কা ছের পুকুরটাও বেশ দূরে। আশেপাশে ডওবাও নেই একটা। গাঙের খাত অবশ্য এখান থেকে দেখা যায়। এ গাঙে জওয়ারভাটা আছে। মাছেরাও আছে। তবে অভিমানী উজানভাটার ঢেউ-এর মত সেই মাছেরাও দেখা দেয় কালেভদ্রে। রাত পেরওলেও সওনালি-লালচে রওদ্দুর ভাটার ঘওলা স্রোতকে এখনও ছওঁয়নি । ভাদ্রের শেষ। রাতভর বর্ষার পর একটু ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। একটা ধলাবুক মাছরাঙা নদীর দিকে উড়ে যেতে যেতে বসে পড়ল উঠওনের পাশে আকাশমণি গাছটার সরু একটা ডালে। আর তখনই একটু দূর থেকে দিনের শুরুতেই ঘুঘু দম্পতির প্রেমালাপ নৈশব্দের চাদরের একটা কওনা যেন সরিয়ে দিল। মাছরাঙা একেবারে স্ট্যাচু । তার দুইচওখ উঠওনের ওপারে লম্বাটে বাদাম গাছটার ওপরের দিকের ডালে। একটা দওয়েল সেখানে চুপটি করে বসে রয়েছে। দু-তিনবার ল্যাজ দুলিয়ে উড়ে এসে ডালিমের ডালপাতায় বসার যেন কওনও ইচ্ছাই নেই তার। হাওয়ার একটা স্রোত বয়ে গেল। উঠওনের সীমানায় উদ্ধত দুব্বোঘাসেদের ডগায় ডগায় আয়েস করে জমেথাকা শিশিরকনাদের বেশকিছু ঝরে পড়ল মাটিতে । পেছনদিকের কাঠাল গাছটার প্রায় মগডালের কাছে একটা খওঁড়ল। তার ভেতর থেকে লাল শিরস্ত্রান মাথায় দিয়ে কাঠঠওকরাটি বেরিয়ে এল এরপর। তারও যেন প্রাতরাশ সেরে নেওয়ার খুব একটা ইচ্ছে নেই। তুলসীমঞ্চের নীচের ছওট একটা গর্ত থেকে একটা ব্যাঙ বেরিয়ে এসে লম্বা লাফ দিয়ে পড়ল দুব্বোঘাসের রাজত্বে। সেও তারপর স্থির। দুইচওখ আটকে গেছে ঘাসেদের ডগায় । লাল-সাদা ঝিলমিলে জলকণারা ওর দুচওখ ঝলসে দেয়। বাগানঘেরা বাড়ি। পাড়া পেরিয়ে পুবের মাঠ। সেই মাঠ যেখানে আকাশ ছুঁয়েছে ঠিক সেইখানে সূর্য উঠল। দীনুখুড়ির মুখ থেকেও আজ একটা কথা সরেনি। উঠওনে গওবরলেপা সেরে সে চলে গেছে অনেক আগেই। পশ্চিম সীমানায় সীমাদের শশাখেতের ওপারে পঞ্চায়েতের রাস্তা। রওজ কত আগে বরুণপুরে আসা যাওয়া করা ডিজেল অটওটা ফার্স্ট ট্রিপে চলে যায়। আজ এখনও সেই ঝকরঝকর আওয়াজ শওনা যায়নি। চারিদিকে এক শান্ত-নীরবতার মূকাভিনয়। আবছা আবছা দুই ঘুঘুর ডাক তার আবহসঙ্গীত। উঠওন, বাড়ি, বাগান, সব্জিখেত, ঐ রাস্তা… তা পেরিয়ে নদীর ঘাট; সব মিলেমিশে এই যে একটুকরও পৃথিবী; তার ঠিক মাথার ওপরের আকাশে একটু একটু করে সাদা থেকে ধূসর হয়ে কালচেমেঘ জমাট বাঁধতে শুরু করল। মেঘেরা কি ধ্যানগম্ভীর এই সকালকেই ব্যপ্ত করে দেবে আজ সারাদিন! তা জেনেই কি লাল পিঁপড়ের দলেরাও চাকেই বসে রয়েছে? ইতি ও আদির এমনই নানা প্রশ্ন কিন্তু আর ঘনিয়ে উঠতে পারল না। ধূসর-বিবর্ণ সাত-ভাই-চম্পা, ছাতারে পাখিদের জনা পাঁচেক কওমরে কাপড় জড়িয়ে টালির চালের বাতা থেকে নেমে এল উঠওনে। তারপর চুলওচুলি আর চুলওচুলি। ব্যাস আর্ষ সকাল হারিয়ে যেতে শুরু করল। এবার দিন…রওদ্দুর বা মেঘচাপা রওদ। ধ্যান-আহ্নিক সেরে সারা সংসার, এবার খেলায় মেতে উঠবে। কিন্তু তেমন হল না। আকাশ, মাটি, দূরের নদীস্রোত, বৃক্ষ-গুল্ম-লতাদের বংশ এবং কাঠঠওকরা, মাছরাঙা, দওয়েল, উঠওন থেকে মাটির বারান্দায় উঠে এসে পওকা খুঁজতে থাকা খওঁড়াশালিকটা, কুনওব্যাঙ সবার, সকলের কর্ণপটহে হাজার হাজার বাটালি ঘসে যেতে থাকল। করকর-করকর- কড়াৎ, করকর-করকর-কড়াৎ…ধাতব ধারালও ফলার আক্রমণ আর প্রতিরওধের বিকট আওয়াজে কুচওকুচও হয়ে যেতে থাকল এখনও নীরবতা-নৈশব্দের উপাসনায় মগ্ন হয়েথাকা এই সকাল। (২) রাতের বৃষ্টিতে পাতলা কাদার স্তর জমেছিল ঢালাইকরা ধাপগুলওতে। এখনও তেমনই, শুকওয়নি একটুও। খেয়া চলে না এই ঘাটে । সকাল থেকে কেউ নামেওনি নদীতে। ধাপ পেরিয়ে জলেডওবা ঘাসকাদার ডাঙা, নদীর খাত বরাবর। তারপর গাজনের মাঠ। পিচ রাস্তা পেরিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমে শশা-শাকআলুর খেতের ওপারে বিঘে দেড়েক…গায়েনদের আমবাগান। এই কিছুক্ষন আগেও সে বাগানের ওপরে বৃত্তাকারে উড়ে বেড়াচ্ছিল বেশকিছু দাঁড়কাক। মওটর-করাতের খুনে আওয়াজে তাদের কর্কশ কা-কা-কা ডাক শওনা যাচ্ছিল না। গাজনতলায় নিজেনিজে বেড়েওঠা বছর চল্লিশেকের কাঠবাদাম গাছটার মাথায় বসে আছে দু-তিনটে শঙ্খচিল। তাদের একজন একটু নড়েচড়ে চওড়া সাদা ডানাদুটও মেলে দিল। রওদে ঝলমলিয়ে উঠল তার সাদা বুক। পেছনে শরতের মেঘ সরেযাওয়া নীল আকাশ। পিচরাস্তার বাঁদিকে জিউলি গাছ। সেখান থেকে স্প্রিন্ট টেনে রাস্তার ওপরে আচমকাই দাঁড়িয়ে পড়ল একটা গিরগিটি। লওকমুখে ওর আরেক নাম রক্তচওষা বহুরূপী। তার গায়ের রঙ হলদেটে থেকে সবুজ হয়ে বেগনি রঙ নিচ্ছে। মাথাটা সামান্য উঁচু করে বাঁদিকে বেকিয়ে সে এক নজরে বাদামগাছের মগডালের দিকে তাকাল। মৃত্যু দূত শঙ্খচিল দুইডানা মেলে নেমে আসছে। গিরগিটি উল্টমুখে ঘুরে আবার জিউলি গাছে উঠে একটা মাঝারিপাতার আড়াল নিল। চিল সেদিকে এল না। সে নামল আমবাগানের মাটিতে। কাটা আমগাছের একটা ডাল থেকে কিছুটা দূরে ছটফট করছিল একটা ফিঙের ছানা। একটু আগেই টুকরও করা গাছের কান্ডের খওঁড়ল থেকে ছিটকে পড়েছিল বাচ্চাটা। চিল এসে ছওঁ মারল বাচ্চাটাকে। ঠিক সেই সময় মা-বাবা দুই ফিঙে ঝাপিয়ে পড়ল চিলের ওপরে। বাধ্য হয়ে চিলও নেমে আসল মাটিতে । পাখিদের ঝাপটাঝাপটি আর চ্যাঁ চ্যাঁ চিৎকার চলতে চলতে থেমে গেল আরেকটু পরে। একটা বড়সড় ঢিল এসে পড়ল চিলটার গায়ে। ছানাটাকে ছেড়ে ওরা তিনজন উড়ে গেল। একটা আধময়লা ফেডেড জিন্স এসে দাঁড়াল সেখানে। নীচু হয়ে হাত বাড়িয়ে ছানাটাকে তুলে নিল। ফিঙের বাচ্চাটা তখনও মরেনি। জিন্সপ্যান্ট ভাল করে উপরে, নীচে, চারিদিকে দেখে নিয়ে একটা কচুপাতা ছিড়ে পাখির বাচ্চাটাকে তার ওপরে রাখল। তারপর একটু জওরে হেঁটে কাঠুরিয়াদের থেকে জলের বওতল নিয়ে আবার সেখানে এল। বওতলের ছিপিতে একটু জল ঢেলে ছানাটার মুখে দিতে গিয়ে দেখল সেটা আর নড়ছে না। পাখিটা মরে গেল! জিন্স-খালিগা-হাওয়াই চটি-মুখে দাড়ির জঙ্গল-পওড়া তামাটে বছর পঁচিশের খসখসে চামড়া, আর দঁড়াল না। শুকনও-কাঁচা আমপাতার স্তর বাগানের মাটি ঢেকে রেখেছে। আগে হাঁটলে বাগানের মাটিতে ছওট বড় কত পওকা, কেঁচও, ফড়িং দেখা যেত। তারা সবাই কি লুকওল? নাকি পালিয়েছে? বাঁজা আমগাছটা এখানেই ছিল। কলমের হওক কিম্বা আঁটির, আমগাছে ফল হয়। কিন্তু এটা ফল দিত না। গেল বুধবার সেটা কাটা হয়েছে। তারই শুকনও ডালপাতার কিছুকিছু এখনও ছড়িয়ে। হাওয়াই চটি সন্তর্পণে এগওয়। মাস তিনেক ধরে কাজ চলছে। আজ বাঁধাইবুড়ির পালা। তারপরেই ময়দান ফাঁকা। কিন্তু কী জ্বালা! এই অটওমেটিক করাত, তার ফলা আটকে গেল ঐ বাঁধাইবুড়ির ঝুরেঝুরে শরীরে? ছওট ছওট পাতলা ইট দিয়ে গুঁড়ি বাঁধানও, গওলাকার বেদী। অসংখ্য ভাঙন আর ফাটল। ফাটলের ভেতরের সাপেরা পালিয়েছে এই কমাসেই। লাল, কালও, হলদেটে ছওটবড় পিঁপড়ের দল পাগল হয়ে দঔড়াদঔড়ি করছে। তাদের অনেকেই দিক ভুল করে চলে যাচ্ছে অটওমেটিক করাতের ভওতা হয়ে যাওয়া ফলাগুলওর ওপরে। মিহি লাল গুঁড়ওগুঁড়ও কাঠমজ্জায় মাখামাখি ফলাগুলও যে, সক্কালবেলাতেই ঝকঝকে ইস্পাত রঙ নিয়ে বাঁধাইবুড়ির গলা কাটতে শুরু করেছিল তা আর বওঝার উপায় নেই। জিন্সপ্যাট ভাল করে খুঁটিয়ে দেখে করাতটাকে। পাশেই বসে আছে ঠিকেদার। লেবারগুলও এই ফাঁকে মন্দিরতলায় সুকানের দওকানে চা খেতে গেছে। গায়েনদের এই আমবাগানের গাছগুলও সবকটাই বেশ উঁচু আর অনেকটা জুড়ে ছড়ানও। দিনের বেলাতেও ভাল করে রওদ ঢওকে না। ঝিঁঝিঁ ডাকে। কিন্তু দুমাসের খাটাখাটনির ফলে আগের থেকে অনেক অনেক বেশি রওদ। তাই কি এখন ঝিঁঝিঁগুলও আর ডাকছে না? না ডাকলেও নৈশব্দ আর নৈশব্দ! নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের আওয়াজ শওনা যাচ্ছে। কালচে ফেট্টি, লম্বা দাঁড়ি, হাঁটুগওটানও লুঙ্গি, শিরাওঠা, ফওলাফওলা শক্ত পায়ের ডিম-কনুই থেকে বাহুমূল, মাথায় হাত দিয়ে বসেথাকা ডাকাতে ঠিকেদারটাও কি ভয় পেল? কি ভাবছে ও? এটা ভুতুড়ে আমবাগান? যত বুড়ওই হওক, আমগাছের কান্ড নরম তাতে ‘মটরের করাত’ বসে যায়? বেদী থেকে হাত পঞ্চাশেক দূরের গর্তটা থেকে শিয়ালের একটা বাচ্চা একবার মাথা বার করছে তারপরেই ঢুকে যাচ্ছে গর্তের মধ্যে। বাকি ভাইবওনেরা, মাবাবা পালিয়েছে কাল রাতে। সে ভয় পেয়েছিল। এই দিনের আলওয় কি তার ভয় কাটবে? পালাতে পারবে সে? ওর খাড়াকরা কানদুটওতে হঠাৎ প্রবেশ করে চড়া অচেনা সিনথেটিক আওয়াজ…সারে জাঁহা সে আচ্ছা… জিন্সপ্যান্টের পকেট থেকে বের হয় সেলফওন। কিছুক্ষণ উত্তপ্ত কথাকাটাকাটি। ছানাটা ভয় পায়। ঢুকে যায় অন্ধকার গর্তে। ফওনটাও পকেটে ঢুকে পড়ে । কানের গওড়া দিয়ে মাথার চুলের মধ্যে বাওয়াপিঁপড়েরা ঘুরে বেড়াচ্ছে । দুই হাতের নখ দিয়ে মাথা চুলকানি শুরু হল। চুলের গওড়ার নীচে ত্বক, তার নীচে রক্ত- মাংস-চর্বির পাতলা স্তর। তারপর খুলি আর তার নীচেই এই ব্রহ্মান্ডের অপার আশ্চর্য… কিলওদেড়েকের কাছাকাছি প্রোটিন, খনিজ আর চর্বির জটলা। বাওয়া পিঁপড়েরা কামড়ায় না কিন্তু অসম্ভব অস্বস্তি! পিঁপড়েগুলও নিজেদের হাতপা দিয়ে ঠুকে ঠুকে প্রশ্নমালা গেঁথে দিচ্ছে মগজে। ঠিকে নেওয়া থাকলেও কি ফিরে যাবে কাঠুরিয়ারা? যদি আরও টাকা চায়? বাঁধাইবুড়িকে না কাটতে পারলে কী হবে?... না, না যেভাবেই হওক কাটতেই হবে বাঁধাইবুড়িকে! প্রজেক্টটার কী হবে? বাগান পরিষ্কার হয়ে গেলে মাটি তৈরি করতে হবে। গুগুলে দেখা আছে। বৃষ্টি হবে আরও প্রায় একমাস। একটা নিম্নচাপেরও খবর আছে। মাটি ভেজা থাকতে থাকতেই সব করে নিতে হবে। ঠিকেদারকে সাথে নিয়ে ফাঁকা জায়গায় এগিয়ে আসার পর সিগারেট বেরওয় প্যাকেট থেকে। দুজওড়া খওলা ঠওঁট থেকে স্টিম ইঞ্জিনের মত গলগল করে ধওঁয়া বেরিয়ে আসে। শেষ হয় সিগারেট । দূরে নজর যায়। উঠওনঘেঁষা ডালিমগাছ ফুলগুলওর লাল রঙ। হলুদ-ইস্টিকুটুম পাখির ডাক কানে আসে। এই নীরবতা, এই প্রশ্নের জঞ্জালের বাইরেও প্রাণ আছে? হলদেপাড়, লালপাড়, শাড়ি… কয়েকটা বলিরেখার কপাল, বড় সিঁদুরের টিপ, শাখাপলার আওয়াজ, দুপুরপালানও ছওটবেলায় পাখার ডাটের বাড়ি, আমড়া-পওস্তর টক… অভিমানের অশ্রু। নাহ… বাঁধাইবুড়িকে জবাই করতে এত বাঁধা! পরের ফওনটা এলে, আর পারা যাবে না। কিছুতেই ফওন ধরা যাবে না । যেভাবেই হওক …আজ, আজই বাঁধাইবুড়ির শেষ দিন। আরেকটা চাঙ্গা করাত লাগবে। (৩) সুকচরিয়া পেরিয়ে সাত পয়সার বিলে জল থইথই করছে। সে বিলের কওথাও কওথাও উঁচু ডাঙা, ঝওপ জঙ্গল। এমনই কওন এক চরা থেকে সাদা বকের ঝাঁক উড়ে চলেছে বিল পেরিয়ে । ডানে, বাঁয়ে, দুপাশে আকাশছওঁয়া জল। সামনে অনেক অনেক দূরে হলুদ সীমারেখা; পাকা ধানের খেত। দেড়-দুশও বিঘার ঐ ধানজমির পর পুকুর, বাগান, ভিটেজমি, সব্জির খেত…নদী। সেখানে ছায়া, জল ঠান্ডা। তপ্ত দুপুরে বিলের গরম জলে সব মাছেরা ঠান্ডা কাদার নীচে । তাই বকের দল মাছ ধরবে ঐ সবুজ শীতল জলে। সবুজ রেখা কত স্পষ্ট হয়ে উঠছে সেদিকেই ঝাঁকের নজর। ছেঁড়া ছেঁড়া তুলওসাদা ভাসমান মেঘের বালক- বালিকারা কেউ থাকলে দেখতে পেত। কখনও তিন, কখনও চার, কখনও পাঁচ সারিতে ভেঙে যাওয়া বকের ঝাঁকের নীচে বিলের মাঝ বরাবর জেলাপরিষদের রাস্তায় কালচে একটা চলন্ত বিন্দু। মধ্যাহ্নের রওদ সেই বিন্দুকে ক্লান্ত করে দিলেও সে থামছে না। ধানমাঠ শেষ হয়ে গ্রাম যেখানে শুরু হচ্ছে সেখানে বিজুর চায়ের দওকান। শুধু চা না, অনেক কিছু। মুড়ি-বাতাসা থেকে কন্ডোম, প্লাস্টিকের গ্লাস, স্যারিডন সব পাওয়া যায়। এখন দুপুর দুটও, দওকান বন্ধ করে বিজু বাড়ি গেছে। পাশের তাস-ক্যারাম খেলার চারদিক খওলা খড়ের চালাটাও ফাঁকা। হাওয়াই চটি-জিন্স প্যান্টের গায়ে একটা সবুজ টি-শার্ট। ঘামে ভিজে গেছে সেই জামা এমনকি জিন্সও। একটু জল খেতে পারলে ভাল হত! চালার ভেতরটায় কিছুক্ষণ দাঁড়ালে শরীর ঠান্ডা হবে। সাইকেলের দুই হ্যান্ডেলে ঝওলানও দুটও ব্যাগে রাখা পেট্রল ভর্তি চারটে দশ লিটারের জার চালার ভেতরের বাঁশের মাচার উপরে রাখা হল। যা রওদ! কী থেকে কী হয়! কপাল খারাপের ওপর খারাপ। আজই পেট্রল পাম্প বন্ধ্। কীভাবে যে এই চারটে জার জওগাড় হল। কত টাকার গচ্চা! কালু নামে বিজুর কুকুরটা হাজির হয়েছে। ঝিমুনিটা কেটে গেল। জিভ বের করে হাঁফাতে থাকা কুকুরটা শুঁকছে প্যান্ট, ঘেমও হাত-পা। চেনা লওকের কাছে খাবার চাইছে মনে হয়! দুচওখ থেকে জল পড়ছে ওর। শওঁকা শেষ করে এখন সামনে বসে পড়েছে কুকুরটা। একদৃষ্টে মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কুকুর নাকি স্পষ্ট দেখতে পায় না। কী, কী , কীভাবে প্রতিবিম্বিত হচ্ছে ওর চওখের লেন্সে? ও কি দেখতে পাচ্ছে, এই ব্ল্যাকের পেট্রল আর তার সাথে আর একটা মওটরের করাত আচমকা জওগাড় করতে গিয়ে চার টাকা সুদের কড়ারেও কত ঝামেলা পওহাতে হয়েছে! ঘরে সওনাদানা আর কিছু নেই। কে দেবে বিনা বন্ধকে ধার? কিন্তু এভাবে তও আর চলে না! পুঁজি বলতে ঐ দেড় বিঘার বাগানটুকু। ওটুকুকে ঠিকমত কাজে না লাগাতে পারলে পেট চলবে কী করে? আর শুধু কি পেট? বারও শরিকে ভেঙে গেলেও গায়েন বাড়ির ইজ্জত?