আত্মবিনাশ?ভুল সিদান্তের ফল। তাছাড়া আর কী ভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে পরিচালক উৎপলেন্দুর দুঃসহ জীবন।অন্তত শেষ দশ বছর।হয়তো বা একটু বেশিও হতে পারে।পাগলামো তো প্রতিভার অঙ্গ।সেই প্রতিভার পাগলামির কৃতকর্মই কি এই করুন সমাপ্তি।ইতিহাস হয়তো ব্যাখ্যা করবে প্রতিভার পাগলামিতে খাদটা কোথায় ছিল?উৎপলেন্দু কতটা আত্মবিনাশী, কতটা চক্রান্তের ভাগীদার।এসব প্রস্ন হয়তো একদিন উঠবে।তার থেকে তো আর মুঝে দেওয়া যাবে না উৎপলেন্দুর চলচ্চিত্র ক্ষমতার ছেদবিন্দুকে।এই ছেদবিন্দু একদিনে নির্মাণ হয়নি।সময়ের ব্যবধান ক্রমে ক্রমে তাকে দূরে নিয়ে গেছে চলচ্চিত্রের সীমান্তরেমাখে মাঝে থেকে।মাঝে মাঝে হঠাৎ হঠাৎ আপ্রান এক চেষ্টায় তীর ছুঁতে চেয়েছেন উৎপলেন্দু।কিন্তু সেখানেও কোনও ভুল ছিল বা প্রতিভার বিচ্ছুরনকে আড়াল করেছিল সেই প্রতিভার পাগপ্লামি।ফিরে পাননি তিনি তীর।ক্রমে আরও আরও তিনি হয়ে উঠেছেন আউটসাইডার।নিজের মুদ্রাদোষে নিজেই একাকী।
অথচও উত্তাল সত্তরে সে এক অন্য উৎপলেন্দু।বিপ্লব-স্বপ্নের যৌব্য-রাজ্যের যেন এক রাজা।দুরন্তভাবে প্রতশ্রুতিময় সামাজিক বিল্পবী।দীপ্ত চোখে সমাজবদলের স্বপ্ন।স্বর্ণ মিত্র ছদ্মনামে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক দিন বদলের গল্প।তার লেখনিতে নারীর গর্ভে জন্ম নিচ্ছে বিপ্লবের লিফলেট।অথবা বিকলাঙ্গ সময়ের দেব শিশু।উৎপলেন্দু নামটা তখন সরাসরি রাজনৈতিক।পরবর্তী সময়ে এই সব গল্পই তো আবার ভিশুয়াল মাধ্যমে।তলখম মৃণাল সেনের ‘ভুবন সোম’ ভারতীয় সিনেমায় নবতরঙ্গ এনেছেত্রা তার প্রভাবেই বাঙ্গলা সিনেমায় উঠে আসছে তুর্কী তরুন চলচ্চিত্র পরিচালক।এদের মিধ্যে পঞ্চ-পান্ডব ছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, গৌতম ঘোষ, বিপ্লব রায়চৌধুরী,নব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায় এবং উৎপলেন্দু চক্রবর্তী।কল্কাতায় তখন চলচ্চিত্র চর্চার একমাত্র কেন্দ্র ‘চিত্রবাণী’।চলচ্চিত্র পাঠ-এর ইচ্ছে আমার সেই স্কুল জীবন থেকেই।সেই সুত্রেই এই ‘চিত্রবাণী’র সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি।শিক্ষক হিসেবে পাই চলচ্চিত্র-তাত্বিকতার প্রানপুরুষ ফাদার গাস্টন রুবেজকে।সেই সময় কোর্স-কো-অডিনেটর পাই দীপক মজুমদারকে।আরেক আত্মবিনাশী পুরুষ।যাই হোক ফাদারের সৌজন্যে দীপকদার ব্যবস্থাপনায় ‘চিত্রবানী’-তে জড় হয়েছিল বাংলা চলচ্চিত্রের পঞ্চপান্ডবেরা।মুখোমুখি কথোপকথনে বোঝা গেল নবতরঙ্গের অংশীদার হলেও এই পঞ্চপান্ডব চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে স্ব স্ব ভাবনার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ভাবনা পোষন করেন।উৎপলেন্দু এদের মধ্যে আক্রমানাত্বক।বাংলায় কমুনিস্ট শাসন আসার সঙ্গে সঙ্গে ‘মুক্তি চাই’ নামে এক তথ্য চিত্র করেছেন।অবশ্য এই ছবির প্রস্তুতিপর্ব নিয়েছেন তিন কঙ্গগ্রেস সময়েই।‘মুক্তি চাই’ ছবির কেন্দ্রিয় বিষয় নকশাল সময়ে গেপ্তার করা সমস্ত রাজবন্দির মুক্তি।ছবিটি তখন আর শুধু চলচ্চিত্র নয় বাংলার যৌব-রাজের রাজনৈতিক অস্ত্র।সেই থেকে আলাপ।বন্ধুত্ব হতেও দেরি হয়নি।সেই সময় থাকতেন পাইকপাড়ার রানী হর্ষমুখিরোডে।ছোট দেড় কামরার স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে নিয়ে সুখী গৃহকোন।এক স্কুলে শিক্ষকতা করেন তখন তিনি।তবে আর বাশিদিন শিক্ষকতা করেননি।বিপ্লবের অংশ হিসেবে চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্ন চোখে ভর করেছে।শিক্ষকতা ছেড়ে সরাসরি চলচ্চিত্র নির্মাতার কথা ভাবলেন।প্রথম ফিচার ছবি ‘ময়না তদ’ন্ত’। বাংলা সিনেমায় আশীর শুরুতেই নিয়ে এল রাজনৈতিক হাওয়া।‘ময়নাতদন্ত’ ছবিতেই উৎপলেন্দু প্রমান করলেন সিনেমা তার কাছে বিনোদন নয় বরং অস্ত্র।যারা বাংলা সিনেমায় নবতরঙ্গ আনেন তারা কেউই অরাজনৈতিক ছিলেন না কিন্তু এদের মধ্যে উৎপলেন্দু ছিলেন এদের মধ্যে সবচেয়ে সোচ্চার।অন্তত প্রথম দিককার বেশকটা ছবিতে তো বটেই।‘চোখ’ ছবির জন্যে জাতীয় পুরস্কার পেলেন উৎপলেন্দু। শুধু তাই নয় এই ছবিই তাকে রাজনীতি সচেতন অন্য ধারার পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্টা এনে দিল সারা ভারতে।‘চোখ’-এর গল্পটার দিকে একনজর দেখা যাকঃ যদুনাথের (ওমপুরি) নেতৃত্বেশ্রমিকরাহরতালকরে।কারখানারমালিকজেঠিয়া’র (শ্যামানন্দজালান) ভাইএইহরতালভাঙারচেষ্টাকরে।উভয়পক্ষেরসংঘর্ষেজেঠিয়া’রভাইমারাযায়।যদুনাথেরফাঁসিরহুকুমহয়।ফাঁসিরআগেযদুনাথতারচোখদানকরেযায়কোনওঅন্ধশ্রমিকেরউদ্দেশ্যে।
এদিকেহাসপাতালসূত্রেখবরপেয়েজেঠিয়াতারঅন্ধছেলেরদৃষ্টিফেরানোরজন্য, ওইচোখদু’টিজোগাড়করতে, সুপারেরসঙ্গেযোগাযোগকরেন।পরেতিনিচক্ষুদানসম্পর্কিতনকলকাগজপত্রহাসপাতালেজমাদেন।কিন্তুকর্তব্যরতচিকিৎসক (অনিলচট্টোপাধ্যায়) তারকৌশলধরেফেলে।জেঠিয়াযখনজানতেপারেনযেসেইচোখেরআসলদাতাযদুনাথ, তখনতিনিচোখদু’টিকেনষ্টকরতেউদ্যোগীহন।
গল্পের অন্তস্রোতে রয়েছে এক শ্রেনী সংগ্রামের বয়ান।‘চোখ’কে ঘিরে এই শ্রেণীসংগ্রাম আরও তীব্র হয়ে ওথে ভিশুয়াল মধ্যামে।‘চোখ’-কে ঘিরেই এক রাজনৈতিক স্টেটমেন্ট নির্মাণ করেন পরিচালক উৎপলেন্দু চক্রবর্তী।যা বাংলা চলচ্চিত্রে রাজনৈতিক সিনেমার ধারা তোইরি হয়।তবে এটা ঠিক সেই ধারার কোনও উত্তরসুরীর সন্ধান মেলেনি এখনও।১৯৮০-তে ‘ময়না তদন্ত’, ১৯৮৩-তে ‘চোখ’।ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই এই দুই ছবি।তৃতীয় ছবি ১৯৮৫-তে ‘দেবশিশু’।রাজনৈতিক কারনেই বেশকিছুদিন পুরুলিয়ায় ছিলেন তিনি।‘দেবশিশু’-কে তিনি নিজের চোখে দেখেছেন।ব্যক্তিগত এক আলাপচারিতায় উৎপলেন্দু এ কথা জানান।তিনি রাজনীতি সুত্রে চারু মজুমদারের সঙ্গে সংযোগ ছিল।সেখান থেকেই তিনি অর্জন করেছেন বাম-ভাবনার সূত্রগুলো।‘চোখ’ এবং ‘দেবশিশু’ নির্মাণের মাহে তি সত্যজিৎ রায়ের ছবির সংগীত নিয়ে একটি উল্লেখযোগ্য ডকুমেন্টারি তৈরি করেন।নানা সময়ে আরও বেশকটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেন।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘দেবব্রত বিস্বাস’ এবং লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবন-কর্ম নিয়ে ‘সুনীল সাগরে’।টেলিভিশনের জন্যে বেশ কিছু সিরিয়াল ও ছবি করেছেন।‘দেবশিশু’র পর থেকেই ক্রমে হারিয়ে যেতে থাকেন উৎপলেন্দু।অথচও আগের স্ত্রী পুত্র ছেড়ে নতুন করে বিয়ে করলেন শতরুপা সান্যালকে।সেখানেও দুই কন্যা।ইতিমধ্যে নির্মিত হয়েছে ‘ফাঁসি’ এবং ছন্দনীর।আত্মবিনাসের কাল শুরু।শতরুপা দুই কন্যা নিয়ে উৎপলেন্দুকে ছেড়ে আসতে বাধ্য হন শতরূপা।এই পর্বে ‘ছোট ঋত্বিক’ হিসেবে চিহিত হয়েছেন।শেষ ফিচার ছবি ‘প্রসব’-১৯৯৪তে।সেই ছবি ব্যবসায়িকভাবে মুক্তি পায়নি.১৯৯৪ থেলে ১৯২৪, এই ৩০ বছর কোনও ফিচার ছবি নেই তার।শুধু ক্রমে ক্রমে আত্মবিনাশের ইতিহাস।নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে হেঁটে যাওয়া।কিন্তু দেখা হলেই বলত,এবার আমি ছবি করব।চিত্রনাট্য তৈরি করে ফেলেছি প্রায়।শোনা যায় যখন শেষের দিকে তিনি শয্যাশায়ী তখন তিনি ডিমনেশিয়াইয় মাঝে ঝে বলে উঠতেন ট্রলিটা ঠিক করে ধর।ট্রলি কেন কাঁপছে।তা৬র এই স্বনির্মিত মৃত্যু পথের শেষ হল ২০অগস্ট ২০২৪।জন্ম ১৯৪৮-এ।