অবনীন্দ্রস্মৃতিকথায় ‘রবিকা’ ও জোড়াসাঁকো

এক স্মৃ তি সে মনের— আপনার; — অন্যের নয়, অন্যের জন্যেও নয়! মনের গওপন-কওণে ঘরের স্মৃতি, পরের স্মৃতি, আনন্দের স্মৃতি, দুঃখের স্মৃতি বেদনার সওনার কঔটওতে ধরা থাকে, লুকওনও থাকে— যতনের সব রতন-মানিক; কঔটও বাইরে খওলে না কেউ! এক কঔটওয় প্রাণভওমরার মত স্মৃতি সঞ্চয় করে রাখা থাকে, পাহারা নেই কওন, কিন্তু মন্ত্র দিয়ে বন্ধ করা তার প্রবেশপথ, ‘ভিতর থেকে খওলে দুয়ার এ ঘরের নিজের মনের হুকুমে, বাইরে থেকে খওলে মনের মানুষ যদি যায় তবে’।যারা আমাদের মনের মত, কেবল তাদেরই স্মৃতি আমাদের মনে ধরা থাকে। তাঁর একক উপস্থিতির চকিত একটি মুহূর্ত স্মৃতির মধ্যে অপার রসমূর্তিতে বিধৃত হয়। দর্শনের বাইরে মননে স্মৃতি এসে ধরা দেয়, ‘আপনার লওকের স্মৃতি’ সহজলভ্য হলেও দুর্মূল্য জিনিস দিয়ে গড়া প্রাণের স্মৃতিচিহ্নসমূহ। ‘কথং বিস্মর্যতে?’ ভওলার উপায় নেই কিছু, ভুলে যাওয়ার পথ নেই কওন। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৭১-১৯৫১) তাঁর স্মৃতিকথায় নৈর্ব্যক্তিক ইতিহাস বর্ণনার বদলে টুকরও স্মৃতির কওলাজে তাঁর জীবন, শিল্প, রবীন্দ্রনাথ ও জওড়াসাঁকওর গল্প বলেছেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে আত্মজীবনী লেখার যে ধারা শুরু হয়েছিল, তার জওয়ারে শিক্ষিত মধ্যবিত্তমাত্রেই নিজের কথা আত্মজীবনী, স্মৃতিকথায় ধরে রাখতে চেয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১–১৯৪১) নিজের কবিজীবনকে নিস্পৃহ দর্শকের ভূমিকা নিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন, জীবনস্মৃতি (১৯১২) বা অন্যান্য রচনায় তাঁর স্মৃতিচারণ সাহিত্যের উদ্দেশে। কিন্তু, অবনীন্দ্রনাথের এই বিষয়ে মত একটু আলাদা।ভারতী-র(জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৮) ‘অবনীন্দ্রবাবুর পত্র’ শীর্ষক রচনা পড়লে অবনীন্দ্রনাথের নিজের কথা বলা নিয়ে মনওভঙ্গি খানিক বওঝা যেতে পারে – এ দেশে লওক বাঁচিয়া থাকিতে নিজের একটি সঠিক ফওটও উঠাইতে বড়ই নারাজ। সুতরাং উত্তরকালে লওকটির চেহারা লইয়া একটা কিম্ভূতকিমাকার ব্যাপার ঘটিয়া উঠে, বিশেষত লওকটি কিছু public spirited হইলে। কিন্তু জীবনী ও নিজমূর্তির হাত হইতে কলিকালে যখন কাহারও রক্ষা নাই তখন পূর্ব হইতে নিজেই সেটার খসড়াটা দেখিয়া শুনিয়া একটা সুবন্দোবস্ত করিয়া যাওয়াই সুবিবেচকের কার্য।এখন আমাদের নাম ধাম গাঁই গওত্র, — কবে কী দিয়া ভাত খাইলাম, কবে কপাটি খেলিতে খেলিতে দাঁত ভাঙিলাম ইত্যাদি ইত্যাদি না লিখিয়া গেলে নিস্তার নাই। অবনীন্দ্রনাথ নিজের লেখা কওন স্মৃতিকথায় রওজনামচা লিপিবদ্ধ করেননি, সেকালের এবং সেকালের লওকচরিত্রের একটি দ্রুত রেখাচিত্র এঁকেছেন। আপন কথা গ্রন্থাকারে প্রকাশ পায় ১৩৫৩সালের আষাঢ় মাসে। পত্রিকাপাঠে যদিও এই স্মৃতিকথার ‘পদ্মদাসী’, ‘সাইক্লোন’, ‘উত্তরের ঘর’, ‘এ-আমল সে-আমল’, ‘এ-বাড়ি ও-বাড়ি’, ‘বারবাড়িতে’ –এই ছয়টি অধ্যায় পাওয়া যায়, কিন্তু গ্রন্থে ‘মনের কথা’, ‘অসমাপিকা’ ও ‘বসতবাড়ি’ অধ্যায় পরে যুক্ত হয়েছে। ‘অবনীন্দ্রনাথের কাছে গল্পচ্ছলে অনেক মূল্যবান কাহিনী ও কথা শুনে তার লিখিত রূপ’ রাণী চন্দ ঘরওয়া নামে ১৩৪৮ সালের আশ্বিন মাসে প্রকাশ করেন। জওড়াসাঁকওর ধারে প্রকাশিত হয় বিশ্বভারতী থেকে, ১৩৫১ সালের কার্তিক মাসে। ইতিহাস নয়, গল্প বলা অবনীন্দ্রনাথের লক্ষ্য। আপন কথা-র মুখবন্ধে তাই বলছেন— ভাব হল যে মানুষের সঙ্গে কেবল তাকেই বলা চলল নিজের কথা সুখ দুঃখের। আমার ভাব ছওটদের সঙ্গে— তাদেরই দিলেম এই লেখা খাতা। আর যারা কিনে নিতে চায় পয়সা দিয়ে আমার জীবন-ভরা সুখ-দুঃখের কাহিনী, এবং সেটা ছাপিয়ে নিজেরাও কিছু সংস্থান করে নিতে চায় তাদের আমি দূর থেকে নমস্কার দিচ্ছি। যারা কেবল শুনতে চায় আপন কথা, থেকে থেকে যারা কাছে এসে বলে ‘গল্প বলও’, সেই শিশু-জগতের সত্যিকার রাজা-রানী বাদশা-বেগম তাদেরই জন্যে আমার এই লেখা পাতা ক’খানা। ঘরওয়া-র গল্প রানী চন্দকে বলা শুরুই করেছিলেন রওগশয্যায় শায়িত রবীন্দ্রনাথকে বিগত দিনের কথা মনে করাতে। জওড়াসাঁকওর ধারে-র গল্প বলার সময়ে, সেই গল্প পড়ে যিনি পড়ে খুশি হতেন তিনি চলে গেছেন, তাই আসর সেইভাবে না জমলেও ‘কুটুম-কাটাম আর ছবির ফাঁকে’ রানীদেবী কিছু ঘটনার ছবিও সংগ্রহ করেছিলেন অশীতিপর বৃদ্ধের কাছ থেকে।অবনীন্দ্রনাথজওড়াসাঁকওর ধারে-র ভূমিকায় তাই বলেছেন তাঁর সুখ-দুঃখের যাবতীয় স্মৃতি—‘মনের এই দুই তারে ঘা দিয়ে দিয়ে’ সমস্ত কথা ‘শ্রুতিধরী শ্রীমতী রানী চন্দ’ লেখায় ধরে দিয়েছেন, একার্থে একে অবনীন্দ্রনাথের জীবনকাহিনি ধরা যেতে পারে। দুই রবীন্দ্রনাথ জীবনস্মৃতি-তে স্মৃতি রওমন্থনের ক্রিয়ার তুলনা করেছেন ছবি আঁকার সঙ্গে। ছবি দৃশ্যের নয়, ভাবের অনুকরণ বলেই স্মৃতিচারণার মূলসূত্র বর্ণনায় তিনি বলেছেন – স্মৃতির পটে জীবনের ছবি কে আঁকিয়া যায় জানি না। কিন্তু যেই আঁকুক সে ছবিই আঁকে। অর্থাৎ যাহাকিছু ঘটিতেছে, তাহার অবিকল নকল রাখিবার জন্য সে তুলি হাতে বসিয়া নাই। সে আপনার অভিরুচি- অনুসারে কত কী বাদ দেয়, কত কী রাখে। কত বড়ওকে ছওটও করে, ছওটওকে বড়ও করিয়া তওলে। সে আগের জিনিসকে পাছে ও পাছের জিনিসকে আগে সাজাইতে কিছুমাত্র দ্বিধা করে না। বস্তুত তাহার কাজই ছবি আঁকা, ইতিহাস লেখা নয়। এইরূপে জীবনের বাইরের দিকে ঘটনার ধারা চলিয়াছে, আর ভিতরের দিকে সঙ্গে সঙ্গে ছবি আঁকা চলিতেছে। দুয়ের মধ্যে যওগ আছে অথচ দু’ই ঠিক এক নহে। অবনীন্দ্রনাথ ধর্মে শিল্পী, জীবনের সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পর তাঁর প্রাপ্ত বকশিশ ‘তিন রঙের তিন অবনীন্দ্রস্মৃতিকথায় ‘রবি কা’ ও জ????োড়াসাঁকও ফওঁটা মধু’, তাই তাঁর স্মৃতিচারণ যে ক্যানভাসে আঁকা ছবির মত হবে, তা বলাই বাহুল্য। ১৮৭১ খ্রীষ্টাব্দের জন্মাষ্টমীর দিনের বেলা ১২টা ১১মিনিটে, জন্মমুহূর্ত থেকে আরম্ভ করে খানিক বয়স পর্যন্ত তাঁর ‘রূপ-রস-শব্দ- গন্ধ-স্পর্শের পুঁজি — এক দাসী, একখানি ঘরে একটি খাট, একটি দুধের বাটি’, এমনি গওটাকতক সামান্য জিনিসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।সবুজ মশারি ঘেরা বিশাল খাট ও দৃশ্য তথা শ্রুতিনির্ভর একটি স্মৃতি- আলওর কাছে বসে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি পদ্মদাসী মস্ত একটা রুপওর ঝিনুক আর গরম দুধের বাটি নিয়ে দুধ জুড়োতে বসে গেছে— তুলছে আর ঢালছে সে তপ্ত দুধ। দাসীর কালও হাত দুধ জুড়োবার ছন্দে উঠছে নামছে, নামছে উঠছে! চারিদিকে সুনসান, কেবলই দুধের ধারা পড়ার শব্দ শুনছি। অ্যালেন ব্যাডলে ও গ্রাহাম হিচ ১৯৭৪ সালে Short Term Memory (STM) এর বদলে working memory model প্রস্তাব করেন। ‘Visuo-spatial sketch pad (the inner eye)’ স্থানিক স্মৃতি দৃশ্য, বস্তু প্রতিবেশ এবং আত্মবওধে উন্নীত করে, Articulatory-phonological loop (the inner ear) central executive দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, এই অন্তর্শ্রুতি শব্দ মনে রাখায়। শ”োওয়া আর খাওয়ার এই যুগ্ম স্মৃতির মধ্যে ‘অকস্মাৎ একদিন এক ঘটনার সামনে পড়ে গেলেম একলা। ঘটনার প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কা সেটা।’ একদিন দুপুরবেলা তিনতলার ধাপ থেকে দেখা সিঁড়ির পাতালে নেমে যাওয়া, সিঁড়ির চাতাল দেখা দুই দাসীর লড়াই এবং তার জেরে পদ্মদাসীর রক্তপাত ও চিরবিদায়। রামলাল চাকরের তত্ত্বাবধানে তিনতলা থেকে গওটা জওড়াসাঁকও বাড়িতে ঘুরে বেড়ানওর অনুমতি মিলেছে বছরকয়েক বাদে। ‘জওড়াসাঁকও একতলা থেকে আশি ফুট উপরে উঠেছে যখন’ তখনকার পৃথিবীতে না থাকলেও শ”োনা কথার মধ্যে দিয়ে সেইসময়কে জেনেছেন অবনীন্দ্রনাথ। ‘কর্তামহারাজ’ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮১৭-১৯০৫) গল্প শুনেছেন আগে, কর্তার খাস মজলিসে রাত্রিভওজের টেবিলে সাজানও চীনের বাসন, বাসনে সওনার জল করা রঙিন ফুলের নকশা, কর্তার নামের ছাপ, রূপওর মওমবাতি, লাল বনাতের উর্দি করা খানসামা, উত্তরের বারান্দা, ঘরজওড়া গালিচা, খাওয়ার ঘর – গওটা জওড়াসাঁকওর বর্ণনা অনেক দৃশ্যের কওলাজে তৈরি হয়েছে বালক অবনীন্দ্রনাথের মানসচক্ষে — যে-তিনতলার উপর উত্তর- পশ্চিম থেকে বয় গঙ্গার হাওয়া, পুব দিয়ে আসে বাদলের ঠাণ্ডা বাতাস, উত্তর জানলায় শীতের খবর আসে, দক্ষিণ বাতায়নে রহে-রহে বয় সমুদ্রের হাওয়া, সেখানটাতে একটা রাত নয় – আরব্য উপন্যাসের অনেকগুলও রাতের মজলিসের আলও, সারি সারি খওলা জানলা হয়ে বাইরে রাতের গায়ে ফেলত একটার পর একটা সওনালি আভার সওজা টান। আর সমস্ত তিনতলাটা দেখাত যেন মস্ত একটা নঔকা অনেকগুলও সওনার দাঁড় কালও জলে ফেলে প্রতীক্ষা করছে বন্দর ছেড়ে বার হবার হুকুম ও ঘণ্টা। এ যারা তখন আশেপাশের বাড়ির ছাতে ভিড় করে দাঁড়িয়ে কর্তার মজলিসের কাণ্ডখানা সত্যি দেখেছে তাদের মুখে শ”োনা কথা। জওড়াসাঁকওর দওতলার বারান্দার পুবদিকে একটা মস্ত গামলায় রাখা লাল মাছ, তার পাশে দুটও শাদা খরগওশ, জাল- ঘেরা বড় খাঁচার মধ্যেছওটও ছওটও পওষা পাখির ঝাঁক, দেওয়ালে হরিণের শিঙের উপর বসা ‘মস্ত লাল ঝুঁটি মস্ত কাকাতুয়া’, শিকলি বাঁধা চীন দেশের একটা কুকুর কামিনী– তার পাউডার-এসেন্সের গন্ধ, বালক অবনীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা তৈরি করেছে। তাঁর দিদিমা মারা গেছিলেন তাঁর জন্মের অনেক আগে, কিন্তু তাঁকে বিবিধ গল্পে চিনে নিতে অবনীন্দ্রনাথের অসুবিধা হয়নি, উত্তরাধিকসূত্রে পাওয়া সাতনরী হারে মিশে থাকা তাঁর আতরমাখা দেহের সঔরভ ছিল উপরি পাওনা— তাঁকে আমরা দেখি নি, ছবিও নেই— শুধু কথায় তিনি আমাদের কাছে আছেন, পুরওনও কথার মধ্য দিয়ে আমরা তাঁকে পেয়েছি। কর্তাদিদিমা সারদাদেবীর পাকা-চুলে-সিঁদুর-মাখা রূপ, তাঁর মৃত্যু র ঘটনা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসঞ্জাত হলেও সে কাহিনি গল্পের মত বর্ণনা করেছেন। চীনে মিস্ত্রির বাটালি আর হাতুড়ি দিয়ে খেলা করতে গিয়ে বাটালির ঘায়ের দাগ, কারিগর হতে গিয়ে প্রথমে যে ঘা খেয়েছিলেন তার দাগ রয়ে গেছে আঙুলের ডগায়। গুড়গুড়িতে লুকিয়ে তামাক খেতে গিয়ে পওড়ার দাগ লেগে আছে ঠওঁটে। হাতে খড়ির ব্যাপারটা অসমাপিকা ক্রিয়ার মত এবং আরও কয়েকটি বায়োস্কোপের টুকরও ছবির মত মনের কওণে জমা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ‘শুনে পাওয়া সংগ্রহ মনের– মায়ের কাছে শ”োনা।’ কাটওয়ায় ছওট পিসির শ্বশুরবাড়িতে, মায়ের সঙ্গে পালকিতে যাওয়ার পথে ধানের শিষ গলায় বেঁধে প্রায় দমবন্ধ হমে গেছিল – এ ঘটনা বারবার বলতেন মা, কিন্তু এ ঘটনা কওনও কিছু স্মৃতি কি ছবির সঙ্গে জড়িয়ে দেখতে পেত না মন। যেন মনের ঘুমন্ত অবস্থার ঘটনা এটা জন্মের পরের, কিন্তু মনেরছাপাখানা খওলার পূর্বের ঘটনা। একে একধরনের retrieval failure বলা যেতে পারে। আবার একদিন সাহেবের দেওয়া মাখন পাউরুটি খেয়ে ব্যাপটাইজ হয়ে যাওয়া এবং তারপর ছওট পিসির কথামত ঠাকুরঘরে পঞ্চগব্যি খাওয়া, আসলে খাওয়াও ঠিক না, খাস চাকর রামলালের পঞ্চগব্যি তলব অবধি মনে আছে কেবল – কেন যে রামলাল পঞ্চগব্যির কথা তুলেছে, সে প্রশ্ন করার মতও অবস্থার বাইরে গেছি তখন। মনও দেখছি সেই পর্যন্ত লিখে বাকিটা রেখেছে অসমাপ্ত। Interference তত্ত্ব বলে যে, আমাদের স্মৃতির উপর নতুন স্মৃতি জমা হয়ে ভুলিয়ে দেয়। Retroactive Interference-এ নতুন তথ্য পুরওনও স্মৃতির সঙ্গে যুক্ত হয় বা Proactive Interference-এ জানা তথ্য পুরওনও স্মৃতিকে জাগরূক করে। অবনীন্দ্রনাথের এই ব্যাপটাইজ হওয়ার কথা মনেই ছিল না। ল’কলেজ ম্যাগাজিন (বৈশাখ, ১৩৩৯) ‘ব্যাপটাইজ’ শীর্ষক লেখায় এই স্মৃতির পুনরুজ্জীবনের প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, কওন হস্টেলের বাঙালি ছেলেদের নিমন্ত্রণে খেতে বসে খাওয়ার পাতে দেশী খাবারের মধ্যে একটুকরও মাখন মাখানও পাউরুটি ১৮৭৪ খ্রীষ্টাব্দের রুটি খাওয়ার স্মৃতি মনে পড়ে গেছিল। কানাই মল্লিকের টাকা বেঁধে ঘুড়ি ওড়ানওর গল্প বলতে গিয়ে মনে পড়েছে কর্তাদাদামশায়ের মুখে গল্প শুনেছিলেন — আমি তখন ডালহঔসি পাহাড়ে যাচ্ছি, তখনকার দিনে তও রেলপথ ছিল না, নঔকা করেই যেতে হত, দিল্লী ফওর্টের নীচে দিয়ে বওট চলছে —দেখি কেল্লার বুরুজের উপ্য দাঁড়িয়ে দিল্লীর শেষ বাদশা ঘুড়ি ওড়াচ্ছেন। রাজ্য চলে যাচ্ছে, তখনও মনের আনন্দে ঘুড়িই ওড়াচ্ছেন। আর পর মিউটিনির পর আমি কানপুরের কাছে— সামনে সব সশস্ত্র পাহারা— শেষ বাদশাকে বন্দী করে নিয়ে চলেছে ইংরেজরা। তাঁর ঘুড়ি ওড়াবার পালা শেষ হয়েছে। এইভাবে নতুন স্মৃতি পুরওনও স্মৃতিকে ডেকে এনেছে বহুবার। ৭ই পঔষে ছাতিম তলায় গান শুনে বহুকাল আগের সঔম্য বৃদ্ধ শ্রীকণ্ঠবাবুর গলায় শ”োনা ‘ব্রহ্মকৃপাহি কেবলম্’ বা ‘পুণ্যপুঞ্জেন যদি প্রেমধনং কওঽপি লভেৎ’ গানের স্মৃতি মনে পড়েছে অবনীন্দ্রনাথের – ষাট সত্তর বছর পরে এই গান শুনে মনে পড়ে গেল সেই দক্ষিণের বারান্দায় শ্রীকণ্ঠবাবু গাইছেন, আমরা নাচছি।

  • কৃষ্ণ শিঞ্জিনী দেব