অধুনা ভারত বাংলাদেশের জনগণের মধ্যেকার সম্পর্ক যে তিক্ততার, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার নানাবিধ ঐতিহাসিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় কারণ রয়েছে।- বাংলা ভাগ হবার ফলে সেকালে দুই বাংলায় দাঙ্গা হয়েছে ১৯৫০ সালে ১৯৬৪ ১৯৬৫ সালে।, এর মধ্যেও অজস্র সংখ্যালঘু নিপীড়ন হয়েছেদু'দেশ থেকে দেশান্তরিত হয়েছেন বহু মানুষ। ফলে তিক্ততার একটি প্রেক্ষাপট ছিলই।
বাংলাদেশের অভ্যুদয় নিয়ে দেশের ১৯৪০-এর দশকের ইতিহাস-এর পাঠ জাতীয় আবেগের কারণে ভিন্ন। ভারতে দ্বিজাতি তত্ত্ব একটি ঘৃণ্য মতাদর্শ আর বাংলাদেশে দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর কোনও বিদ্বেষ নেই। তাঁদের মূল ধারার ঐতিহাসিকদের বক্তব্য, লাহোর সিদ্ধান্তে ১৯৪০ সালে দু'টি সার্বভৌম মুসলমান রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছিল কিন্তু একটি মুসলিম রাষ্ট্র গঠিত হওয়ায় তাঁরা পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশে পরিণত হয়েছিলেন। সেই কারণে তাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চান।
দু'দেশের জনগণের মধ্যে ভাব হয়েছে ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ সালে। তখন পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে। দুই বাংলার মধ্যে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান বাড়ে। পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শক্তির শাসনের উপর দুই পাকিস্তানে পুঞ্জীভূত হয় অসন্তোষ। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের দুই অংশে গণবিক্ষোভ হয়। মার্কিন মদতপুষ্ট সেনানায়ক আয়ুব খানের পতনের পর ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন করেন। তাতে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছিল। পূর্ব পাকিস্তানে ১৬৭ আসনে জয়লাভ করে ৩০০ সদস্য বিশিষ্ট পাকিস্তানের জাতীয় মহাসভায় আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ পশ্চিম পাকিস্তানে কোনও আসন পায়নি। পশ্চিম পাকিস্তানে মূল দল হিসাবে নির্বাচিত হয় পিপল'স পার্টি। জনাব জুলফিকার( আলি ভুট্টো তাঁদের নেতা নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ চাইছিল পাকিস্তান একটি সংযুক্ত রাষ্ট্রে ফেডারেশন) পরিণত হোক আর পাকিস্তানের সামরিক কর্ত্তারা এবং ভুট্টো এর বিরোধী' ছিল। শেখ মুজিবুর জাতীয় মহাসভার সংসদের অধিবেশনের দাবিতে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন করেন। কিন্তু সামরিক হুনতা সে কথা না শুনে তাদের উপর দমন পীড়নের রাস্তা নেন। সেই সময় যে পূর্ব পাকিস্তানে যে বিদ্রোহ হয় তার নামইমুক্তিযুদ্ধ'। ২৫ মার্চ রাত্রে শেখ মুজিব গ্রেফতার বরণ করেন এবং তিনি পাকিস্তানের কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন । সেই সময় ঠান্ডা যুদ্ধর কারণে পাকিস্তান আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নিক্সন এবং বিদেশ সচিব কিসিঞ্জারের নির্দেশে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির প্রয়াস করেন। চীন এই কূটনৈতিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কিসিঞ্জারের দৌত্যে রাষ্ট্রসংঘের সদস্য পদ লাভ করে ১ অক্টোবর ১৯৭১ সালে। চীন একই সময়ে রাষ্ট্র সংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হয়। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে একটি অক্ষশক্তি গড়ে ওঠে, যার মধ্যে দিয়ে ১৯৭৩ সালের মার্চ মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনাম থেকে সৈন্য অপসারণ করে। সেই প্রেক্ষাপটে ১৯৭১ সালের অগাস্ট মাসে ভারত সোভিয়েট চুক্তি সম্পাদিত হয় সোভিয়েট ইউনিয়নের উদ্যোগে। তার ফলে আন্তর্জাতিক ঠান্ডা যুদ্ধে যে নতুন মাত্রা যুক্ত হয় তার ফসল বাংলাদেশ।
ভারত সরকার বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের সূচনার খবরের উপর নজর রাখলেও তখন পুরো ঘটনাবলীর মোড় কোন দিকে নেবে তা বুঝতে সক্ষম হননি। তাঁদের উদ্বেগ ছিল পশ্চিমবঙ্গ ত্রিপুরা-সহ উত্তর পূর্ব পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গ তখন ছিল ভারতের একটি বিপন্ন রাজ্য। ১৯৭১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে সেখানে নির্বাচনে মার্কসবাদীরা জিতেছেন যদিও তাঁদের সরকার গঠন করতে দেওয়া হয়নি। পশ্চিমবঙ্গে তখন কেন্দ্রীয় শাসন চলছে এবং দেওয়ালে লেখা থাকত, 'পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্রের উপনিবেশে পরিণত হতে দেব না'।( ১৯৬৭ থেকে নকশালপন্থী কৃষি বিপ্লব বিকশিত হয়েছে। তার ফলে কেন্দ্রীয় বাহিনী ইস্টার্ন রাইফেলস সক্রিয় হয়েছে নকশাল দমনে। এই সময় পূর্ব পাকিস্তানে বিদ্রোহ হয়েছে। যদি নকশালরা তাদের সঙ্গে যোগ দেন বা সিপিআইএম) যদি তাদের সমর্থন করেন তাহলে ভারতের উভয় সংকট। কিন্তু বাংলাদেশের ছাত্র নেতারা এবং আওয়ামী লীগ সেই দ্বন্দ্বের সমাধান প্রথম থেকেই করেন। তাঁদের যে পতাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিবাস ইকবাল হলে আঁকা হয় এবং শিব নারায়ণ দাস যে পতাকা অঙ্কন করেন, তাতে বাংলাদেশের সোনালী রঙের মানচিত্র ছিল শুধু পূর্ববাংলার।
মুক্তিযুদ্ধর সময় ভারতে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে এবং ত্রিপুরাতে যে আবেগের বিকাশ দেখা যায় তা অভূতপূর্ব। প্রচুর শরণার্থীদের খাবার যোগান দরিদ্র ভারতবাসীরা। অনেকেই উৎসাহিত ছিলেন স্বাধীন বাংলার হয়ে যুদ্ধে যাওয়ার। একটি বাঙালি ভাতৃত্ববোধ গড়ে ওঠে। ভারত সরকার এতে খানিকটা উদ্বিগ্ন ছিল। ভারতের ইন্দিরা গান্ধীর একান্ত সচিব পরমেশ্বর নারায়ণ হাকসারের ব্যক্তিগত ডায়েরি পড়লে বোঝা যায় সে কথা। কিন্তু সেই ছিল ভারত বাংলার প্রেমের রূপকথা। প্রত্যেক পশ্চিমবাংলার মধ্যবিত্ত বাঙালি মুজিবনগর সরকারের বেতার সূচি অনুষ্ঠান শুনতেন, আবেগে ভাসতেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের ভাষার অবমাননার কথা শুনে,বাঙালি হত্যার প্রতিশোধে উদ্দীপ্ত হতেন। এর আগে এবং পরে যাঁরা বলতেন 'আমি বাঙালি ও মুসলমান' তাঁরাও সেই সময় নিজের ঘরের দরজা খুলে দিয়েছিলেন পূর্ব বাংলার থেকে আগত মুসলমান বাঙালির অতিথি চর্চায়। ভারতে এবং পশ্চিমবাংলায় বাংলাদেশের অভ্যুদয় প্রসঙ্গে এটা একটা ইতিহাসের দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে গিয়েছে। ভারতে মনে করা হয় আমরা ওদের বিপদের দিনে দাঁড়িয়েছি এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করে দিয়েছে। ওদের সরকার কলকাতায় আশ্রিত ছিল। োর আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ থাকবে।
আসলে কিন্তু মুক্তি যুদ্ধ বহু পর্য্যায়ে হয়েছে। একদল মুক্তিযোদ্ধা যাঁরা ছিলেন মাওবাদী সিরাজ সিকদারের দলের লোক তাঁরা ভারতের ছায়া পর্যন্ত মাড়াননি। একই কথা বলা চলে হায়দার আকবার খান রনো এবং কাজী জাফরদের বাহিনী সম্পর্কে। তাঁরা মুক্তি যুদ্ধে বাংলাদেশের শিবপুরে নিজস্ব ঘাঁটি খুলেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল ভারতের মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টির। সিপিবির নিজস্ব বাহিনী ছিল। আবার আওয়ামী পন্থী ছাত্র নেতারা কলকাতায় সেনাপতি উর্বানের ছত্রছায়ায় বসে ছায়া যুদ্ধ করেছেন কিন্তু তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নেন নি। এঁরাই পরে জাসদ এবং বেশিরভাগই রক্ষী বাহিনীর সদস্য হন। আর বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সেনাপতি ছিলেন খালেদ মুসারাফ , জিয়া-উর-রহমান, শফিউল্লাহ প্রমুখ। তাঁরা সেনাপতি ওসমানি-র অধীনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে লড়াই করেছিলেন। আর এই বিরাট কর্মকান্ডের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাজউদ্দিন আহমদ, কলকাতায় থিয়েটার রোডে তাঁর অফিস বসে। কিন্তু বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি ক্ষোভ তখন থেকেই ছিল। তাঁরা যুদ্ধ করবেন আর নেতারা গৌরবের আলোয় আলোকিত হবেন, তাঁরা কেউ-কেউ তা পছন্দ করেননি। ২৭ মার্চ কোলাঘাট থেকে সেনাপতি জিয়া নিজেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বলে ঘোষণা করে ফেলেছিলেন। তবে ভারত যুদ্ধে যাওয়ার ফলে এবং যুদ্ধে সাহায্য করার ফলে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছিল সন্দেহাতীত ভাবে। তবে মুক্তি যুদ্ধের যে চিত্র আমরা দেখি বা যে রূপকথা শুনি তা অনেকাংশে সত্য হলেও, পুরোপুরি সত্যি নয়।
মুক্তিযুদ্ধর পর থেকেই শুরু হয় ভারত-বাংলা দ্বন্দ্ব। বাঙালি অফিসার মেজর জলিল বন্দি হন এই বলে, যে ভারতীয় সেনারা কেন পাকিস্তানী সৈন্যদের আত্মসমর্পনের অস্ত্র পাবেন তাই নিয়ে। শেখ মুজিব দেশে ফেরেন এবং তাঁর পুনঃপুনঃ অনুরোধে ভারতীয় সেনা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে আসে। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে আওয়াজ ওঠে ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের তিন দিক জুড়ে ভারত। ভারত বাদ দিলে মায়ানমারের সঙ্গে তার সীমানা একান্ত সীমিত। ফলে নদীর জলের প্রবাহ , বাণিজ্য , খাদ্যবস্তুর আদান প্রদান , মানুষের চলাচল সবের মধ্যে ভারতের ছায়া থাকে আর তার ফলে ভারতের উপর রাগ থাকে অনেক মানুষের।' পদ্মা নদীতে কেন বাঁধ দেওয়া হল, তাই নিয়ে বাংলাদেশের জননেতা মৌলানা ভাসানী বিপুল মানুষজন নিয়ে ফারাক্কা লং মার্চ করলেন ১৯৭৬ সালে। আবার মুজিব ১৯৭৪ সালে যখন লাহোর ইসলামিক সামিটে যান তখন ভারত তার বিরোধী ছিল। শেখ মুজিব নাকি বলেছিলেন, শেখ মুজিব কারো সাজা হুকোয় তামুক খায় না।'
কিন্তু শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর বাংলাদেশে নতুন রাজনীতির অভিমুখ তৈরী হল। প্রথমত বাংলা ভাষা নিয়ে পুরোনো সাংস্কৃতিক প্রশ্ন যা ১৯৪০-এর দশকে পূর্ব পাকিস্তান রেনেসাঁস সোসাইটির সদস্যরা তুলেছিলেন যে পূর্ব বাংলার সংস্কৃতির অভিঘাত বঙ্কিম, শরৎ, রবীন্দ্রনাথের ধারা থেকে মুক্ত করে আনতে হবে তা আবার সচল হয়। আর দুই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের পুনর্মূল্যন করতে হবে এরকম দাবি ওঠে। এর মধ্যে আশির দশকে বাংলাদেশ থেকে অভিবাসনকারীদের উত্তরপূর্ব ভারত থেকে হঠাতে হবে বলে ভারতে আন্দোলন হয়ে গিয়েছে। যদিও উত্তরপূর্বের মানুষজন বাংলাদেশি বলতে হিন্দু মুসলমান উভয়পক্ষকে বোঝেন এবং ত্রিপুরাকে তাঁরা উদাহরণ হিসাবে দেখান যে, কী ভাবে বাংলাদেশি আসায় তাদের জনগোষ্ঠীর ভারসাম্য বদলে গিয়েছে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ আসামের উলফা-এর নেতারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। আর ভারত আশ্রয় দেয় শান্তিবাহিনীর নেতাদের যাঁরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছন্নতা চায়।
১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ আসার পরে সম্পর্কের উন্নতি হয়। কিন্তু এর মধ্যে ভারতে বিভিন্ন নদীতে বাঁধ দেওয়া নিয়ে সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে। নথিবিহীন অভিভাষণকারীদেরদের নিয়ে দুই রাষ্ট্রের মতপার্থক্য রয়েছে। তারপর ১৯৯৩ সাল থেকে ভারত বাংলাদেশ সীমানায় কাঁটা তারের বেড়া দিয়েছে। তারপরে শূন্য সহিষ্ণুতা ঘোষণা করে ভারত সীমানায়গুলি চালাতে পারে অভিবাসনকারীদের উপরে। বাংলাদেশীরা দাবি করেছেন, প্রায় ১০০০ জন বাংলাদেশী মারা গিয়েছেন সীমানা পার হতে গিয়ে ১৯৯৩ থেকে ২০১২-এর মধ্যে। ফেলানী বলে এক পনেরো বছরের কিশোরী মারা গিয়েছে ৭ জানুয়ারী ২০১১ সালে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও কাঁটাতারের সীমানা আছে মেক্সিকোর সঙ্গে, তাতে নথিবিহীন অভিবাসনকারীরা পার হলে তাদের পুলিশ গ্রেফতার করে বিশেষ কারাগারে রাখেন এবং তাদের খাবার, জল পোশাক ইত্যাদির ব্যবস্থা করেন। ভারতের গুলি মতো চলে না। মৃত্যুদণ্ড দিতে গেলে যে কোনও দেশে একটি বিশাল প্রক্রিয়া লাগে, কিন্তু শূন্য সহিষ্ণুতা মৃত্যুদণ্ড বাংলাদেশীরা মনে করেন অমানবিক।
২০১৪ থেকে ভারতে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার ক্ষমতায় এসেছেন। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশিদের উইপোকার সঙ্গে তুলনা করেছেন প্রকাশ্য জনসভায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-সহ অনেকেই বলেছেন ভারতে ২০ কোটি বাংলাদেশী রয়েছেন, যা ভারতের মুসলমানদের সমান সংখ্যক। বাংলাদেশেও এই সময়ে আওয়ামী লীগকে ভারতের দালাল বলে অভিহিত করা হয়েছে। ভারতীয় দালালদের নির্মূল করার কথা বলে হয়েছে। মূল বিরোধী দল বিনপির সভায় এবং প্রচার মিছিলে বলা হয়েছে, 'ভারত যার মামা বাড়ি, বাংলা ছাড়ো তাড়াতাড়ি।'
উভয় দেশেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে। ভারতে দাঙ্গা হয়েছে, বাড়ি ঘর দর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং বাংলাদেশে সম্পত্তি লুঠ এবং দাঙ্গার খবর পাওয়া গিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্রমশ চীনের উপর আর্থিক ভাবে নির্ভরশীল হয়েছে, বড় বড় প্রজেক্ট করতে এবং অস্ত্র ক্রয় করতে। আমেরিকার সরকার তাতে সঙ্কিত হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা কথা বলেছেন, আর ভারত তার প্রতিবাদ করেছে। আর বাংলাদেশের জনগণ মনে করেছেন আওয়ামী লীগের অস্বচ্ছ নির্বাচন করে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা ভারতীয়দের কাজ। ইতিমধ্যে তিস্তার জলবন্টন নিয়ে কোনও চুক্তি হয়নি। বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে ট্রানসিট চুক্তি করলেও ভারত শিলিগুড়ি দিয়ে নেপালের থেকে বা বাংলাদেশের থেকে নেপালের মধ্যে যানবাহনের চলাচলের উপর কোনো ট্রানসিট চুক্তি করেনি। আর এই মুহূর্তে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারগুলি চালনার ফলে ভারতের প্রতি তিক্ততা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে জনসংখ্যার এক বিরাট জনগোষ্ঠী আওয়ামী লীগকে ভারতের দালাল বলে মনে করে। বাংলাদেশের মূল ইসলামপন্থী দল জামাত-এ-ইসলামী ভারতের বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রচার করেন যদিও তাঁদের শক্তি সীমিত। বিনপি ভারত বিরোধী বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী অবস্থান প্রথম থেকেই গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগের মধ্যেও ভারতের প্রতি অসন্তুষ্ট শক্তি আছে। ভারতে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি সমর্থন রয়েছে। ফলে দু-দেশের তিক্ততা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।