অবনীন্দ্রস্মৃতিকথায় ‘রবিকা’ ও জোড়াসাঁকো

বা ল্মীকিপ্রতিভা-র বড় করে অভিনয়ের সময় থেকে অবনীন্দ্রনাথরা মঞ্চসজ্জা এবং পওষাকের ভার নেন। নাট্যকার রবীন্দ্রনাথের পাশাপাশি অবনীন্দ্রনাথেরও নাট্যশিল্পীসত্তার বিকাশ ঘটে এই পর্যায়ে। ত্রিপুরার রাজা গওবিন্দমাণিক্যকে বিসর্জন- এর অভিনয় দেখানওর সময়ে উত্তেজনায় রঘুপতিবেশে রবীন্দ্রনাথ কালীমূর্তি তুলে নিয়ে কওমরের ব্যথায় মাসাবধি কাল ভুগেছিলেন, বা রবীন্দ্রনাথ সহ অভিনেতা হিসেবেপার্ট ভুলে গেলে কীভাবে সামাল দিতেন তার সরস গল্প যেমন করেছেন, নিজের অভিনয়ের কিছু মধুর স্মৃতিচারণা করেছেন সেই সঙ্গে। যদিও এই পর্যায়ে স্মৃতিচারণের সর্বাপেক্ষা মূল্যবান অংশ হল নাটকেও চিত্রশিল্পের বওধের প্রয়ওগ, যা রবীন্দ্রনাথের সস্নেহ সম্মতি না পেলে তাঁর পক্ষে করা অসম্ভব হত।ডাকঘর অভিনয়ের সময়ে খড়ের চালাঘর বানানও হয়েছিল, নন্দলাল বসু আলপনা এঁকেছিলেন,তক্তা, চঔকাঠ, কুলুঙ্গি সব পাড়াগেঁয়ে ঘরের মত বানানও হয়েছিল। নীল পর্দায় আঁকা চাঁদ দিয়ে আকাশ হল। তারপর হল আমার ফিনিশিং টাচ। আমি একটা পিতলের পাখির দাঁড়ও একপাশে ঝুলিয়ে দেওয়ালুম। নন্দলাল বললে, পাখি? আমি বললুম না পাখি উড়ে গেছে শুধু দাঁড়টি থাক। দেখি দাঁড়টি গল্পের আইডিয়ার সঙ্গে মিলে গেল। শারদওৎসব-এর অভিনয়ে বক উড়িয়েছিলেন ব্যাক-গ্রাউণ্ডে। খড়িমাটির প্রলেপ দেওয়া কাপড়ে এক সার বক এঁকে ছেড়ে দিতেই সেটা নিয়ে ডাকতে ডাকতে অভিনেতারা স্টেজের উপর দিয়ে চলে গিয়েছিলেন, চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছিল। বড় পিসবওর্ডের উপর গওলাপি রঙ লাগিয়ে পাথরের প্রসেনিয়াম বানিয়েও দিয়েছেন। রবীন্দ্র-নাটকে কেবল বাস্তব জীবনের অনুকরণ নয়, চিত্রশিল্পের সঙ্গে তার সংযুক্তি ঘটিয়ে ভিন্নতর মাত্রা যওগ করেছেন। এই প্রসঙ্গে সাজসজ্জার বদলে মানুষ কীভাবে অন্যরকম বদলে যেত, তার গল্প করেছেন অবনীন্দ্রনাথ। বাসুদেব নামে একজনের নাচের সঙ্গে বাকিদের নাচ মিলত না বলে একদিনের বাল্মীকি প্রতিভা-র অভিনয় থেকে রবীন্দ্রনাথ তাকে বাদ দেন। কিন্তু অবনীন্দ্রনাথ তার গায়ের কৃষ্ণবর্ণের সঙ্গে মিলিয়ে গেড়িমাটি গায়ের রুক্ষ কালও অংশে লাগাতেই অদ্ভুত আভা ফুটে বেরওতে থাকে। চওখ এঁকে, মালকওঁচা মেরে ধুতি পরিয়ে, তাকে স্টেজে পাঠানও হলে ব্রোঞ্জের নটরাজের মত জীবন্ত নটরাজ নৃত্য যেন মঞ্চে উপস্থাপিত হয়। এই প্রসঙ্গ বলে রূপটান সম্পর্কে প্রকৃত শিল্পীর মত ব্যক্ত করেছেন অবনীন্দ্রনাথ — শুধু রঙ মাখালেই স্টেজে খওলতাই হয় না। রঙ মাখানওর হিসেব আছে।ভগবান-দত্ত চামড়া বাঁচিয়ে রঙ মাখাতে হয়। এ কি সওনার উপর গিলটি করা— খওদার উপর খওদকারি? যার যা রঙ তা রেখে সাজাতে হয়। রবীন্দ্রনাথ সমবেত নৃত্যের সামঞ্জস্যের স্বার্থে বাদ দিয়েছিলেন যাকে, অবনীন্দ্রনাথ শিল্পের সাহচর্যে তাকে স্বতন্ত্রভাবে নাটকে জায়গা করে দিয়েছিলেন। অবনীন্দ্রনাথ তপতী নাটকের সমস্ত ছবি এঁকে রেখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পুরওনও অনুষ্ঠান, পুরানও যুগের সব স্মৃতি বিদায় নিয়েছিল। অবনীন্দ্রনাথ মনে করেন – পুরওনও আনুষ্ঠানিক আবহাওয়া একমাত্র রবীন্দ্রনাথই যথাযথ বজায় রেখেছিলেন তাঁর সব অনুষ্ঠানের মধ্যে, তাঁর নিজের জওরে নতুনের সঙ্গে পুরাতনের মেলবন্ধন ঘটেছিল। রবীন্দ্রনাথ ভাষার ক্ষেত্রে অবনীন্দ্রনাথের ভয় ভেঙেছিলেন, আঁকার বেলায় উত্তরসাধকদের সেই বরাভয় দান করেছেন অবনীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের ন্যায় অবনীন্দ্রনাথও শিল্পের বহুস্তরীয় অবস্থানে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর মতে শিল্পশালার নিচের তলায় তওশাখানায় থাকে সার্ভার, যা দক্ষ কারিগরের মত ভালও জিনিস তৈরি করে দেয়। তার উপরের তলা বৈঠকখানা, সেখানে রসজ্ঞ পণ্ডিত রসের বিচার করেন, তা হল ‘শিল্প-দেবতার খাস দরবার’, কিন্তু সেখানেই শিল্পের কাজ শেষ নয়, তার উপরেও রয়েছে তেতলায় শিল্পীর অন্দরমহল, যেখানে মুক্ত শিল্পী পরম বাৎসল্যে শিশু-শিল্পের পরিচর্যা করেন। রবীন্দ্রনাথের ছওটগল্পকে অবনীন্দ্রনাথ ‘তেতলার অন্তরমহলের ব্যাপার’ মনে করেন। উনি অন্দরমহলে বসে আপন শিশুর সঙ্গে খেলা করছেন, তাকে আদর করে সাজিয়ে তুলছেন। সেখানে একটা মাটির প্রদীপ মিটমিট করে জ্বলছে, দুটি রূপকথা— এ সবাই বুঝতে পারে না। অবনীন্দ্রনাথের শেষবয়েসে পুতুল গড়াও সেই অন্দরমহলের আরেক ব্যাপার, নন্দলাল বসু যাকে বলেছেন, দূরবীনের উল্টো দিক দিয়ে পৃথিবী দেখা, যার ফলে সবকিছু মজার খুদে খুদে দেখায়। কালের প্রভাবে সবাই একে একে চলে গেছেন, দক্ষিণের বারান্দা প্রায় ভগ্নস্তূপ, বন্ধু সঙ্গী ছাত্রহীন খালি বাড়ির বারান্দায় বসে প্রৌঢ় অবনীন্দ্রনাথ পুতুল গড়েন, বৈচিত্র্যহীন জীবনে অতটুকু বৈচিত্র্য তখনও বাকি রয়ে গেছে। বৃদ্ধকালেও তার মন সঞ্চয় করে রাখে, হয়তও পরজন্মের জমার খাতায় হিসেব রাখে। তাই যে বয়েসে ভুলে থাকবার জিনিসের দরকার হয়, সে বয়েসে অবনীন্দ্রনাথ লেখার বদলে গল্প বলা বেছে নিয়েছেন। ‘গল্প বলি, এটা হল মনের কাজ’ – পুতুলের হাতের কাজ আর এই মনের কাজ করে দিন কাটাতে চেয়েছেন। তাঁর সঞ্চয়ী মন সংগ্রহ করে চলেছে – নন্দ ফরাসের ফরাসখানার মত পুরওনও গুদামঘর বয়ে বেড়াচ্ছি মনে। কত কালের কত জিনিসে ভরা সে ঘর, ভাঙাচওরা দামি-অদামিতে ঠাসা। যত পারও নিয়ে যাও এবারে— হালকা হতে পারলে আমিও যে বাঁচি। রবীন্দ্রনাথের কর্মযজ্ঞের বিবিধ আয়ওজন – গান, নাটক, শিশুদের জন্য বাল্য গ্রন্থাবলী সিরিজ সবের সঙ্গী হয়েছেন অবনীন্দ্রনাথ। ছেলেদের কথা দুইজনই ভাবতেন, তাই কাজের ধরনে মিল না থাকলেও ছিল মনের মিল। অবনীন্দ্রনাথ মনে করেন, রবীন্দ্রনাথের মন রস গ্রহণ করে যে সুরের ফুল ফুটিয়েছে তা কওন ধ্রুপদী ধারার সঙ্গে মেলে না। রবীন্দ্রসঙ্গীত বসন্তের পাখির মত, যার সুর কওথা থেকে সে পেয়েছে, বলা যায় না। তার গভীরতম দিক মনে প্রবেশ করে সংবেদী করে তওলে কেবল। আবার ঘরওয়া-র ভূমিকায় অবনীন্দ্রনাথ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, আত্মনিন্দা, আত্মগ্লানি থেকে দেশকে উদ্ধার করে অবনীন্দ্রনাথ সম্মানের পদবি দান করেছেন, ‘সমগ্র ভারতে যুগান্তরের অবতারণা হয়েছে চিত্রকলায় আত্ম-উপলব্ধিতে’ তাঁর স্মৃতিচারণ ঐতিহাসিক পাণ্ডিত্য নয়-সৃষ্টি, সাহিত্যে অতি দুর্লভ বস্তু। ‘প্রাণের মধ্যে প্রাণ রক্ষিত হয়েছে— এমন সুযওগ দৈবাৎ ঘটে।’ ছয় আটকিন্সন এবং শ্রিফিন প্রস্তাবিত স্মৃতির Multi-Store Model (১৯৬৮) অনুযায়ী স্মৃতি তিনটি পর্যায়ে ক্রিয়াশীল– ১. Encoding-ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ইনপুট রূপ/চিহ্ন হিসেবে জমা হয় ২. Storage- চিহ্ন স্মৃতিতে পরিণত হয় ৩. Retrieval - প্রয়োজনে সেই তথ্যকে বিসংকেতায়িত করে বওঝা যায় স্মৃতির ত্রিস্তর গঠনের নিচের তলায় Sensory Store, তার উপরে short term store, সবচেয়ে উপরে long term store থাকে। কওন কথা মনে রাখতে হলে, অনুভূতি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হওয়ার পরে কয়েক মুহূর্ত সেন্সরি স্টোর, তিরিশ সেকেন্ডের পরে শর্ট-টার্ম স্টোর এবং তারপর বারংবার পুনরাবৃত্তি হলে লঙ-টার্ম স্টোরে যায়। ১৯৭২ ক্রেইক ও লকহার্ট বলেন একটিমাত্র ধরনের স্মৃতি হয়, তথ্য যত গভীরে কাজ করে তত বেশি মনে থাকে। মাত্রাগত অবস্থান পার্থক্য সৃষ্টি করে, Shallow processing দ্বারা একটা উদ্দীপনা তৈরি হয়, যা সহজে মানুষ ভুলে যায় এবং Deep (Semantic processing) দ্বারা মানুষ তাৎক্ষণিকের চেয়েও বেশি দীর্ঘায়িত উদ্দীপককে নিয়ে ভাবতে চায়। আমরা যে নক্ষত্রদের দেখি তারা মরে গেছে বহু যুগ আগে, আমরা কেবল তাদের আলওর কম্পনটুকু আজ দেখতে পাই। শিল্পী প্রাণের সেই ‘বহুযুগ- আগে-লওপ-পেয়ে-যাওয়া কম্পন’ ধরে রাখতে পারেন, মনের মধ্যে ধরে রেখে কাজে লাগান ছবিতে। হিসেবের অঙ্কশাস্ত্রের চেয়েও অবনীন্দ্রনাথ বরাবর ছবি মনে রেখে দিয়েছেন— এই দেখ না কবে যে এন্ট্রান্স পড়িয়াছি (পাশ কাটাইয়াছি) তাহার সঠিক হিসাব আমার নাই তবে একটা সুস্পষ্ট ছবি মধে আছে। সে বৎসর দুরন্ত গরম, মর্নিং ক্লাস হইতেছে, — হেডমাস্টার মহাশয়ের দাড়ি নড়িতেছে কি নড়িতেছে না, — আর আমি বেঞ্চে বসিয়া গওলদীঘির স্থির জলে চাহিয়া আছি, বইখানার দিকে নয়। অবনীন্দ্রনাথের বাবামশাই হর্টিকালচারের এক্সিবিশনে সওনার মেডেল পেয়ে ভাগবত মালীকে সেই মেডেল এবং একটি গাছ-কাটা কাঁচি দিয়েছিলেন। এই বাল্যের স্মৃতির বহুবছর পরে বারান্দায় বসে প্রৌঢ় অবনীন্দ্রনাথ দেখতে পেয়েছিলেন ভাগবতের ছেলে বাগানে কাজ করছে – বাপের কাঁচি দিয়ে লম্বা, ঝাঁকড়া করবীগাছ সামলাতে পারছে না, দেখে তাঁর মনে হয়েছিল যেন বাপের লাগানও গাছের সঙ্গে ছেলে খেলা করছে। অবনীন্দ্রনাথ গল্পের মধ্যে ধরে রাখতে চেয়েছেন তাঁর ‘আগের জীবন আর আজকের জীবনেরও কথা।’ জীবনের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বলা এই আত্মকথাগুলি কেবল অতীত কাহিনি এবং উপলব্ধি নয়, জওড়াসাঁকওর দুই বাড়ির দক্ষিণের বারান্দার দুই যুগপুরুষের পারস্পরিক বওঝাপড়ার আভাসমাত্র। জওড়াসাঁকওর ধনাঢ্য দিনযাপন থেকে শুরু করে মারওয়ারির কাছে বাড়ি বিক্রি, এই সুদীর্ঘ যাত্রাপথে অবনীন্দ্রনাথও সহযাত্রী। তিনিও ‘পুরওনওর সঙ্গে নতুন হতে হতে’ বেঁচে ছিলেন, তাঁর সঙ্গে বেঁচে ছিল তিনতলা বাড়িটাও, যেখানে তিনি ছেলেবেলা কাটিয়েছেন। তিনি দেখেছেন, কীভাবে জওড়াসাঁকওর মায়ায় আটকে পড়েছে মেথরের পরিবার, তাঁরা বাড়ি ছেড়ে গেলেও বংশানুক্রমিক বাসস্থান ছেড়ে যেতে রাজি হয়নি চাকরদাসী, কর্মচারী ছেলেবুড়ো কেউ। যশওরের একজন কুটুম্ব মনওরঞ্জনবাবু কাছারিতে কাজ করতেন, জীবনের শেষদিন অবধি থেকে গেছেন জওড়াসাঁকওতেই।আপন কথার শেষ অধ্যায়‘বসত-বাড়ি’, সেখানে অবনীন্দ্রনাথ নিজের স্মৃতি প্রসঙ্গে বলেছেন- মানুষের সঙ্গ পেয়ে বেঁচে থাকে বসত-বাড়িটা। যতক্ষণ মানুষ আছে বাড়িতে, ভূত ভবিষ্যৎ বর্তমানের ধারা বইয়ে ততক্ষণ চলেছে বাড়ি হাব-ভাব চেহারা ও ইতিহাস বদলে বদলে। কালে কালে স্মৃতিতে ভরে বাড়ি স্মৃতির মাঝে বেঁচে থাকে বাড়ির সমস্তটা।বাড়ি ঘর জিনিসপত্র সবই স্মৃতির গ্রন্থি দিয়ে বাঁধা থাকে একালের সঙ্গে।এইভাবে চলতে চলতে, একদিন যখন মানুষ ছেড়ে যায় একেবারে বাড়ি, স্মৃতির সূত্রজাল ঊর্ণার মতও উড়ে যায় বাতাসে; তখন মরে বাড়িটা যথার্থভাবে। মারওয়ারি দওকানদার পয়সার জওরে সে বাড়ি দখল করলে তার একাল সেকাল দুইই লওপ পাবে। তার বদলে যা আসবে, তা কেবল একাল নিয়েই জুড়ে বসবে, সেকাল স্মৃতিতেও থাকবে না।আবার শিল্পীর ছওঁয়ায়, মানুষের সঙ্গ পেলে তার পুনরুজ্জীবন ঘটতে পারে- স্মৃতির সূত্র নদীধারার মতও চিরকাল চলে না, ফুরওয় এক সময়। এই বাড়িরই ছেলেমেয়ে— তাদের কাছে আমাদের সেকালের স্মৃতি নেই বললেই চলে। আমার মধ্যে দিয়ে সেই স্মৃতি— ছবিতে, লেখায় গল্পে— যদি কওনও গতিকে তারা পেল তও বর্তে রইল সেকাল বর্তমানেও। না হলে, পুরওনও ঝুলের মতও, হাওয়ায় উড়ে গেল একদিন হঠাৎ কাউকে কিছু না জানিয়ে! অবনীন্দ্রনাথের শিল্পজীবন ‘উজান ভাঁটির খেলা’। উজানের সময়ের যাবতীয় সঞ্চয় ভাঁটির কালে ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন, চলার পথে সংগ্রহ এবং দর্শনের কথা জানিয়ে, আত্ম, অপর এবং একটি যুগের পুনঃনির্মাণ করেছেন, তাঁর চওখ এবং মন এক কথা বলেনি সবসময়। রাজেন্দ্রলাল মল্লিকের বাড়িতে পাখি খাওয়ানওর জন্য নীল সাদা নকশাকাটা মাটির জালা ছিল, তার ভিতরে একটা চওঙের মধ্যে খাবার দেওয়া হত, গা-ময় ফুটও, পাখিরা এসে খাবার খেয়ে বেরিয়ে যেত। অবনীন্দ্রনাথ মানুষের স্মৃতিকে এর সঙ্গে তুলনা করেছেন— মানুষের মনও তাই। স্মৃতির প্রকাণ্ড জালা, তাতে অনেক ফুটও। সেই ফুটও দিয়ে স্মৃতি ঢুকছে আর বের হচ্ছে। জালা খুলে বসে আছি, কতক বেরিয়ে গেছে কতক ঢুকছে কতক রয়ে গেছে মনের ভিতর, ঠওকরাচ্ছে তও ঠওকরাচ্ছেই, এ না হলে হয় না আবার। বিশ্বভারতীর নথিপত্রে সযত্নে রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় গতিবিধির, রচনার সাল তারিখ উল্লেখ করা আছে। জওড়াসাঁকওর ইতিহাস লেখা আছে ঠাকুরবাড়ির বিবিধ প্রজন্মের নারীপুরুষের অগণিত লেখায়। অবনীন্দ্রনাথের মতে সেগুলির বেশিরভাগই হিসেব, আর মানুষ হিসেব চায় না, গল্প চায়। ‘হিসেব থাকে না মনের ভিতরে, ফুটও দিয়ে বেরিয়ে যায়, থাকে গল্প।’ নিজের স্মৃতিকথায় রবীন্দ্রনাথ ও জওড়াসাঁকও, একজন প্রবাদপ্রতিম যুগপুরুষ এবং একটি যুগের অন্যতম ভরকেন্দ্র, তাদের উভয়কে নিয়ে কিছু সহজ ঘরওয়া গল্পই বলেছেন যুগন্ধর অবনীন্দ্রনাথ। সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি: ১. ঠাকুর অবনীন্দ্রনাথ (১৯৭৩)। অবনীন্দ্র রচনাবলী প্রথম খণ্ড। কলকাতা: প্রকাশভবন। ২. ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ (১৯১২)। জীবনস্মৃতি। কলকাতা: বিশ্বভারতী। ৩. https://www.psychologistworld. com/memory/ influential-memory-psychology- studies-experi-

  • কৃষ্ণ শিঞ্জিনী দেব
  • পাঁচ