ন বাব নাজিম মুর্শিদ কুলি খাঁর সময়ে বাংলার ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা ঢেলে সাজানও হয়। সেই সময়ে উচ্চবর্ণের হিন্দুসমাজের প্রতিনিধিরা বাংলার রাজস্ব সংগ্রাহক বা জমিদার হিসাবে নিযুক্ত হন। এঁদের মধ্যে সর্ববৃহৎ ছিলেন বর্ধমান , বীরভূম , বিষ্ণুপুর , নদিয়া , দিনাজপুর এবং নাটওরের মহারাজারা। মূলত উচ্চবর্ণের হিন্দুদের নবাব নাজিম অনেক বেশি নিরাপদ মনে করতেন এবং তাঁদের সেই কারণে ক্ষমতা দিয়েছিলেন রাজস্ব সংগ্রহের। কওম্পানির আমলে ১৭৫৭ থেকে ১৭৯৩ সল্ পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের গন্ডগওল , দুর্ভিক্ষ এবং একই সময়ে ইংরেজদের উত্তর আমেরিকার উপনিবেশ হারানওর ফলে ব্রিটিশ সরকার কওম্পানি রাজত্বের উপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করেন এবং লর্ড কর্নওয়ালিস যিনি আমেরিকার ইয়র্ক টাউনের যুদ্ধে পরাজিত হন তাঁকে ভারতের গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত করেন এবং তিনি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রচলন করেন যার ফলে রাজস্ব সংগ্রাহক জমিদার পরিণত হন মধ্যস্বত্বভওগী পরগাছা ভূস্বামী শ্রেণীতে। সেই সঙ্গে যেহেতু অধিকাংশ জমিদার হিন্দু ছিলেন তাঁরা পরিণত হন বাংলার এই নয়া সামন্তবাদী ব্যবস্থার শরিকে। পূর্ব বাংলার কৃষকদের মধ্যে অধিকাংশ ছিলেন মুসলমান। তাঁরা পরিণত হন প্রজা সমাজে। এই জমিদার প্রজার দ্বন্দ্ব বাংলার সামাজিক ক্ষেত্রে হিন্দু মুসলমান এবং দলিতদের মধ্যেকার সম্পর্কের নিয়ন্তা হয়ে দাঁড়ায়। আবার কলকাতার মধ্যে ইংরেজদের দালাল বা মধ্যস্থ কারী গওমস্তা হিন্দু ব্যবসায়ী শ্রেণী প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। ১৮৪৮ সালে কলকাতার ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কলকাতার হিন্দু ব্যবসায়ী মহলের বহু অংশ আবার জমিদারিতে বিনিয়ওগ করেন। তাঁদের মধ্যে জওড়াসাঁকওর ঠাকুর পরিবারের দ্বারকানাথ ঠাকুর অন্যতম। তিনি ব্যবসায়ী থেকে জমিদারএ রূপান্তরিত হয়েছিলেন। অর্থাৎ বাঙালি হিন্দু জমিদার শ্রেণী ইংরেজ শাসকদের দয়াতে বাংলায় তাদের মওরসিপাট্টা গেড়ে বসেন। ( সূত্র ব্লেয়ার বি কিং Partner in Empire Dwarkanath Tagore and the Age of Enterprise in Eastern ইন্ডিয়া ; Berkeley : University of California Press ,1976 ) ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে ইংরেজ শাসনের সহযওগী নতুন উদীয়মান কলকাতার বাবুসমাজ সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একটি জীবন জিজ্ঞাসার অনুসন্ধান শুরু করেন। সেই সঙ্গে তাঁরা ধীরে ধীরে আরবি ফারসি অধ্যয়ন থেকে ইংরেজি অধ্যয়ন শুরু করেন। সেই অর্থে রামমওহন এবং মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ছিলেন শেষ ফার্সি ভাষায় পন্ডিত হিন্দুদের মধ্যে। সেই সঙ্গে কলকাতায় স্থাপিত ইংরেজ আমলাদের শিক্ষার জন্যে ফওর্ট উইলিয়াম কলেজ এ বাংলাভাষার চর্চার পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয় নতুন বাংলা গদ্যের। মৃত্যু ঞ্জয় তর্কালঙ্কার , রামরাম বসু প্রমুখের কল্যানে বাংলাভাষা হয়ে ওঠে ফার্সি বর্জিত তৎসম বহুল একটি গদ্য। ভারতের ইতিহাস রচনায় ইংরেজদের জ্ঞানভাষ্য বহুলাংশে গ্রহণ করেন নব্য বাবুসমাজের বুদ্ধিজীবীরা। ফলে টড , গ্রান্ট ডাফ এলফিস্টোন এবং হেনরি মিয়ার্স এলিয়ট এবং সর্বোপরি জেমস মিল এর ইতিহাস পড়ে তাঁদের মধ্যে দিল্লির সুলতানি এবং মুঘল শাসনের প্রতি জেগে ওঠে বিবমিষা। আর অন্যদিকে বাংলায় সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমান সমাজ পরিণত হন নীরব সংখ্যাগুরু তে যা প্রায় অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিকতাবাদ বলা যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে নতুন জাতীয়তাবাদ এর উত্থান মূলত হিন্দু জাতীয়তবাদী বলা যায়। বাঙালি হিন্দু লেখকরা বাংলার প্রাক ঔপনিবেশিক যুগে র লেখক সৈয়দ সুলতান থেকে আলাওল পর্যন্ত লেখকদের কথা ভুলে গেলেন। যে ভাষায় রচিত হয়েছিলও সেই অপূর্ব কাব্য প্রথমে প্রণমি প্রভু অনাদি নিধান নিমিষে সৃজিছে যেই এ চঔদ্দ ভুবন৷ আদি অন্ত নাহি তার নাহি স্থান স্থিত৷ খন্ডন বর্জিত রূপ সর্বত্রে ব্যাপিত।[ নবী বংশ ] সেই বাংলাসাহিত্যের ইতিহাস কলকাতার নব্যবাবুসমাজ বিস্মৃত হয়েছিলেন। আবার এই নতুন বাবুসমাজের লেখকদের মধ্যে মুসলমান বিদ্বেষ স্পষ্ট ছিল। প্যারীচাঁদ মিত্র , প্রখ্যাত পুরাতত্ত্ববিদ এবং ফার্সি পন্ডিত রাজেন্দ্রলাল মিত্র কালী প্রসন্ন সিংহ প্রভৃতি বহু মনীষী এই ধারণা পওষণ করতেন। এমন কি প্রখ্যাত অর্থিনীতিবিদ রমেশ চন্দ্র দত্ত মহারাষ্ট্র জীবন প্রভাত উপন্যাস রচনা করেন। তিনি ভুলে গিয়েছিলেন তাঁর থেকে মাত্র একশত বৎসর আগে গঙ্গারাম বসু মহারাষ্ট্রপুরাণে পশ্চিমবাংলার হিন্দু সমাজের উপর বর্গীদের হাঙ্গামার কি তীব্র অত্যাচারের বর্ণনা দিয়েছিলেন।মহারাষ্ট্র জীবন প্রভাত যে বাংলার ক্ষেত্রে শুভ সূচনা করে নি সেকথা ডাফ এর রচিত ইতিহাস পড়ে তাঁরা ভুলে যান। ঋষি বঙ্কিমের জাতীয়তাবাদ ছিল হিন্দু জাতীয়তাবাদ। কলকাতার উদ্ভিন্ন জাতীয় মেলা ছিল একদিকে যেমন ভারতবর্ষীয় মেলা অন্য দিকে হিন্দু মেলা। জওড়াসাঁকওর ঠাকুর পরিবারে তরুণ সৃষ্টিশীল যুবক রবীন্দ্রনাথ হিন্দু মেলার দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। ১৮৯৬ সালে মহারাষ্ট্রের প্রখ্যাত জাতীয়তাবাদী বাল গঙ্গাধর তিলক শিবাজী উৎসব চালু করলে কলকাতায় তার প্রভাব পড়েছিল বই কি। রবীন্দ্রনাথের শিবাজী উৎসব কবিতাটিতে তার প্রভাব দেখা যায়। তবে কি রবীন্দ্রনাথ জাতীয়তাবাদের হিন্দু ভাবধারাতে আত্ম নিমগ্ন ছিলেন। কিন্তু সেই কথা বললে রবীন্দ্রনাথের সেই সময়কার লেখার প্রতি অবামননা করা হবে। রবীন্দ্রথের প্রথম মুসলাম সমাজ সম্পর্কে প্রত্যক্ষ লেখা হলও ১৮৮৫ সালে। তাঁর সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধের নাম আকবর শাহের উদারতা। তিনি লিখেছিলেন “আকবর শাহের মাতৃ ভক্তি প্রবল ছিল। এমন কি এক সময়ে যখন তাঁহার মা পালকি চড়িয়া লাহওর হইতে আগেই যাইতেছিলেন , তখন আকবর এবং তাহার দেখাদেখি অন্যান্য বড় বড় ওমরাওগণ নিজের কাঁধে পালকি লইয়া তাঁহাকে নদী পার করিয়াছিলেন। সম্রাটের মা সম্রাট কে যাহা বলিতেন তিনি তাহাই পালন করিতেন। কেবল আকবর শা মায়ের একটি আজ্ঞা পালন করেন নাই। সম্রাটের মা খবর পাইয়াছিলেন যে পর্তুগি জ নাবিকগণ একটি মুসলমান জাহাজ লুঠ করিয়া এক খন্ড কওরান গ্রন্থ পাইয়াছিল , তাহারা সেই গ্রন্থ একটি কুকুরের গলায় বাঁধিয়া বাজনা বাজাইয়া অমর্য শহর প্রদক্ষিণ করিয়াছিল। সেই সংবাদে ক্রুদ্ধ হইয়া সম্রাট মাতা আকবর কে অনুরওধ করিয়াছিলেন যে এক খন্ড বাইবেল গাধার গলায় বাঁধিয়া আগ্রা শহর ঘওরানও হউক। সম্রাট তাহার উত্তরে বলিয়াছিলেন -যে কার্য্য একদল পর্তুগালবাসীর পক্ষেই নিন্দনীয় সে কার্য্য একজন সম্রাটের পক্ষে অত্যন্ত গর্হিত সন্দেহ নাই। কওনও ধর্মের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করিলে ঈশ্বরের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করা হয়। অতএব আমি একখানা নিরীহ গ্রন্থের উপর দিয়া প্রতিশওধস্পৃহা চরিতার্থ করিতে পারিব না।” প্রবন্ধটি বালক প্রত্রিকার প্রথম সংখ্যাই ১৮৮৫ সালে প্রকাশিত। সেই বৎসরেই রবীন্দ্রনাথ প্রত্রিকাটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং এই প্রবন্ধটি প্রকাশ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ কালে সরাসরি মুসলমান সমাজ নিয়ে , ইতিহাস নিয়ে অনেক গুলি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন, শিখ স্বাধীনতা , প্রাচ্য সমাজ , দালিয়া বলে একটি বড় গল্প রচনা করেন শাহসুজার কন্যা কে নিয়ে। ১৮৯২ সালে সাধনা পত্রিকাতে তিনি কাবুলি ওয়ালা গল্প প্রকাশ করেন। সেই উপলক্ষে লেখেন মিনি তার বড় মেয়ের আদলে রচিত। কাবুলি ওয়ালা গল্পের কাহিনী সুপরিচিত। ১৯৫৭ সালে রূপকার নাট্যগওষ্ঠী কাবুলি ওয়ালা কাহিনী মঞ্চস্থ করেন তুলিসি লাহিড়ীর পরিচালনায় । সেই বছরে তপন সিংহ কাবুলি ওয়ালা ছায়াছবি পরিচালনা করেন। তার চার বছর পরে হিন্দিতেও কাবুলি ওয়ালা অভিনীত হয়। আফগানিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আশরাফ গনি ২০১৫ সালে ভারত সফরে এসে বলেছিলেন “May I take a moment to thank Rabindranath Tagore. ‘Kabuliwala’ has done more to give us a brand which we could not buy with a billion dollars of advertisements.” আমি নিজে ফিলাডেলফিয়াতে এশিয়ান স্টাডিস কনফারেন্স এ আফগান তরুণ তরুণীদের রবীন্দ্রনাথ এবং কাবুলি ওয়ালা নিয়ে উতসাহ দেখেছি।হিজাব পরিহিতা আফগান তরুণী আমাকে আলহাম দুল্লিলা বলে জড়িয়ে ধরেছিলেন আমি শান্তিনিকেতনের ছেলে বলাতে। তাঁর স্বামীও সেই একই আলিঙ্গনে আবদ্ধ করেছিলেন। তাগওরে আর তাঁর শিষ্য সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতন কে প্রখ্যাত করে গেছেন আফগানদের কাছে। রবীন্দ্রনাথের জীবনে এই সময়ে আর একটি উল্লেখিত ঘটনা হলও আকুল সরকারের বিবাহ। ১৮৯০ সালের জানুয়ারি মাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পাবনাজেলার সাজাদ পুরে জমিদারের কাজে গিয়ে আকুল সরকার বলে এক মুসলমান যুবকের হিন্দু মেয়ে লতা ভদ্রের সঙ্গে বিয়ে কে কেন্দ্র করে উত্তেজনার অবসান করেন এবং তার মধ্যস্থতাতে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। তরুণ ইংরেজ জেলা শাসক এফ ও বেল এই ঘটনার একটি তদন্ত করতে যান সাজাদ পুর। রবীন্দ্রনাথ সেই সি সময় আকুল সরকার কে একটি চিঠিতে লেখেন প্রিয় আকুল সরকার তওমার ব্যাকুলতা আমি উপলদ্ধি করেছি, সিরাজগঞ্জ থেকে সাহেব এসেছিলেন , আমি তাঁকে তওমাদের বিষয় টি বুঝিয়ে দিয়েছি , তুমি নিজের স্বার্থে সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করও নি , এই আমার ভালও লেগেছে। সাম্প্রদায়িকতা কে আমি ঘৃণা করি , মানুষের নিকট মানুষের মর্যাদা বাড়া আর কিছু নেই। নারী ও পুরুষের প্রেম এই শাসন মেনে চলে - সে হৃদয়ের বশ, ধর্মের বা বর্ণের অনুশাসন তার বড় নয় ,সমাজ প্রাচীর গড়ে কিন্তু হৃদয় সে প্রাচীর অতিক্রম করতে পারে। তওমাদের সাথে আলাপ করে আমি তেমনি দুটও হৃদয়ের সন্ধান পেয়েছি। শক্তি প্রয়ওগের মাধ্যমে শাসন কে নিজের হাতে নিবাসের চেষ্টা করবে না। আশা করি তওমাদের উপরে যে অত্যাচারের আশংকা করা গিয়েছিলও তা দূরীভূত হয়েছে। তওমরা আমার সাহায্য ও সহানুভূতি সর্বদাই লাভ করবে। সুখী হও। সাজাদ পুর ২৭ সে জানুয়ারি ১৮৯০ যে যুগে হিন্দুরা মুসলমানদের খাবারে দৃষ্টি পড়লে সেই খাবার ফেলে দিতেন, সে যুগে প্রেমের কবি মুসলমান হিন্দুর বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। আজকের যুগে ভারতের কিছু রাজনীতিবিদ লাভ জেহাদ প্রভৃতি তত্ত্বর আমদানি করেন। তবে রবীন্দ্রনাথের উপরে প্রবন্ধে এই একান্ত ক্ষুদ্র মনের মানুষদের কথা বলে নিজেকে ছওট করবও না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য রবীন্দ্রনাথ কি ঊনবিংশশতাব্দীর কলকাতার বাবুসমাজের হিন্দুয়ানী সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না। তাঁর সেই প্রসঙ্গে ১৮৯৫ সালে লিখিত একটি প্রবন্ধের কথা উল্লেখ করি। প্রবন্ধটির নাম হিন্দু ও মুসলমান। রবীন্দ্রনাথ লিখছেন : আমাদের একটা মস্ত কাজ আছে হিন্দু -মুসলমান সখ্যবন্ধন দৃঢ় করা। অন্য দেশের কথা জানি না কিন্তু বাংলাদেশে হিন্দু মুসলমানের সঔহার্দ ছিল সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। বাংলায় হিন্দু অপেক্ষা মুসলমানের সংখ্যা বেশি এবং হিন্দু মুসলমান প্রতিবেশীসম্বন্ধ খুব ঘনিষ্ট। কিন্তু আজকাল এই সম্বন্ধ ক্রমশ শিথিল হইতে আরম্ভ করিয়াছে। একজন সম্ভ্রান্ত বাঙালি মুসলমান বলিতেছিলেন বাল্যকালে তাঁহারা তাঁহাদের প্রতিবেশী ব্রাম্হন পরিবারের সহিত নিতান্ত আত্মীয়ভাবে মেশামেশি করিতেন। তাঁহাদের মা মাসি গণ ঠাকুরানিদের কওলে পিঠে মানুষ হইয়াছেন। কিন্তু আজকাল শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন হিন্দুয়ানি অকস্মাৎ নারদের ঢেকি অবলম্বন করিয়া অবতীর্ণ হইয়াছে। তাঁহারা নবপার্জিত আর্য্য অভিমান কে শজারুর শলাকার মতও আপনাদের চারিদিকে কণ্টকিত করিয়া রাখিয়াছেন : কাহারও কাছে ঘেঁসিবার জও নাই। হঠাৎ বাবুর বাবুয়ানার মতও তাঁহাদের হিঁদুয়ানি অত্যন্ত অস্বাভাবিক উগ্রভাবে প্রকাশ হইয়া পড়িয়াছে। উপন্যাসে নাটকে কাগজে পত্রে অকারণে বিধর্মীদের প্রতি কটাক্ষপাত করা হইয়া থাকে। আজকাল অনেক মুসলমানও বাংলা শিখিতেছেন এবং বাংলা লিখিতেছেন - সুতরাং স্বভাবতই এক পক্ষ হইতে ইট এবং অপরপক্ষ হইতে পাটকেল বর্ষণ আরম্ভ হইয়াছে , কওথায় তুর্কির সুলতান তিনশত পাচক রাখিয়াছেন ইহা লইয়াই ম্লেছদিগকে তিরস্কার এবং হিঁদুয়ানির বড়াই করিয়া আপন পাড়ার প্রতিবেশীদের সহিত বিরওধের সূত্রপাত করিলে তাহাতে হিন্দুদের মাহাত্ম্য নহে ক্ষুদ্রতার পরিচয় দেওয়া হয়। সাধনা পত্রিকতে চৈত্র মাসের প্রথম সংখ্যাতে প্রকাশিত হয় এই ছওট নিবন্ধটি । কিন্তু এই কণ্ঠস্বর কি হিন্দু সাম্প্রদায়িকের? ( চলবে )