একাদশ অধ্যায়
সন্ধ্যার দিকে মেয়ে স্বাতীকে ঘন্টাখানেক পড়িয়ে নিয়ে সুজাতা বসলেন মনোময়ের সাথে। সুজাতার অনেক কিছু জিজ্ঞাস্য রয়েছে। শুরু করলেন জয়ানন্দ মজুমদারকে নিয়ে। গত ক’দিন ভবানন্দ আর লক্ষ্মীকান্তকে নিয়ে অনেক আলোচনা সুজাতা শুনেছেন। কিন্তু বাঁশবেড়িয়ার রাজাদের কথা জানা হয় নি। এমনিতে বাঁশবেড়িয়ার বিখ্যাত মন্দিরের কথা অনেকেই জানে। কিন্তু রাজবংশ সম্পর্কে লোকজনের ধারণা কম। তার উপরে আবার শুনল যে শেওড়াফুলির রাজারা বাঁশবেড়িয়ারই অংশ।
মনোময় বলতে শুরু করলেন, ‘বাঁশবেড়িয়ার রাজপরিবারের আদি পুরুষ দেবদত্ত, আদিশূরের সময়ে কনৌজ থেকে এসেছিলেন’।
‘বাংলার মধ্যযুগের সব ইতিহাসই কি কনৌজ থেকে আগতদের নিয়ে শুরু হয় নাকি ?’
সুজাতার করা প্রশ্নটি মনোময়কে বেশ ভাবিয়ে তুলল। কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে বললেন, ‘তুমি অসাধারণ একটা কথা বলে ফেললে, সুজাতা। কনৌজ থেকে পঞ্চব্রাহ্মণের সাথে পঞ্চকায়স্থ এসেছিলেন। এর মধ্যে ব্রাহ্মণ বেদগর্ভ হলেন সাবর্ণ অর্থাৎ লক্ষ্মীকান্তের পূর্বপুরুষ। ভারতচন্দ্র যে বিবরণ দিয়েছেন তাতে নদীয়ার রাজবংশ, অর্থাৎ আমাদের আলোচনার ভবানন্দ মজুমদার হলেন ভট্টনারায়ণের বংশধর। ইনিও সেই পঞ্চব্রাহ্মণের একজন। ব্রাহ্মণদের সাথে যে কায়স্থরা এসেছিলেন তারা দত্ত, গুহ ইত্যাদি পদবী বহন করেছিলেন। এঁদেরই একজন দেবদত্ত হলেন বাঁশবেড়িয়ার রাজবংশের আদিপুরুষ’।
সুজাতা মাথা নেড়ে বললেন, ‘বেশ’।
মনোময় হেসে বললেন, ‘আর একটি তথ্য না বললে আমার কথা শেষ হবে না’।
‘বল তাহলে’।
‘আমাদের প্রতাপাদিত্যের পুর্বপুরুষ বিরাট গুহ হলেন কনৌজ থেকে আগত পঞ্চ কায়স্থদের একজন’।
‘ডি লা গ্রান্ডি ! এ তো দারুণ ব্যাপার’।
‘ফলে তুমি যে প্রসঙ্গটা তুললে তার সারবত্তা আছে বৈকি’।
‘বুঝলাম। তবে একটা কথা বল, আদিশূরের সময়ের আগেকার বাঙ্গালিরা সেই সময়ে কি অকর্মণ্য হয়ে পড়েছিল নাকি ?’
মনোময় কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে বললেন, ‘না না তারাও ছিলেন। বিষ্ণুপুরের মল্ল রাজারা দীর্ঘসময় ধরে রাজত্ব ধরে রেখেছিলেন। পালেরা দীর্ঘসময় ধরে বিশাল রাজত্ব চালিয়েছেন। তবে মানবসমাজে একটা বিষয় দেখা যায়, বহিরাগতদের মধ্যে নতুন কিছু করার যেমন তাগিদ থাকে পুরাতন বাসিন্দাদের মধ্যে সেই তাগিদের অভাব হয়ে যায়। দীর্ঘদিন একইরকমভাবে জীবন চলতে থাকলে একটা কেমন জানি স্থিতিজাড্যতা চলে আসে। ইউরোপীয়ানরা আমেরিকা, এশিয়ায় এসে নতুন সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। দেশভাগের পরে পূর্ববঙ্গের বাঙ্গালেরা পশ্চিমবঙ্গে এসে আধিপত্য গড়ে তুলেছিল। একইরকমভাবে কনৌজ থেকে আগত লোকেরা বাংলায় বেশ প্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠেছিল। এক একটা ঢেউ এমন আসে ইতিহাসে। সেনেরাও বহিরাগত বলা হয়। আমার এই পর্বে যেটা ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে সেটা হল ব্রাহ্মণেরা তাঁদের জন্য নির্ধারিত কাজ ছেড়ে ক্ষত্রিয়ের মতন আচরণ করছেন। প্রচুর ব্রাহ্মণ এই সময়ে জমিদার হয়ে উঠলেন’।
মনোময়ের দীর্ঘ বক্তব্য মন দিয়েই শুনছিলেন সুজাতা। শেষ হলে বললেন, ‘তোমার কথায় যুক্তি আছে। যাহোক, বাঁশবেড়িয়ার কথা বল’।
‘দেবদত্ত কনৌজ থেকে এসে মুর্শিদাবাদে বাস শুরু করেছিলেন। জায়গার নাম তাঁর কারণে হয়ে যায় ‘দত্তবাটি’। লক্ষ্মণসেনের সময়ে কবিদত্ত নামে একজনের নাম পাওয়া যায়। ইনি অষ্টমপুরুষ, লক্ষ্মণসেনের কাছ থেকে ‘খান’ উপাধি পেয়েছিলেন। কবিদত্তের পরে এক বংশধর দ্বারিকানাথকে দেখা যাচ্ছে বর্দ্ধমানের পাটুলি অঞ্চলের জমিদার হয়েছেন। এই সময়ে আকবর দিল্লির বাদশা। দ্বারিকানাথের কাকা বিষ্ণু বা বিশু দিনাজপুরের রাজবংশ গড়ে তুলেছিলেন। দ্বারিকানাথের চতুর্থ উত্তরপুরুষ হলেন জয়ানন্দ। ইনি জাহাঙ্গীরের সময়ে ‘মজুমদার’ উপাধি পেলেন’।
‘আমাদের তিন মজুমদারই এই উপাধি জাহাঙ্গীরের আমলেই পেয়েছিলেন ?’
‘একদম ঠিক বলেছ। সবই মানসিংহের মাধ্যমে। এই তিনজনই প্রতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে মানসিংহকে সাহায্য করে পুরষ্কৃত হন। তবে পার্থক্য একটাই জয়ানন্দের জমিদারী আগে থেকেই ছিল। বাকি দুজনের জমিদারী সেই সময়ে শুরু হল’।
‘বাঁশবেড়িয়া ?’, সুজাতা প্রশন করলেন।
‘আহা ব্যস্ত হয়ো না। জয়ানন্দ পুরষ্কৃত হয়ে কেবল উপাধি নয়, নতুন কিছু এলাকা জমিদারীতে পেলেন। সপ্তগ্রাম এবং চারপাশের বেশ কিছু এলাকা তাঁর জমিদারীতে যুক্ত হল। বাঁশবেড়িয়া তার মধ্যে অন্যতম। বাঁশ ঝাড় কেটে এখানে রাজবাড়ি বানালেন জয়ানন্দের পুত্র রাঘবেন্দ্র’।
‘রুমাদি, দু’কাপ চা দিয়ে যাও না’, বলে কাজের দিদিকে উঁচু গলায় ফরমাশ জানিয়ে সুজাতা গুছিয়ে বসলেন। বলল, ‘তুমি আগেই বলেছ যে মানসিংহ বর্ধমান হয়ে যশোরে গিয়েছিলেন’।
‘হ্যাঁ। দেখ ভারতচন্দ্র লিখেছেন,
‘বাইশী লস্কর সঙ্গে কচু রায় লয়ে রঙ্গে
মানসিংহ বাঙ্গালা আইলা।
কেবল যমের দূত সঙ্গে যত রাজপুত
নানাজাতি মগল পাঠান।
নদী বন এড়াইয়া নানা দেশ বেড়াইয়া
উপনীত হইল বর্দ্ধমান’।।
‘এখানে এসে ভবানন্দ মানসিংহের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন ?’
‘হ্যাঁ, তেমনই বলেছেন ভারতচন্দ্র।
দেখা হেতু দ্রুত হয়ে নানা দ্রব্য ডালি লয়ে
বর্ধমানে গেলা মজুন্দার’।
‘দেখ, ভবানন্দ বর্ধমানে এসে দেখা করেছিলেন। কিন্তু মানসিংহ কার জন্য বর্ধমানে এসেছিলেন ? নিশ্চয়ই ভবানন্দের জন্য নয়’।
‘মনে হয় অন্যান্য জমিদারদের সাথে দেখা করতে মানসিংহ বর্দ্ধমানে এসেছিলেন’, মনোময় বললেন।
‘আমার কেন জানি মনে হচ্ছে জয়ানন্দ তাঁদের মধ্যে প্রধান একজন। কারণ জয়ানন্দ থাকতেন বর্ধমানের পাটুলিতে’।
মনোময় চোখ বড় বড় করে সুজাতার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এটা তুমি একদম ঠিক বললে। জয়ানন্দই লক্ষ্মীকান্তকে লোক পাঠিয়ে ডেকে নিয়ে গেলেন এবং মানসিংহের সাথে দেখা করিয়ে দিলেন। তিন মজুমদারের সাথে বসে প্রতাপের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা এই বর্দ্ধমানেই হয়েছিল’।
রুমাদি চা দিয়ে গেছিল। চুমুক দিয়ে সুজাতা বললেন, ‘শেওড়াফুলির গল্পটা হোক’।
মনোময় বললেন, ‘রাঘবেন্দ্র রায়ের প্রপৌত্র মনোহর রায় শেওড়াফুলিতে চলে এসেছিলেন। বাঁশবেড়িয়াতে রাঘবেন্দ্রর পুত্র রামেশ্বরের বংশে মূল অংশীদারী চলতে থাকে। লক্ষ্মীকান্তের বংশধর রত্নেশ্বর শেওড়াফুলির অংশীদারদের সাথে গঙ্গার অপর পাড়ের এলাকা বিনিময় করে পাকাপাকিভাবে উত্তরপাড়ায় চলে এলেন’।
‘এই উত্তরপাড়াতে সাবর্ণভিলার কথা বলছ, যেটা দেখতে তোমরা যাবে কালকে ?’
‘সাবর্ণভিলা তো আর নেই। এলাকাটি দেখব আর কি’, মনোময় বললেন।
‘সেই সাবর্ণভিলাতে ছিল শ্যামরায়ের মন্দির, শুনলাম। এর সাথে কি প্রতাপাদিত্যের আনা গোবিন্দমূর্তির কোনো সম্পর্ক আছে বলে তোমার মনে হয় ?’
সুজাতা একটা ভ্যালিড প্রশ্ন করেছেন। মনোময় কিছুক্ষণ বসে ভাবলেন। তারপর বললেন, ‘থাকা অসম্ভব নয়’।
‘এর’ম কেন মনে হচ্ছে তোমার ?’
‘দেখ, লক্ষ্মীকান্তের পিতা কামদেব শক্তিমন্ত্রে দীক্ষিত। লক্ষ্মীকান্ত নিজেও কালীঘাটের মায়ের পুজারীদের কাছে মানুষ। এই মানুষটার বংশধরদের কুলদেবতা কিকরে শ্যামরায় বা কৃষ্ণ হলেন সেই প্রশ্নটা আমাকে ভাবিয়েছে’।
‘প্রতাপ তো এই গোবিন্দমূর্তি উড়িষ্যা থেকে এনেছিলেন ?’
‘সকলে সেটাই বলেছেন। সতীশচন্দ্র ‘সারতত্ত্ব তরঙ্গিণী’ নামের একটি গ্রন্থের উল্লেখ করে লিখেছেন,
নীলাচল হইতে গোবিন্দকে আনি।
রাখিলেন কীর্তি যশঃ ঘোষয়ে ধরণী।।
এমনকি আমাদের হাতে যে ‘শ্যামরায়মঙ্গল’ এসে পড়েছে সেখানেও লেখা রয়েছে,
নীলাচল কাশীপুর ভ্রমণ করিয়া।
ফিরিল প্রতাপ দুই বিগ্রহ লইয়া’।।
‘নীলাচল তো বুঝলাম। কিন্তু এই কাশীপুর কোথায় ?’
মনোময় কিছুক্ষণ গুগল ম্যাপ নিয়ে ঘাটাঘাটি করে দেখালেন,
‘কাশীপুর – রায়গাদা’
‘এটা ঠিক কোথায় ?’
‘রায়গাদা উড়িষ্যার এক জেলা। পুরানো এক রাজবাড়ি আছে এখানে। জগন্নাথদেবের বিশাল রথযাত্রা হয়’।
‘কিন্তু এখান থেকে গোবিন্দমূর্তি আনতে যানেব কেন প্রতাপাদিত্য ?’
‘দেখ, চৈতন্যদেবের সময়ে উড়িষ্যায় বৈষ্ণব ধর্মের অনেক বিস্তার হয়েছিল। প্রতাপাদিত্যের পরিবার বৈষ্ণব ছিল। বিশেষত কাকা বসন্তরায়। তিনিই প্রতাপকে বলেছিলেন গোবিন্দমূর্তি নিয়ে আসতে’।
সুজাতা সামান্য সময় ভেবে নিয়ে বললেন, ‘কিন্তু বাংলাতেও বৈষ্ণব ধর্মের বিস্তার হয়েছিল। নিত্যানন্দ, তাঁর পুত্র বীরভদ্র, দ্বাদশ গোপাল, অদ্বৈতাচার্য সকলের অবদান ছিল। তা, বাংলা ছেড়ে উড়িষ্যা থেকে মূর্তি আনতে যাবেন কেন ?’
‘ভালো প্রশ্ন সুজাতা। তফাৎ হল বাংলায় তখন মুসলিম সুলতানদের শাসন আর উড়িষ্যায় তখন পর্যন্ত হিন্দুদের। জাস্ট পাঠানেরা উড়িষ্যা দখল করেছে। এর আগে আগে হিন্দু শাসকদের অধীনে ইচ্ছেমত বৈষ্ণব ধর্মের বিস্তার হয়েছে উড়িষ্যায়। অনেক বড় মন্দির, অনেক মূর্তির নির্মাণ হয়েছে। বাংলায় মুসলিম শাসনকালে মন্দির নির্মাণ করতে অনুমতি নিতে হত। মানসিংহ বৃন্দাবনে মন্দির নির্মাণের পূর্বে আকবরের অনুমতি নিয়েছিলেন। বাংলায় তখন মন্দির এবং মূর্তি তেমনভাবে তৈরি হচ্ছে না। সেই কারণেই উড়িষ্যা থেকে আনতে বলেছিলেন বসন্তরায়’।
সুজাতা বুঝলেন। বললেন, ‘তুমি একবার ম্যাপটা বড় করে দেখাও তো’।
মনোময় অল্প সময় নিয়ে দেখালেন,
‘দাগ টেনে কী দেখাচ্ছ বল তো ?’
‘সতীশচন্দ্রের মতে প্রতাপ জলেশ্বর হয়ে ভদ্রক এবং সেখান থেকে কটক হয়ে পুরী এসেছিলেন। পুরী থেকে রায়গাদা’।
‘সতীশবাবু কী রায়গাদা বা কাশীপুর বলে উল্লেখ করেছেন ?’
‘না, সুজাতা’।
‘আমার কেমন যেন মনে হচ্ছে প্রতাপ এতো দূরে আসেন নি। এতোদূর পর্যন্ত অঞ্চলকে নীলাচল বলা হত কি ?’
মনোময় কিছুক্ষণ সুজাতার কথা বিচার করে নিয়ে বললেন, ‘এই ভাবনাটা মাথায় রেখেই আমি দ্বিতীয় এক কাশীপুর সার্চ করেছিলাম। ম্যাপে দেখ কেওঞ্ঝর অঞ্চলকে দেখানো হয়েছে মার্ক করে। সেখানে একটি কাশীপুর রয়েছে। এই দেখ’, বলে আবার ম্যাপ দেখালেন।
সুজাতা দেখে বললেন, ‘এবার কনভিন্সিং লাগছে। ভদ্রক, কটক, পুরী হয়ে ফেরার পথে প্রতাপ কেওঞ্ঝর হয়ে আসতেই পারেন। বেশ এবার শিবলিঙ্গের কথা বল। সেটাও কি কাশীপুর থেকে সংগ্রহ করেছিলেন ?’
‘আমার ধারণা সেটি বালাশোর জেলার পঞ্চলিঙ্গেশ্বর থেকে এনেছিলেন প্রতাপ’।
সুজাতা আগের ম্যাপটা দেখে বললেন, ‘বালাশোর প্রতাপের গমনাগমনের পথেই পড়েছে। কিন্তু পুরী থেকে বালাশোর অনেক দূরে। বালাশোরকেও কী ‘নীলাচল’ বলা যায় ? একই প্রশ্ন আমার কেওঞ্ঝরকে নিয়েও রয়েছে’।
‘সুজাতা, পুরীকে ‘নীলাচল’ কেন বলে বল তো ?’
সুজাতা ঘাড় নেড়ে জানালেন অজ্ঞতা। মনোময় আবার বললেন, ‘নীলাচল’ শব্দটির অর্থ কী ?’
‘নীল আঁচল যাহার ?’
‘না’, হেসে মনোময় বললেন, ‘এ তোমার ‘নীলবসনা সুন্দরী’ নয়। তুমি জান, আসলে মজা করছ। ‘অচল’ হল ‘পাহাড় বা পর্বত’, যা কিনা নীল হয়ে রয়েছে। অর্থাৎ যে পাহাড়ের মাথা নীল হয়ে রয়েছে সেটি হল ‘নীলাচল’। নীলাচল নামের পাহাড় অনেক জায়গায় রয়েছে। কামাখ্যায় রয়েছে, বাংলাদেশের বান্দারবনে রয়েছে। তেমনি রয়েছে উড়িষ্যায়’।
‘কিন্তু পুরী তো শৈলশহর নয়’।
‘নীলাচল পাহাড়ের পশ্চিমদিকের শেষভাগে পুরীর অবস্থান। হেনরিক ফন স্টিটেনক্রন একটি বই লিখেছিলেন। The Advent of Vishnuism in Orissa । এই বইতে উনি বলেছেন যে জগন্নাথ মন্দির নীলাচল পাহাড়ের শেষভাগে তৈরি হয়েছিল। পরে সমুদ্রের বালি এসে চারপাশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় এখন মন্দির সমতলে রয়েছে বলে মনে হয়’।
‘তুমি সব কিছু এমন ফটাফট বলে দাও কিকরে বল তো’, সুজাতা খুনসুটি করলেন।
‘আহাহা, আজকাল ইন্টারনেটের জমানায় তথ্য সহজলভ্য হয়ে গিয়েছে। যাকগে, কাজের কথায় আসি। পঞ্চলিঙ্গেশ্বর সার্চ করলেই দেখবে যে সেটি নীলাচল পাহাড়ে অবস্থিত। নীলাচল বলতে তাই আমাদের নীলাচল পাহাড়ের পুরো রেঞ্জটাকে ধরতে হবে। কেবল পুরী ভাবলে ভুল হয়ে যাবে’।
‘বুঝলাম। তা প্রতাপ উড়িষ্যা থেকে শিবলিঙ্গ এবং গোবিন্দমূর্তি নিয়ে ফিরলেন। দুটি মন্দির নির্মাণ করে বিগ্রহ স্থাপন করলেন। এখন বলছ যে সেই গোবিন্দমূর্তিটি হারিয়ে গিয়েছে এবং রত্নদীপ চাইছে সেই মূর্তিটিকে ফিরে পেতে, তাই তো ?’
‘হ্যাঁ’।
‘আর তুমি অনুমান করছ যে কেবল প্রতাপের আত্মীয়রা এবং পূজারি অধিকারীরাই নয়, সাবর্ণ চৌধুরীদের কাছেও সেই মূর্তি এসে থাকতে পারে’।
‘হ্যাঁ সুজাতা। শ্যামরায়মঙ্গল পড়ে আমার তেমন একটা সম্ভাবনার কথা মনে হচ্ছে’।
ক্রমাগত...