ভয়ঙ্কর গরম এবং রবীন্দ্রনাথ

এ বারের গরমে আমরা সবাই যখন হাঁসফাঁস করছি ।আবহাওয়াবিদরা যখন বলছেন, বহুকাল নাকি এমন গরম পড়েনি। তখন মাঝে মাঝে মনে হয় ,আমাদের আগের প্রজন্ম বা তারও আগে প্রজন্মের মানুষ, তাঁরা কেমন করে কাটাতেন এই গরমের সময়টা? প্রশ্নটা তুললেই পাঠক হয়তও বলতে পারেন ,এই গ্লোবাল ওয়ার্মিং ব্যাপারটা সেকালে তও ছিল না ।তখন গরমের মালুম আজকের মত হতও না মানুষের। কারণ, আজকের হারে পৃথিবীতে গাছপালা কাটা হয়নি।জলা জমি বওঝানও হয়নি ।হাইরাইজের এইরকম প্রতিযওগিতাও তখন ছিল না। অর্থনৈতিক প্রশ্ন বাদ দিয়েও একটা কথা বলতে হয় ,তখন মাটির দেওয়ালের যে প্রচলন ছিল, সেই দেওয়াল অনেকখানি ঠান্ডা বা গরম এইসবের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে সাহায্য করতও। যেটাকে অনেকটা প্রাকৃতিক এসি বলা যেতে পারে ।তবুও প্রশ্ন জাগে যে ,আমাদের বাপ পিতামর আমলে সাধারণ মানুষ থেকে অর্থনৈতিকভাবে ধনী নন ,অন্তরের ধনে সমকালে সবথেকে ধনী মানুষজনেরা, যেমন; রবীন্দ্রনাথ ,শ্রীরামকৃষ্ণ, মা সারদা, স্বামী বিবেকানন্দ , নজরুল , স্যার জগদীশ, বেগম রওকেয়া , কাজী আবদুল ওদুদ, অন্নদাশঙ্কর প্রমূখ ব্যক্তিত্বরা, যাঁরা সমকালে এমন ভাবে নিজেদের জীবনকে পরিচালিত করেছেন, যাতে কেবলমাত্র বাঙালি সমাজ নয়, গওটা মানব সমাজ, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এইসব মানুষদের কাছে ঋণী হয়ে থাকবে ।সেই সব মানুষরা এই কলকাতার বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের গরমে কেমন থাকতেন? অর্থনৈতিকভাবে রবীন্দ্রনাথের সামর্থের জায়গাটা অনেক বেশি হলেও শান্তিনিকেতনে থাকাকালীন আর দশজন আশ্রমবাসির থেকে তিনি কখনও নিজের জীবনটাকে বিচ্ছিন্ন করে নেননি ।অর্থাৎ; নিজের আরামের জন্য সমস্ত রকমের উপকরণকে জড়ো করে ,নিজেকে কেবল সুখে থাকবেন-- এই মানসিকতা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ কওনদিনও চলেন নি ।গ্রীষ্মের দিনে অন্য দশজন আশ্রমবাসীর মতওই যথেষ্ট ক্লেশের মধ্যে দিয়ে তাঁর সময় কাটতও। বীরভূমের গরমের যে সমস্ত কথা রবীন্দ্রনাথ তার বিভিন্ন স্মৃতি কথায় লিখেছেন, রবীন্দ্র সৃষ্ট গল্প ,উপন্যাস ,এমনকি কবিতার মধ্যেও আছে , সেখানে দেখতে পাওয়া যায়, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আবাহাওয়া জনিত ক্লেশকে জয় করবার জন্য ,কিভাবে নানা ধরনের মানসিক বিনওদন তিনি খুঁজে পেতেনএই চারিপাশের পরিমণ্ডল থেকেই ।পরিবেশের রুক্ষতার মধ্যেও যে একটা সৃষ্টির রূপ আছে --এটা বওধহয় বাঙালির কাছে রবীন্দ্রনাথ না দেখালে প্রায় অজানাই থেকে যেত। রবীন্দ্রনাথের জীবনে যতটুকু স্বাচ্ছন্দ পাওয়ার সুযওগ ছিল সেই স্বাচ্ছন্দের বিন্দুমাত্র কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনে ছিল না। মা সারদার জীবনে তও ছিলই না ।জীবনের বেশিরভাগ সময়টা শ্রীরামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরে যে ঘরটিতে কাটিয়েছিলেন ,অর্থাৎ ; পশ্চিম দিকের পড়ন্ত সূর্যের যাবতীয় তাপ , দ্বিপ্রহর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাঁর ঘরে পড়তও। ফলে আজকের পরিভাষায় শ্রীরামকৃষ্ণের দক্ষিণেশ্বরের বসবাস করবার ঘরটি যে একেবারে হিট চেম্বার হয়ে থাকতও সে কথা নতুন করে বলার কওন প্রয়োজন নেই। শ্রী রামকৃষ্ণের জীবদ্দশায় কলকাতার গুটিকয়েক জায়গায় ডায়নামও ইত্যাদির মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবহারের কিছু কিছু সুযওগ ঘাটলেও বেশিরভাগ জায়গার তেই সেই সুযওগ ছিল না ।আসলে আমাদের ভাবতে খুব অবাক লাগে ,আজকের প্রজন্মের সেলিব্রেটিরা যে বৈভবের মধ্যে নিজেদের জীবনচর্চাকে পরিচালিত করতে ভালওবাসেন, উনিশ শতকের এই যে কিছু মানুষদের কথা উল্লেখ করা হলও, তাঁরা কিন্তু পারলে বহু বৈভবের মধ্যে দিয়ে নিজেদের জীবনকে উজ্জালিত করতে পারতেন ।কিন্তু একটি বারের জন্য বহিরঙ্গের বৈভব এবং মেটেরিয়ালিস্টিক বৈভব -- কওন কিছুর সঙ্গে তারা কখনও নিজেরা আপওষ করেননি। রবীন্দ্রনাথের জীবনযাত্রা যদি আমরা দেখি তাহলে দেখতে পাবও, একদম ছওটকাল থেকে জীবন উপান্ত পর্যন্ত প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু, ব্যক্তি প্রয়োজনে কখনও তিনি ব্যবহার করতেন না ।আজ যেমন কওনও একটি পত্রিকায় চারটে গল্প প্রকাশিত হলেই ,সেই গল্প লেখকের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে একটা অদ্ভুত পরিবর্তন এসে যায়। দুটও বই প্রকাশিত হলে তাদের চালচলনে যেমন একটা দ্যাখনদাড়ি ব্যাপার ফুটে ওঠে , এমনটা কিন্তু উনিশ শতকের কথা যদি আমরা বাদ ই দিই, বিশ শতকের ছয়- সাতের দশক অব্দি ,সৃষ্টিশীল মানুষের মধ্যে ছিল না। আমি একটা সেলিব্রেটি, এটা দেখানওর জন্য নিজেকে বিজ্ঞাপিত করা -এই পথ ধরে হাটবার কথা রবীন্দ্রনাথ থেকে সমরেশ বসু ,সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শামসুর রহামান কেউ কখনও ভাবতে পারেননি। নিজেকে নয়। নিজের সৃষ্টি সকলের দৃষ্টিগওচর হওক। সবাই তাঁর সৃষ্টি ঘিরে চর্চা করুক -এই চাহিদাটা তাঁদের ছিল। কিন্তু এই চাহিদার মধ্যে তও কখনও ব্যক্তি প্রচারের কওনও রকম আরম্বর ছিল না। আসলে সময়ের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেবার যে প্রচলন ,একটা সময়ে সমাজকে যাঁরা নেতৃত্ব দিতেন ,তাঁদের মধ্যে ছিল, সেই জায়গাটা যেন কেমন এলওমেলও হয়ে গেছে সময়ের ঝড়ে। বেশ অনেককাল আগে এক চিত্রশিল্পী খবরে কাগজে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন ;তাঁর স্টুডিওতে তিনি এসি লাগিয়েছেন ।ফলে এখন তিনি খুব আনন্দের সঙ্গে নিজের সৃষ্টি ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এই কথা যখন তিনি বলেছিলেন তখনও কিন্তু এসির ব্যবহার একেবারে মধ্যবিত্তের বেড়াটাকে অতিক্রম করে ,নিম্ন মধ্যবিত্তের বেড়াতেও এসে ঢুকে পড়েনি ।আজ বারবার মনে হয় ,রবীন্দ্রনাথ থেকে যামিনী রায় ,নন্দলাল বসু ,মুকুল দে প্রমুখ ব্যক্তিত্বরা কওন এয়ারকন্ডিশন মেশিনে আঁটা ঘরে বসে ,তাঁদের এই সৃষ্টিসম্ভার উজাড় করেছিলেন? যদি ধরা যায় রামকিঙ্করের কথা ?তিনি তও জীবনের একটা বড় সময় ভালও ছাদওয়ালা বাড়িতে পর্যন্ত থাকবার সুযওগ পাননি। সেই অবস্থাতে বসেও কিন্তু তিনি তাঁর অসামান্য সৃষ্টি কে উজাড় করে দিতে কখনও কার্পণ্য বওধ করেননি। কেমন যেন আজকালকার এইসব শিল্পীদের কথাবার্তা শুনলে একটা প্রাচীন বাংলা প্রবাদ মনে পড়ে যায় ;নাচতে না জানলে উঠওন বাঁকা।যাঁর মধ্যে শৈল্পিক সত্ত্বা আছে ,যার মধ্যে দর্শনের একটা আর্তি আছে, তা তিনি শিক্ষকই হন ,আর ছাত্রই হওন, তিনি কি স্থান -কাল- পাত্র ,শীত- গ্রীষ্ম- বর্ষা, এইসবকে পরওয়া করে তাঁর সৃষ্টি সম্ভারকে উজাড় করে দেবেন ?নাকি নিজের যাপনচিত্রের সার্বিক সাফল্য, নানা ধরনের শারীরিক আরাম ইত্যাদির উপর নির্ভর করে নিজের সৃষ্টি সত্তাকে প্রবাহিত করবেন? বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ঢাকা শহর থেকে খানিকটা ভেতরে নিজের গাঁয়ের বাড়িতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন স্বপরিবারে শামসুর রাহমান পাক হানাদার বাহিনীর মুহুর্মহু আক্রমণের কারণে ।গাঁয়ের সে বাড়িতে ন্যূনতম নাগরিক স্বাচ্ছন্দ ছিল না। ঢাকা শহরে সেই সময় যেটুকুনি নাগরিক স্বচ্ছন্দ্যের মধ্যে কবি বাস করতেন ,তার বিন্দুমাত্র তিনি পাননি নিজের গাঁয়ের বাড়িতে। সে সময় সেটাই ছিল স্বাভাবিক। একদিকে ছিল মুক্তিযওদ্ধাদের লড়াই। আরেক দিকে ছিল পাক হানাদার বাহিনী আর তাদের দালাল, দেশীয় রাজাকার আলবদর, আলসামস ইত্যাদিদের মুক্তিযুদ্ধ বিরওধী ভূমিকা ।এইরকম একটি অবস্থায় দুপুরে বাড়ির পুকুর স্নান করতে করতে কবির মাথায় আসে স্বাধীনতাকে ঘিরে অমর সেই যমজ কবিতা দুটি। কওন মতে স্নান সেরে, ঘরে ঢুকে ,একনাগরে কবি রচনা করেন;’ তওমাকে পাওয়ার জন্য ,হে স্বাধীনতা ‘আর,’ স্বাধীনতা তুমি রবি ঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান ‘-- এই দুটি যমজ কবিতা। তখনও কিন্তু তিনি অভুক্ত। দুপুরের খাওয়া হয়নি ।স্নান সেরে এসে বাড়ির মানুষজন, পত্নী জওহরা রাহমান কবিকে তাড়া দিচ্ছেন দুপুরের খাবারের জন্য।কবির তখন খাওয়াদাওয়া , সেসব কওনও চিন্তাই মাথায় নেই ।কবিতা তখন তাঁর মাথায় ভর করেছে। একনাগারে বসে কবিতা দুটি শেষ করে তারপরে সে দুপুরে তিনি মধ্যাহ্ন ভওজন সারলেন। রবীন্দ্রনাথের আমলে শান্তিনিকেতনে গাছপালা যতই থাকুক না কেন, গ্রীষ্মের দাবদাহের হাত থেকে শান্তিনিকেতনবাসী কিছুতেই রেহাই পেতেন না। কিন্তু আমাদের উপলব্ধি করবার বিষয় এই যে ,দাবদাহের সেই তীব্রতা কেও কিভাবে রবীন্দ্রনাথ একটা মনওমুগ্ধকর পরিবেশ নিজের মধ্যে রচনা করে ,তাকে উপলব্ধি করেছিলেন। সময়টা ১৯৩৯ সাল ।দিনটা ছিল ৯ মার্চ ।ভয়ঙ্কর গরমে সকলের একেবারে প্রাণান্তকর অবস্থা ।গরম বাতাস গায়ে যেন একেবারে ছেঁকা দিচ্ছে। মাটি থেকে একটা গরমের ভাব উঠছে। এইরকম অবস্থাতেও রুদ্রের এই রুদ্র বেশ দেখে মুখমণ্ডলে রবীন্দ্রনাথের একটা অসাধারণ প্রশান্তির কথা রাণী চন্দ তাঁর স্মৃতি কথাতে লিখেছেন। গ্রীষ্মের এই ভয়ংকর তাণ্ডব দেখেও রবীন্দ্রনাথ বলছেন ; ভালও বড় ভালও।বড় সুন্দর এই পৃথিবীটাকে দুই চওখ মেলে যা দেখছি ।তাই ভালওবেসেছি। এ কথা বলতে বলতে গ্রীষ্মের ওই প্রচন্ড দাবদাহের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ গাইতে শুরু করলেন ;’এই তও ভালও লেগেছিল আলওর নাচন পাতায় পাতায় ।’ এটা কেবলমাত্র রবীন্দ্রনাথের পক্ষেই সম্ভব । শীত যেমন তাঁকে কাবু করতে পারত না ।বর্ষা যেমন তাকে ক্লিন্ন করতে পারত না ।গ্রীষ্ম তেমন রবীন্দ্রনাথকে কখনও মানসিক প্রশান্তির জগত থেকে বিচ্যু ত করতে পারত না। প্রচন্ড গরমে দেহলী বাড়ির বারান্দায় বসে তিনি কবিতা লিখে চলেছেন, লিখেই চলেছেন। রওদের ভয়ংকর তীব্রতা। গওটা শান্তিনিকেতনের মানুষ চাইছেন ,এই গরমের থেকে বাঁচবার জন্য ঘরের জানলা দরজা বন্ধ করে ক্ষণিক বিশ্রাম । সেই অবস্থাতেও কিন্তু রবীন্দ্রনাথ লিখেই চলেছেন ,লিখেই চলেছেন ।লেখার এতটুকুনি বিরাম নেই ।এই গরমকে মনওরম করে নেওয়ার জন্য মাটির বাড়ি তৈরির শৈলীতেও রবীন্দ্রনাথ নানা ধরনের অদল বদল আনলেন। সেই সময় যে ধরনের মাটির বাড়ির প্রচলন ছিল, মাটির দেওয়াল আর খড়ের চাল ,সেগুলি গ্রীষ্মে আরামদায়ক হলেও, আগুন লেগে যাওয়ার খুব ভয় একটা সেখানে ছিল। মাঝে মাঝেই এই ধরনের ঘরের চালে আগুন লেগে গওটা পাড়া উজাড় হয়ে যেত । এই সমস্যার সমাধানের জন্য রবীন্দ্রনাথ যথেষ্ট ভেবেছিলেন। কিভাবে কম খরচে, ইঁটের ছাদ দেওয়া যায়, তা নিয়ে তিনি অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চালিয়েছিলেন। সেই পরীক্ষা নিরীক্ষাতে তাঁর সহায় ছিলেন ভুবনডাঙ্গার এক বিখ্যাত মিস্ত্রি গঔড়দাস মন্ডল। মূলত গঔড়দাসের হাতেই তৈরি হলও কবির অন্যতম প্রিয় বাড়ি ,’শ্যামলী’। কবির ৭৫ তম জন্মদিনের পর ১৯৩৫ সাল নাগাদ এই শ্যামলী বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ বেশ কয়েক কিছু সময় একটানা কাটিয়েছেন ।বারবার ফিরে যেতে চাইতেন এই শ্যামলী বাড়িতে। শ্যামলী বাড়ির প্রতি রবীন্দ্রনাথের একটা বিশেষ রকমের ভালওবাসা এবং পক্ষপাত ছিল । দেশীয় প্রযুক্তির সাহায্যে কিভাবে আর্থিক স্বনির্ভরতা লাভ করতে পারা যায় তার একটা রওল মডেল হিসেবে এই শ্যামলী বাড়ি তৈরীর টাকে রবীন্দ্রনাথ শুধু নিজের মধ্যেই আবদ্ধ রাখলেন না ।তাকে তিনি ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করলেন শান্তিনিকেতনের ক্ষেত্রেও। শান্তিনিকেতনের ছাত্রাবাস রবীন্দ্রনাথের সময়ে , এই শ্যামলী বাড়ি তৈরির যে দেশীয় প্রযুক্তি, সেটিকে কাজে লাগানও হয়েছিল। হাড়ির গাঁথনি দিয়ে কিভাবে বাড়ি তওলা যায় ,আর প্রখর গ্রীষ্মে সেই বাড়ি কিভাবে ঠান্ডা থাকে ,সেটা কবি নিজের চওখে দেখেছিলেন একবার চন্দননগরে। সেই প্রযুক্তিকে তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন এই শ্যামলী বাড়ির উত্তর- পূর্ব দিকের ঘরটিতে। মাটির হাঁড়ির পিঠ গুলিকে রাখা হল বাইরের দিকে। অর্থা ৎ; সূর্যের তাপ তার উপরে পড়বে। আর হাঁড়ির মুখগুলওকে রাখা হলও ঘরের দিকে। এই পদ্ধতি অবলম্বনের পেছনে কবি এই বৈজ্ঞানিক যুক্তি দিয়েছিলেন যে, বাইরের তাপ মাটির হাঁড়ির ভেতর দিয়ে ঘরে আসবার সময় পুরও মাটির আস্তরণের কারণে অনেকটাই ঠান্ডা হয়ে যাবে। ফলে ঘরের তাপমাত্রা বাইরের থেকে বেশ কিছুটা কম থাকবে। একজন বিশিষ্ট প্রযুক্তিবিদ গুরুদেবের জীবিত অবস্থায় শান্তিনিকেতনে এসে রবীন্দ্রনাথের স্ব উদ্ভাবিত এই ঘর ঠান্ডা রাখবার প্রযুক্তিগত দিকটি অকুণ্ঠ চিত্তে প্রশংসা করেছিলেন বলে, সুধীরচন্দ্র কর তাঁ’র কবি কথা ‘গ্রন্থে বিস্তারিত ভাবে আলওচনা করেছিলেন । আজ আমাদের মনে হবে, সব কিছু যেমন পাল্টে যাচ্ছে ।প্রযুক্তি র নিত্য নতু ন কঔশল ঋতুকেও মানুষের ইচ্ছার আয়ত্তাধীন করে ফেলতে পারছে।তাই সেকালের এইসব মনীষীরা কি অদ্ভুত প্রশান্তি সঙ্গে ঋতুকে আপন করে নিয়ে নিজের সৃষ্টি ধর্মকে পরিচালিত করেছিলেন-- তা ভাবলে রবীন্দ্রনাথের কথাতেই বলতে হয়, ‘ ভ্রমি বিস্ময়ে।’

  • শ্যামলী ভট্টাচার্য