে ধারণ করে তার নির্যাস, কাল থেকে কালান্তরে সঞ্চারিত করে যাওয়া মানুষ খুব কম আছেন। স্মৃতি কীভাবে ভবিষৎতের সোপান নির্মাণ করে, বর্তমানের কুলকুন্ডলিনীকে অতিক্রম করে, সেই সোপান বেয়ে কীভাবে আগামী প্রজন্মও পৌঁছে যেতে পারে তার স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে- সেই সত্যানুসন্ধান দেওয়াই ছিল শামসুর রাহমানের যাবতীয় সৃষ্টির মূল সুর। সেই সুর কাব্যের ভাষাতেও কবি যেভাবে পরিবেশন করে গিয়েছেন গোটা জীবন ধরে, গদ্যের ভাষাতেও তার কোনও অন্যথা দেখতে পাওয়া যায়নি।

 

 

 

'স্মৃতির শহরে' আমরা ভেসে বেড়াই বাচ্চুর হাত ধরে। মাহুতটুলির বাচ্চু, আলিজান ব্যাপারীর স্বপ্ন কুহকিনী -এর ভিতর দিয়ে পাঠককে পৌঁছে দেন বিশ শতকের প্রথমভাগ শেষ হওয়ার সময়কালের ঢাকা মহানগরীতে। আজকের সাজানো গোছানো আধুনিক শহর ঢাকা তখনও গড়ে ওঠেনি। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রাজধানী হিশেবে আজ যে ঢাকা মহানগরীকে আমরা দেখি, সে নগরী গড়ে ওঠবার আগে কেমন ছিল জনবহুল পুরনো ঢাকা? এই 'জনবহুল' শব্দটা অবশ্য সেকালের জনবিন্যাসের নিরিখেই আমাদের ভাবতে হবে। জনবিন্যাস সময়ের গতিকে কখনও চিত্রিত করে কালের এক আকীর্ণ আলোকে। আবার কখনও সময়ের গতি মানবসভ্যতার ইতিহাসের দিনলিপিতে খোদাই করে নোতুন ভাষ্য। সেই ভাষ্যের গতিপথে মানুষ তার চলবার পথকে মসৃণ করে।স্মৃতির খেয়াতে ভেসে মানুষের জীবনের চলবার পথকে মসৃণ করতে শামসুর রাহমান সময়ের আকীর্ণতার ভিতরে খুঁজেছেন জীবনের কালপ্রবাহকে। সেই প্রবাহের স্রোতে আমরা বুঝতে পারি, কেবল স্মৃতির ঢাকা নয়, সময়ের কালপ্রবাহ কীভাবে মানুষের মননলোকের চেতনার আরোহিনীতে একটা হিল্লোল তুলতে পারে। সেই হিল্লোলের স্রোতে শিশু বাচ্চুর মননলোক কীভাবে হয়ে ওঠে আমার-আপনার-আমাদেরও মননলোক। অর্থাৎ, অতীতকে ভাবীকালের মননলোকে উপস্থাপিত করা- এই যে কর্মকান্ড, এটা কিন্তু কখনও কোনও মামুলি কাজ নয়। কোনও মামুলি লোক এটা করতে পারেন না। মামুলি স্রষ্ঠা, তাঁর সৃষ্টির ভান্ডার উজার করে দিলেও কখনওই সম্ভবপর হবে না অতীতের জীবাশ্মকে ভবিষৎতের বটবৃক্ষের সুনিবিড় ছায়াতে রূপান্তরিত করা।

 

 

অনেকের 'না করাটা' কে যাঁরা 'করাতে' রূপান্তরিত করতে পারেন, তাঁরাই হলেন 'কালজয়ী স্রষ্ঠা'। শামসুর রাহমান ছিলেন, তেমনই এক কালজয়ী স্রষ্ঠা। শিল্পীও। কথাকে তিনি আঁকতেন শব্দের রঙে। একজন চিত্রশিল্পী যেমন তুলিকে রাঙিয়ে নেন নানা ধরণের রঙে, ঠিক তেমনভাবেই শামসুর রাহমান শব্দের ভিয়ানে রাঙিয়ে নিতে অভ্যস্থ ছিলেন তাঁর সৃষ্টিকে। সেই শব্দের রঙে রঙিন তুলি যখন কাগজের বুকে শব্দের আঁচর কেটেছে শামসুর রাহমানের হাত ধরে, তখন সেই ছবি সময়ে স্থাপিত হয়েও খুব সহজেই অতিক্রম করেছে সময়ের গন্ডীকে।

               

 

আজ যখন ঢাকা শহরকে ঘিরে নানা ধরণের গবেষণা হচ্ছে, নিত্যনতুন তথ্য আমাদের সামনে উঠে আসছে, পুরনো অনেক ধারণারও আদল বদলে যাচ্ছে- এমন একটা সময়ে বেশ অনেকটা বছর আগে লেখা শামসুর রাহমানের, 'স্মৃতির শহর' , যদি আমরা এইমুহূর্তে আবার পড়ি সেই বই, আমাদের কাছে কখনও পুরনো হবে না। বদলে যাওয়া নগর সভ্যতার হাজারও নিত্যনতুন সুযোগ, বিশেষ করে প্রযুক্তি যখন আমাদের আরাম আয়েশের একটা উন্মুক্ত দুনিয়া খুলে দিয়েছে, তখন কবির এই স্মৃতিচারণমূলক গদ্য, আমাদের সমাজমনষ্কতার যেন এক অন্য ভুবনের বাসিন্দা করে দেবে।

             

 

 

যে ভুবনে বায়োলজিকালি আমরা কখনও বিচরণ করতে পারিনি, সেই ভুবনে আমাদের পৌঁছে দেওয়ার যেন টাইম মেশিন শামসুর রাহমানের, 'স্মৃতির শহর' নামক গদ্যসম্ভার। কবির শৈশব- কৈশোর কখন যে আমাদের সকলের শৈশব-কৈশোরের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে- সেটাও যেন আমরা ঠিক মতো মালুম করে উঠতে পারব না। কবি যখন স্মৃতির খেয়া বাইতে শুরু করেছেন তাঁর ফেলে আসা শৈশবের, 'কাঁকর বিছানো পথে' তখন আমাদের প্রথমেই মনে হয়; কবির শৈশব কি কাঁকর বিছানো পথে ছিল? আসলে স্বপ্ন আর বাস্তব, এই দুইয়ের অদ্ভুত সন্মিলন শামসুর রাহমান তাঁর জীবনের প্রতিটি পর্বে করেছেন। তাঁর সৃষ্টির সম্পূর্ণ আকাশ এই স্বপ্ন আর বাস্তবে একটা অদ্ভুত জাদু খেলার মধ্যে যেন সব সময় গেরস্থালি পাতিয়ে দিয়েছে।

               

 

 

স্মৃতিকথা পড়তে পড়তে কখনও আমাদের মনে হবে, আক্ষরিক অর্থে কাঁকর বিছানো পথ নয়, সেই কাঁকরকে দলে একটা মসৃণ পথ তৈরি করে নেওয়ার জন্য যে কবির আকুতি, সময়ের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করে দিয়ে পথ চলার যে একটা প্রশান্তি, এটাই যেন স্মৃতির জাদু বাস্তবতায় শামসুর রাহমানের শৈশব-কৈশোরের সময়কালকে আকীর্ণ করার সঙ্গে সঙ্গে, আমাদের সকলের শৈশব-কৈশোর কালকে যেন আকীর্ণ করে ফেলে। কবি যেখানে লিখছেন; 'সূর্য নিভু নিভু, কাঁকর বিছানো পথে হাঁটি কোনওমতে পা টেনে টেনে' -সেটা অচিরেই হয়ে ওঠে একটা কবিতা। এই কবিতার ছন্দবদ্ধ জীবনের মধ্যে দিয়ে আমরা দেখতে থাকি, পথের প্রতিবন্ধকতাকে কীভাবে পা টেনে টেনে আমরা হেলায় অস্বীকার করে, একটা নতুনত্বের সন্ধানে এগিয়ে চলি।

 

 

 

এই যে চরৈবতি  মন্ত্র, এই মন্ত্র যেন শামসুর রাহমানকে কাল থেকে কালোত্তরের পথে স্থাপিত করেছে এক ঋষি গল্প মহাপুরুষ হিসেবে। যাঁর সৃষ্টির ভেতর দিয়ে দেখতে পাওয়া যায় সময়ের মানচিত্র। যাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে দেখতে পাওয়া যায়, বাতাসের গতিবেগকে। যাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে দেখতে পাওয়া যায়, পাওয়া না পাওয়ার ছন্দকে। কিন্তু সেই ছন্দ কোথায় এসে যেন একটা অপরিপূর্ণের  ভান্ডারকে পরিপূর্ণ করে আমাদের মনকে, হৃদয়কে, সার্বিক পরিবেশকে, এক অদ্ভুত প্রশান্তির জগতে এনে উপস্থাপিত করে।

 

 

কল্পনা আমরা করে গিয়েছি চিরকাল। কিন্তু সেই করে যাওয়াই সার হয়েছে। সেই জগতে প্রবেশ করতে আমরা পারিনি। কবি যেন আমাদের প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছেন সেই অচিনপুরে। যেখানে দুর্বার শান্তির আবেশের মধ্যে দিয়ে এক অনিকেত পথপরিক্রমায় আমরা কখনও ক্লান্ত হব না, ভ্রান্ত হব না।

 

 

 

চলতি পথের উপর অনেক কিছুতে চোখবুলানো  ছিল শামসুর রাহমানের কাছে এক মহা খুশির ব্যাপার। পুরনো ঢাকার স্মৃতিকথনে সেই চলতি পথের উপর কবির  চোখবুলানোর  টিপ ছাপ দেখতে দেখতে মনে পড়ে যায়সময়কে, মানুষকে, সমস্ত ধরনের প্রেক্ষিতকে নিরীক্ষণের জন্য একটা অদ্ভুত চোখ ছিল শামসুর রাহমানের। চোখের দৃষ্টিতে সমসাময়িকতার অবস্থানকে বুঝে নেওয়ার এই যে ক্ষমতা, আজকের প্রজন্মের প্রযুক্তি নির্ভর ভাষায় যাকে বলা যায়, 'স্ক্যান' করে নেওয়া, সেটা শামসুর রাহমানের ভেতরে যেভাবে আত্মস্থ হয়েছে এবং সেই আত্মস্থভাবের পরিস্ফুটন ঘটেছে তাঁর সৃষ্টিতে, তা সার্বিকভাবে সমাজবিজ্ঞানকে একটা বড় ধরনের পরিপুষ্টতার দিকে ধাবিত করেছে।

 

 

 

এখানে কিন্তু কবি শামসুর রাহমানের কাব্যকে ধাবিত করার কথাই শুধুমাত্র বলা হল না। তাঁর স্বল্প লিখিত গদ্যকেই ধাবিত করার কথা বলা হল না। সামগ্রিকভাবে সমাজবিজ্ঞানকে ধাবিত করার কথাই বলা হল। কারণ, শামসুর রাহমান ছিলেন সেই মাপের একজন স্রষ্টা যিনি তাঁর সামগ্রিক সৃষ্টিকে কোনও একটা গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে রেখে যাননি। শামসুর  রাহমানকে কেবলমাত্র বাংলা সাহিত্যের আগ্রহী পাঠকদের আগ্রহ নিবারণের বিষয় বলে মনে হবে না। তাঁকে কখনও ইতিহাসবিভাগের ছাত্রদের ইতিহাসের কাল নির্ণয়ের একজন নির্ণায়ক বলে মনে হবে না। সার্বিকভাবে সমাজবিজ্ঞানের প্রতিটি স্তরকে শামসুর, তাঁর সৃষ্টির বিভিন্ন ধারা, উপ-ধারার মধ্যে যেভাবে পরিস্ফুট করতে পেরেছেন তার নিরিখে, তাঁর কবি-সাহিত্যিক ইত্যাদি সামগ্রিক সত্তার উর্ধ্বে উঠে, তাঁকে একজন মহান মানবপ্রকৃতিবেত্তা (হিউম্যানিস্ট) হিসেবে অভিহিত করা যায়।

               

 

 

সমাজ বিজ্ঞানের এই চোখ নিয়ে দৃষ্টিকে পরিচালিত করবার ক্ষমতা সকলের থাকে না। শামসুর রাহমানের সমকালে এমন ক্ষমতা সব কবির  ছিল না। কিছু কিছু কবির ছিল। সেই যে জীবনানন্দ বলেছিলেন; সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি- সেটা মূরত ছিল শামসুরের সৃষ্টির শেষ দিন পর্যন্ত। সেই রকমভাবেই বলতে হয়, শামসুরের সমকালে কিছু কিছু স্রষ্টা, সৃষ্টিকে শামসুরের মতো এমন কালজয়ী একটা অবস্থানে দাঁড় করিয়ে যেতে পেরেছেন, সকলে পারেননি। শামসুরের সেই পারাটা যেন বারবার ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয় এই স্মৃতির শহরে উপমার ভিতর দিয়ে। যখন তিনি ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমীর কথা বলছেন, ভালবাসি আমার শহরকে। যেখানে আমি জন্মেছি- এই শব্দের ভেতর দিয়ে আলিজান বেপারী থেকে মহরমের মিছিলের সেই ধ্বনি, 'এক নাড়া দো নাড়া  বোলো বোলো ভেস্তা',  স্কুলের ছাত্রদের পানীয়জল খাওয়ার ব্যবস্থার মধ্যে যে ভিন্নতাযা অতি শৈশবেই বাচ্চুর হৃদয়ের তৈরি করেছিল একটা ক্ষত। আর যে ক্ষত থেকেই তাঁর প্রতিজ্ঞা ছিলভাঙব বিভাজনের প্রাচীর।

           

 

 এসব যেন আমাদের নিয়ে চলে যায় কোনও স্বপ্নলোকের আঙিনায়। আসলে যে প্রজন্ম ব্যক্তি শামসুরের নিবিড় ছায়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে, তাঁদেরকে বোঝানোর  উপায় নেই যে, কবি হিসেবে যেমন বড় ছিলেন তিনি, তেমনটাই  বড় একজন মানুষ ছিলেন শামসুর রাহমান। যাঁর মধ্যে কখনও কোনওরকম ব্যক্তিবিদ্বেষ একবারের জন্যেও কাজ করেনি। নিজের দেশের স্বার্থে তিনি দেশবিরোধী শক্তিকে চিরদিন ঘৃণা করে এসেছেন। আবার সেই মানুষটাই কিন্তু যখন দেশের মধ্যে হিন্দি বা উর্দুভাষী মুসলমানদের ঘিরে পূর্ব পাকিস্তানের আমলে নানা ধরনের অসুয়া তৈরি হয়েছেতখন তাঁদের প্রতি তাঁর স্নেহময় কবিতার অক্ষর খোদাই করতে কার্পণ্য করেননি।

 

 

 

বদরুদ্দিন উমর, যিনি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকেই স্বীকার করেন না, সেই মানুষটাকেও ঘাতক দালালদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সঙ্গে একমঞ্চে উপস্থিত করে, উমরের মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের যে ভয়াবহ অপরাধ, তা যেন কনফেস করবার একটা সুযোগ করে দিয়েছিলেন শামসুর রাহমান। চরম সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী, পাকিস্তানপন্থী কবি আল মাহমুদকে, তার চেতনার জন্য ঘৃণা করলেও, তার কাব্যসত্তাকে, কবি হিসেবে তার উপস্থিতিকে, শামসুর রাহমান কখনও অস্বীকার করেননি।শামসুর রহমানের এই যে শান্ত ,ঋজু অথচ দৃঢ় অবস্থান, এটির জন্যই তিনি বাঙালির ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। কখনও কোনও সামাজিক অন্যায়, রাজনৈতিক ব্যাভিচার দেখে, তা নিয়ে চুপ করে থাকা শামসুর রাহমানের পক্ষে সম্ভবপর হয়নি। গান্ডবে জ্যা  রোপন করলে, তা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে বিদ্ধ হবে, যে বিদ্ধতার পরিমাণে তাঁর নিজের ক্ষতি হতে পারে। এইসব লাভ-ক্ষতির বিচার করে শামসুর রাহমান কখনও নিজের কলমকে পরিচালিত করেননি। তাই বাংলাদেশে একসময় খালেদা জিয়ার সরকার শামসুর রাহমানের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীতার অভিযোগ এনেছিল ঘাতক দালাল গোলাম আজমের বিচারের দাবি করায়। যে অভিযোগের মালা গলায় পড়েই জীবনের সীমানা পাড় করেছিলেন শহিদ জননী জাহানারা ইমাম। কিন্তু বহু মানুষের মতোই, শামসুর রাহমানের কাছে মানুষের স্বার্থই ছিল প্রথম এবং প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয়।

 

 

 

এই জায়গায় তিনি বঙ্গজননী সুফিয়া কামাল, জাহানারা ইমাম, কবীর  চৌধুরী, কলিম শারাফি, দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, অনুপম সেন প্রমুখের সঙ্গে এক পঙতিতে উচ্চারিত হওয়া একটি নাম। যে মানুষটি কখনও নিজের কোনও ব্যক্তিগত দেনাপাওনার হিসাবকে সামনে রেখে তাঁর জীবনধারা বা কলমকে পরিচালিত করেননি, তাঁর সেই দ্যর্থহীন জীবন পরিচালনার অভ্রান্ত টিপসাপ এই 'স্মৃতির শহর' গ্রন্থখানি। কলকাতা মহানগরীর বুকে ঢাকাকে কেন্দ্র করে আলাপ আলোচনা খুব কম হয়। বুদ্ধদেব বসু, অর্থনীতিবিদ অশোক মিত্র প্রমুখ  ঢাকার সন্তানেরা রক্ত মাংসের শরীরে বিদায় নেওয়ার পর, ঢাকা শহরকে ঘিরে নস্টালজিয়ায় ভোগা মানুষ বোধহয় কলকাতা শহরে কমে যাচ্ছে।

             

 

 

কলকাতা শহরে ঢাকাকে ঘিরে চর্চা না হলেও, ঢাকা মহানগরীকে কিন্তু কলকাতা শহরকে ঘিরে চর্চা হয়। সেই চর্চায় কলকাতা মহানগরীর নানা ধারা-উপধারা আলোচিত হয়। সে পথে এপারের বাঙালি খুব একটা হাঁটতে বোধহয় এখনও শেখেনি। সেই পথ তৈরি করে দেওয়ার ক্ষেত্রে এপার বাংলা থেকে কবির  এই বইটি প্রকাশিত হওয়া একটা বিশেষ উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এপার বাংলায় একটা, 'বামন গেল ঘর, তো লাঙ্গল তুলে ধর' -এমন প্রবণতা আছে। শামসুর রাহমান যতদিন জীবিত ছিলেন, শারীরিকভাবে সক্ষম ছিলেন, নানা সভা সমিতি ইত্যাদিতে এবার বাংলার মানুষ তাঁকে আমন্ত্রণ জানাতেন। তিনি অত্যন্ত আনন্দিত মনে এপার বাংলায় আসতেন। কিন্তু তাঁর নশ্বরজীবন অবশিত  হওয়ার পর, এপার বাংলায় শামসুর রাহমানকে ঘিরে চর্চার জায়গাটা কেমন যেন হারিয়ে গিয়েছে। জীবিত থাকাকালীন যে সমস্ত কবি সাহিত্যিকদের কাছে আড্ডার উদ্দেশ্যে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল, সেইসব মানুষদের কাছেও আর শামসুর রাহমানকে ঘিরে বিশেষ একটা সাড়া পরবর্তীকালে আমরা পাইনি। 

 

 

 

শামসুর রহমান কি তাহলে কবি সাহিত্যিকদের কাছে কেবলমাত্র নানা ধরনের আতিথ্য  সহযোগে বাংলাদেশে যাওয়ার একটা চাবিকাঠি কেবলমাত্র ছিলেন? বিষ্ণু দে -র ভাষা ধার করে নিয়ে বলতে হয়, শামসুর রাহমান কি এপার বাংলায় একটা বড় অংশের শাসকভজনা করা (যখন যিনি শাসক থাকেন) অংশের, বুদ্ধি বিক্রি করা মানুষদের কাছে কেবলমাত্র একটা উপলক্ষ ছিলেন

 

 

স্মৃতির শহর

শামসুর রাহমান

জাতীয় যাদুঘর 

ঢাকা

দাম-৮০ টাকা(বাংলাদেশ) 

 

  • গৌতম রায়