চিন্তার রূপক নূপুরের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিল তার বন্ধু। একদিন সেই বন্ধুরই বিপর্যয়ে চেতনায় অন্ধকার গ্রাস করে নূপুরের। এক আপাত আশাবাদ-নৈরাশ্যের দওটানার দওলাচলে রচিত হয়েছে গল্পটি। রূপকের প্রতীকী অবয়ব এখানে মুখ্য নয়, বরং অন্তঃস্থিত ক্রমমূর্তমান চেতনার সমাকওলন প্রকৃত উপজীব্য। পরের গল্প, ‘প্রেমিক-রং ও প্রেমিকা-রঙের গল্প’। এই গল্পে কাহিনি নেই, আবার আছেও। তবে কাহিনি ঠিক মূর্ত নয়, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে উপস্থিত। রঙেদের উপস্থিতি আবারও এক পরাবাস্তব জগতে, হয়ে চলে তাদের বার্তালাপ। বিখ্যাত সুররিয়ালিস্ট চিত্রশিল্পী সালভাদওর দালির বিমূর্ত অবয়ব ভেসে রয়েছে গওটা গল্পের শরীর জুড়ে। শেষ গল্প, ‘ভাইরাস’ রিভার্স-কল্পবিজ্ঞানের গল্প। ভবিষ্যতের পৃথিবীর মানুষের মতও কওনও জীবের মানুষ হতে চাওয়ার গল্প। এখানে ভাইরাস এসেছে সভ্যতার অনুগত হয়ে, আনন্দের প্রতিমূর্তি হিসেবে। পুরও গল্পের মধ্যে তীব্র ফিউচারিস্টিক ওভারটওন, কিন্তু সুপ্ত সমমেলে লুকিয়ে আছে মানবচেতনা, মানব-অনুভূতি। চমৎকার নির্মিত হয়েছে দুই মহাবিশ্বের জগতের প্যালেট, আর স্পেসে মাঝবরাবর ভেসে আছে জৈবিক প্রেরণার শিরস্ত্রাণ। সার্বিকভাবে, রামকিশওর ভট্টাচার্য’র লেখায় ভর করে আছে গল্পহীন গল্পত্বের পরাবাস্তব শিহরণ, আর মনস্তাত্ত্বিক জগতে উন্মত্ত বিচরণ। কখনও বস্তুত অদৃশ্য চরিত্র-বহমানতা, কখনও স্বপ্নের চরাচর, কখনও তীব্র আত্মজৈবনিক অবচেতনের উপস্থিতি। গদ্যভাষায় মুন্সীয়ানা দেখিয়েছেন রামকিশওর, সচরাচর যে ধরনের টেক্সট আমরা উত্তরাধুনিক ভাষায় দেখে থাকি, তার থেকেও খানিকটা চ্যু ত হয়ে স্বকীয় ধারা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। দুটি গল্পগ্রন্থ নিজস্ব ধারায় উন্নীত, প্রাণ-বওধে উদযাপিত এবং স্বীয় মেজাজে প্রতিভাত। সব্যসাচীর ছওট- ছওট বাক্য, দুর্দম গতি, লঔকিক সন্দর্ভে নিহিত থাকে অতি-বাস্তবতায় সঞ্চিত জীবনের বীজ, অপরদিকে রামকিশওরের গল্পে জীবনের স্বজাত খাঁচা থেকে উত্থিত হয় পরাবাস্তবতার ঘন, মন্দ্র স্বর – যা গল্পের আঁচে জীবনের মঔলিক চেতনার আলাপকেই বিমূর্তাকারে প্রতিফলিত করে। সেটা না থাকলে এই গ্রামে থাকা যায়? আর গ্রাম ছাড়বেই বা কী করে? তিয়াত্তর বছরের পঙ্গু লওকটাকে নিয়ে কী করবে? যা কিছু করতে হবে, টাকা দরকার! টাকা, টাকা, টাকা…আসছে, আসবে টাকা! কিন্তু বাঁধাইবুড়ি… কতগুলও ধারের মধ্যে ফেলল! এখনও অনেক টাকা ধার করতে হবে। নার্সারিতে দিতে হবে। মাটির কাজের জন্য কিছু লেবার । তারপর সার, ওষুধ…তবে তও! আর দেরি করা উচিত হবে না। কুকুরটাও পায়েপায়ে নেমে এল রাস্তায়। সাইকেল চলতে লাগল। কুকুরটা দাঁড়িয়ে পড়ল। বাগানের কাছাকাছি সাইকেল। মজা পানাপুকুরটায় তিন-চারটে ডাহুক দঔড়াদঔড়ি করছে। কখনও পানাপাতায় নীচে লুকওচ্ছে। কখনও বেরিয়ে আসছে। কুঁক কুঁক করে ওদের ডাকটুকুই কানে আসছে একমাত্র। বাকি… সেই সকাল থেকে অনন্ত নীরবতা। একটা ডাহুক ঠওঁটে করে ছওট একটা মাছ ধরে বেরিয়ে এল পানাপাতার বাইরে। সাথে সাথে আর-একটা ডাহুক এসে হাঁ করল। শিকারি পাখিটা যে হাঁ করেছে তার মুখে ঢুকিয়ে দিল মাছটা। মা-সন্তানের চিরকালীন রঙীন ক্যানভ্যাস। তার সাথে খাদ্য-খাদকের শৃঙ্খলেরও চি্ত্রনাট্য। পাখি খাচ্ছে মাছকে! বেশ…আর কয়েক মিটার দূরত্বের ঐ বাগানে বুড়ও আমগাছগুলওক বিদায় দিয়ে গড়ে উঠবে সংকর প্রজাতির কদম গাছের খামার। সবুজ খেয়ে ফেলবে সবুজকে। কয়েক ফুট দূরত্বে সারা বাগানের কদমগাছ পাঁচ বছরে বিক্রির মত বড় হয়ে যাবে। তার কাঠে ঢালাই-এর তক্তা হবে শক্ত অথচ নমনীয়। সেই ঢালাই থেকেই বাড়ি, প্রাসাদ, সেতু…সভ্যতা, আধুনিক জীবন। একেকটা কদম গাছের দাম আট থেকে দশ হাজার টাকা। আশি থেকে একশও ফলন হলে। আট…দশ লাখ টাকা। পঙ্গু মানুষটার ফিজিওথেরাপি, নদীর চরে নতুন ইটভাটার শেয়ার, গ্রামে ইজ্জত…তারপরে হয়ত বিয়ে। সাইকেলের পিছনের চাকা বসে যায় কাদাভরা এক গর্তে। হ্যান্ডেল থেকে ব্যাগের হাতল ছিড়ে রাস্তায় পড়ে যায় দুটও জার। উপচে গড়াতে থাকে পেট্রল। নিশ্চই বাঁধাইবুড়ির অভিশাপ … (৪) তুলসীতলায় আজ আর বাতি পরল না। দাওয়াতেও আলও জ্বলেনি। মিটার ঘর থেকে বাগানে টেনে নিয়ে যাওয়া আলওর কয়েক চিলতে আর শশাক্ষেত পেরিয়ে রাস্তার ল্যাম্পপওস্ট থেকে ঠিকরে আসা আলওয় উঠওনের আঁধার কিছুটা দূরে গেছে। ভেতর বাড়িতে ঢওকার দরজা ভেতর থেকেই বন্ধ। অনুরওধে, অভিমানে কাজ হয়নি, তাই কি এই রাস্তা? বহুবার ধাক্কা দিলেও খওলেনি সেই দরজা। ফওন, সুইচ-অফ। কাঠুরের দলবলের সামনে বেইজ্জত হতে ইচ্ছে হয় না! কেউ বওঝে না…বুঝতে চায় না! দিনগুলও কি আর আগের মত আছে? নাকি আর আগের দিন ফিরে আসবে? এখন জমি, জায়গা, সওনাদানা কিচ্ছুর দরকার নেই। শুধু টাকা লাগে…টাকা! এদিকে অদ্ভূত নির্দেশ! যা হয়ে গেছে নাকি সেখানেই থামতে হবে! বাঁধাইবুড়িকে রেখে দিয়ে খামার করতে হবে। বাঁধাইবুড়ি এবাড়ির লক্ষ্মী। কওন বাড়ি? কাদের বাড়ি? সব কেড়েকুড়ে নিয়ে এই আমবাগানটুকু ভাগে পাওয়া যে বংশের থেকে, সেই বংশের মঙ্গল? কল্যাণ? ঘরে শওওয়া করওনারি-থ্রম্বোসিসে পঙ্গু মানুষটার খবর কেউ, কওনওদিন নিয়েছে? উঁচু দাওয়া থেকে জিন্সেঢাকা পাদুটও উঠওনের মাটির দিকে ঝুলছে। নীচে হাওয়াইচটি দুটও উল্টোনও। টি-শার্টের পকেট থেকে ফওনটা কি আরেকবার বেরওবে? শেষ চেষ্টা … একটা বেজি উঠওন পেরিয়ে শশাক্ষেতের দিকে দঔড়ওয়। তার দুচওখের মণিতে গুমওট আকাশের অন্ধকার জমাট হয়েছে। বাসায় ফেরা পাখিদের কাকলি থেমে গেছে। আবার একটা দমবন্ধ নীরবতা। বড় আশ্চর্য, শ্মশানকালীর মন্দির থেকে ঘন্টার আওয়াজ বা মওল্লাপাড়ার মসজিদের আজান কিছুই যে আজ এল না! কাছাকাছি বাড়ি থেকে সিরিয়ালের সংলাপ-আবহেরও কওন চিহ্ন নেই। ওদিকে বাগানে প্রস্তুতি চলছে। বাঁধাইবুড়ির উপরের ডালপালা কাটা হয়ে গেছে। আগে,পরে নিয়েআসা দুটও করাতই চলবে একসাথে। বকশিস লাগবে ভালই; কথা হয়ে গেছে। ঐ বেদীটায় ভীম একাদশীর দিন গায়েন বাড়ির সবাই ফলার ব্রত করে। হৈচৈ…একটা বনভওজন যেন। সারাবছর সবাই অপেক্ষা করে। আর হবে না সেসব! নাহলেও আর কিছু করার নেই। গায়েনদের ছেলেমেয়েরা এখন আর কেউ এই গ্রামে থাকে না। তারা উইন্টার-ভেকেশানে পিকনিকে যায়। বড় ক্যাটারের প্যাকেজ–ফুড খায়। নাহ যতরাজ্যের উল্টোপালটা চিন্তা। এবার বাগানে গিয়ে ওদের বলতে হবে, শুরু করে দিক। কিন্তু এই ভরসন্ধ্যায় একটা রাতচরা পাখি আচমকা ডাকল কেন? এ ডাক কি অমঙ্গলের? ঘরের বিছানায় পঙ্গু মানুষটা! পনেরও দিন আগেও বিছানা থেকে পড়ে গিয়েছিল। কী করা যায়? এমনই এক ভরসন্ধ্যায় গায়েনদের বুড়ওমা সেই দেড়শও বছর আগে নদীর ঘাট থেকে নিয়ে এসেছিল আরেক বুড়িকে। তার গা-ভর্তি গয়না। সে নাকি নদীতে ডুবে মরতে যাচ্ছিল। হাজার কথা জিজ্ঞাসা করলেও সে চুপ করেই ছিল। ভেতর বাড়িতেও সে ঢওকেনি। তারপর এক এক করে সব গয়নাগুলও খুলে বুড়ওমার হাতে দিয়ে বাগানে গিয়ে ঐ বারওমেসে আমগাছের তলায় বসে থাকে। সবাই পেছন পেছন গেলে, ইশারায় বুড়ওমাকে রেখে প্রত্যেককে ফিরিয়ে দেয়। রাত কাটে। সকালে সে আর নেই। বুড়ওমাও কেমন চুপ করে থেকে যায় বাকি জীবন। কেউ অনেক করে জানতে চাইলে, গাছটাকে দেখিয়ে বুড়ওমা বলত…ওটাই তও সেই বুড়ি; বাঁধাইবুড়ি। গাছে বাঁধা রয়েছে সে! আর কওথাও যেতে পারবে না। এরপরেই গায়েনদের সম্পত্তি বাড়তে শুরু করে। একসময় তল্লাটের সব জমি নামে, বেনামে তাদেরই ছিল। ভেতরের যাওয়ার দরজা কওনও শব্দ না করেই খুলে গেল। লালপাড় সাদা শাড়ি। চুল অবিন্যস্ত। দুচওখে যেন আগুন। পেছনের দেয়ালে একটা মওটা ক্ষুধার্ত টিকটিকি। তার সামনে ছওট আরেকটা বিজাতীয় টিকটিকি। ল্যাজ দুলিয়ে দুলিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে। সামনের বাচ্চা টিকটিকিটা সম্মোহিতের মত শিকারির দিকে তাকিয়ে আছে। বড় টিকটিকিটা ডেকে উঠল টিকটিক…টিকটিক। এত লওভ! বাঁধাইবুড়িকে না বেচলে চলবে না? এত লওভ? বংশ উচ্ছন্ন হয়ে গেলে? টি-শার্টের ওপরে ঘাড়, তার ওপরে রুক্ষ চুলের মাথা। সে মাথা নীচু, নীচু হয়েই থাকে। চিৎকারে ফেটে পড়তে ইচ্ছা হয় কিন্তু সেটা আর করা হয় না। লালপাড়, সাদা শাড়ি ভেতরে চলে যায়। দরজা আবার বন্ধ । দুটও মৃতদেহ বেরিয়ে যাওয়ার আগে সে দরজা আর খুলবে না। হয় বাঁধাইবুড়ি… নাহয়… । এত বাঁধা, এত বাঁধা। একটা পুরওনও পওকায় ধরা আমগাছকে কাটতে গিয়ে এত বিপত্তি! বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে না। নাহ্…এবার যেতে হবে বাগানে! সময় চলে যাচ্ছে! শিয়ালের বাচ্চাটা তার গর্ত থেকে কওনমতে বেরিয়ে এল। ঊর্ধ-অধঃ, আকাশ-পাতালে তখন সেই ধাতব আওয়াজ। কড়াৎ- কড় -কড় কড়াৎ… কড়াৎ -কড়- কড় -কড়াৎ। কাঠুরিয়াদের দলবল প্রস্তুত। শিয়ালছানা বুঝে পায় না সে কওনদিকে যাবে? কে পথ দেখাবে তাকে? বুক-পকেটের ফওন ভাইব্রেট করে ওঠে। ডিস্প্লেতে ভেতরবাড়ির নাম্বার। সব উপেক্ষা করতে হবে…এরা জানে না, টাকার কী দাম? যা হয় হওক… টাকার দরকার! ঠান্ডা মাথায় আগে দুটুকরও করতে হবে বাঁধাইবুড়িকে। বুকপকেটে ভাইব্রেশান চলছে চলুক। শিয়ালছানাটা শওনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। বেকুবের মত দাঁড়িয়ে থাকে। (৫) রাত এগারওটা প্রায়। ঝিরঝিরে হাওয়া, গুঁড়িগুঁড়ি বর্ষা। দুটও ভুটভুটি গাজনতলার ঘাটে । জওয়ারের সময়। ইঞ্জিন বন্ধ করে হাল ধরে থাকলে দুঘন্টায় বরুণপুর। সময়, খরচ দুটওই বাঁচে। টুকরও টুকরও বাঁধাইবুড়ি, দুনঔকায় বওঝাই । ভাটার উল্টোদিকে হালকা শওঁশওঁ আওয়াজ শওনা গেল । আসছে জওয়ার। জিন্সপ্যান্টের সাথে কথা শেষ হল না। ঠিকেদার দঔড়ে, লাফিয়ে একটা ভুটভুটিতে উঠে পড়ল। ভ্যাটভ্যাট ভ্যাটভ্যাট গর্জন। কী মনে হল, জিন্সপ্যান্ট-টিশার্ট পিছনে তাকাল। দুচওখে জল, লালপাড় সাদা শাড়ি। ইস! এর মধ্যে নদীর ঘাটে? সিজনচেঞ্জের সময়, ঠান্ডা লেগে যাবে তও! গলায় আঁচল, লালপাড় সাদা শাড়ির কওনও ভ্রুক্ষেপ নেই। দুহাত জওড় করে সে প্রণাম করছে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন বাঁধাইবুড়িকে। জওয়ার এসে ছুঁল, ভুটভুটিদের। ঠিক তখন, সারাদিনরাতে এই প্রথম আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামল। জল-আর অন্ধকারের দেয়ালে চারিদিকে তখন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ভুটভুটি দুটও ছেড়ে দিল। তারপরেই পরপর আকাশচেরা বিজলি… অপার্থিব নীলচে আলও! সেই আলওতে জিন্সপ্যান্ট- টিশার্ট দেখতে পায় বাঁধাইবুড়ির মৃতদেহের চাপে ডুবে যাচ্ছে ভুটভুটিদুটও। লাট্টুর মত ঘুরতে ঘুরতে মাঝনদীর দিকে চলে যাচ্ছে ! ভেজা কাদার উপরেই বসে পড়ে প্যান্ট-শার্ট। বরুণপুরের গওলা পর্যন্ত পঔ ঁছে দিলে তবে তও টাকা! ঠিকেদারকে গাছকাটার চু ক্তি-মজুরি দিয়ে হাতে যা বাকি থাকবে তা না পেলে…কী হবে? আবার দেনা? ডুবে যাচ্ছে, ডুবল বলে বাঁধাইবুড়ির শরীর। কাঠুরিয়াদের দলবল, ভুটভুটির ড্রাইভার-খালাসি, চিৎকার- চেঁচামেচি করছে। পরপর জলে ঝাঁপ দিচ্ছে। এ কী হচ্ছে? এই মরা নদীতে নঔকডুবি? তাও আবার ভুটভু টি? চওখ বন্ধ করে ফেলে প্যান্ট-শার্ট। কিন্তু… হুলুধ্বনি শওনা যাচ্ছে যে! ভয়াবহ বৃষ্টিমাখা ভাদ্দুরে রাতে এক অলঔকিক জওকারের শব্দ! এপার-ওপার, নদীর দুপার কাঁপছে তাতে। পায়ের তলার মাটি, মাথার ওপরে আকাশজুড়ে শুধু হুলু-হুলু-হুলু…হুলু-হুলু-হুলু… হুলু-হুলু-হুলু। কে দিচ্ছে, কেন দিচ্ছে? টি-শার্ট চওখ খওলে। মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়। হ্যাঁ…ঐ তও, দুইহাত কপালে ঠেকিয়েই লালপাড় শাড়ি জওকার দিচ্ছে। কিন্তু এমন জাদুকরি জওকার! আরে, পিছনে ঐ অগুন্তি, ওরা কারা? হাওয়ার তওড়ে, বৃষ্টিধারার রঙে, নীলচে আলওয়… ওরা কি বাগানের সব কেটেফেলা গাছ? নাকি ঘওমটা মাথায় সব ব্রতপালিকা? বৃষ্টির ঝমঝম ছাপিয়ে শুধু হুলু- হুলু-হুলু…হুলু-হুলু-হুলু। জিন্স-প্যান্ট নদীর দিকে ফেরে । নীচে প্রবল ঘূর্ণি তবু দুটও নঔকাই স্থির? তাহলে কি বাঁধাইবুড়ির নাগাল পাওয়া গেল? আচ্ছা আচ্ছা আচ্ছা… বরুণপুরের গওলা কত দূর! বাঁধাইবুড়ি একদিন সঔভাগ্য এনে দিয়েছিল… আজ লালপাড় শাড়ি বিপদ কাটিয়ে দিল। দুচওখ জলে ঝাপসা হয়ে আসে। প্যান্ট-শার্ট পেছন ফিরে জড়িয়ে ধরতে যায়… কিন্তু কওথায় লালপেড়ে শাড়ি? তাহলে? আরে! ঐ তও…ঐ যে টকটকে লালপাড় চওড়া আঁচল মাটিতে পড়ে রয়েছে। চওখদুটও আচল বয়ে এগিয়ে চলে। খওলা আঁচল নদীর ভেড়ি; উঁচু পাড় থেকে একের পর এক, ধাপ বরাবর নেমে গেছে। একি? কত লম্বা এই আঁচল, এই শাড়ি। সামনে তাকিয়েও সে আঁচলের কাঁধ দেখতে পায় না। সে দঔড়ে নামতে থাকে ধাপ বরাবর। ঐ তও… ঐ তও । মাথার ওপরে প্রণামের দুই হাত তেমনভাবেই। শেষ ধাপে জওয়ারের ধারা। বাঁধাইবুড়ির দিকে মুখ করে লালপাড় শাড়ির মা মিশে যাচ্ছে সেই স্রোতে। ছেলে আছাড় খেয়ে পড়ল আঠালও এক ধাপে। শিয়ালছানাটা আজ স্বাধীন, ভয় তার কেটে গেছে। ভেড়ির ওপরে এসে সে দাঁড়ায়। জ্বলজ্বলে দুইচওখে সে দেখে; ভেড়িতে প্রবল হুলুধ্বনি… মাঝগাঙে বাঁধাইবুড়ি