মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পূর্ণ খবর

স্বাধীনতা স্বাধীনতা | Independence story : বোমা তৈরি করতে গিয়ে নষ্ট হয়েছিল চোখ, আট বছর কেটেছে ব্রিটিশদের কারাগারে

Sumit | ১৪ আগস্ট ২০২৪ ১৬ : ১২Sumit Chakraborty


মিল্টন সেন,হুগলি : মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস, মহাত্মা গান্ধী, ভাগত সিং, রাজ গুরু, ক্ষুদিরাম বসু, মাস্টার দা সূর্য সেন, প্রীতি লতা ওয়াদ্দেদার, মাতঙ্গিনী হাজরা, জহরলাল নেহেরু সহ আরও অনেকেই। যাদের নাম সবসময় চর্চিত।


তবে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আরও এমন অনেকের অবদান রয়েছে, যাদের নাম খুব একটা শোনা যায় না। এমনই একজন হলেন সুরেশ প্রসাদ রায়চৌধুরী ওরফে কালু। অবিভক্ত পূর্ববঙ্গের পাবনা জেলার শক্তিপুরে ১৯০৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পরে তার বাবা মায়ের সঙ্গে তিনি চলে আসেন রংপুরে। তার মা ছিলেন কিরণবালাদেবী। তিনি রংপুর জেলা মহিলা কংগ্রেসের নেত্রী ছিলেন। তার জ্যেষ্ঠ পুত্র সুরেশ। তিনিও ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী।

মায়ের অনুপ্রেরণাতেই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনের স্বাদ পেতে যুগান্তর দলে নাম লিখিয়েছিলেন কালু। ১৯২০ সালে রংপুরের রায় চৌধুরী পরিবারের বসত ভিটেটি হয়ে উঠেছিল বিপ্লবীদের গোপন আস্তানা। প্রায়শই ব্রিটিশ পুলিশ ঘেরাও করে রাখতো এই বাড়িটিকে। কিন্তু বিপ্লবী সুরেশের মায়ের তখন বুদ্ধির কাছে বারবার হার মেনেছে ব্রিটিশ বাহিনী।

কালু বাবুর বয়স যখন ২১ তখন ১৯২৭ সালে রংপুরের প্রাদেশিক যুব সম্মেলনে যুগান্তর দলের অবিভক্ত বাংলাদেশের রংপুর জেলার অন্যতম সংগঠক ছিলেন কালুবাবু। ১৯২৭ সালে কথা সাহিত্যিক শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে প্রাদেশিক যুব সম্মেলনে নিয়ে গেছিলেন কালু বাবু। তার কিছুদিন পরেই বোমা তৈরি করতে গিয়ে তাঁর একটি চোখ নষ্ট হয়। সেই সময় মাস্টারদা সূর্যসেনের চট্টগ্রাম অস্তাগার লুণ্ঠনের ধাঁচেই জেলায় জেলায় সশস্ত্র আক্রমণের ছক ফাঁস হয়ে যাওয়ায় কালুবাবু বেঙ্গল অর্ডিন্যান্স আইনে ব্রিটিশদের হাতে ধরা পড়ে যান।

শুরু হয় পুলিশের অত্যাচার। বিচারাধীন বন্দি হিসেবে সুরেশ প্রথমে প্রেসিডেন্সি জেল, বহরমপুর জেল হয়ে হিজলি রাজস্থানের দেউলী ডিটেনশন ক্যাম্পে কাটে তার কাটে আটটি বছর। জেলের মধ্যেই টানা ২৪ দিন অনশন করেন সুরেশ এবং তার সঙ্গীরা। বিনয় বাদল দীনেশের আত্ম বলিদান দিবসে হিজলি জেলের মধ্যে স্মরণ সভার আয়োজন করেছিলেন সুরেশ সহ সমস্ত বন্দীরা। তখন ব্রিটিশ পুলিশ তাদের উপর গুলি চালায়। সেই গুলিতেই মৃত্যু হয় সন্তোষ মিত্র, তারকেশ্বর সেনগুপ্তের।

যদিও সুরেশবাবু সেদিন বেঁচে গিয়ে ছিলেন। জেলে বসেই তিনি বিএ পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এরপরে দেশ স্বাধীন হয়। ৮ বছর পর জেল থেকে মুক্তি পান সুরেশ বাবু। সুরেশ প্রসাদ ও তার স্ত্রী সন্ধ্যা দেবী অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বাবা এবং রবীন্দ্রনাথ এর কাছের মানুষ শিক্ষাবিদ ক্ষিতি মোহন সেনের। সুরেশের স্কুল জীবনের সঙ্গী ছিলেন সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহর বাবা মনা গুহ।


জেল থেকে মুক্ত হয়ে এবং স্বাধীনতাপ্রাপ্তীর পর সুরেশ প্রথমে রঙপুর কারমাইকেল কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট ২০০ বছর ধরে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়। ভারত একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে উন্মোচিত হয়। অত্যাচার, পরাধীনতার বেড়াজাল থেকে ভারতকে মুক্ত করতে আত্ম বলি দান দিয়েছেন বহু ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী। পরবর্তী কালে দেশভাগের সময় সুরেশ বাবু চলে আসেন কলকাতায়। ১৯৫০ সালে গোপালচন্দ্র মজুমদারের হাত ধরে হুগলির খন্যানের ইটাচুনা বিজয় নারায়ন মহাবিদ্যালয়ে ফিজিক্সে ডেমোনষ্টেটর হিসাবে কাজে যোগদেন। একইসঙ্গে কলেজ হোস্টেলের সুপার হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন।

পরবর্তীতে তিনি খন্যানের মুলটি মোড় এলাকায় একটি বাড়ি তৈরি করেন। তার দুই ছেলে সুখেশ প্রসাদ, রায়চৌধুরী ও সোমেস প্রসাদ রায় চৌধুরী ও দুই মেয়ে শিবানী রায় চৌধুরী ও সর্বাণী রায় চৌধুরী। বর্তমানে সুখেশ বাবু কলকাতায় থাকলেও তাদের বসত ভিটাতে থাকেন নাতিরা। এদিন সুরেশ প্রসাদ রায়চৌধুরীর ছেলে সুখেশ প্রসাদ বলেন, ছাত্রাবস্তা থেকেই তিনি জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। স্কুলের মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি। পরে ভূপেন্দ্র কুমার দত্তের হাত ধরেই যুগান্তর দলের সঙ্গে যুক্ত হন।

এই দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অরবিন্দ ঘোষ, ডক্টর ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, ক্ষুদিরাম মাস্টারদা সূর্যসেন প্রফুল্ল চাকীরা। স্বাধীনতা সংগ্রামে সুরেশ প্রসাদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাকে তাম্রপত্র দিয়ে তাকে সম্মানিত করা হয়। এবং ভাতাও মঞ্জুর করা হয়। পরের শারীরিক অসুস্থতার কারণে ১৯৭৫ সালের ১৪ই নভেম্বর তিনি প্রয়াত হন।

সুরেশ বাবুর কলেজের দর্শন বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক সুনিললেন্দু ভট্টাচার্য বলেছেন, ১৯৬৩ সালে ইটাচুনা কলেজে দর্শনের অধ্যাপক হিসেবে তিনি যোগদান করেন। তিনি তাঁকে সুরেশ দা বলেই ডাকতেন। কলেজে আসার পথে প্রায়ই তার কাছে বসতেন। তবে তিনি সাম্যবাদে বিশ্বাস করতেন। সেই সাম্যবাদ নানান সময়ে তার জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত নিয়ে এসেছিল। এসব কোথাই তিনি মাঝে মাঝে বলতেন। তিনি অত্যন্ত ছাত্রদরদি ছিলেন। কলেজে ছাত্রদের পড়ানোর সময় ভালোবেসে পড়াতেন।


#Independence day#Freedom fighter



বিশেষ খবর

নানান খবর

পাঞ্জা নয় আজ মাঞ্জার লড়াই #vishwakarmapuja #happyvishwakarmapuja #vishwakarma #lordvishwakarma #vishwakarmadaywishes  #craftsmen

নানান খবর



সোশ্যাল মিডিয়া



08 24