চিরসখা
'ভালো থেকো' শব্দের মধ্যে যে বিদয়টুকু লুকিয়ে আছে
তা আলভিদার থেকেও বেশি বিষাদের।
মনের অতলে গড়ে ওঠা যে পৃথিবীর যাপন,
তার অস্তিত্ব -
বাতাসের মতোই সর্বদা অনুভূত
অথচ দৃশ্যমানতা অসম্ভব।
মহাকাশের মতোই রহস্য ঢাকা
আসলে নিরাবরণ।
রোজ নতুন সেজে ওঠা
অথচ নিরাভরণ।
তত্ত্বে বিকর্ষন অথচ পদ্মপাতার মোমশরীর বেয়ে
হিরের টুকরো গড়িয়ে যাওয়ার মতোই আকর্ষণীয়।
বাঁধলে কলঙ্ক আর বইতে দিলে
শুষে নিতে সক্ষম যাবতীয় মলিনতা।
বিচ্ছিন্নতাই ধরন অথচ অটুট ভাসমান সে বন্ধন।
এমন অতলে যে পৃথিবীর যাপন
তাকে বিদায় জানানো শব্দ কোরো না রোপণ
'ভালো থেকো' বোলো না
বোলো, তাকে ভালো রেখো আমরণ।
১৪ ফেব্রুয়ারি
কবরে শায়িত মৃতের মৃত্যু হয়নি তখনও
মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। একেবারে হত্যা যদিও।
তবু হত্যাকারীর অপেক্ষায়
চোখ চেয়ে আছে তখনও,
সেও আসবে শেষ দেখায়
সেই বুঝি ভালবাসা, সেই বুঝি ইচ্ছে অপূর্ণ।
হত্যা পরবর্তী সময়ে এই কবরের পাশে গাছ থেকে
ঝরে পড়েছে বিস্ময় ফুলের ভাষা,
অপ্র্যত্যাশিত ফিসফিস বাতাসের শুভেচ্ছা
হোক না মৃত্যু তবু কি শেষ? আজই যে দিনটা ভালবাসা।
পুড়িয়ে দেওয়া চোখে নেমেছে শান্তি, জুড়িয়ে দিয়েছে আত্মা।
ঝরে পড়েছে ফুল বুকের ওপর যতটা
শায়িত দেহের দুচোখে সহনীয় হয়ে উঠেছে আকাশ জুড়ে
হত্যাকারী আর তার ধারালো অস্ত্রের সখ্যতা।
মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারেনি যেমন হতো বেঁচে থাকলে,
মৃত্যুর পর পরিসর যে সীমিত।
দেখেছে বারবার, বারবার আকাশ জুড়ে মেঘের টুকরো
আর তাতে ভাসমান "হাসিখুশি মুখে সর্বনাশ"
আততায়ী আর অস্ত্র।
সেইসব ভাসমান মেঘ,
মৃত্যুর পরও মেরেছে! যা আরো আরো বার,
তখনই ঝরে পড়া ফুল আসলে উষ্ণ অভিবাদন,
অসম্ভব সে প্রাণের স্পর্শে
মৃত শরীর থেকে গেয়ে উঠেছে জিয়া,
"দের লাগি লেকিন ম্যায়নে আব হ্যায় জিনা শিখ লিয়া।"
আলো
সকালের কাগজের ফুলেরা এখন আলোকিত বিন্দু হয়ে উঠেছে রাতের রাস্তা জুড়ে
আর তৃষ্ণার শহর জুড়ে এসেছে একটু একটু শীতের রং আর উষ্ণ আলিঙ্গনের অপেক্ষা।
লুকানো বেহায়া মন সাড়ায় ফিরেছে অদ্ভুত না পাওয়া হাতছানির,
সমস্ত নিষেধ সে পোড়াবে ফাগুনে,
বেঁধে রাখার ইচ্ছেরা বেঁধে থাকার ইচ্ছের সাথেই আগুনে।
না থাকুক গন্তব্য না থাকুক পরিণতি
শুধু বহমান হোক এই আলোকিত পথের আলিঙ্গনে হেঁটে যাওয়া।
ঐশ্বরিক
সমস্ত পৃথিবী তার সমস্ত ভাল নিয়ে একদিকে চলে গেলেও
আর একদিকে থাকো তুমি আর গভীর একটা খাদের হাতছানি।
সমস্ত রাজকীয় ভাল থাকার আড়ালে আর এক দিকের নিজস্ব কাঙাল পৃথিবীর প্রতি
ভাললাগা লুকিয়ে রাখাও শিখেছি ওই খাদের থেকেই,
যখন ওর আশ্রয়ে তলিয়ে যাওয়ায় আগের মুহূর্তে পেয়েছি তোমাকে
সর্বহারা খাদের কিনারে ।
ওর শরীর বেয়ে উঠে আসা গাছের জড়িয়ে পেঁচিয়ে থাকা জীবন
আর প্রাণরসে তৈরি হওয়া আর একটা পৃথিবী-
গভীরতায় মাটি, ব্যাপ্তিতে আকাশ,
না পাওয়া ব্যথায় বাতাসহীন প্রশ্বাস,
আর না পেয়েও সব পাওয়া, সব হারানো সুখে- ভিখিরি।
ভয়েড
তুমি যাকে ঠিক হয়ে যাওয়া বলো আমি তাকে নির্মোহ বলি,
অবশেষেও শেষ না হওয়া ঘটনাক্রম নিজস্ব ধারায় চলে তখনও
বাঁধা নিয়মে।
তুমি যাকে মুক্তি বলো আমি তাকে ছেড়ে দেওয়া বলি,
আলগা দেওয়া যে সুতোকে তুমি চেষ্টা করো মাপতে, নিয়মে জ্যামিতিক,
আমি জেনে গেছি সব ফলাফল শূন্যতাই সঠিক।
বৈপরীত্য
ঠিক যে কষ্টটা ইচ্ছেদানা হয়ে আবর্তিত হয়ে চলে
সমস্ত সত্ত্বা তাকেই করেছে পিছুটান,
বাকি ঋণ সব চুকিয়েছে সে কবেই
ধরে রাখে তেমন হিসেবও যে কিছু নেই।
ইচ্ছেগুলোও যদি বাঁধে দানা
উড়তে চায় সুখের আকাশ জুড়ে
যখন যাকে সুখ মনে হয় আঁকড়ে ধরে যদি
সুখপাখির কি অভাব আছে তবে?
তবু সহজ পথে বিমুখ বারেবারে
শুধু কথার বুননে বেঁধেছে জটিল মায়া,
অপেক্ষা যেন অন্তহীন এ সময়
মুক্ত ঝরলেও মুক্তি দেয় না কায়া।
ঠিক যে ইচ্ছেটা কষ্টদানা হয়ে আবর্তিত হয়ে চলে
শরীর জুড়ে জেগে অথবা ঘুমে,
তবু সে শ্রান্ত ধূমায়িত অবয়ব
অবহেলায় ফেলে রাখে জলীয় সুখ সব।
যা কিছু সহজ তাতে অনীহা হলে
তৃষ্ণা মেটাতে চাতক আগুনে পোড়ে।